হাসান গোর্কি : এখন থেকে ঠিক ৪১২ বছর আগে ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও নিজের তৈরি দুরবিন দিয়ে চাঁদ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি খুব স্পষ্ট কিছু দেখতে পাননি; কিন্তু পৃথিবীর বাইরে মানুষের দৃষ্টি স¤প্রসারণের সেটাই শুরু। এ সময়ের মধ্যে মহাকাশবিদ্যা কতটা এগিয়েছে সে খবর রাখার সময় খুব কম মানুষেরই আছে। তবে জীবনে অন্তত একবার ঔদাস্যভরে তারাভরা অতলান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে এর অন্তহীনতার কথা ভেবে ব্যাকুল বিস্ময়ে দিশেহারা হননি মানসিকভাবে সুস্থ এমন লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই কম। আকাশটা কত বড়? মানুষ তার জিজ্ঞাসার সমস্ত ঐকান্তিকতা দিয়ে, মেধার সমগ্র প্রাখর্য ব্যয় করেও এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনদিনই পাবেনা। অনুমানটা কেন এমন সিদ্ধান্তমূলক সে প্রশ্নের উত্তর পেতে একটা সংক্ষিপ্ত কাগুজে নক্ষত্রলোক পরিভ্রমণের আয়োজন করা যেতে পারে।

প্রথমেই দেখা যাক আমাদের এ সৌরজগতটা কত বড়। আমাদের অনাদি আবাস এ পৃথিবীর উপরিতলের ক্ষেত্রফল একশ আশি কোটি ছিয়াশি লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। কেউ যদি প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা পরিভ্রমণ সম্পন্ন করতে শুরু করে তাহলে পুরো পৃথিবীটা একবার দেখে শেষ করতে তার মোটামুটি ত্রিশ বছর লেগে যাবে। আর যদি সে একটু আয়েশ করে কাজটা করতে চায় এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করে তাহলে লাগবে আঠারো’শ বছর। অর্থাৎ গুপ্ত সাম্রাজ্যের উষালগ্নে ভ্রমণ শুরু করলে এতদিনে সে তা শেষ করতে পারতো। অসংখ্য পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সমতল ভূমি, সাগর-মহাসাগর, উপত্যকা-অধিত্যকা, মরুভূমি, বন-বাদাড় মিলিয়ে পৃথিবীর যে আকৃতি তা একেবারে ফেলে দেয়ার মত নয়। এই যে বিশাল পৃথিবী, যার গায়ে আমরা পিঁপড়ার মত হেঁটে বেরাচ্ছি, তার থেকে যথাক্রমে সাতশ আর তেরোশ গুন বড় শনি আর বৃহস্পতি গ্রহ। বৃহস্পতি যদি একটা ফুটবলের সমান হয় পৃথিবীটা তাহলে হবে একটা মটর দানার সমান। সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ, উপগ্রহ এবং গ্রহাণুর সম্মিলিত ভর এই দানব গ্রহের ভরের অর্ধেকের চেয়েও কম। কিন্তু সূর্যের তুলনায় গ্রহটি নিতান্তই ক্ষুদ্র। সূর্যের পেটে অনায়াসে হাজারটা বৃহস্পতির জায়গা হবে।

