সোনা কান্তি বড়ুয়া : রূপসী যুথিকা বড়ুয়ার নয়নে আজ হেরিতেছি সুন্দর, অসীম সুন্দর আর অনন্তকে দেখতে পেলাম কি? নিজের কাছে নিজের বোঝা চাই, এত দেখার ভিড়ে, “আমি কী হেরিলাম হৃদয় মেলে”! প্রেয়সী যুথিকারেই যেন ভালোবাসিয়াছি, শত রূপে শত বার! মনের ঘরে বসত করে যুথিকা বড়ুয়ার ভালোবাসা! কবির ভাষায়, আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো যুথিকা বড়ুয়ার ভালোবাসা।”
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে?
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়!
সে কি কেবলই যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ।
আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে!
আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়-
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায়।
আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে-
সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ।
প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা-
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।”
‘সৌন্দর্য’ প্রবন্ধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়েছেন, সুন্দর আমাদের কিছুতে বাধ্য করে না, শুধু আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে চায়। সে বলে, “আমাতে তোমার আনন্দ হ’ক; তুমি স্বত আমাকে গ্রহণ করো।” সুন্দর আমাদের আনন্দ দেয়। আনন্দ, বিশ্বজগতের সঙ্গে আমাদের এক স¤প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার সহায়ক। এখানেই সুন্দরের সার্থকতা। উমবের্তো একো সুন্দরের আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, একটা সুন্দর জিনিস আমাদের নিজেদের হলে আনন্দ দেয়, অন্যের হলেও তা সুন্দরই থাকে। যুথিকার মৃত্যুতে সোনা কান্তি বড়ুয়া কত দুঃখতাপ, কত শোকদহন!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
“বসুন্ধরা বসিয়া আছেন এলোচুলে
দূরব্যাপী শস্যক্ষেত্রে জাহুবীর ক‚লে
একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল
বক্ষে টানি দিয়া; স্থির নয়নযুগল
দূর নীলাম্বরে মগ্ন; মুখে নাহি বাণী।
দেখিলাম তাঁর সেই ¤øান মুখখানি –
সেই দ্বারপ্রান্তে লীন স্তব্ধ মর্মাহত
মোর চারি বৎসরের কন্যাটির মতো।”
যুথিকা বড়ুয়া স্মরণে বাংলা সাহিত্য পরিষদের শোক সভায় বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে! বাংলা সাহিত্য পরিষদে আমাদের “হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়– / আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়!” “গতকাল রবিবার ২৮শে মে সন্ধ্যায় যুথিকা বড়ুয়া স্মরণে বাংলা সাহিত্য পরিষদ,টরন্টো এক শোক সভার আয়োজন করে সুমি বর্মন ও পিযুষ বর্মনদের বাসভবনে!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,
“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়–
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়–
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়!”
টরন্টোর অত্যন্ত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী যুথিকা বড়ুয়া। গানের পাশাপাশি তিনি কবিতা এবং ছোট গল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। তিনি গত ১৮ই এপ্রিল কলকাতায় বাটানগর (বাবার বাড়িতে) বেড়াতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেন। যুথিকা বড়ুয়া স্মরণে বাংলা সাহিত্য পরিষদ,টরন্টো এক শোক সভা! পরম পূজনীয় মাতা-পিতার ইচ্ছানুসারে তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায় লেখিকা যুথিকা বড়ুয়া ১৯ বছর বয়সে (8TH MAY 1979) সোনা কান্তি বড়ুয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করেন! যুথিকারেই যেন ভালোবাসিয়াছি, শত রূপে শত বার!
যুথিকা বড়ুয়ার মৃত্যুতে সোনা কান্তি বড়ুয়ার কত দুঃখতাপ, কত শোকদহন! TO INSULT সোনা কান্তি বড়ুয়া নির্লজ্জ সনদ বড়ুয়ার SINISTER CONSPIRACY পারি না সইতে / না পারি কইতে!
