হাসান গোর্কি : ধ্রপদী ধারণায় শক্তির একটা অভিন্ন উৎস আছে। এই শক্তির একটা অংশ যখন কোন ক্ষুদ্রতর আধারে স্থানান্তরিত হয় তখন ঐ আধার ক্ষমতাবান হয়। যেমন শক্তির (এই লেখায় শক্তিকে আমরা ক্ষমতার সমার্থক ধরে আলোচনা করবো।) একটা উৎস সূর্য। বিজ্ঞানীদের ধারণায় সূর্য শক্তি পেয়েছে বিগ ব্যাং থেকে। আমরা সেটা দেখিনি। তাই আমরা যা দেখতে পাচ্ছি সেখান থেকে শুরু করলে বুঝতে সহজ হবে। সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি পৃথিবীর তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে রেখেছে যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভব, বিকাশ, বিবর্তন ও বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত। সূর্যের আলো থেকে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উদ্ভিদ নিজের খাদ্য তৈরি করে। এক্ষেত্রে সূর্যরশ্মির মাধ্যমে পাওয়া শক্তিকে সে নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে। আমরা উদ্ভিদ খেয়ে সেই শক্তি আমাদের শরীরে নেই। অন্য প্রাণীরাও একই কাজ করে। আমরা প্রাণীর মাংস খেয়েও সূর্য থেকে পাওয়া শক্তির অংশীদার হই। পানি বা খনি থেকে পাওয়া মিনারেলস থেকে আমরা কোন শক্তি আহরণ করি না। তার অর্থ আমাদের শারিরীক শক্তি ও সক্ষমতার জন্য যে জ্বালানি দরকার তার পুরোটাই সূর্য থেকে আসে। চলাফেরা, দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলাসহ সকল শারীরিক কাজকর্মের জন্য যে জ্বালানি আমরা ব্যবহার করি তা সূর্যের শক্তির পরিবর্তিত রূপ। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি শক্তি বা ক্ষমতা অবরোহী অর্থাৎ এটা উপর থেকে নিচে বা কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে প্রবাহিত হয়। এর বিপরীত ধারনাও আছে। নিচের গল্পটা দিয়ে সেটা বুঝতে চেষ্টা করা যাক।

মহাপরাক্রমশালী এক রাজা পার্শ্ববর্তী রাজ্য দখল করে সম্রাট হলেন। রাজকবি বিপুল মহিমাকীর্তন করে স্তবগান রচনা করলেন। অভিষেকে সহস্র জনতা সমস্বরে গান গাইছে। সম্রাট দেখলেন তারা বিমর্ষ মুখে ঠোঁট মেলাচ্ছে। যে রাজাকে বিতাড়িত করে তিনি এই ভূখণ্ড দখল করেছেন তিনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সম্রাট জনতার বিমর্ষ থাকার কারণ অনুধাবন করলেন। তিনি লক্ষ করলেন শুধু একজন গভীর আবেগ দিয়ে গান গাইছে। অভিষেক শেষে সম্রাট তাকে দরবারে ডেকে এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে পুরস্কৃত করলেন। বিদায় দেওয়ার আগে সম্রাট তাকে জিজ্ঞেস করলেন-
– তোমাকে কেন এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দিলাম সেটা জানো?
– আমার কোন ধারণা নেই মহারাজ।
– স্তোত্র কীর্তনের সময় তোমাকে খুব আবেগতাড়িত দেখাচ্ছিল, যা অন্য কোন প্রজার মধ্যে আমি দেখিনি। তোমার এই নিবেদন আমাকে মুগ্ধ করেছে।
– হে রাজন্য, এরকম স্তুতিময়, সুলিখিত স্তব-সঙ্গীত আমি কখনও শুনিনি। আমি সেসময় আপনার নামের জায়গায় মনে মনে স¤প্রতি বিতাড়িত আমাদের পুরাতন রাজার নাম উচ্চারণ করছিলাম, কারণ এটি তার-ই প্রাপ্য।

