সোনা কান্তি বড়ুয়া : ধর্মের ছদ্মবেশে পাহাড়ী জনগণকে গোলাম বানাতে ধর্মান্ধ রাজনীতি! মানবাধিকারের আলোকে বাংলাদেশে আজ পার্বত্য অঞ্চলে (Rangamati Bandarban Khagrachari) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হিসেবে পাহাড়ীদের কাজ করেছে কি? যা কিছু হচ্ছে পাহাড়ীদের পার্বত্য অঞ্চলে সবি নিয়ে রাজনৈতিক টর্নেডো কেন? ধর্মান্ধ সেনা মদদে, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ সেনাবাহিনীর হাতেই জিম্মি। সমতলের অনেক লোকজনই হয়তো এটা বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও – এটাই সত্যি! মুসলমান না হলে কি বাংলাদেশের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না?
বাঙালির পাশাপাশি দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিছপা হবে না বলেই আমরা আশা করতে চাই। বাংলাদেশ বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু ধর্ম ও বহু সংস্কৃতির দেশ- এই সত্যের স্বীকৃতি দিতে হবে সংবিধানসহ জীবনের সবক্ষেত্রে।
ধর্মান্ধ পাকিস্তান সরকার কোন আইনে পাহাড়ীদের বেঁচে থাকার অধিকার ধ্বংস করতে রাঙামাটি শহর পানির তলে ডুবিয়ে দিয়ে কাশ্মরীরের ও প্যালেল্টাইনের মানুষের অধিকারের জন্য কুমিরাশ্রু বর্ষণ করে? মানুষ জাতি পরম করুণাময় আল্লাহের আমানত। পাহাড়ী জনতার অশ্রু নিয়ে কর্নফুলির কান্না এখন ও থামেনি।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধে সব হারানো পাহাড়ী জনসাধারণ একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার ১০ বছর আগে পাকিস্তান সরকার ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে চাকমা রাজবাড়ীসহ পুরানো রাঙামাটি শহর!, মারমা, মুরং, খ্যাং সকল পাহাড়ীদের মাথার উপরে থাকা এক চিলতে টিনের ছাউনি দেয়া বসত বাড়ি। পানির অতল তলে তলিয়ে দিয়েছে পাহাড়ীদের গ্রাম্য বাজার, লোকালয়। কিশোরির চিরচেনা স্কুল, বুদ্ধমন্দির, বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় এবং স্বপ্নের সিঁড়ি সব কিছু সলিল সমাধি। দারিদ্র পীড়িত ও জামায়াত নির্যাতিত পাহাড়ী মানুষগুলোর দুঃখ-দুর্দশার বিষাদ সিন্ধু এক বেদনার্ত কাব্যচিত্রে পরিণত হয়েছে গোটা রাঙামাটি জেলা। ধর্মের ছদ্মবেশে পাহাড়ী জনগণকে গোলামবানাতে ধর্মান্ধ রাজনীতি! পাহাড়ী জনতা অশ্রু নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ! স্বাধীনতা আছে সবি কি মুসলমান রাজনীতির? পাকিস্তানী আমলে ১৯৬০ সালের সেদিন শত শত বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বুকে নিয়ে পুরানো রাঙামাটি শহর কাপ্তাই বাঁধের পানির নীচে চলে গেল।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় পার্বত্য শান্তিচুক্তি। আজ সেই চুক্তি ২৩টি বছরে পর্যাপ্ত হয়েছে পাহাড়ী জনতার অশ্রু নিয়ে ধর্মান্ধ রাজনীতির পার্বত্য শান্তিচুক্তি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার এখনো পর্যন্ত পাহাড়ে কোন শান্তি দিতে পারেনি। বরং সরকার আদিবাসীদের ৪টি দলে বিভক্ত করে বৈষম্য সৃষ্টি করে দিয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্য ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ১৮.১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, আদিবাসীদের জমি, জলাধার এবং বন এলাকায় সনাতনী অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদ সরকার পাহাড়িদের দমন-পীড়নের পাশাপাশি বাঙালি পুনর্বাসনের মাধ্যমে পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করার কৌশল গ্রহণ করে। প্রায় দুই দশক সশস্ত্র সংঘর্ষের পর ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি। এরপর ২০০১ সালে শান্তিচুক্তির বিরোধিতাকারী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে চুক্তি বাতিল না করলেও চুক্তির বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির করে রেখেছিল।
দুই বছরের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে পার্বত্য অঞ্চলে মোবাইল ফোন চালুর বিষয়টি পাহাড়িদের জন্য ছিল এক অগ্নিপরীক্ষা। যাঁরা আশঙ্কা করতেন, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু হলে পাহাড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে, তাঁদের আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। এবারের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও পাহাড়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার পুনরাবৃত্তি করবে না বলেই আশা করা যায়। সামরিক পথে পার্বত্য সমস্যার সমাধান মিলবে না- এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে রাজনৈতিক পথেই। শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয়বারের মতো সে লক্ষেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য জনপদের মানুষ তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে পুনর্বার তাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেছেন। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে এই সরকারের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।
প্রথম আলো (৩০ জুলাই ২০০৯) REPORTED পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক অস্থির জনপদের নাম। সরকারের মেয়াদ এক যুগ পেরিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ: দশান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর আরও ৩৫টি ক্যাম্প ও তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়নসহ একটি সম্পূর্ণ ব্রিগেড প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। … শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন ধাপে নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ২০০টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সরকার নতুন এই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে!