যুথিকা বড়ুয়ার সংঘদান সোনা কান্তি বড়ুয়ার থেকে কেড়ে নিতে সনদ বড়ুয়া ভিক্ষার ঝুলি হাতে চাঁদা তোলছে! তুমি কি কুয়াশা/ ধোঁয়া, ধোঁয়া, ধোঁয়া”— কিশোরকুমারের গলায় কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ অবধি বাজত এই গান, আশির দশকের শেষাশেষি। পঁয়ত্রিশ বছর পেরিয়ে মনে হয়, ওই গানটাই যেন অতিজীবিত হয়ে আবার মনে এসে দাঁড়িয়েছে। যুথিকা বড়ুয়া স্মরণে বাংলা সাহিত্য পরিষদ,টরন্টো এক শোক সভা আয়োজন করেছে। THIS IS HONOR FOR যুথিকা বড়ুয়া! মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটার নাম সনদ বড়ুয়া! সোনা কান্তি বড়ুয়ার জীবনসঙ্গিনী যুথিকা বড়ুয়ার সংঘদান, উপলক্ষে সনদ বড়ুয়া চাঁদা তোলেছে কেন? সোনা কান্তি বড়ুয়ার মৌলিক অধিকার বিপর্যন্ত করে সনদ বড়ুয়া যুথিকা বড়ুয়ার মৃত্যুতে ভিক্ষার ঝুলি হাতে চাঁদা তোলছে। এখনই সময় এ প্রবণতার শিকড় উৎপাটনের।
জাপানযাত্রী-তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “যে-সব জিনিস অদরকারি এবং অসুন্দর তারা আমাদের কিছুই দের য় না, কেবল আমাদের কাছ থেকে নিতে থাকে। এমনি করে নিশিদিন আমাদের যা ক্ষয় হচ্ছে, সেটাতে আমাদের শক্তির কম অপব্যবহার হচ্ছেনা।” সুন্দরের অপেক্ষায় সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘দেখা’ প্রবন্ধে লিখছেন, “আমরা চোখ মেলি, আমরা দেখি।… বিকশিত দেখা এখনও হয়নি, ভরপুর দেখা এখনও দেখিনি… আমি বলছি, এই চোখেই আমরা যা দেখতে পাব তা এখনও পাইনি। আমাদের সামনে আমাদের চার দিকে যা আছে তার কোনোটাকেই আমরা দেখতে পাইনি— ওই তৃণটিকেও না। আমাদের মনই আমাদের চোখকে চেপে রয়েছে।
চার পাশের বহু কদর্যতার ভিড়ে কোথাও লুকিয়ে থাকা আনন্দরূপ, অমৃতরূপ এবং অনন্তরূপকে দেখার সূত্র ধরিয়ে দিয়ে সুন্দরকে খুঁজে পাওয়ার পথের ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু সেই দেখার চোখ আর মন তৈরি হবে কী ভাবে! যারা সেই ‘চরম দেখা’, ‘পরম দেখা’য় আমাদের দীক্ষিত করতে পারেন, ইংরেজিতে তাঁদের ‘ইসথেট’ বলা চলে। শব্দটার মূল অর্থ, সুন্দরকে চিনতে পারেন আর কদর করেন যিনি। বাংলায় হয়তো বা ‘নন্দনবেত্তা’ বলা যায়। আমাদের আজকের সমাজ নন্দনবেত্তাশূন্য, এ কথা বললে ভুল হবে। বরং বলা ভাল, সৌন্দর্যের চর্চা করেন এমন মানুষের সংখ্যাটা ক্রমশ কমে আসছে। আমাদের সমাজে সাহচর্য-শিক্ষার ধারায় দেখার সুন্দর একটা চোখ তৈরি করে দিতে পারেন যাঁরা, খোঁজ নিলে দেখা যাবে ক্ষমতা আর বাণিজ্যের দলে ভারী কারবারিদের দাপটে বিরক্ত এবং সমাজের রুচি বদলের চেষ্টায় হতোদ্যম হয়ে তাঁরা হয়তো বেছে নিয়েছেন নিভৃত জীবনচর্চা, যেখানে সুন্দরের সাধনা লোক-দেখানো, চটজলদি, অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক কোনও আচার নয়- বরং তা বহু দিনের দেখার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, জীবনের এক অনন্ত আনন্দপথ।
টরন্টোর অত্যন্ত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী যুথিকা বড়ুয়া। গানের পাশাপাশি তিনি কবিতা এবং ছোট গল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়!