সম্রাট তার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বুঝলেন। তিনি উপলব্ধি করলেন এই বিশাল ভুখন্ডের মানুষ, বৃক্ষরাজি, জলাশয়ের মৎস্যকুল, অরণ্যচারী পশুপাখি, সমতলের গুল্ম, ঘাস, লতাপাতা নিজেদের মত স্বাধীন। তিনি তার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা তাদের ওপর চাপাতে পারবেন না। প্রজাদের, বিশ্রাম, স্নানাহার, কর্ম, চিন্তা, অনুভূতি, বিশ্বাস- সবকিছুর নিয়ন্তা তারা নিজেরা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলিকণার সম্মিলন এই ভূখণ্ড তৈরি করেছে। ক্ষুদ্র বীজ থেকে অঙ্কুর, উদ্ভিদ, বিটপ, গুম, তরু পল্লব, অরণ্য ফল-ফলাদি তৈরি হয়েছে। এক এক জন ব্যক্তি প্রজা অন্যের সাথে মিলে তৈরি করেছে জনসমষ্টি। এরা সম্রাটের কতোটা অধীন!

সম্রাট নিজেকে প্রশ্ন করলেন তিনি কি কোন গুল্মের ফুল ফোটা বন্ধ করতে পারেন? পত্র-পল্লবে বয়ে চলা সমীরণকে অন্য পথে নিতে পারেন? চাঁদের কোমল আলোয় স্নান করতে থাকা প্রজাদের মনের প্রশান্তিটুকু কেড়ে নিতে পারেন? কারো কল্পনা, ঘৃণা, ভালবাসা, আবেগকে মুছে দিতে পারেন? তার মনে হলো এসবের কিছুই তিনি দিতে বা কেড়ে নিতে পারেন না বা এসবের কিছুই তাদের দিতে পারেন না। তিনি ক্ষমতার উৎস নন। একজন নিরন্ন প্রজা তার স্বতঃপ্রবৃত্ত সক্ষমতার যতটা প্রয়োগ করতে পারে তিনিও ভিন্ন কর্মক্ষেত্র থেকে বস্তুত তা-ই পারেন। সম্রাট তার বিশাল কর্মযজ্ঞের বোঝা মাথায় নিয়ে দিনাতিপাত করাকে অর্থহীন মনে করলেন এবং এক চন্দ্রালোকিত গভীর রাতে বনবাসে চলে গেলেন।
ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো মনে করেছেন ক্ষমতা কোথাও কেন্দ্রীভূত থাকে না বরং তা ছড়িয়ে থাকে অস্তিত্ত¡শীল সবকিছুর ক্ষুদ্রতম অংশে। তার ভাষায় Power is ‘everywhere’ and ‘comes from everywhere’ (ক্ষমতা সর্বত্র থাকে এবং সব জায়গা থেকে আসে)। জন কীটস তার Ode on a Grecian Urn কবিতায় বলেছেন, ‘Thou silent form, dost tease us out of thought, As doth eternity’ অর্থাৎ ‘হে নীরব মূর্তি, তুমি আমাদের মনকে ব্যাকুল করে সকল চিন্তার বাইরে নিয়ে যাও, যেমন নিয়ে যায় অসীম।’ ফুকোর তত্ত¡টা বোঝার জন্য আমরা হাতের কাছে থাকা উদাহরণ দেখতে পারি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নয় মাস পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল। সেসময় খাল, বিল, নদী-নালায় মাছের প্রজনন, গাছে ফল ধরা, জমিতে ফসল উৎপাদন বন্ধ ছিল না। জোয়ার-ভাটা, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যোদয়- সূর্যাস্ত আগের মতো চলেছে। মানুষের বাজার, রান্না, খাওয়া, গোসল, ঘুম, বিয়ে, জন্মদিন অনেকটাই আগের মতো চলেছে। পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলদারিত্বের যে প্রভাব প্রকৃতি ও প্রাণের ওপর ছিল সেটা খুব নগণ্য। সেটা অনেকটা কাগুজে এবং ধারণাগত। মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের খুব কম অংশই এতে প্রভাবিত হয়েছে।