মোটকথা, তিন পার্বত্য জেলায় সিভিল প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে স্থানীয় মতাকাঠামোর নিয়ন্ত্রকের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমাদের বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর গত ১১ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে কোনো ধরনের যুদ্ধাবস্থা নেই। দু-একটি বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র ঘটনার যে চিত্র আমরা দেখতে পাই, তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম। সুতরাং পাহাড়ে সশস্ত্র অবস্থা বিরাজমান- এই অজুহাতে এখানে কোনোভাবেই অতিমাত্রায় সেনা মোতায়েত করা যুক্তিসংগত নয়। অধিক সেনা মোতায়েনের ফলে এখানে যে বিপুল টাকার অপচয় হয়, সেনা প্রত্যাহার করে সেই টাকা পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে এবং এলাকাবাসীর জীবনমানের বিকাশে ব্যয় করা যেতে পারে।
পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহারের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে যেমন স্থিতিশীলতা আনবে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে।
সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সর্বস্তরের জনগণ ও নাগরিক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। কিন্তুু এদিকে চোরের মায়ের বড় গলা সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে মুখে বলে কিন্তুু কাজে মিল নেই বরং আরও নতুন সেনাক্যম্প মোতায়েন করা হচ্ছে সবার কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন যে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অবস্থানরত পাঁচ ব্রিগেড থেকে প্রাথমিকভাবে মাত্র এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার পরও সেখানে যে বিপুল পরিমাণ সেনাসদস্য অবস্থান করবেন, তা দেশের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে কয়েক গুণ। বিএনপি-জামায়াত আর কিছু বামপন্থী নামধারী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এ ইস্যুতে অকারণ বিরোধিতার ধোঁয়া তুলে পরিস্থিতি বাঁকা পথে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে- এটি কোনোভাবেই পার্বত্যবাসীর জন্য মঙ্গলকর হতে পারে না। তবে যারা বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়, তাদের কথা ভিন্ন। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমেই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে বা সব সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে এই সিদ্ধান্ত পাহাড়িদের প্রতি সরকারের আস্থার প্রতিফলন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এখানে একটি কথা বলা খুবই জরুরি যে সেনা প্রত্যাহার বা সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমানোই বড় কথা নয়, পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর ‘অসীম ক্ষমতা’ সীমিত করাও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনী রয়েছে- রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য যা থাকা জরুরি। পার্বত্য অঞ্চলেও সেনাবাহিনী থাকতে হবে। তবে পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানরত সেনাবাহিনী যেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে পাশ কাটিয়ে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করতে পারে তা নিশ্চিত করা দরকার। অপারেশন দাবানল, অপারেশন উত্তরণসহ বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে ১৯৭৭ সালে পাহাড়ী জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল General Zia সরকারের মদমত্ত রাজনৈতিক টর্নেডো। একদিকে যেমন মানুষের রক্তে হোলিখেলা হলো মাটির উপর তেমনি আরেক দিকে মা-বোনের ইজ্জত পর্যন্ত অব্যাহতি পেলো না ধর্মের ঠিকাদারদের ভোগ লালসা থেকে। মানুষের দরবারে অত্যাচারিতের দুঃখের দহনে করুণ রোদনভরা ফরিয়াদে বাংলার আকাশ বাতাস কেঁদে কেঁদে গুমরে উঠেছিল। মৌলবাদী জঙ্গীরা নারী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদেরকে আক্রমণ করে। ধর্ম নিয়ে ভয়ঙ্কর রাজনীতি করতে গোলমেলে আল্লাহ রসুল বলতে বলতে একাত্তরের রক্তাক্ত প্রান্তরের ছবি দেখা যায় আজকের বাংলাদেশ জে এম বি সন্ত্রাসী দলে।
