অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে সেখানে সেনা পাঠিয়েছেন। আর তাতেই বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।

বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও গতকাল থেকে সূচক পড়ছে। তেল সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কায় তেলের দাম বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের আগাম কেনাবেচায় আজ এরই মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ৯৮ দশমিক ২১ মার্কিন ডলারে উঠে গেছে, যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড অয়েলের দামও প্রতি ব্যারেল ৯৬ দশমিক ৮২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার আরও সেনা পাঠানোর নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ববাজারে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিতে রাশ টানতে পারে।

ম্যানুলাইফ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের সু ট্রিন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তারা তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে, যা ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে’।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর বলছে,রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা জ্বালানি তেলের মতো বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সোমবার জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২ শতাংশের বেশি ও চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বিত সূচক ১ দশমিক ৪ শতাংশ পড়ে গেছে। এর আগে সোমবারের লেনদেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ, ডাও জোন্স ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও নাসড্যাক ১০০ সূচক ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে।
এ ছাড়া গতকাল লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ১ দশমিক ২৪ শতাংশ ও এফটিএসই ২৫০ সূচক ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসের এইএক্স ১ দশমিক ২২ শতাংশ, প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচক ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স ২ শতাংশ পড়েছে।

সিআইএমবি প্রাইভেট ব্যাংকিংয়ের অর্থনীতিবিদ সং সেং উন বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের মনে এখন রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি পরিবহনের খরচও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মিজুহো ব্যাংকের অর্থনীতি ও কৌশল বিভাগের প্রধান বিষ্ণু ভারথান বলেছেন, রাশিয়ার পদক্ষেপগুলো একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের সূত্রপাত করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সেটি ঘটলে প্রথমেই দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে পশ্চিমা দেশগুলো।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ৯০ ডলার অতিক্রম করে। সব মিলিয়ে পণ্যটির দাম চলতি বছরে পর্যন্ত ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৮০ শতাংশ।

বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারে এবং আগামী ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে উঠতে পারে। এর আগে ২০০৮ সালে জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ১৪৭ ডলারে উঠেছিল, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স