সে হিসেবে সূর্য পৃথিবীর চেয়ে তেরো লক্ষ গুন বড়। প্লুটো দেড় দশক আগে গ্রহের মর্যাদা হারিয়েছে। নেপচুনকে যদি আমরা সৌরজগতের দূরতম গ্রহ হিসেবে ধরি তাহলে সৌরজগতের আয়তন দাঁড়ায় একশ ষাট লক্ষ কোটি কোটি ঘন কিলোমিটার। সৌরজগতের এক প্রান্ত থেকে যদি রাইফেলের একটা গুলি ছোঁড়া হয় এবং সেটা যদি সেকেন্ডে এক কিলোমিটার গতিতে চলতে থাকে তাহলে সৌরজগতের অন্য প্রান্তে পৌঁছুতে গুলিটির সময় লাগবে প্রায় দুইশ পঞ্চান্ন বছর। পলাশির যুদ্ধের সময় গুলিটি ছোঁড়া হলে সেটি সৌরজগতের অন্য প্রান্তে পৌঁছুত আজ থেকে মাত্র ৯ বছর আগে- ২০১২ সালে। ভিয়া রেলে বিরতিহীন ছুটে চললে এ দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগবে দশ হাজার বছর। পৃথিবীর প্রস্তর যুগের শেষ দিকে রওনা দিলে ট্রেনটি এখন গন্তব্যের কাছাকাছি থাকতো। হিসেবটা আরেকটু সহজ করে বলার চেষ্টা করা যাক। পৃথিবীর বিষুবরেখা বরাবর একটা মোটর গাড়ি যদি আলোর গতিতে চালিয়ে দেয়া যায় তাহলে প্রতি সেকেন্ডে সেটা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে সাড়ে সাত বার। চাঁদ, সূর্য ও প্লুটোতে পৌঁছুতে গাড়িটির সময় লাগবে যথাক্রমে দেড় সেকেন্ড, সাড়ে আট মিনিট ও সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। আর গাড়িটার গতি যদি আমরা স্বাভাবিক (ধরা যাক ১০০ কিমি/ঘন্টা) রাখি তাহলে ঐ গন্তব্য তিনটিতে পৌঁছুতে গাড়িটির সময় লাগবে যথাক্রমে ১৮৭ বছর, ৯৫,৩৭০ বছর, ৩৮,১৪,৮০০ বছর। সৌর পরিবারের সবচেয়ে দূরের বাসিন্দা প্লুটো তার কক্ষ পরিক্রমায় প্রতিদিন পাড়ি দেয় পঁচিশ লক্ষ মাইল (পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের দশ গুন) পথ। এভাবে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে তার সময় লাগে দুইশ আটচল্লিশ বছর ছয় মাস। তার অর্থ কোন যানে চেপে ঘন্টায় এক লাখ মাইল বেগে সৌর জগতকে প্রদক্ষিণ করে আসতে সময় লাগবে আড়াইশ বছর।

সৌরজগত যে একটা বিশাল অস্তিত্তে¡র নাম এ হিসেব থেকে সেটি সম্ভবত পরিস্কার হওয়া গেছে। কিন্তু যখন শুনি গ্যালাক্সির তুলনায় আমাদের সৌরজগত নিতান্ত ক্ষুদ্র একটা ধুলিকণা বা কুয়াশাকণার মত অর্থহীন কোন অস্তিত্তে¡র প্রতিকৃতি তখন কিছুটা বিস্মিত-ই হতে হয় বৈ কি! আমাদের সূর্য যে গ্যালাক্সির সদস্য অর্থাৎ আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি তার নাম মিল্কিওয়ে; বাংলায় ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা। আমরা রাতের আকাশে যে ক্ষীণপ্রভ তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলতে দেখি তার সবগুলোই (শুক্র, বৃহস্পতি আর মঙ্গল গ্রহ বাদ দিয়ে) আসলে আমাদের সূর্যের মত এক একটি সূর্য: অকল্পনীয় বিশাল আকৃতি আর অমিত তেজের ভয়াবহ অগ্নিগোলক। সেগুলো সেকেন্ডে লক্ষ কোটি টন হাইড্রোজেন, মিথেন বা অন্য কোন গ্যাস পুড়িয়ে মহাশূন্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিপুল মাত্রার উত্তাপ। আমাদের এ গ্যালাক্সিতে সূর্যের মত নক্ষত্রের সংখ্যা চল্লিশ হাজার কোটি। পৃথিবীর জীবিত মানুষদের মধ্যে যদি ছায়াপথের মালিকানা বন্টন করা হয় তাহলে আমরা প্রত্যেকে প্রায় ষাটটি করে সূর্য, ৪০০টি করে গ্রহ এবং ৪০০০টি করে উপগ্রহের মালিক হবো।

ছায়াপথটা কত বড়? আন্ত-নাক্ষত্রিক দূরত্ব পরিমাপে আমাদের ব্যবহৃত এককসমূহ (মাইল বা কিলোমিটার) প্রায় অচল। তাই উদ্ভব ঘটেছে বৃহত্তর নতুন এককের। আলো এক বছর ধরে কোন একটি নির্দিষ্ট দিকে ছুটে চললে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করবে সেই দূরত্বকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন আলোকবর্ষ। শুনতে সময়ের একক বলে মনে হলেও এটি আসলে দূরত্বের একক। ছায়াপথ গ্যালাক্সির ব্যাস এক লক্ষ আলোকবর্ষ। কেউ যদি কোন অলৌকিক যানে চেপে সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল (আর একবার পড়ুন, “সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল” এবং গতিটা মাথায় নিতে চেষ্টা করুণ) গতিতে অবিরাম ছুটতে পারে তাহলে গ্যালাক্সিটা আড়াআড়ি পাড়ি দিতে তার এক লক্ষ বছর সময় লাগবে।

