হাসান গোর্কি : কারপভের সাথে দাবা খেললে বা উসাইন বোল্টের সাথে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিলে কি আমি হেরে যাবো? সাধারণভাবে উত্তর হলো, হ্যাঁ, হারবো। যদি জিজ্জেস করা হয় সেটা কি ১০০% নিশ্চিত? উত্তর হবে, ‘না’। ঐ দুই জনের কাছে আমার হেরে যাবার সম্ভাবনা ৯৯.৯৯৯% বা দশমিকের পর প্রয়োজন মতো আরও কিছু ৯ বসিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু খেলা শুরু হবার পর কারপভ পাগল হয়ে গেলে এবং ঐ অবস্থায় খেলা চালিয়ে গেলে আমি জিতে যাবো। আবার দৌড় শুরু হবার পর উসাইন বোল্ট তিন বার আছাড় খেলে দৌড়ে আমি জিতে যাবো। কোন কিছুর সম্ভাবনা ১০০% নয়। সেটা হলে তা শতভাগ নিশ্চয়তাও বিধান করবে। কিন্তু জগতে নিশ্চিত বলে কিছু নাই। তাহলে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এটা কি নিশ্চিত নয়? হ্যাঁ, গত সাড়ে চারশ কোটি বছর ধরে এরকম ঘটছে। এটা আগামীকাল ঘটবে কিনা সেটা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। আগামীকাল আসার আগেই যদি পৃথিবী কক্ষচ্যুত হয়ে যায় তাহলে পৃথিবী আর সূর্যের চারিদিকে ঘুরবে না।
‘মানুষ মরনশীল’- এই কথাটা শতভাগ সত্যি কিনা সেটা ভেবে দেখা যাক। স্মরণাতীতকাল থেকে আমরা দেখে আসছি মানুষ (ও অন্য প্রাণী-উদ্ভিদ) মরে যায়। এটা আমাদের অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানুষ মরণশীল। মহা রহস্য ও বিস্ময় ভরা প্রকৃতি বা মহান স্রষ্টা যদি আমাদের অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে/ন তাহলে মানুষ আর মরণশীল থাকবে না। তখন “মানুষ মরণশীল” কথাটাও আর সত্যি থাকবে না। আচ্ছা, তাহলে পৃথিবীতে মানব জাতির আগমনের পর থেকে এ পর্যন্ত যতো মানুষ এসেছিল এবং মরে গিয়েছে তারা মরণশীল ছিল— এই কথাটা তো অন্তত শতভাগ সত্যি? হতে পারে। তবে কথাটা সত্যি হবার জন্য একটা মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে: আমরা যে ভৌত জগতে বাস করছি তার অস্তিত্ব শতভাগ প্রমাণিত হতে হবে। বিষয়টা যদি এমন হয় যে, আমরা একটা বিভ্রম বা মায়ার (ইলুশন) মধ্যে আছি তাহলে তো আমাদের জন্ম-মৃত্যু কিছুই ঘটছে না। পুরোটাই একটা স্বপ্নের মতো কিছু। সেক্ষেত্রে ‘মানুষ মরণশীল’ বা ‘এ পর্যন্ত মরণশীল আছে’ এই কথাগুলোর অর্থ থাকবে না।

ভাববাদের অধিবিদ্যাবাদী দার্শনিকদের মতে ধারণা বা আত্মা প্রকৃত ও একমাত্র সত্য। আত্মগত ভাববাদের অন্যতম প্রবক্তা জর্জ বিশাপ বার্কলি মনে করেন জড়বাদের সঙ্গে নিরীশ্বরবাদ ও সংশয়বাদ অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তিনি মনে করেন জড় পদার্থের কোন অস্তিত্ব নেই। কারণ থেকে বস্তু এবং ঘটনার যে অবভাসের জন্ম হয় তাকেই আমরা ভৌত জগত বলে মনে করি। এর অর্থ হাতে চিমটি কাটলে যে আমরা ব্যথা পাই সেটা একটা ধারণা; এর জন্য হাত বা আমাদের ভৌত অস্তিত্ব (ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স) থাকার দরকার