আমার মেজো আপার শ্বশুর বাড়ি বগুড়া, শেরপুরের জামুর নামে একটা নিভৃত গ্রামে। আপার দেবর সাইফুল আত্মীয়তার সম্পর্কের বাইরে আমার ভাল বন্ধুও। তার সাথে একবার ঐ গ্রামে বেড়াতে গেলে সে আমাকে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে তাদের একটা পদ্মপুকুর দেখাতে নিয়ে গেল। এক একর জায়গা জুড়ে একটা পুকুর। গহীন গুল্মে ঢাকা উঁচু পাড়ে তালগাছের সারি। সব গাছেই শুকনো ডাল ঝুলে আছে। কাটা হয়নি। সবুজাভ শ্যাওলাপূর্ণ পানিতে কয়েক সহস্র পদ্মফুল ফুটে আছে। সাইফুল বলল এটা তাদের পুকুর। আমি দেখলাম কয়েকটা বক মাছ শিকারের জন্য পদ্মপাতার ওপর বসে আছে। পানিতে পুচ্ছ নাড়িয়ে কিছু মাছ ঘুরে ঘুরে শ্যাওলা খাচ্ছে, একটা উঁই পোকার ঢিবিতে এক গুচ্ছ সারস মধ্যাহ্ন আহারে ব্যস্ত। আমরা এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারছিলাম না; দিঘির পাড় জুড়ে পিঁপড়াদের আবাস। তারা তাদের রাজত্বে আমাদের বহিরাগত ভেবে কামড়াচ্ছিল। এই পুকুরটার দলিল আছে সাইফুলের বাবার সিন্দুকে। সেটা শেরপুরের ভূমি অফিস থেকে অনুমোদিত। পিঁপড়া, সারস, বক, মাছ, উঁই পোকা এদের কারো সেদিকে ভ্রæক্ষেপ নাই। তারা নিজে নিজে পুকুরের বাস্তব মালিকানা ভোগ করছে; আর সাইফুল তা ভোগ করছে কল্পনায়।
এক ব্যক্তি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বসে চা খাচ্ছে। সে খুলনা যাবে। জাহাজ ছেড়ে যাবার সংকেতমূলক ভেঁপু বাজাচ্ছে। চা দোকানি ই যাত্রীকে সেটা জানালো। যাত্রীর নড়াচড়া নেই। সে আবার এক কাপ চা অর্ডার করে বসে আছে। শেষ ভেঁপু বাজিয়ে জাহাজ ছেড়ে দিলো। এবার উদ্বিগ্ন দোকানি বলল, “আপনার জাহাজ তো চলে গেলো!” যাত্রী বলল, “যাবে কোথায়! টিকেট তো আমার হাতে।” আমরাও কি সাইফুল আর ঐ যাত্রীর মতো অনেক ধরণের টিকেট (ব্যাংকের চেক বই, জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল) হাতে নিয়ে বসে আছি আর নিজেদের ক্ষমতাবান ভাবছি?

২৮ মে, ৫৮৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে যে সূর্যগ্রহণের ঘটবে তার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন থেলিস

সর্বেশ্বরবাদী দার্শনিকগণ প্রকৃতি ও ঈশ্বরকে একই জিনিস মনে করেন। তাদের ধারণা কিছু অণুর সুশৃঙ্খল স্থানীয় সংগঠন প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো অস্তিত্তে¡র জন্ম দেয়। একইভাবে মহাবিশ্বের সকল (বা অসীম) পদার্থের সূ²তম কণাগুলো মিলিতভাবে যে অসীম সত্ত্বার জন্ম দেয় সেটাই প্রকৃতি। স্থানীয় সংগঠন (যেমন, মানুষ) সীমিত জ্ঞান, স্বজ্ঞা ও চৈতন্য ধারণ করে কারণ সে সীমিত উপাদানে গঠিত। প্রকৃতি বিশাল বা অসীম। ফলে তার জ্ঞান ও চৈতন্যও বিশাল বা অসীম। আরএনএ, ডিএনএ, দেহকোষ, রক্তকণিকা, টিস্যু- এসবের ওপর প্রাণী বা উদ্ভিদ-সত্ত্বা ক্ষমতাবান নয়; বরং তারাই সন্মিলিতভাবে সত্ত্বার ওপর ক্ষমতাবান। অন্য কথায় সত্ত্বা গঠিত হয় তাদের দিয়ে। এদের কোন একটা বা একাধিক উপাদানের অনুপস্থিতি সত্ত্বাটি অসম্পূর্ণ বা অকার্যকর করতে পারে। একইভাবে প্রকৃতিও স্থানীয় সংগঠনগুলোর ওপর ক্ষমাতাবান নয়। প্রকৃতি ইচ্ছা করলেই একটা বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম বন্ধ করে দিতে পারে না, যেমন মানুষ ইচ্ছা করলেই তার শরীরের কোষ বিভাজন বন্ধ করতে পারে না। বরং প্রকৃতির গঠন ও অস্তিত্ত¡ নির্ভর করে এর ক্ষুদ্রতম সত্ত্বাগুলোর ওপর।

