ইব্রাহীম চৌধুরী, নিউইয়র্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমেরিকার ইতিহাসে যা আগে কখনো হয়নি, আসছে নির্বাচনে এমন কিছুই ঘটতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নির্বাচনে হেরে গেলে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করতে পারেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া ভোট গণনায় বিলম্ব হতে পারে, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে মামলা হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। আমেরিকার রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে মামলা আগেও হয়েছে। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো লোক কী করবেন—এ নিয়ে কেউ ভাবতে পারছেন না। তিনি একসময় বলেছেন, হারলে ক্ষমতা ছেড়ে অন্য কাজ করবেন। তবে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বিষয়ে এখনই তিনি কিছু বলতে পারছেন না।
প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএন এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে আসছে নভেম্বরে নির্বাচন–পরবর্তী ফলাফল নিয়ে সম্ভাব্য মতবিরোধের জের ধরে পরিস্থিতি নাজুক হতে হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটে কারচুপির কথা আগে থেকেই বলে আসছেন। নির্বাচনের ফলাফল তাঁর পক্ষে না এলে ট্রাম্প কী বলবেন, তা কেবলই অনুমান করা যেতে পারে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য থেকে। ২০১৬ সালে আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি ইলেকটোরাল ভোটে। এর আগেও জর্জ বুশ ও আল গোরের মধ্যকার নির্বাচনে ফ্লোরিডার ভোটের ফলাফল নিয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ হয়েছিল। সেখানেও ডেমোক্র্যাটদের বিপক্ষে গিয়েছিল ফল।
এবারের নির্বাচন এর মধ্যেই জটিল হয়ে উঠেছে। আমেরিকাজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। নভেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমেরিকার সবগুলো রাজ্যে একই নিয়মে নির্বাচন হয় না। এবারে বহু রাজ্য আগে থেকেই ডাকযোগে আগাম ভোট গ্রহণের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। কোনো কোনো রাজ্যে এ নিয়ে এখনো তেমন প্রস্তুতি নেই। আবার কিছুটা থাকলেও তা সীমিত। এবারে ডাকযোগে আগাম ভোট বেশি হবে এবং নির্বাচনের ফলাফল পেতেও অনেক বিলম্ব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি ডাকযোগে আগাম ভোটের নানা কারসাজি নিয়ে এর মধ্যেই কয়েক দফা বক্তব্য রেখেছেন, টুইটও করেছেন।
১৯ জুলাই ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন কি না। জবাবে তিনি বলেছেন, দেখতে হবে কী হয়। এখনই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’, কিছু বলতে চাইছেন না।
জাতীয়ভাবে জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছেন। আগেই ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ধারণা করছেন, আগামী নির্বাচন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কারচুপির নির্বাচন হবে। তাঁর এ ধারণার জের ধরে ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল বৈরী হলে কী করবেন, এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে।
নির্বাচনে হারলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডাকযোগে আগাম ভোট নিয়ে ব্যাপক কারচুপির কথা বলবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এ নিয়ে আগে থেকে কথা বলে ক্ষেত্র তৈরি করে রাখছেন তিনি।
গত জুন মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন বলেছিলেন, তাঁর একমাত্র দুশ্চিন্তা হলো ট্রাম্প নির্বাচনে চুরি করার চেষ্টা করবেন। তাঁরা হয়তো জানতেও পারবেন না, কে নির্বাচনে জিতেছেন।
সিএনএনকে দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার থেকে এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘আমরা এখনো জানি না ডেমোক্র্যাটরা আগামী নির্বাচনে কেমন ঝামেলার কাজ করবে। প্রচারণা থেকে বলা হয়েছে, মূল কথা হচ্ছে, অবাধ আর নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই আবার নির্বাচিত হবেন।’
গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছেন সিনেটর রিক সেন্টোরাম। পেনসিলভানিয়া থেকে নির্বাচিত এ রিপাবলিকান সিনেটর সিএনএনকে বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফল যদি খুব কাছাকাছি হয়, তাহলে ট্রাম্প যে এ নিয়ে লড়াইয়ে নামবেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি ফলাফল কাছাকাছি না হলেও তিনি লড়ার চেষ্টা করবেন।
সিনেটর সেন্টোরাম মনে করেন, ফলাফল কাছাকাছি না হলে ট্রাম্প এ নিয়ে ঘাপলা করার জন্য যথেষ্ট সমর্থন পাবেন না, বেশি দূর যেতেও পারবেন না।