নেই। একটা সহজ উদাহরণ থেকে বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করা যাক। ধরুন আপনি ঘুমিয়ে আছেন। স্বপ্ন দেখছেন আপনি আর আপনার বন্ধু মিলে গাছ থেকে ১০টা আপেল পেড়েছেন। বন্ধু ৬টা আপেল নিতে চাচ্ছে। আপনি চাচ্ছেন সমান ৫টা করে ভাগ করে নিতে। এ নিয়ে আপনারা বিবাদ করছেন। আপনার বন্ধু বা আপনি কিন্তু বলছেন না “স্বপ্নের আপেল আমার চাই না। তুমি সবটা নিয়ে যাও।” খেয়াল করে দেখুন, এই ঝগড়ার সময় কিন্তু ঐ আপেলগুলোর ভৌত অস্তিত্ব দরকার পড়ছে না। অথবা ধরুন, স্বপ্নে আমাকে সাপ তাড়া করেছে। আমি দৌড়ে বাঁচতে চেষ্টা করছি। ঘুম থেকে জেগে দেখলাম আমি ঘামে ভিজে গেছি। স্বপ্ন দেখার সময় আমি কিন্তু পা এগিয়ে দিয়ে বলিনি, “এই মিথ্যা সাপ, নে, যতো ইচ্ছা কামড়া!” কারণ তখন সাপটা সত্যি ছিল।

আবার কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পদার্থ কোন সুসংজ্ঞায়িত মৌলিক ধারণা নয়। অতিপারমাণবিক কণিকাগুলির (যা পদার্থ তৈরি করে) কোন নিজস্ব আকার বা আয়তন নেই। ফলে এগুলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর অতিক্ষুদ্র সংস্করণও নয়। এদের আচরণ একই সাথে কণা ও তরঙ্গের মতো। যেমন প্রোটন (একটি অতিপারমাণবিক কণা) কোন স্পর্শনযোগ্য, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কণা নয়। এরা মহাবিশ্বের অসীম প্রোটন ক্ষেত্রের একটি স্থানীয় কোয়ান্টামীয় স্পন্দন মাত্র। এই স্পন্দনকেই আমরা প্রোটন কণা হিসেবে চিহ্নিত করি। সব ধরণের অতি পারমাণবিক কণার ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। তার অর্থ মহাবিশ্ব সীমাহীন স্পন্দনের সমষ্টি ছাড়া কিছুই নয়। ধরুন আপনি ইট গেঁথে একটা বিল্ডিং বানালেন। এই ইটগুলো যদি শুধু তরঙ্গ হয় তাহলে তারা ধারণার গন্ডি পার হয় না। তাহলে আপনার বিল্ডিংও একটা ধারণা বা অনুভূতি। ভাববাদ এবং/অথবা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান সঠিক হলে আমাদের ভৌত অস্তিত্ব নেই। ফলে জন্ম–মৃত্যুর যে পার্থিব ঘটনা আমরা দেখছি সেগুলো আসলে কারণ থেকে উদ্ভূত বস্তু ও ঘটনার অবভাস। অর্থাৎ আমাদের পার্থিব জীবন একটা স্বপ্ন। ব্যাপারটা মাথায় নেওয়া কঠিন।

আমরা আরও সহজ করতে চেষ্টা করি। আপনি মহাবিশ্বের কোথাও চেতনাময় আছেন। এটা শুধুই চেতনা; আপনার কোন শারীরিক অস্তিত্ব নেই। আপনি অনুভব করছেন আপনি পৃথিবী নামক একটা গ্রহে থাকেন। সেখানে আপনার বাসস্থান, আত্মীয়স্বজন, রাস্তাঘাট, নদী, পাহাড়, পশুপাখি, গাছপালা আছে। আপনি ভাবছেন আপনি অফিসে যাচ্ছেন, গাড়ি চালাচ্ছেন, পত্রিকা পড়ছেন, সংসার করছেন। বাস্তবে আপনার ঐ চেতনাটুকু ছাড়া অন্য কিছুই নেই; এমনকি আপনিও নেই। বিষয়টা বুঝতে উপরে দেওয়া স্বপ্নের দুটি উদাহরণের কথা ভাবুন। সেখানেও কিন্তু আপনার এবং আমার চেতনা ছাড়া অন্য কিছুর দরকার হয়নি। আপনার বন্ধু, আপেল গাছ, সাপ— কোনকিছুই সেখানে ছিল না। কিন্তু ঘটনাগুলো ঘটেছে।