কক্সবাজার সৈকতের একটা বালিকণা, আমাজন জঙ্গলের বানরের একটা কেশাগ্র, যমুনার জল-প্রবাহ, একটা বন্য কলাবতী, নেপচুনের উপগ্রহ প্রোটিয়াস বা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি- এর যে কোন একটির অনুপস্থিতি প্রকৃতিকে দুর্বল করবে বা অসম্পূর্ণতার দিকে অল্প করে এগিয়ে নেবে। আর এরকম সবকিছুর অনুপস্থিতি প্রকৃতিকে বিলুপ্ত করবে।

খুব স্বল্প উপাদানে গঠিত মানুষ সুশৃঙ্খল চিন্তা করতে পারে। তাহলে প্রকৃতিও কি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে? এই প্রশ্নটা আসলে এসেছে একারণে যে অন্য সব প্রাণীর মতই আমরা আমাদের বুদ্ধির ধরণকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবি। ধরা যাক, কাচ্চি বিরিয়ানিতে চুই ঝাল দিতে হয় কিনা সেটা আইনস্টাইন জানেন না। অথবা স্টিফেন হকিং জানেন না পাথরঘাটা পৌরসভার বর্তমান মেয়রের নাম কী। একারণে তাদের নির্বোধ বলা অনুচিত হবে। কারণ তাদের জ্ঞানের স্তর এতো উঁচু যে এই ধরণের তথ্য তাতে না থাকলে কোন ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। একইভাবে প্রকৃতিকে নির্বোধ ভাবা বোকামি। তার চৈতন্য এতো বিশাল (বা অসীম), সর্বব্যাপী ও সর্ব- অতিক্রমণমূলক (ট্রান্সেনডিং) যে তা প্রাণীদের বোধের তুলনায় অসীম (মহাজগৎ অসীম হবার ক্ষেত্রে) বা প্রায় অসীম (মহাবিশ্ব সসীম হবার ক্ষেত্রে) অনুপাতে আবদ্ধ। ঐ চৈতন্যে প্রাণীদের চিন্তার ধরণ থাকার কারণ নেই। আমার শরীরের একটা লোহিত রক্ত কণিকার চৈতন্যের ধরণের সাথে আমার চিন্তার ধরণে মিল নেই। তার অর্থ এটা নয় যে আমি ঐ রক্ত কণিকার চেয়ে বোকা।