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে রূপসী কবি যুথিকা বড়ুয়ার কবিতার ভাষায়,
বন্ধু মানে / ইগো নয়, প্রতিযোগী নয়,
বন্ধু মানে, স্বচ্ছ হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা।
অভিমানে পাশে থেকে / যে বুঝবে মনের ভাষা।
বন্ধু মানে / সেই ছবি,
যা শুধু কল্পনায় ভাবা যায়,
আর তার প্রতিচ্ছবি মনের ক্যানভাসে আঁকা যায়।
বন্ধু মানে / যে নিঃস্বার্থে নিস্প্রয়োজনে
সব সময় পাশে থাকে,
সেই হচ্ছে প্রকৃত আপনজন।
বন্ধু মানে / সেই ভালোবাসা,
যা প্রতিদিন পেতে চায়
যেখানে থাকবে না
বিনিময়ে প্রাপ্তির প্রত্যাশা।
বন্ধু মানে / সুন্দর একটি মন,
যেখানে থাকবে শুধু স্বচ্ছতা
আর পবিত্রতা,
থাকবে না সংকীর্ণতা, কার্পণ্যতা সারা জীবন।
বন্ধু মানে / শত দু:খ কষ্টের মাঝেও
খুঁজে পাওয়া একটুখানি সুখ,
যেখানে নেই রাগ দ্বেষ মোহ
আর ভোগ।
বন্ধু মানে / হঠাৎ খুশির বন্যায় ভাসা
হ্রদয় মন প্রাণ,
সুখে দু:খে সর্বক্ষণ
গাইবে জয়গান।
বন্ধু মানে / কঠিন শপথ
দৃঢ় অঙ্গীকার,
বিপদকালে সাথে থেকে
করবে সকল আঁধার পার।
বন্ধু মানে / ঊষার প্রথম স্নিগ্ধ সকাল
নিঝুম আঁধার রাত,
সাথে থেকে সর্বদা
বাড়িয়ে দেবে হাত।
জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী যুথিকা বড়ুয়া ছোট গল্প “ভালোবাসার বন্ধন” লিখেছেন!
রক্তের সম্পর্ক সবচে’ বড় সম্পর্ক। আপনজন যত দূরেই থাকুক, সম্পর্ক চিরকাল অটুট থাকে। কখনো ছিন্ন হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্নভাবে থাকার কারণে সম্পর্কের গভীরতা ধীরে ধীরে কমে আসে। আগের মতো অন্তরের টান তেমন আর থাকে না। তদ্রæপ অনাত্মীয়া, অচেনা অপরিচিত মানুষের সাথে অগাধ মেলামেশা এবং উদয়াস্ত মুখ দর্শণে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ এবং অজানা একটা আর্কষণ গড়ে ওঠা খুবই স্বাভাবিক। যার সূত্র ধরে অচীরেই আমাদের কোমল হৃদয়ে জন্ম নেয়, ¯েœহ মায়া-মমতা, আদর ও ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ নেই, কোনো চাহিদা নেই, নেই কোনো ঈর্ষা, ক্রোধ, পারস্পরিক অসামঞ্জস্যতা, মান-অভিমান, অভিযোগ কিছুই নেই। যার সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই।
আমার এক বান্ধবী, ওর নাম পারুল। বছর কয়েক আগে আমাদের নবাগতা প্রতিবেশী হয়ে মাত্র দু’দিনের আলাপচারিতায় ওর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পারুল খুবই মিশুকে এবং মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে। কথায় কথায় ওর টোলপড়া গালে একরাশ মুক্তাঝরা অনিন্দ্য সুন্দর হাসি ফুটে ওঠে। আবেগপ্রবণ ও সরলমনা পারুল প্রথম দর্শণে এমন অন্তরঙ্গভাবে আমায় ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করলো, ও’ যেন আমার কত দিনের চেনা, জানা। কত আপন, ওর সাথে আমার বহুদিনের সম্পর্ক। যেদিন ভাই-বন্ধু, স্বদেশ-স্বজন, আত্মীয়-পরিজনের সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে এসে প্রবাস জীবনে গহীন অনুভ‚তি দিয়ে প্রথম অনুভব করেছিলাম, যেন স্বদেশের কোনো এক প্রান্তরে বসবাস করছি।