পাহাড়ী জনতার অশ্রু নিয়ে ধর্মান্ধ রাজনীতির পার্বত্য শান্তিচুক্তি। আজ পার্বত্য অঞ্চলে মুসলমান রাজনীতির ভীতির কবলে হিন্দু বৌদ্ধ ও চাকমা, মারমাসহ ১৪ উপজাতি! ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এ বঙ্গবন্ধু ফ্রিডম স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতিতে সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.এফ.এম আওরঙ্গজেব এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণ।
পুষ্পস্তবক অর্পণকালে উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.এফ.এম. আওরঙ্গজেব বলেন, “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। রেসকোর্স ময়দানের এই ভাষণ বাঙালি জাতির মনোবল বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। জাতির জনকের অবিসংবাদিত সেই ভাষণ আমাদের বীরের জাতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করেছে যার স্বীকৃতি হিসেবে জাতিরজনকের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সেই ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।”
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে ২০০১ সালে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জোট সরকারের মদমত্ত রাজনৈতিক টর্নেডো। একদিকে যেমন মানুষের রক্তে হোলিখেলা হলো মাটির উপর তেমনি আরেক দিকে মা বোনের ইজ্জত পর্যন্ত অব্যাহতি পেলোনা ধর্মের ঠিকাদারদের ভোগ লালসা থেকে। মানুষের দরবারে অত্যাচারিতের দুঃখের দহনে করুণ রোদনভরা ফরিয়াদে বাংলার আকাশ বাতাস কেঁদে কেঁদে গুমরে উঠেছিল। মৌলবাদী জঙ্গীরা নারী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদেরকে আক্রমণ করে। ধর্ম নিয়ে ভয়ঙ্কর রাজনীতি করতে গোলমেলে আল্লাহ রসুল বলতে বলতে একাত্তরের রক্তাক্ত প্রান্তরের ছবি দেখা যায় আজকের বাংলাদেশ জে এম বি সন্ত্রাসী দলে।
ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি ধর্মের ছদ্মবেশে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারতের জনগণকে গোলাম নানো হয়েছে! ধন্য আশা কুহীকিনীর ইহলোকে হিংসা-বিদ্বেষের নানা চেহারা। মানুষের এই অনিত্য সংসারে ধর্ম, রাজনীতি, আঞ্চলিকতা, ভাষা, জাতি, গোষ্ঠি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ও গায়ের রং নিয়ে মানুষ মানুষকে হত্যা করে চলেছে দিনের পর দিন। দেশের উক্ত বিষাদ সিন্ধুময় ঘটনা জনগণমন ও “কর্ণফুলীর কান্না” শীর্ষক ডকুমেন্টারীতে অব্যক্ত বেদনা ছবি হয়ে আছে। ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যবাদে আক্রমণের শিকার হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম কেন? জোর করে মুসলমান করেছে বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের! মোহাম্মদ বিন কাশিম dated 21 June 712 A. D. এবং মুসলমানদের রাজনীতি বৌদ্ধদের হাত থেকে বৌদ্ধ দেশ এবং আফগানিস্তানের বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি কেড়ে নিল! এর পর ভারতে মোহাম্মদ বিন কাশিম বিভিন্ন স্থানে লুট ও পৈশাচিক হত্যাকান্ড চালিয়ে বাদর নামক স্থানে সিন্ধুর রাজা দাহিরের উপর অর্তকিত আক্রমণ চালালেন। দাহিরের সেনাবাহিনীতে ৫০০জন আরব মুসলিম চাকরি করতেন। তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় রাজা দাহির পরাজিত ও নিহত হলেন! ভারতে দিনটি ছিল ২১শে জুন ৭১২!
প্রথম বাংলা বইতে বুদ্ধের দর্শন এবং বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস জুড়ে বাংলা ভাষা চর্চায় চর্যাপদের দান বিরাজমান সত্বে ও বঙ্গাব্দ রচনায় বৌদ্ধ সভ্যতা এবং বাংলা ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধকে বাদ দেওয়া হল কেন? আর মাত্র একটি বছর বাকি! তারপর হবে মুক্তির পথ খোঁজা।
আমাদের আর একটি বছর বাকি আছে, তারপর ২৪টি বছর পরিপক্ব হবে। যদি ২৪ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না করে তাহলে আমাদের করার কিছুই নেই। শুরু করতে হবে যুদ্ধ। তাই সকলে প্রস্তুত হোন।
পাহাড়ীদের মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা স্যারের উক্তি:- যারা মরতে জানে পৃথিবীতে তারা অজেয়। যে জাতি বেচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে পারে না, পৃথিবীতে তাদের বেচে থাকার
কোন অধিকার থাকতে পারে না।রাজনৈতি পথ দিয়ে পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যার সমাধান দূর করতে হবে?
