অনলাইন ডেস্ক : ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পাননি মর্মে দিল্লি এবং ঢাকার মিডিয়ায় যে খবর চাউর হয়েছিল তা এক সপ্তাহ আগেই নাকচ করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এমন খবরকে ‘বানোয়াট গল্প’ বলেও আখ্যায়িত করেছে সাউথ ব্লক। ঢাকার তরফে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি। তবে সেগুনবাগিচা এটা নিশ্চিত করেছে যে, আগে কোনো অ্যাপয়েনমেন্টই চাওয়া হয়নি। সরকার প্রধানের সঙ্গে ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনারের ‘কথিত’ সাক্ষাৎ না হওয়ার প্রশ্নে যখন উভয় দেশের মিডিয়া সরগরম ঠিক সেই মুহূর্তে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে একটি নোটভারবাল পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ অর্থাৎ অ্যাপয়েনমেন্ট চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ কাল বিলম্ব না করে রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগের মাধ্যমে সেটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবেচনায় পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিনিধি বলছেন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপড়েনের যে গল্প প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে, তা অচিরেই ব্যর্থ হবে। ভারতীয় দূত তো বটেই, এ পর্যন্ত যত বিদেশি দূত সাক্ষাৎ চেয়েছেন (প্যান্ডিং আছে) করোনা পরিস্থিতির খানিক উন্নতি হলেই তারা (প্রত্যেকেই) সরকার প্রধানের মুখোমুখি সাক্ষাৎ পাবেন।

প্রত্যেকটি অ্যাপয়েনমেন্টের বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকার ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছে সেগুনবাগিচা। দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা এ-ও বলছেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ চাননি। তার অ্যাপয়েনমেন্ট সংক্রান্ত কূটনৈতিক পত্রে ‘বিদায়’ বিষয়ক কোনো কিছুরই উল্লেখ নেই। ফলে চাহিত সাক্ষাৎকে সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেই বিবেচনা করছে সরকার। তাছাড়া চূড়ান্তভাবে বিদায়টি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে চাওয়া বা নেয়াই রেওয়াজ। রাষ্ট্র প্রধানের অ্যাপয়েনমেন্ট এখনো চায়নি হাইকমিশন। ফলে সরকার প্রধানের প্রস্তাবিত সাক্ষাৎকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেই বিবেচনা করছে সেগুনবাগিচা।

উল্লেখ্য, চার মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না হাইকমিশনার গাঙ্গুলী- এমন সংবাদ নাকচ করে গত ৩০শে জুলাই নয়াদিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সেদিনের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সম্পর্কে শিথিলতা বিষয়ক বিভিন্ন অভিযোগও খণ্ডন করার চেষ্টা করেন মুখপাত্র। একটি উৎসে (পত্রিকায়) থেকেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে বেশকিছু ক্ষতিকর গল্প এবং হাইকমিশনারকে জড়িয়ে বানোয়াট তথ্য প্রচারে উষ্মাও প্রকাশ করেন মুখপাত্র শ্রীবাস্তব।

ওদিকে গতকাল প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানা দিক বিশ্লেষণ করেছেন। দীর্ঘ ওই সাক্ষাৎকারে সরকার প্রধানের সঙ্গে তার সাক্ষাতের অ্যাপয়েনমেন্ট চাওয়া না চাওয়া কিংবা পাওয়া না নিয়ে কোনো কথা বলেননি। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর একটি প্রশ্ন ছিল এমন ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের পূর্বপরিকল্পিত অনেক সফর, বৈঠক গত চার মাসে হতে পারেনি। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েছে কি? জবাবে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রীভা সব কিছু খোলাসা না করে বলেন, ‘আমি মনে করি, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ নিয়মিতভাবেই হচ্ছে। ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় মুখোমুখি বৈঠক আমাদের মধ্যে হচ্ছে না, এটা ঠিক। তবে যে বিষয়গুলোতে নজর দেয়া দরকার, সে বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছি। আমি নিজে ২৫টির বেশি ওয়েবনিয়ারে অংশ নিয়েছি।’

ঢাকার প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিস্তৃত ওই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা বলেন ঢাকায় দেড় বছর ধরে দায়িত্বপালনরত (গত বছর মার্চে যোগদান) ওই হাইকমিশনার। বলেন, আমি তো মনে করি, ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে, জোরালো হবে। ২০২১ এ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপন করবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আগামী বছর অনন্য এই সম্পর্ককে আমরা তুলে ধরার বড় সুযোগ পাবো। আমাদের মতো পৃথিবীতে আর দুইটা দেশ নেই যাদের এমন সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ দশক উদ্‌যাপন করার পর পরই ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করবে বলে জানান সাউথ ব্লকে গুরু দায়িত্ব নিতে যাওয়া ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস।