হাসান গোর্কি : বারট্রান্ড রাসেল তার এবিসি অব রিলেটিভিটি (১৯২৫) বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছিলেন, “আইনস্টাইন বিস্ময়কর একটা কিছু করেছিলেন। কিন্তু সেটা আসলে কী সে বিষয়ে ধারণা খুব কম মানুষেরই আছে।” তার মতে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোন একক ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা সবচেয়ে বড় কাজ এটা। অপেক্ষবাদের নাম বলতে পারেন না শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে এমন লোকের সংখ্যা যেমন বিরল, তত্ত¡টি বিষয়ে পরিস্কার ধারণা আছে এমন লোকের সংখ্যাও তেমনি কম। কারণটা হলো এর কোন সহজ পাঠ নেই। আমাদের প্রাত্যহিক ধারণার সাথে তত্ত¡টি এতটাই বৈসাদৃশ্যপূর্ণ যে ভৌত জগত, আমাদের পারিপার্শ্ব বা অভিজ্ঞতা থেকে এর উদাহরণ বের করা খুবই কঠিন। যেমন আমরা যদি মাধ্যাকর্ষণ বল বুঝতে চাই তাহলে একটা পাকা আম কেন গাছ থেকে মাটিতে পড়ে তা থেকে বুঝতে পারি। মহাকর্ষ বল বুঝতে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের আবর্তনকে উদাহরণ হিসেবে আনতে পারি। চাঁদে অবস্থানকারী কোন নভোচারীর সাথে বেতার মারফত কথা বলার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বিজ্ঞানীদের সাথে তার পার্থক্য দাঁড়ায় দেড় সেকেন্ড। মঙ্গল গ্রহে পাঠানো নভোযান থেকে বার্তা আসতে গড়ে ১৩ মিনিট লাগে। এই হিসাব থেকে আমরা আলোর গতি বুঝি। কিন্তু একজন মানুষ কীভাবে এক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ বছর সময় কাটিয়ে ফেলতে পারে তা আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে থাকা কোন উদাহরণ থেকে বোঝা সম্ভব নয়। যেমন যদি বলা হয় আট ইঞ্চি ব্যাসের একটা স্টিলের গোলোকের মধ্যে আট ইঞ্চি ব্যাসের একশ’টা গোলক ঢুকিয়ে রাখা সম্ভব তাহলে ব্যাপারটা আমাদের কাছে যেমন যাদুমন্ত্রের মতো লাগবে অপেক্ষবাদের সময় ও দৈর্ঘ্যের সংকোচনের বিষয়টাও সেরকম। আইনস্টাইনের সামসময়িক বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই শুরুতে এই তত্ত¡ মানতে পারেননি। এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিসিস্ট ফিলিপ লেনার্ড হিটলারকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আইনস্টাইনকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করে বলশেভিক মতবাদ জার্মানিতে ঢুকানোর চেষ্টা করছে। এই তত্তে¡র মাধ্যমে পদার্থবিদ্যাকে বিভ্রান্ত করা সেটার প্রথম উদ্যোগ। বিপদ আঁচ করে আইনস্টাইন বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে ১৯৩৩ সালে জার্মানি ত্যাগ করেন।
যাহোক, আপেক্ষিকতা বলতে আমরা কী বুঝি সেটা প্রথমেই সংক্ষেপে আলোচনা করে নেওয়া যাক। আইনস্টাইনের তৃতীয় গবেষণাপত্র অন দ্য ইলেক্ট্রোডাইনামিক্স অব মুভিং বডিজ থেকে সৃষ্টি হয়েছে থিওরি অব রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার তত্ত¡। চলমান দর্শকের কাছে দৈর্ঘ্য, ভর আর সময়ের প্রচলিত ধারণাগুলো কীভাবে ভেঙে পড়ে এই তত্তে¡ মূলত সেটাই বলা হয়েছে। অপেক্ষবাদের আলোচনাতে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে ‘সবকিছুই আপেক্ষিক’। এটা বহুল প্রচলিত একটা ভুল ধারণা। আসলে ভৌত জগতের সবকিছু একজন পর্যবেক্ষক বা নির্দেশ কাঠামো সাপেক্ষে আপেক্ষিক। ধরা যাক, ঢাকা থেকে বগুড়াগামী একটা ট্রেনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এই গতিটা আমরা মাপছি ভূমির সাপেক্ষে; অর্থাৎ ভূমি এখানে নির্দেশ কাঠামো। পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির জন্য ভূমিও গতিশীল। কিন্তু সাপেক্ষতা বুঝতে এই গতিকে গণনায় নেওয়ার দরকার পড়ে না। আবার ধরা যাক ট্রেন ‘ক’ ঢাকা থেকে বগুড়া যাচ্ছে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে। পাশের লাইন দিয়ে ট্রেন ‘খ’ একই দিকে যাচ্ছে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে। এক্ষেত্রে ট্রেন ‘ক’ এর সাপেক্ষে ট্রেন ‘খ’ এর গতি ৬০ কিলোমিটার। আর যদি তারা বিপরীত দিকে চলে তাহলে পরস্পরের সাপেক্ষে তাদের গতি ১৪০ কিলোমিটার। দুটি ট্রেন-ই যদি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে একই গতিতে চলে তাহলে তারা পরস্পরের সাপেক্ষে স্থির।

ধরা যাক, আপনি জাহাজে করে খুলনা থেকে ঢাকা যাচ্ছেন। মাস্তুলের দিকে তাকিয়ে আপনি কিন্তু বলতে পারবেন না স্টিমারটা স্থির না গতিশীল। কারণ এই দুটি ভিন্ন অবস্থাতেই আপনার সাথে মাস্তুলের দূরত্ব অপরিবর্তিত থাকবে। আপনি যদি জানালা দিয়ে বাইরে তাকান তাহলে দেখবেন তীরের গাছপালার সাপেক্ষে আপনার স্টিমার এগিয়ে যাচ্ছে। এর অর্থ মাস্তুলের সাপেক্ষে স্থির হলেও নদীতীরের সাপেক্ষে আপনি গতিশীল। আপনার স্টিমারটা যখন বুড়িগঙ্গায় ঢুকে পড়বে, ধরা যাক তখন তীরের সাপেক্ষে আপনার স্টিমারের গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার। এসময় পানির বিপরীতমুখী স্রোতের গতি যদি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার হয় তাহলে স্রোতের সাপেক্ষে আপনার গতি হবে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার। পানির নিচের মাছগুলো দেখবে স্টিমারটা ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া স্টিমারের ক্ষেত্রে স্রোতের সাপেক্ষে স্টিমারের গতি হবে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। কিন্তু তীরের সাপেক্ষে সেটা হবে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি কোন কিছুর গতি মাপার ক্ষেত্রে আমরা একটা নির্দেশ কাঠামোকে মানি- সেটা হতে পারে স্থির, গতিশীল, সমমুখী বা বিপরীতমুখী।

মূল আলোচনায় আসা যাক। এক সময় স্থান, কাল এবং ভরকে পরম বলে ভাবা হতো। এটা ছিল চিরায়ত বলবিদ্যার একটা স্বতঃসিদ্ধ। ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা গ্রন্থে নিউটন দাবি করেন, সময়ের প্রকৃতি ধ্রুব, বাস্তব এবং গাণিতিক। বাইরের কোন অনুষঙ্গ দিয়ে প্রভাবিত হওয়া ছাড়াই তা নিজে এবং নিজের মধ্যে সুষম গতিতে প্রবাহিত হয়। আইনস্টাইন বললেন, এই তিনটি ধারণার সবগুলোই আপেক্ষিক। পরম স্থান, পরম কাল এবং পরম ভর বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। মূলত এই মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই তিনি তার অপেক্ষবাদ প্রণয়ন করেন। ১৯০৫ সালে অন দ্য ইলেক্ট্রোডাইনামিক্স অব মুভিং বডিজ নামক পেপারে তিনি প্রস্তাব করেন বিশেষ অপেক্ষবাদের। তাতে তিনি দাবি করলেন (১) সমবেগে চলমান সকল পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মাবলী অভিন্ন এবং (২) শূন্য মাধ্যমে চলা আলোর গতিবেগ সকল পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে ধ্রুব এবং তা আলোর উত্স এবং পর্যবেক্ষকের গতি নিরপেক্ষ। সূত্রের প্রথম অংশ থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে অসমবেগে চলমান সকল পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মাবলী ভিন্ন। তাহলে কি ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলমান দুই জন পর্যবেক্ষকের কাছে পদার্থবিজ্ঞান ভিন্ন আচরণ করবে? হ্যাঁ। ব্যাপারটা আসলে তা-ই।

অপেক্ষবাদ বলছে, একজন চলন্ত পর্যবেক্ষকের সময় একজন স্থির পর্যবেক্ষকের চেয়ে ধীর গতিতে চলে। ধরা যাক আপনি একটা বিমানে করে ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে এলেন। যাবার সময় আপনি দুটো ঘড়ির সময় মিলিয়ে একটা বাসায় রেখে গেলেন। ফিরে এসে সময় মেলাতে গেলে দেখবেন আপনার ঘড়িটা ৮ ন্যানো সেকেন্ড শ্লথ। ন্যানো সেকেন্ড হলো এক সেকেন্ডের একশ’ কোটি ভাগের এক ভাগ সময়। অর্থাত গতিশীল থাকার কারণে পৃথিবীতে বসে থাকা আপনার বন্ধুদের চেয়ে আপনি কিছুটা বেশি সময় কাটিয়ে ফেললেন। এভাবে মহাকাশ স্টেশনে যে নভোচারীরা ছয় মাস কাটিয়ে আসেন তাদের জীবনের সাথে যোগ হয় ০.০০৭ সেকেন্ড সময়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে রাশিয়ার মহাকাশচারী সের্গেই ক্রিকলায়েভ মহাকাশ স্টেশনে আটকা পড়েন। তার ফেরার কথা ছিল সদ্য স্বাধীন কাজাকাস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোমে। রাজনৈতিক সংকটে সেটা পিছিয়ে যায়। তিনি একনাগাড়ে ৮০৩ দিন মীর নামে যে মহাকাশ স্টেশনে করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছেন তার গতি ছিল সেকেন্ডে সাড়ে পাঁচ মাইল। অভিযান শেষে তিনি দেখতে পেলেন তার ঘড়ি পৃথিবীর অন্য ঘড়িগুলোর তুলনায় ০.০২ সেকেন্ড পিছিয়ে আছে। পুরা এক সেকেন্ডের কাল প্রসারণ উপভোগ করতে চাইলে ক্রিকলায়েভকে ঐ মহাকাশযানে কাটাতে হতো ১০৯ বছর।

ছবি: গুগল ইমেজ (ওপেন সোর্স) থেকে সংগৃহীত।

কোন কিছুর গতি যত বৃদ্ধি পাবে তার সময় তত বেশি স¤প্রসারিত হবে। আলোর গতির ৯৯.৯% গতিতে মহাকাশে কেউ চার বছর কাটিয়ে এলে দেখবে পৃথিবীতে ১৪ দিন পার হয়েছে। আপনি যদি আলোর গতির ৯৯.৯৯% গতিতে চলতে পারে এমন কোন মহাকাশযানে করে পৃথিবীর বাইরে কোথাও এক দিনের জন্য বেড়াতে যান তাহলে আপনি সময় পাবেন ৭ দিন। অর্থাত শুক্রবার সকালে রওনা দিয়ে মহাকাশে ৭ দিন কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে দেখবেন ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। আপনি শনিবার বিশ্রাম (তা তো নিতেই হবে। আপনি তো পুরা ৭ দিন ভ্রমণে ছিলেন!) নিয়ে রোববার অফিস করবেন। আপনার মহাকাশযানের গতি যদি আলোর গতির আরও কাছাকাছি, ৯৯.৯৯৯৯৯৯% এ নিয়ে যেতে পারেন তাহলে মহাকাশে দুই বছর কাটিয়ে এসে দেখবেন পৃথিবীতে এক দিন পার হয়েছে। গতিটা আরও বাড়িয়ে ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯% করা হলে আপনি মহাকাশে ৬১,২৮৬ বছর কাটিয়ে এসে দেখবেন পৃথিবীতে এক দিন পার হয়েছে। ধরা যাক হাসান এবং হোসেন একইসাথে জন্মগ্রহণ করে ৬০ বছর পর একইসাথে মরে গেল। হাসান উপরের শেষ ভ্রমণটা করে এসেছে। হোসেন বরাবর পৃথিবীতেই ছিল। হিসাব করলে দেখা যাবে, হাসান বেঁচে ছিল (মহাকাশে ৬১,২৮৬ বছর + পৃথিবীতে ৫৯ বছর, ৩৬৪ দিন=) ৬১,৩৪৫ বছর ৩৬৪ দিন। হোসেন বেঁচে ছিল ৬০ বছর; তবে সে পৃথিবীতে হাসানের চেয়ে এক দিন বেশি বেঁচে ছিল।
ভৌত জগত সম্পর্কে ধারণা পাবার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সময় সম্পর্কিত আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। সময়কে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত এই তিন স্তরে ভাগ করাকে আইনস্টাইন ব্যাখ্যা করেছেন বিভ্রম হিসেবে; তার ভাষায় ‘স্টাবরনলি পারসিস্টেন্ট ইলিউশন’; যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘নিবিষ্টভাবে ধারাবাহিক বিভ্রম’। চিরায়ত বলবিদ্যায় সময় ছিল ধ্রুব। যেমন যে কোন একটি নিদিষ্ট সময়ের দৈর্ঘ্য সকল পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে একই। অপেক্ষবাদ বলছে পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে সময়ের দৈর্ঘ্য ভিন্ন হবে। একজন স্থির পর্যবেক্ষকের দুই মিনিট একজন গতিশীল পর্যবেক্ষকের দুই ঘণ্টা, দুইশ বছর বা দুই হাজার বছরের সমান হতে পারে। চিরায়ত বলবিদ্যা সময়কে বাস্তব এবং একই অর্থে পরম বলে ধরে নিয়েছিল। অপেক্ষবাদের ধারণায় কীভাবে সেটাকে আপেক্ষিক বলা হলো সে বিষয়ে পরের অনুচ্ছেদে কিছু আলোচনা করা যাবে। তার আগে দেখা যাক সময় গাণিতিক নয় কীভাবে। দুই মিনিটের সাথে দুই মিনিট যোগ করলে ফলাফল চার মিনিট পাবার কথা। কিন্তু সেটা সবসময় পাওয়া যায় না। আমি ঘরে বসে আমার ঘড়ি ধরে দুই মিনিট কাটালাম এবং আমার বন্ধু ৯৯.৯৯% গতিতে চলমান মহাকাশ যানে দুই মিনিট কাটালো। আমাদের অতিবাহিত করা সময়কে যোগ করলে চার মিনিট পাবার কথা। কিন্তু কাল প্রসারণের সুবিধা পেয়ে আমার বন্ধু ঐ দুই মিনিটের মধ্যেই কাটিয়ে ফেলবে ২৩ ঘণ্টা ২০ সেকেন্ড। চিরায়ত বলবিদ্যার চার মিনিটে আমরা দুই বন্ধু বাস্তবে কাটিয়ে ফেলব ২৩ ঘণ্টা ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড।

