হাসান গোর্কি : অপেক্ষবাদ বলছে স্থান পরম নয়। গতির অভিমুখে গতিশীল বস্তুর দৈর্ঘ্যের সংকোচন ঘটে। অর্থাত সময়ের মত স্থানও গতির বৃদ্ধির সাথে সংকুচিত হয়। অপেক্ষবাদের পাঠে বহুল ব্যবহৃত এই উদাহরণটি দেখুন। ধরা যাক, এক ব্যক্তি হাতে ২০০ ফুট লম্বা একটা লাঠি নিয়ে রাস্তা দিয়ে আলোর গতির ৯৯% গতিতে দৌড়াচ্ছে। সে যে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে সেটা ১০০ ফুট লম্বা একটা ঘরের মধ্যে দিয়ে গেছে। লোকটির হাতে থাকা লাঠিটির মাথা যখন ঘরের শেষ প্রান্তে পৌঁছুবে তখন ঘরের দুই দিকের দুটি দরজা-ই একসাথে বন্ধ করে আবার খুলে দেওয়া হলো। কাজটি করতে হবে লোকটির দৌড়ানোর গতিকে কোনরকমভাবে ব্যাহত না করেই। বাস্তবে সম্ভব না হলেও ধরে নেওয়া হোক এই কাজে কোন সময় ব্যয় করা হলো না (০.০০০১ ন্যানো সেকেন্ডের এক লাখ কোটি ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগও না)। এক্ষেত্রে আমরা দেখব ২০০ ফুট লাঠিটি ১০০ ফুট লম্বা ঘরের মধ্যে ধরে গিয়েছিল। এরকম ঘটল কেন সেটা বুঝতে পারলে দৈর্ঘ্যের সংকোচন অনেকটা বুঝে ফেলা যাবে।

প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্বে কোন ঘটনাই একই সময় ঘটেনা। আমরা জানি দুটি বস্তুর অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে তাদের মধ্যে সময়েরও পার্থক্য সূচিত হয়। ছয় ফুট লম্বা একজন মানুষের মাথা ও পায়ের পাতার বর্তমান সময়ে পার্থক্য হলো এক সেকেন্ডের ষোল কোটি ভাগের এক ভাগ। কিন্তু মানুষটি যদি তিন লাখ কিলোমিটার লম্বা হয় তাহলে তার মাথা ও পায়ের পাতার সময়ের পার্থক্য দাঁড়াবে এক সেকেন্ড। আর এক কোটি আশি লাখ কিলোমিটার লম্বা মানুষের ক্ষেত্রে এ পার্থক্য হবে পুরো এক মিনিট। এ হিসেবে টরোন্টো থেকে মন্ট্রিয়লের সময়ের পার্থক্য এক সেকেন্ডের ৫০০ ভাগের এক ভাগ। ঢাকার সাথে টরোন্টোর পার্থক্য এক সেকেন্ডের ২৫ ভাগের এক ভাগ। পৃথিবীর সাথে চাঁদের সময়ের পার্থক্য দেড় সেকেন্ড। কাতার থেকে স¤প্রচারিত বিশ্বকাপের খেলা বৃহস্পতি গ্রহে বসে কেউ যদি সরাসরি টেলিভিশনে দেখে তাহলে সে তা দেখবে মোটামুটি ৪৫ মিনিট পরে। এক্ষেত্রে প্রথমার্ধের খেলা শেষ হবার পর সে তা শুরু হতে দেখবে। আর নেপচুন থেকে দেখবে সোয়া চার ঘণ্টা পর। অর্থাত মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তুর বর্তমান সময় তার একান্তই নিজস্ব। ধ্রুব বা সাধারণ বর্তমান বলে কিছু নেই। আমরা যখন রাতের আকাশের দিকে তাকাই তখন আসলে সরাসরি অতীত কালকে দেখি। অতীতের কোন এক সময় আকাশটা এরকম ছিল।

জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন,
“গভীর হাওয়ার রাত ছিল কাল— অসংখ্য নক্ষত্রের রাত-
সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল— আকাশে এক তিল
ফাঁক ছিল না;
পৃথিবীর সমস্ত ধূসর প্রিয় মৃতদের মুখও সেই নক্ষত্রের ভিতর দেখেছি আমি;ৃ ।
(হাওয়ার রাত)

নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে কোন এক সুদূর অতীতে বিচ্ছুরিত আলো বর্তমানে আমাদের চোখে এসে পড়ছে বলে আমরা তাদের দেখছি। বর্তমান সময়ের আকাশটাকে না দেখেই আমরা মরে যাবো; দেখবে আজ থেকে হাজার বছর, লক্ষ বছর পরের মানুষ। পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান সপ্তম উজ্জ্বল নক্ষত্র রিগ্যালকে এখন আমরা যেখানে দেখি (কালপুরুষ মন্ডলের কোটিবন্ধের নিচের দিকের শেষ বিন্দুতে) প্রকৃতপক্ষে আজ থেকে ৮৭০ বছর আগে সেটি সেখানে ছিল। ঠিক এ মুহূর্তে যদি নক্ষত্রটি নিভে যায় তাহলে আগামী ৮৭০ বছর পর্যন্ত সেটি আকাশে দেখা যাবে; নিয়ম মেনে উদিত হবে, অস্ত যাবে, রোমান্টিক মানুষেরা তাকে নিয়ে কবিতা লিখবে। কিন্তু ততদিনে মহাবিশ্বের কোথাও তার কোন অস্তিত্ত¡ নেই। আলো খুব ধীরে চললে দৈনন্দিন জীবনেও আমরা এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতাম। আলোর গতি মিনিটে এক মিটার হলে ঢাকা স্টেডিয়ামে দর্শকরা ঢুকতো খেলা শুরুর একশ মিনিট পর; খেলাটি ফুটবল হলে সেটি শেষ হবার পর। কারণ সেক্ষেত্রে ১০০ মিটার দূরে গ্যালারিতে খেলার দৃশ্য পৌঁছুতে ১০০ মিনিট সময় লাগতো। আরো দেরিতে প্রবেশ করা দর্শকরা গ্যালারির পেছনের দিকে গিয়ে বসতো; ততক্ষণে সামনের সারির দর্শকেরা খেলা দেখে বেরিয়ে গেছে। ভেবে দেখুন গ্যালারিতে বসে দর্শকরা যখন গোলপোস্টের সামনে কোন খেলোয়াড়ের ড্রিবলিং দেখে উল্লাস করছে তখন সে আসলে সেখানে নেই। বাসায় গিয়ে কফি খাচ্ছে।

সময় নিয়ে এই দীর্ঘ আলোচনার কারণ হলো এটা বুঝতে চেষ্টা করা যে মহাবিশ্বে স্থান নিরপেক্ষ কোন সময় নাই। প্রত্যেকটা স্থানের সময় একান্তভাবেই তার নিজস্ব। আবার ঐ লাঠি হাতে দৌড়ানো লোকটার কথায় ফিরে আসা যাক। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝেছি, ঐ ২০০ ফুট লম্বা লাঠির দুই মাথার সময়ও ভিন্ন হবে। আবার ১০০ ফুট লম্বা ঐ কল্পিত ঘরের দুই দরজার সময়ও ভিন্ন- যা এক সেকেন্ডের ১০ কোটি ভাগের ১১ ভাগ বা ০.০০০০০০১১ সেকেন্ড। ঐ ঘরে প্রবেশের দরজায় যখন সকাল ১০:০০ টা তখন প্রস্থানের দরজায় ১০:০০ টা ০.০০০০০০১১ সেকেন্ড । বিপরীতভাবে আমরা যদি প্রস্থান দরজাকে নির্দেশ কাঠামো ধরি তাহলে প্রস্থানের দরজায় যখন সকাল ১০:০০ টা তখন প্রবেশের দরজায় ১০:০০ টা ০.০০০০০০১১ সেকেন্ড। আমরা যদি দুটি দরজা এক সাথে বন্ধ করতে চাই তাহলে প্রবেশ-দরজা বন্ধ করার ০.০০০০০০১১ সেকেন্ড আগে বা পরে প্রস্থান দরজা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু আমরা যদি প্রবেশ-দরজার ১০:০০ টায় দুটি দরজাই বন্ধ করে দেই তাহলে আসলে দুটি ভিন্ন সময়ে আমরা দরজা দুটি বন্ধ করছি। ফলে আমাদের কাছে মনে হবে ২০০ ফুট লাঠিটিকে আমরা ১০০ ফুট ঘরে বন্দী করেছিলাম। কিন্তু ঘটনাটাকে নিরপেক্ষ কোন নির্দেশ কাঠামো থেকে দেখা সম্ভব হলে আমরা দেখতাম লাঠিটির মাথা ঘরটির প্রস্থান দরজার সাথে লেগে যাবার মুহূর্তে লাঠিটির লেজের অর্ধেক অংশ (১০০ ফুট) ঘরে প্রবেশ করেনি। এসময় প্রস্থান দরজাটা খুলে গেল এবং লাঠির লেজের ১০০ ফুট ঘরে প্রবেশ করল। লাঠির লেজ যখন প্রবেশ দরজার সাথে লেগে আছে তখন প্রবেশ দরজাটা বন্ধ হলো। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটবে না, কারণ (উপরের আলোচনায় আমরা যেমন দেখেছি) মহাবিশ্বের কোথাও স্থান বা নির্দেশ কাঠামো নিরপেক্ষ কোন সময় নাই। ফলে প্রবেশ-দরজা বা প্রস্থান দরজা-এর যে কোন একটা নির্দেশ কাঠামোতে অবস্থান করলে দর্শক ঐ বিস্ময়কর দৃশ্যটাই দেখবে: ২০০ ফুট লম্বা লাঠিটাকে ১০০ ফুট লম্বা ঘরে বন্দী করা হয়েছিল। এভাবে অপেক্ষবাদ নিশ্চিত করে যে ভৌত জগত চতুর্মাত্রিক, যার ডাইমেনশন চারটি —দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়।

তৃতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিশেষ অপেক্ষবাদের স্বতঃসিদ্ধ বলে দাবি করা হলো সেটা বস্তুর ভর সম্পর্কিত। আইনস্টাইন বললেন বস্তুর ভর পরম নয়; ভরকে শক্তিতে এবং শক্তিকে ভরে রুপান্তর করা সম্ভব। কোন বস্তুতে কী পরিমাণ শক্তি নিহিত থাকে সেটা নির্ণয় করার একটা সমীকরণও তিনি বের করে ফেললেন: E= mc² । এখানে m হলো বস্তুর ভর, c হলো আলোর বেগ এবং E হলো প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ। অর্থাত কোন বস্তুর ভরকে আলোর বেগের বর্গ দিয়ে গুণ করলে যে রাশি পাওয়া যাবে সেটা ঐ বস্তুর শক্তির সমরূপ। এই সূত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে একটা ক্ষুদ্র ভরই বিপুল শক্তির জন্ম দিতে পারে। পরমাণু বোমার ক্ষেত্রে আমরা এর নমুনা পাই। হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমায় যে ইউরেনিয়াম-২৩৫ ব্যবহার করা হয়েছিল তার ফিউশনযোগ্য অংশের পরিমাণ ছিল আধা কেজির কিছু বেশি। আর এই বোমার ধ্বংস ক্ষমতা ছিল ১৫ কিলোটন টিএনটি’র সমান। এই একই প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ (এনরিচড) ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে নিউক্লিয়ার রিএক্টরে বিদ্যুত উত্পাদন করা হয়।

১৯০৫ সালে আইনস্টাইন যখন স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন তখন তিনি বিখ্যাত কেউ নন। সুইস পেটেন্ট অফিসে পেটেন্ট ক্লার্ক হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে এই ধরণের পদকে পেটেন্ট এক্সেমিনার বলা হয়। তাদের কাজ হলো নতুন কোন আবিস্কারের জন্য কেউ পেটেন্টের আবেদন করলে পরীক্ষা করে দেখা যে আবিস্কারটা আসলেই মৌলিক কিনা। এই চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি তার গবেষণাপত্রগুলো তৈরি করেন। এবার দেখা যাক আইনস্টাইনের সাধারণ অপেক্ষবাদ কী বলে। এটি আসলে তার মহাকর্ষ বিষয়ক তত্ত¡ যা তিনি ১৯০৭ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে বিকশিত করেন। এসময় তিনি বার্ন ও জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯১৬ সালে তিনি দ্য ফাউন্ডেশন অব দ্য জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি নামক গবেষণাপত্রে তিনটি পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন:
(১) সময় উচ্চতর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে আরও বেশি শ্লথ। (২) মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে আলোর গতিপথ বেঁকে যায়। এবং (৩) মহাবিশ্ব স¤প্রসারিত হচ্ছে কেন্দ্র থেকে গ্যালাক্সিসমূহের দূরত্বের ব্যস্তানুপাতিক হারে। পুরাতন ধারণার বিপরীতে আইনস্টাইন বললেন, মহাকর্ষ কোন বল নয়; এটি হলো স্থান-কালের বক্রতা। তিনি আরও বললেন, স্থান ও কাল আলাদা কিছু নয়। স্থানের তিনটি ডাইমেনশন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার সাথে চতুর্থ ডাইমেনশন ‘সময়’ যুক্ত থাকে। তাই উচ্চতর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে স্থানের সংকোচন ঘটার অর্থ সময়েরও সংকোচন ঘটা। সময় সংকোচনের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ
হলো ব্ল্যাক হোল। এদের ভর এত বেশি যে আশপাশের সবকিছু এমনকি পাশ দিয়ে ছুটে চলা আলোকরশ্মিকেও এরা গিলে ফেলে।