সূর্যের পরে আমাদের সবচেয়ে কাছের তারা প্রক্সিমা সেন্টরি (অন্য নাম আলফা সেন্টরি) থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছুতে লেগে যায় সোয়া চার বছর। পরিধি বরাবর মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে প্রদক্ষিণ করে আসতে আলোর লাগবে তিন লাখ চৌদ্দ হাজার বছর। এ হিসেবে মিল্কিওয়ে প্রদক্ষিণ করে আসতে সমবেগে চলমান একটা রাইফেলের গুলির লাগবে আলোর তুলনায় তিন লক্ষ গুন বেশি সময়- প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি বছর।

সূর্যের অবস্থান গ্যালাক্সি কেন্দ্র থেকে ত্রিশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। প্রতি পঁচিশ কোটি বছরে সূর্য গ্যালাক্সির মধ্যে তার কক্ষপথে একবার ঘুরে আসে পুরো সৌরজগত সাথে নিয়ে। পৃথিবীটা প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে আঠারো মাইল বেগে ছুটে এক বছরে সূর্যের চারিদিকে তার কক্ষ পরিক্রমা শেষ করছে; আবার সূর্যের সাথে গাছপালা, মানুষ, পশুপাখি, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগরসহ অনন্ত মহাশূন্যে ছুটে যাচ্ছে বুলেটের গতির দুইশ গুন গতিতে। প্রতিদিন সূর্যের সাথে শুধু গ্যালাক্সির মধ্যেই আমরা পাড়ি দিচ্ছি সোয়া কোটি মাইল পথ। আমরা যতক্ষণ অফিসে থাকি (ধরা যাক সকাল ১০টা – বিকেল ৪টা) সে সময়ের মধ্যেই মহাশূন্যে আমরা একত্রিশ লক্ষ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ফেলি। এ হিসেবে ষাট বছর আয়ুস্কালের একজন মানুষ তার জন্মস্থান থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি মাইল দূরে মৃত্যুবরণ করে। অন্যান্য গ্যালাক্সির মত আমাদের গ্যালাক্সিও মহাবিশ্বের প্রান্তসীমার দিকে বিপুল গতিতে ছুটে যাচ্ছে। এ গতিকে যদি আমরা সেকেন্ডে হাজার বিশেক মাইলও (বিজ্ঞানীরা বলছেন এটা লক্ষ মাইলও হতে পারে) ধরি তাহলে ঐ ব্যক্তি ভিন্ন আর একটি দিকে তার জম্মস্থান থেকে ত্রিশ লাখ কোটি মাইল দূরে মৃত্যুবরণ করে। পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির জন্যে আমাদের শরীরে সঞ্চিত থাকে দুটি গতি। অর্থাৎ একজন আপাত স্থির (ধরা যাক ঘুমন্ত) অথবা গতিশীল (ধরা যাক ১০০ মিটার স্প্রিন্ট-এ দৌড়াচ্ছে এমন) মানুষও একই সাথে চারটি ভিন্ন দিকে ভয়ঙ্কর গতিতে ছুটে যাচ্ছে। যুদ্ধ, জলোচ্ছ্বাস, সামরিক অভ্যুত্থান, নবান্ন, বিশ্বকাপ ফুটবল, কবিতা উৎসব -ইত্যাদি যা কিছুই আমরা প্রত্যক্ষ করছি তার সবকিছুই ঘটছে পৃথিবী নামক একটা ছুটন্ত মহাকাশযানের পিঠে। বিষয়টা বিস্ময়কর বটে। তবে বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয় বরং বলা যেতে পারে শুরু।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্যালাক্সির সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি। অনেকের ধারণা সংখ্যাটা দুই ট্রিলিয়ন (দুই লক্ষ কোটি)। তবে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা ১০ হাজার কোটির মত বলে মনে করা হয়। এর সবগুলোই মোটামুটি তিরিশ হাজার কোটি থেকে দুই লাখ কোটি নক্ষত্র এবং আনুপাতিক হারে গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে নিঃসীম আকাশ গাঙে উর্ধশ্বাসে পরম্পর থেকে দূরে ছুটে যাচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সির নাম এ্যান্ড্রোমিডা – যার অবস্থান ছায়াপথ থেকে তেইশ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে। এর আনুমানিক ব্যাস এক লক্ষ কুড়ি হাজার আলোকবর্ষ; নক্ষত্রের সংখ্যা এক লাখ কোটি। আর দূরতম গ্যালাক্সিটি রয়েছে প্রায় চৌদ্দশ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে পুঞ্জীভূত অবস্থায় থাকার একটা স্পষ্ট প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এরকম পুঞ্জগুলোকে বলা হয় ক্লাস্টার। মিল্কিওয়ে যে আঞ্চলিক পুঞ্জের সদস্য সেখানে রয়েছে প্রায় কুড়িটি ছায়াপথ। এগুলোর গড় দূরত্ব প্রায় পঁচিশ লক্ষ আলোকবর্ষ। এই আঞ্চলিক পুঞ্জগুলো প্রান্তহীন মহাকাশে এক একটি নিঃসঙ্গ দ্বীপের মত।