বিশেষ অপেক্ষবাদের দ্বিতীয় অংশে বলা হচ্ছে আলোর গতিবেগ সকল পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে ধ্রুব। পাশাপাশি লাইনে বিপরীতমুখী দুটি ট্রেনের গতি যদি ঘণ্টায় ৬০ ও ৪০ কিলোমিটার হয় তাহলে ট্রেন দুটি পরস্পরকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করবে। ট্রেন দুটি যদি সেকেন্ডে ২০০,০০০ কিলোমিটার এবং ২৫০০০০ কিলোমিটার গতিতে বিপরীত দিকে চলে তাহলে তারা পরস্পরকে সেকেন্ড (২০০,০০০+২৫০,০০০=) ৪৫০,০০০ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করার কথা। কিন্তু অপেক্ষবাদ বলছে তারা পরস্পরকে সেকেন্ডে ৩০০০০০ গতিতে অতিক্রম করতে দেখবে। কারণ এটাই পরম গতি। আবার ধরে নেওয়া যাক, কেউ একজন মঙ্গলগ্রহে বসে পৃথিবীর দিকে মুখ করে একটা টর্চ জ্বালিয়ে রেখেছে। আমরাও তাকে লক্ষ্য করে একটা টর্চ জ্বালালাম। প্রচলিত গণিত অনুযায়ী টর্চ দুটির আলো পরস্পরকে সেকেন্ডে ছয় লাখ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করার কথা। কিন্তু তা ঘটবে না। আলোকরশ্মি দুটোর অনুভূতি থাকলে তারা দেখত তারা পরস্পরকে সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করছে।

এই ছবিটিতে দেখুন তিনজন পর্যবেক্ষকের দুইজন আলোর গতির ৮০ ও ৯০ শতাংশ গতিতে পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসছে। অবজারভার A তার হাতে থাকা টর্চ লাইটটি অবজারভার B এর দিকে তাক করে জ্বালিয়ে রেখেছে। অবজারভার ‘B’-র কাছে আলোর গতি (C +.9c+.8c =) 2.7c বা সেকেন্ডে ৮১০,০০০ কিলোমিটার মনে হবার কথা। অবজারভার A-i কাছে আলোর গতি (C- .9c =) 0.1c বা সেকেন্ডে ৩০,০০০ কিলোমিটার মনে হবার কথা। এবং অবজারভার ‘C’-র কাছে সেটা (C +.9c =) 1.9c বা সেকেন্ডে ৫৭০,০০০ কিলোমিটার মনে হবার কথা। কিন্তু এই তিনজন দর্শকের সবাই ঐ টর্চের আলোকে সমান গতিতে (সেকেন্ডে ৩০০,০০০কিলোমিটার) চলতে দেখবে।
(পরের পর্বে সমাপ্য)
hassangorkii@yahoo.com
জানুয়ারি ২২, ২০২২, রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া