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে সরকারের ইতিবাচক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে চলেছেন। ২৯ এপ্রিল সফররত ফ্রান্সের নৌ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেছেন, দবর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সরকারের প্রাথমিক পদেক্ষেপে মনে হচ্ছে, সরকার সে পথেই এগোচ্ছে।
দীর্ঘ দুই দশকের সশস্ত্র আন্দোলন, রক্তয়ের পর অনেক প্রচেষ্টার ফসল পার্বত্য শান্তিচুক্তি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে চুক্তি স্বারের পর আওয়ামী লীগ সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিল; কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে তারা সত্যিকারভাবে গতিশীল পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির পরপরই প্রতিষ্ঠিত ওই অঞ্চলের প্রধানতম রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ শুরু থেকেই পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল। তারাও এখন কিছুটা নমনীয় হয়েছে। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ইউপিডিএফও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন চাইছে। তাই সরকারের উচিত হবে, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।
চুক্তির অন্যতম প্রধান ও মৌলিক কাজ ভূমিবিরোধ নিরসন। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি সময়ভিত্তিক সূচি প্রণয়ন করে তা অনুসরণ করা উচিত। এতে চুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত হতে পারে। এটা আশা করা খুব অমূলক হবে না যে সরকারের সদিচ্ছা লোকদেখানো না হলে এ সরকারের সময়ই পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হবে।
খুবই বিস্ময়কর ও দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের কোনো স্বীকৃতি নেই। তারা যেন দনিজভূমে পরবাসী’। পার্বত্য অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) কর্তৃক গণপরিষদে উত্থাপিত (১৯৭২) আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নাকচ হয়ে গিয়েছিল। ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ সংবিধান প্রণেতারা এ দায় এড়াতে পারেন না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে রাঙামাটিতে এক জনসভায় বলেছিলেন, দআজ থেকে তোমরা সবাই বাঙালি হয়ে যাও’- তাঁর এ বক্তব্যে পাহাড়িদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নিপীড়নমূলক পথে অগ্রসর হননি ঠিকই, তবে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে তাঁর কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল- এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালে নিয়মতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে এম এন লারমা সশস্ত্র বিপ্লবের পথ গ্রহণ করেন।
বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান সমস্যা ভূমিবিরোধ ও ভূমিদখল। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১২ বছর হতে চলল, কিন্তু এখনো এ সমস্যার কোনো পরিপূর্ণ সমাধান হলো না। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও পার্বত্য অঞ্চলে এখনো ভূমিদখল এবং বহিরাগত বাঙালিদের বসতি স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়িদের ভূমিদখল বন্ধ করতে হলে এর পৃষ্ঠপোষকদেরও থামাতে হবে- এ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দউপজাতি’ শব্দটির পরিবর্তন করে তাদের আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বলে অভিহিত করা হবে। ১৯৯৭ সালে সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তির দলিলে দউপজাতি’ শব্দটি পরিহার করার সাহস দেখায়নি; ১২ বছরের ব্যবধানে সেই সরকারই যখন দউপজাতি’র পরিবর্তে দআদিবাসী’ বা দক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ শব্দ ব্যবহার করতে উদ্যোগী হয়, তখন তা সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা যায়। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষজন নিজেদের কী নামে পরিচয় দিতে আগ্রহী, সে বিষয়ে তাঁদের চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাহাড়ি আদিবাসী ও সমতলের আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দীর্ঘ তিন যুগ পর আবার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ মতায় এসেছে। এই সংসদে আদিবাসী স¤প্রদায় থেকে পাঁচজন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে দুজন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় সরকারি দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই সংগত কারণেই আমাদের প্রত্যাশা, তাঁরা আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে সংসদে উত্থাপন করবেন। সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৫৪তম বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীও সংবিধানে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবির প্রতি সহমত পোষণ করেছেন।
সাংবিধানিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কারণ, পার্বত্য অঞ্চল ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য রয়েছে পৃথক বিধিবিধান। যেমন: ১৯০০ সালের শাসনবিধি ও ১৯৯৭-এর পার্বত্য চুক্তির কার্যকারিতা যেমন সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তেমনি সমতলের আদিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য অনেক আইন-কানুনও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপযোগী নয়। তাই সংবিধানে পাহাড়ি আদিবাসী ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক বিধান রাখা অপরিহার্য।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!