আলো এর মধ্যে ঢোকার পর আর বের হতে পারেনা। ফলে সময় সেখানে স্থির হয়ে যায়। এটা অনেকটা গ্রামের বিলে মাছ ধরার মত। বিলের মধ্যে ছোট একটা পুকুর তৈরি করে তার প্রবেশমুখে ৯০ ডিগ্রী কোনে দুটি বেড়া স্থাপন করা হয়। ঐ বেড়া ঠেলে মাছেরা ঐ পুকুরে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বাইরে আসতে পারেনা। ব্ল্যাক হোলের ‘ঘটনা দিগন্ত’ অনেকটা ঐ বেড়ার মত যার বিপরীত দিকের ঘটনা বিষয়ে আমাদের কোন ধারণা পাবার আশা নেই। এক সময় মনে করা হতো আলো যেহেতু একটি তড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গ সে সবসময় সরল রেখায় চলবে। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্তে¡ বলা হলো অতি উচ্চ ভরের বস্তুর (যেমন সূর্য) পাশ দিয়ে চলার সময় আলোর পথ কিছুটা বেঁকে যায়।

ওপরের ছবিতে দেখুন একটা তারকার আলো সূর্যকে অতিক্রম করার সময় বেঁকে গেছে। ফলে তাকে আমরা তার প্রকৃত অবস্থানে না দেখে অন্য একটা অবস্থানে দেখছি।

১৯১৯ সালের ১৯ মে তারিখের পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় স্যার আর্থার এডিংটন এ বিষয়ে একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি হিসেব করে দেখলেন গ্রহণের সময় হায়াডিস তারা স্তবকের অবস্থান হবার কথা সূর্যের ঠিক পেছনে। ঐ নক্ষত্রমন্ডলীকে পৃথিবী থেকে দেখা যাবে যদি সেখান থেকে বিচ্ছুরিত আলো কিছুটা বাঁকা পথে চলে। সূর্যগ্রহণের সময় আবছা অন্ধকারে এডিংটন তার দুরবিন দিয়ে ঐ তারা স্তবককে দেখলেন এবং নিশ্চিত হলেন যে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে আলোর গতিপথ বেঁকে যায়।

সাধারণ অপেক্ষবাদে আইনস্টাইন আরও বললেন, মহাবিশ্ব স¤প্রসারিত হয়ে চলেছে এবং কাছের গ্যালাক্সিগুলোর চেয়ে দূরের গ্যালাক্সিগুলো বেশি গতিতে পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে যে গ্যালাক্সি যত দূরে, তার ছুটে চলার গতি ততো বেশি। ১৯৩৭ সালে রেডিও টেলিস্কোপ আবিস্কৃত হবার পর থেকে এই স¤প্রসারণের গতি বিষয়ে ধারণা পাবার চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা ‘ডপলার সরণ’ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে হিসেব করে দেখেছেন মহাবিশ্বের প্রায় প্রান্ত সীমায় যে সকল গ্যালাক্সির অবস্থান চিহ্নিত করা গেছে সেগুলো ছুটছে আলোর গতির প্রায় নব্বই শতাংশ গতিতে। কোন বস্তু যদি আমাদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তাহলে আমরা তার আলোর বর্ণালীরেখার বিচ্যূতি দেখবো লালের দিকে আর কাছে আসতে থাকলে বিচ্যুতি ঘটবে বেগুনির দিকে। বর্ণালী-বীক্ষণের মাধ্যমে সরণ মাপার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ডপলার সরণ’ পদ্ধতি। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, মহাবিশ্বের আয়তন প্রতি মিনিটে বাড়ছে এক লক্ষ কোটি ঘন আলোকবর্ষ যা আমাদের পুরো গ্যালাক্সির আয়তনের দশগুণ। এ হিসেবে মহাবিশ্বের আয়তন প্রতি সেকেন্ডে যে হারে বাড়ছে তার পরিমাণ দশ লাখ কোটি সৌরজগতের আয়তনের সমান। স¤প্রসারণের এই ভয়াবহ চিত্রটা মাথায় নিতে চেষ্টা করা অর্থহীন। তাই আপাতত এখানেই ক্ষান্ত দেয়া যাক। শেষ করা যাক আইনস্টাইনের শিশুবেলার একটা গল্প দিয়ে:

আইনস্টাইনের বয়স চার বছর হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন কথা বলেননি। ফলে তাঁর মা-বাবা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। একদিন রাতে খাবার টেবিলে সবাই আছেন। আইনস্টাইনও। টেবিলে অন্য কিছু খাদ্যের সাথে স্যুপ দেওয়া হয়েছে। স্যুপ মুখে দিয়ে হঠাত তিনি চিত্কার করে বললেন, ‘এই স্যুপটা খুবই গরম।’ উহ্, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মা-বাবা। ছেলের মুখে প্রথম বুলি শুনে তাঁরা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর আগে কেন তুমি কোনো কথা বলনি?’ জবাবে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ, এর আগে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল!’ এই গল্পের একটা প্রতীকী অর্থ আছে। সেটা বের করার দায়িত্ব পাঠকের।
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া,