প্রকৃতিবাদের প্রথম ধারণাটি পাওয়া যায় প্রাকসক্রেটীয় দার্শনিক থেলিসের কাছে। তিনিই প্রথম আধিদৈবিক ধারণার পরিবর্তে বিজ্ঞান দিয়ে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছিলেন। একারণে তাকে বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। বিংশ শতকে, উইলার্ড ভ্যান, অরমান কুইন, জর্জ সান্তায়ানা এবং অন্যান্য দার্শনিকগণ প্রকৃতিকে স্বয়ম্ভূ মনে করেছেন। দ্বা›িদ্বক বস্তুবাদীদের মতো তাদেরও বিশ্বাস প্রকৃতির সংগঠনই ভাব বা কারণের জন্ম দেয় এবং একটি কন্টিন্যুয়াম বা অবিচ্ছিন্নতা গঠন করে। ফ্রান্সিস বেকন এবং ভলতেয়ারও এরকমই ভেবেছেন। তাদের বিশ্বাসকে শুদ্ধ ধরে নিলে ক্ষমতাকে অবরোহী ভাবার সুযোগ কমে যায়। অন্যদিকে ভাববাদী দার্শনিকরা বলছেন, কারণ থেকে বস্তু এবং ঘটনার অবভাসের জন্ম, চূড়ান্ত অর্থে বস্তুর অস্তিত্ত¡ নেই। যা আছে তা হল অগণিত বৈদুত্যিক কণার নিরন্তর অভিঘাত এবং সেটা ভাবের মধ্যেও আছে। ভাবের প্রতিফলনেই বস্তুর অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। ভাব ছাড়া বস্তুর অস্তিত্ব নিশ্চিত করার অন্য কোন উপায় নেই। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,
“আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে,
জ্বলে উঠল আলো
পুবে পশ্চিমে।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’,
সুন্দর হল সে।”
ভাববাদী দার্শনিকরা মনে করেন ‘কারণ’ বা ‘ভাবে’র একটা বস্তু-নিরপেক্ষ উপস্থিতি আছে এবং ক্ষমতার প্রবাহ অবরোহী। সহজ কথায় কোন একটা ভাব বা কারণ (যেমন ঈশ্বর) থেকে উৎসারিত ক্ষমতা সবকিছুতে প্রবাহিত হয় এবং গ্রহীতারা ক্ষমতাবান হয়। কিন্তু এই ক্ষমতা মূল কারণের অনুজ্ঞা ছাড়া কোথাও কার্যকর হয় না। যেমন জলীয় বাষ্প ‘মূল কারণ’ (যেমন, ঈশ্বর) থেকে পানিতে পরিনত হবার ক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু মেঘ থেকে ঘনীভবনের মাধ্যমে বৃষ্টির ফোঁটায় পরিণত হবার ক্ষেত্রে ‘কারণ’ থেকে অনুজ্ঞা পেতে হয়। এভাবে মানুষ, সকল প্রাণী, উদ্ভিদ অবরোহী ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। পদার্থকণা ভাঙতে থাকলে একসময় তাকে আলো বা শক্তির আকারে পাওয়া যায়। ভাববাদী দার্শনিকরা এটাকে ‘কারণ’ এর প্রাধান্য মানছেন। সেটা যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে মেনে নিতে হয় যে মূল ‘কারণ’টিও বস্তু নির্ভর। অর্থাৎ ঈশ্বরের একটা অবয়ব আছে যা আকারে অসীম।

শিবের গীত থেকে ধান ভানায় ফেরা যাক। ক্ষমতা আরোহী না অবরোহী পদ্ধতিতে প্রবাহিত হয় এ’ ব্যাপারে এতো আয়োজন করে লিখতে শুরু করা লেখকের মতামত তো জানা গেল না! এক্ষেত্রে ‘ছোট আপা’র মত যা লেখকের মতও তা-ই। আরও অস্পষ্ট হয়ে গেল? আমার বড় ভাই-ভাবি বাসায় দুই মেয়ে এবং একটা কাজের মেয়েকে রেখে বাইরে তালা দিয়ে নিউমার্কেটে গেছেন। ফিরে এসে দেখেন প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে গেছে। ভেতরে কান্নাকাটির শব্দ। দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলে সবাই একসাথে বলল যে তারা ভূত দেখেছে। কাজের মেয়েকে আলাদা করে নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো সে কী দেখেছে। সে কিছুতেই উত্তর দিতে রাজি হয় না। এক সময় প্রবল চাপের মুখে সে বলল, “ছোট আপা যা দেখেছে আমিও তা-ই দেখেছি।” পরে জানা গেল ছোট আপা বাতাসে পর্দা নড়তে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিল। লেখকের ছোট আপার নাম জানতে চান? থেলিস অব মাইলেটাস।
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া। hassangorkii@yahoo.com