যাযাবরের মতো জীবন পারুলের। স্বামীর চাকুরির সুবাদে ওরা সপরিবারে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ায়। প্রবাস জীবনে শত ব্যস্ততা এবং প্রতিকুলতার মধ্যেও আমরা অবসর যাপন করতাম টেলিফোনের মাধ্যমে, কুশল বিনিময়ে। পারুল গল্প করতো মিডল-ইষ্টের। আমি উন্মত্ত চিত্তে শুনতাম, জানা দেশের অজানা কথা।
এভাবে আমাদের প্রাত্যহিক দিনগুলি অতিবাহিত হোতো। এছাড়া প্রত্যেক উৎসব-অনুষ্ঠানে, পূজা-পার্বনে আমরা সবাই একসাথে আনন্দ করতাম। কখনো প্রকৃতির মনমাতানো রূপবৈচিত্র্যে নিমজ্জিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত মনে সংসারের সকল বন্ধন তুচ্ছ করে, কক্ষচ্যুত উল্কার মতো বেরিয়ে পড়তাম বাইরের প্রাণোৎচ্ছল রঙ্গিন পৃথিবীতে। বিদেশী পর্যটকদের মতো আমরা দু’জন প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে শহরের বিভিন্ন মনোহরণকারী দর্শণীয় স্থানগুলি একে একে প্রদক্ষিণ করতাম।
সেদিন ছিল বাংলা নববর্ষ। সকাল থেকেই দিনটা কেমন নীরব, নিরুচ্ছাস, বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে আছে। মেঘলা আকাশ। সম্পূর্ণ কালো মেঘে ঢাকা। সূর্য্য দশর্ণের কোনো সম্ভবনাও ছিল না। তা উপক্ষা করে বাচ্চা-বুড়ো-জোয়ান সকলেই প্রাণবন্ত উচ্ছাসে মেতে ওঠে বর্ষবরণ উৎসবের আনন্দমেলায়। কখন যে বেলা গড়িয়ে অপরাহ্ন পেরিয়ে গেল, টের পাইনি। গোধূলীর পূর্বেই ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। মনে হচ্ছিল, এক্ষুণি ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নামবে। এতে মানব মনেও প্রচন্ড প্রভাব পড়ে, প্রতিক্রিয়া ঘটে। মানুষের জীবনকেও করে নিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতির সাথে মানব মনের এ এমন এক নিবিড় সর্ম্পক, সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে যার দৃষ্টান্তসরূপ সেদিন আমি নিজেই প্রকৃতির মাঝে নিমজ্জিত হয়ে বিষন্ন মনে বসে বসে টি.ভি দেখছিলাম।
হঠাৎ টেলিফোনটা ঝন্ঝন্ করে বেজে উঠতেই মনটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আমি একরাশ উৎসুক্য নিয়ে দৌড়ে রিসিভারটা তুলতেই বুকের ভিতরটা কেমন ছ্যাঁৎ করে উঠলো। আহাল্লাদে গ˜্গদ্ হয়ে পারুলের ‘দিদি’ শব্দের উচ্চারণের সাথে সাথেই এক অভিনব অনুভ‚তির তীব্র জাগরণে কোমল হৃদয়খানি আমার তৎক্ষণাৎ একরাশ স্নেহ-মমতায় ভরে ওঠে। মনঃশ্চক্ষে উদ্ভাসিত হয়, পুতুলের মতো আমার ছোট্টবোন মিনুর শুভ্র গোলাপগালের তুলতুলে নরম দুষ্টুমিষ্টি