‘নিশ্চয়তা’ শব্দটা আসলে কোন অর্থ বহন করে না। যে ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা শতকরা ১০০ ভাগ শুধু সেটাই নিশ্চিত। কিন্তু একশ’ ভাগ সম্ভাবনা আছে এরকম কোন ঘটনা নেই। মৃত্যু একটা ভালো উদাহরণ। আগের অনুচ্ছেদে এ নিয়ে আমরা কিছুটা আলোচনা করেছি। আমরা মরে যাবো— এটা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া খুব-ই শক্ত একটা অনুমান। এই অনুমানের ভিত্তি হলো, পৃথিবীতে যতো মানুষ আমাদের আগে জন্মগ্রহণ করেছে তারা সবাই মরে গেছে। সেকারণে আমরা ধরে নিচ্ছি যে অনন্ত আগামী ধরে এরকম-ই চলবে। কিন্তু স্রষ্টা বা প্রকৃতির ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটলে মানুষ চেষ্টা করেও মরতে পারবে না।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিশ্চয়তার ব্যাপারটা কেমন দেখুন- ধরুন আমি ঢাকা থেকে বগুড়াগামী বাসে উঠলাম। যে কোম্পানির বাসে উঠেছি রেকর্ড অনুযায়ী তাদের ১০০০ ট্রিপের একটি দুর্ঘটনায় পড়ে। তাহলে আমার বাসের দুর্ঘটনায় পড়ার সম্ভাবনাও এক হাজার ভাগের এক ভাগ বা ০.১%। দুর্ভাগ্যক্রমে আমার বাসটি যমুনা সেতুর রেলিং ভেঙে নদীতে পড়ে গেলো। কিন্তু আমার বাসটির নিরাপদে বগুড়া পৌঁছনোর সম্ভাবনা ছিল ১০০০ ভাগের মধ্যে ৯৯৯ ভাগ বা ৯৯.৯%। অর্থাৎ আমার বাসের ক্ষেত্রে এই ৯৯৯ ভাগ সম্ভাবনা ১ ভাগ সম্ভাবনা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তাহলে বুঝতে হবে গানিতিক সম্ভাবনা প্রকৃতপক্ষে কোন অর্থ বহন করে না। আসলে কোন ঘটনা ঘটে যাবার পর ঐ ঘটনা ঘটার প্রকৃত সম্ভাবনা কত ছিল তা জানা যায়। আমার বাসটা যদি নিরাপদে বগুড়া পৌঁছাত তাহলে ধরে নিতে হবে সেটার বগুড়া পৌঁছানোর সম্ভাবনা ছিল একশ’ ভাগ, সেকারণেই সেটা পৌঁছেছে। আর যখন দুর্ঘটনায় পড়েছে তখন ধরে নিতে হবে নিরাপদে পৌঁছার সম্ভাবনা ০% ছিল বলেই এরকম ঘটেছে। ব্যাখ্যাটা অদৃষ্টবাদীদের মতো শোনালেও বিস্ময়করভাবে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দার্শনিক অন্বীক্ষার (ফিলোসোফিক্যাল ইনফারেন্স) সাথে এর মিল আছে।

আমাদের ছোটবেলায় স্কুল পরীক্ষার প্রশ্নে প্রায়ই ১০ নম্বরের ‘হ্যাঁ’-‘না’ প্রশ্ন থাকতো। এটা সম্ভবত করা হতো দুর্বল ছাত্রদের পাশ করানোর জন্য। কিন্তু সকল প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ ‘না’ দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। যদি প্রশ্ন করা হয়, ফ্লাইট এম এইচ ৩৭০-র সন্ধান কি পাওয়া গেছে? উত্তরে ‘না’ বলা যাবে। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী নীলকমল এক্সপ্রেস নাটোরে পৌঁছার পর যদি প্রশ্ন করা হয় ট্রেনটা কি আজ ঢাকা পৌঁছাবে? উত্তরে বলা যাবে ‘সম্ভাবনা আছে’। কিন্তু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা যাবে না। আবার এমন কিছু ‘হ্যাঁ’-‘না’ প্রশ্ন আছে যার উত্তর নেই। ধরুন আমি চুরি করি না। কেউ আমাকে প্রশ্ন করলো, “আপনি কি চুরি করা ছেড়ে দিয়েছেন?” উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বললে স্বীকার করে নেওয়া হবে যে আমি আগে চুরি করতাম। সেটা মিথ্যা। আর ‘না’ বললেও সেটা মিথ্যা বলা হবে। কারণ আমি চুরি করি না।