আবার এই ক্লাস্টারগুলো মিলে গঠন করেছে ‘সুপার ক্লাস্টার’ বা অতিগুচ্ছ। এক একটি সুপার ক্লাস্টারের ব্যাস হতে পারে তিন থেকে দশ কোটি আলোকবর্ষ। একটা ক্লাস্টারকে যদি আমরা একটা দ্বীপ বলি তাহলে সুপার ক্লাস্টারকে বলতে হয় দ্বীপমালা। এর একটি থেকে আরেকটিতে যেতে বিশাল শূন্যস্থান পারি দিতে হবে। ক্লাস্টারের অন্তর্গত গ্যালাক্সিসমূহ এবং সুপার ক্লাস্টারের অন্তর্ভূক্ত ক্লাস্টারগুলো অবিশ্বাস্য গতিতে পরম্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে মিনিটে এদের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে হাজার কোটি বা লক্ষ কোটি ঘন কিলোমিটার। কিন্তু এদের আয়তনের তুলনায় এই বৃদ্ধিটা এতই নগন্য যে পৃথিবী থেকে লাখ খানেক বছর ধরেও যদি লক্ষ রাখা যায় তাহলেও এদের আয়তনে কোন পার্থক্য ঘটেছে বলে বোঝা যাবে না।
কেউ যদি এমন কোন দূরত্বে পৌঁছুতে পারে যে সে পুরো মহাবিশ্বটাকে উভয়দিকে ১৮০ ডিগ্রী বিস্তৃতিতে (পুরো আকাশ জুড়ে) একবারে দেখতে পায় তাহলে সে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে দেখবে একটা ছয় মাত্রার নক্ষত্রের (আকাশে খালি চোখে দৃশ্যমান ক্ষীণতম নক্ষত্রকে এভাবে চিহ্নিত করা হয়) মত ক্ষীণপ্রভ, অনুজ্জ্বল আলোকবিন্দু। আবার আমরা যাকে মহাবিশ্ব বলছি সেটিও যে প্রকৃত মহাবিশ্বের তুলনায় ধূলিকণার মত ক্ষুদ্র একটা কিছু নয় তা-ই বা বলি কি করে! হয়তো আমাদের জানা মহাবিশ্বের মত হাজার কোটি মহাবিশ্ব অস্তিত্ব রয়েছে পুরো মহাজগত জুড়ে। কোপার্নিকাসের সময় যে মহাবিশ্বের কথা আমরা জানতাম তার তুলনায় বর্তমানে মানুষের জানা মহাবিশ্বের আয়তন কোটি কোটি কোটি গুন বা তার থেকে বেশি। ‘কোটি কোটি কোটি’ অর্থ ১ কোটিকে ১ কোটি দিয়ে গুন করে যে গুনফল পাওয়া যাবে তাকে আবার ১ কোটি দিয়ে গুন করলে যে সংখ্যা (১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০) পাওয়া যায় সেটি।

বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের যে আয়তন হিসেব করেছেন তা বস্তুতঃ আমাদের কল্পনাশক্তিকে অকেজো করে দেয়। তাদের বর্তমান হিসেব অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আয়তন একশ কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি ঘন আলোকবছর। আজ থেকে পাঁচশ বছর পর জ্যোতির্বিদরা যদি দাবি করে বসেন, আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রকৃত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক অতি ক্ষুদ্র অংশ এবং মহাজগতে প্রতিনিয়তই ‘বিগ ব্যাং’ জাতীয় বিস্ফোরণ ঘটছে তাহলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। অতএব গোটা মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি, পরিধি, অতীত, ভবিষ্যৎ কল্পনায় গণিত, পদার্থবিদ্যা, দর্শনশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা কোন কিছুরই কোন ভূমিকা আসলে নেই। এক্ষেত্রে মানুষের সকল প্রচেষ্টা একটা অন্তঃসারশূন্য আস্ফালন ছাড়া আর কিছুই নয়।
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, জুলাই১২, ২০২১।