সেই মুখমালা। আমি হারিয়ে গেলাম, কৈশোরের হাজার মায়া জড়ানো সোনাঝরা দিনের অ¤øান স্মৃতির মণিমেলায়। যখন মখ্মলে ¯িœগ্ধ সবুজ ঘাসের প’রে প্রস্ফূটিত লাল-নীল-হলদে-বেগুনী ফুলের বিকশিত পাঁপড়িগুলিতে উড়ে এসে বসা রংবেরংএর ফড়িং, প্রজাপতি দেখলেই মিনু উর্দ্ধঃশ্বাসে ওদের হাতের মুঠোয় ধরতে ছুটে যেতো। ততক্ষণে বুদ্ধির চাতুর্য্যে ওরা চোখের পলকে ফাঁকি দিয়ে ফুরুৎ করে উড়ে পালাতো। মিনুও নাগাল পাবার আশায় দু’হাত প্রসারিত করে ওদের পিছু পিছু মরিয়া হয়ে ধাওয়া করতো।
কিন্তু কতক্ষণ, পুষ্পবাগিচার এমাথা ওমাথা বার ক’য়েক প্রদক্ষিণ করে মিনু হাঁপিয়ে উঠতো। ব্যর্থতায় ঠোঁটদুটো ফুলিয়ে, হাতের আঙ্গুলগুলি কাঁমড়ে ধরে পা-দু’টো বাঁকা করে, অশ্রুসিক্ত চোখে এমন এক অদ্ভুদ দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকতো, কিছুতেই হাসি চেপে রাখা যেতো না। ততক্ষণে মিনুর তুলকালামকান্ড শুরু হয়ে যেতো। তখন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে, গালে চুম্বনে চুম্বনে ওর মলিন-ম্রিয়মান মুখমালায় খিল্খিল শব্দে বয়ে যেতো রাশি রাশি হাসির ঝর্ণা।
সেদিনের পর থেকে কখন যে পারুলকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ফেলেছিলাম বুঝতেই পারি নি। হঠাৎ একদিন শুনি, অবিনার্য কারণবশতঃ পারুল সপরিবারে দেশান্তর হচ্ছে। আমি তো শুনেই বিদ্যুতের শখ্ খাওয়ার মতো সারা শরীরে এমন একটা ঝটকা লাগলো, মেঘের আড়ালে সূর্য ডুবে যাবার মতো চকিতে মনটা আমার বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। আমি বাক্যাহত হয়ে পড়ি। চেয়ে থাকি শূন্য দৃষ্টিতে। বলে কি পারুল! কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। ক’দিন পর দেখলাম, পারুলের যথাযথ প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।
অগত্যা, করণীয় কিছুই নেই। অচিরেই ঘনিয়ে আসে স্মৃতিপটে ধরে রাখার মতো একটি বিশেষ স্মরণীয় মুহূর্ত, অর্থাৎ বিদায়ের পালা। কিন্তু বিদায় মানেই তো বিচ্ছেদ। আর বিচ্ছেদ মানেই বেদনা। যা আমার কোমল হৃদয়কে বড্ড বেশী কষ্ট দেয়। সেদিন সারারাত দু’চোখের পাতা কিছুতেই এক করতে পারিনি। পারেনি নিদ্রাদেবীর বাহুমন্ডলে গভীর তন্ময় হয়ে পরিবেষ্টিত হতে। ভিতরে ভিতরে ক্ষণপূর্বের বেদনাময় গহীন অনুভ‚তিগুলি নদীর ঢেউ-এর মতো বার বার মস্তিস্কের স্নায়ূকোষে এসে দংশন করতে লাগলো। আমার অন্তরের কষ্ট-বেদনাগুলি তরল হয়ে দুচোখ বেয়ে নিঃশব্দে বইতে থাকে। তখন মনে পড়ে যায়, ঠিক এমনি করেই অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে, অশ্রুজলে হৃদয়ের দুকুল প্লাবিত করে চিরদিনের মতো বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিল আমাদের বুলবুল।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!