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় আনবিক পর্যায়ে বস্তুর আচরণের তাত্তি¡ক ব্যাখ্যা দিয়েছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। সংক্ষেপে মুল কথা হলো একটা কোয়ান্টাম কণা একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে কণা বা তরঙ্গ হিসেবে থাকতে পারে। কিন্তু তাকে দেখার আগে সে একই সাথে কণা ও তরঙ্গ হিসেবে থাকে। দৃশ্যমান বস্তুগুলোর ক্ষেত্রে দুটি পরস্পর-বিপরীত অবস্থা আমরা দেখিনা। কিন্তু অতিপারমাণবিক কণার ক্ষেত্রে এটা ঘটে। একই সাথে এই দ্বৈত অবস্থাকে তিনি বলেছেন ‘কোয়ান্টাম সুপার পজিশন’। এই তত্ত¡টি অতি পারমাণবিক কণার আচরণ ব্যাখ্যা করে। এটা বড় কোন বস্তুর ওপর প্রয়োগ করলে তার ফলাফল কী হতে পারে? ধরুন, আমি সিন্দুকে স্বর্ণালঙ্কার রেখে বাইরে গেলাম। ফিরে এসে সিন্দুক খোলার আগে ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স অনুযায়ী ঐ স্বর্ণালঙ্কারের দুটি দশা থাকতে পারে- হয় সেগুলো সিন্দুকের ভেতরে আছে অথবা নাই (ধরুন চুরি হয়ে গেছে)। কিন্তু একই সাথে ‘নাই’ এবং ‘আছে’ হবে কী করে! ‘কোয়ান্টাম সুপার পজিশন’ তত্ত¡ অনুযায়ী উত্তর হবে একই সাথে স্বর্ণালংকারগুলো নাই এবং আছে। ব্যাপারটা গোলমেলে কিনা? হ্যাঁ, গোলমেলে তো বটেই।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য অস্ট্রিয়ান পদার্থ বিজ্ঞানী আরউইন শ্রোডিঙ্গার ১৯৩৫ সালে একটা কাল্পনিক পরীক্ষার ধারণা দিয়েছিলেন। একটা বাক্সে কিছু রেডিয়াম, হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিডে ভরা একটি বোতল এবং একটা হাতুড়ি রাখা হলো। এরপর একটা বিড়ালকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। রেডিয়াম তেজস্ক্রিয় পদার্থ। আমরা জানি, অনিয়মিত বিরতিতে এর পরমাণু ভাঙে। ধরা যাক এর একটা পরমাণু ভেঙে গেলে তা হাতুড়িটিতে আঘাত করবে আর হাতুড়ি আঘাত করবে হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিডের বোতলে। ভেতরতা এভাবেই সাজানো আছে। বোতল থেকে বিষ বের হয়ে বিড়ালটি মারা যাবে। আর যদি এই সময়ের মধ্যে রেডিয়ামের কোন পরমাণু না ভাঙে তাহলে পরের ঘটনাগুলো ঘটবে না এবং বিড়ালটি বেঁচে থাকবে। ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী বাক্সটা খোলার আগে বিড়ালটি ‘জীবিত’ অথবা ‘মৃত’ এই দুটি দশার কোন একটিতে থাকবে। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলছে বাক্সটা খোলার আগে বিড়ালটি একই সাথে ‘জীবিত’ এবং ‘মৃত’ উভয় দশাতেই থাকবে। শুধু বাক্সটা খোলার পর জানা যাবে সে ‘জীবিত’ না ‘মৃত’। মৃত হলেও সমস্যা নাই। পরীক্ষাটা আপনি করলে বিড়াল মারার দায় আপনাকে নিতে হবে না। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা মনে করে একটা ঘটনা যতভাবে ঘটা সম্ভব তার সবকটি কোন না কোন প্যারালাল ইউনিভার্সে ঘটছে। অন্য এক ইউনিভার্সে এই বিড়ালটিই মালিকের কোলে লেপের মধ্যে বসে আছে। একইভাবে আপনার, আমার অগণিত সংখ্যক রেপ্লিকা পুরা ইউনিভার্সে ছড়িয়ে আছে। আপনি যখন এই লেখা পড়ছেন তখন ‘অন্য আপনি’দের কেউ প্যারালাল ইউনিভার্সে সকার খেলছে, কেউ রান্না করছে, কেউ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও কোয়ান্টাম ফিজিক্স এরকম সম্ভাবনার তাত্তি¡ক দিকটা ভালভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে। তার অর্থ এটা নয় যে কোয়ান্টাম ফিজিক্স প্যারালাল ইউনিভার্সকে প্রমাণ করে ছেড়েছে। প্রমাণ করার ক্ষেত্রে সমস্যাটা এই তত্তে¡র নিজের মধ্যেই আছে। এই তত্ত¡ অনুযায়ী যে কোন কিছু সত্য হবার সম্ভাবনা ৫০% মিথ্যা/ভুল হবার সম্ভাবনা ৫০%।
মানুষের অবস্থাও কি ঐ বিড়ালের মতো? আমরা কি একই সাথে ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড এবং স্পিরিটুয়াল ওয়ার্ল্ড এ বাস করি? একই সাথে আমরা কি জীবিত এবং মৃত? হ্যাঁ, সেরকমও হতে পারে। অন্য টাইম ফ্রেম থেকে একজন নিরপেক্ষ দর্শক আমাদের দেখলে সেটা বুঝতে পারবে। কিন্তু তাকেও শ্রোডিঙ্গারের কাঠের বাক্সের মতো আমাদের ডাইমেনশনের দরজা খুলতে হবে। আহাদ ভাই আমার বন্ধু। পেশায় ডাক্তার। শখে ফটোগ্রাফার। ঢাকায় তার বাসায় বেড়াতে গেলে তার মেয়ে নুসাই একটা মুভির গল্প শোনালো- পৃথিবীর কিছু মানুষ মিলে সুবিশাল আকৃতির একটা হল ঘরে মিনি পৃথিবী বানালো। সেখানে তারা হ্রদ, পাহাড়, সুপারমল, সৈকত, হাইওয়ে, বিল্ডিং তৈরি করে কিছু রোবটকে বাস করতে দিলো। অতি বুদ্ধিমান রোবটরা সেখানে বাস করতে থাকলো এবং অনেক উদ্ভাবনমূলক কাজ করতে থাকলো। সবকিছু ঠিক চলছিল। একদিন ঐ রোবটরা বিদ্রোহ করলে তাদের ধরতে ভেতরে ঢুকে গেল মানুষেরা।

তারা দেখলো ভেতরে আরও অসংখ্য নতুন কুঠুরি তৈরি করেছে রোবটেরা। তাদের খোঁজে একের পর এক দরজা খুলতে লাগলো মানুষের সৈন্য বাহিনী। একসময় তারা একটা দরজা খুলে বিশাল এক বিশ্ব দেখতে পেলো। তারা বুঝতে পারলো তাদের নিজেদের পৃথিবীটা আসলে একটা প্যান্ডোরার বাক্স। মানুষকেও আসলে অন্য এক বুদ্ধিমান প্রাণী তৈরি করে একটা বক্সের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে, মানুষ যেভাবে বন্দী করে রেখেছে ঐ রোবটগুলোকে। আমাদের পেটের ভেতরে যে কৃমিরা বাস করে তারা হয়তো আমাদের গহীন অন্ধকার পাকস্থলীকে মহাবিশ্বভাবে। এর বাইরে যে কোন জগত আছে সেটা তাদের বোঝার উপায় নাই। আবার কৃমিদের পেটের ভেতরে যে ব্যাটেরিয়ারা বাস করে তারা কৃমির পাকস্থলীকে হয়তো মহাবিশ্ব ভাবে। আমরাও ঐ কৃমির পেটের ব্যাকটেরিয়ার মতো বিশাল কোন বিভ্রমে আছি কিনা নিশ্চিত নয়।
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, বৃটিশ কলম্বিয়া, কানাডা।