সোনা কান্তি বড়ুয়া : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবতা বিরোধী ৯ / ১১-এর প্রতিশোধে মানবতার ট্রাজেডি! সেদিন আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় ২৯৯৬ জন মানুষ। নাইন ইলেভেন হিসাবে পরিচিত এ হামলার ২০ বছর পূর্ণ হলো এমন এক সময়ে, যখন আফগানিস্তানে আল কায়েদাকে আশ্রয় দিয়েছিল যে তালেবান, তারা আবার দেশটির ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর আজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে মাত্র ১০২ মিনিটের মধ্যে ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সদস্যরা সকালে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে হামলা চালায়। ১১ সেপ্টেম্বর হামলার বিংশতম বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ‘নাইন ইলেভেনের’ আলো (রয়টার্স) ছিল!
বাংলাদেশে মৌলবাদীরা ধর্মের মুখোষ পরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে তিলে তিলে ধ্বংস করে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত লিখেছেন, “জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনে ১৯৭০-৮০-র দশকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক অর্থ সরবরাহ পেয়েছে; এসব অর্থ-সম্পদ তারা সংশ্লিষ্ট আর্থ-রাজনৈতিক মডেল গঠনে বিনিয়োগ করেছে; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিনিয়োজিত প্রতিষ্ঠান উচ্চ মুনাফা করছে; আর এ মুনাফার একাংশ তারা ব্যয় করছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে, একাংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রসারে, আর (কখনো কখনো) একাংশ নতুন খাত-প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিতে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে বাংলাদেশে মৌলবাদের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি এবং পাকিস্তান ইসলামের নাম দিয়ে ফতোয়া দিলেন, বাংলাদেশে “অপারেশন সার্চ লাইট” নামে (বাঙালিদেরকে হত্যা কর) ৩০ লক্ষ নর নারীসহ শিশু হত্যা, ২ লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ এবং বুদ্বিজীবি হত্যা নামক অন্ধকার রাজনীতির জন্ম হল! পাকিস্তান রাজনীতির বাংলাদেশী হত্যা যজ্ঞ কেন?
‘নাইন ইলেভেনের’ শোক ও রামুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসযজ্ঞ মানবতা বিরোধী! বাংলাদেশে জামায়াতের মৌলবাদের অর্থনীতি ধারণার প্রবর্তক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ “বাংলাদেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও জঙ্গিবাদ” ‘মর্মার্থ ও করণীয়’-এ তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। বইটি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রকাশ করে! জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় গণসচেতনার ওপর জোর দিয়েছেন ড. বারকাত। তিনি বলেন, গণসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডে সব ধরনের পথ-পদ্ধতি-মাধ্যম ব্যবহার করা প্রয়োজন। তবে সঙ্গত কারণে জুমার নামাজ হয় এমন মসজিদে জুমার খুতবার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে মোট ২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৪০টি জামে-মসজিদে গড়ে প্রতি সপ্তাহে জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করেন ২ কোটি ৬৪ লাখ মুসল্লি, যারা আবার বাড়িতে ফিরে মোট ১০ কোটি ৪৪ লাখ ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
বাংলাদেশে বৌদ্ধ পালরাজাগণ চারশত বছর রাজত্ব করেছিলেন! রামুর জামায়াতের মুসলমান হয়ে বাংলাদেশে ফেইসবুকে কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে আমরা বাংলাদেশে ২৫ হাজার ইসলামী জঙ্গি রামুর বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসযজ্ঞ ট্রাজেডি করতে দেখেছি! কিন্তু ইসলাম ধর্ম অবমাননার অপবাদে রামুর মুসলমান ফেইসবুকে কোরআনের উপর পদচিহ্ন সৃষ্ট অপরাধীদের বিচার দেখিনি। ১৯৭২ সালের ৪ই নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রথম খন্ডে প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানানুসারে বাংলাদেশ SECULAR STATE ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নহে।
বিশ্বমৈত্রী দিয়ে সা¤প্রদায়িকতার দেয়াল না ভেঙে প্রায় সব ধর্ম গ্রন্থকে তাঁদের অনুসারীরা ঈশ্বর বা ভগবানের বাণী মনে করে সে অনুসারে আচরণ করতে গিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতিশোধ নিতে আজ পৃথিবীতে যত অরাজকতা, অন্যায়, অনাচার, জোর, জুলুম এবং খুন ইত্যাদি সমানভাবে করেই যাচ্ছে। জীবন বদলে দেওয়া ‘নাইন ইলেভেনের’ শোক কুড়ি বছর পরে আফগানিস্তানের ঘটনাবলি, সেখান থেকে উৎসারিত অনাগত সন্ত্রাসের সম্ভাবনা বুঝিয়ে দেয়, কিছু কিছু ক্ষতের নিরাময় হয় না, কেবল বিষ ছড়িয়ে যাওয়াই তার কাজ, অন্তের দিকে এগোনোই তার অর্থ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আলবদর চক্র যেখানে সেখানে পুরুষদের বস্ত্র উন্মোচন করে মুসলমানিত্ব পরীক্ষা করা হতো, মুসলমান না হওয়ার একমাত্র শাস্তি ছিল তাৎক্ষনিক মৃত্যু! হিন্দু বৌদ্ধ রাষ্ট্রদ্বয় (ভারত ও ভুটান ) ও মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে (১৭ হাজার Indian and Bhutanese Soldiers died) এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের বিজয় হয়। ২রা জুলাই ২০০৮ সালের লজএ্যানজেলস টামসের লেখক সেলিগ এস হ্যারিসন বিগত জোট সরকারের আমলে অনেক আলকায়দার সশস্ত্র সদস্যগণ চট্টগ্রামের গহন বনে লুকিয়ে লুকিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল পেতে রাখার সংবাদ সংগ্রহ করে লোমহর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বমানবাধিকাররের আলোকে সা¤প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে আমার লেখা আনবিক যুগে বুদ্ধবানী এবং ধ্যানের মূল্যায়ন (বুড্ডিষ্ট থট্ এ্যান্ড মেডিটেশন ইন দি নিউক্লিয়ার এজ্) গ্রন্থে অহিংসা মানবতার পথ! এবং বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিত্ব ও হিংসা মানুষজাতির সর্বনাশের পথ। চীন ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশনী সমিতি ১৯৮৭ সালে আমার লেখা ইংরেজি বই “আনবিক যুগে বৌদ্ধ চিন্তা ও ধ্যান প্রসঙ্গ (বুড্ডিষ্ট থট্ এ্যান্ড মেডিটেশন ইন দি নিউক্লিয়ার এজ্) শীর্ষক বৌদ্ধ গ্রন্থের ত্রিশ হাজার কপি The Corporate Bodz of the Buddha Educational Foundation (Taiwan) ১৯৯৮ সালে আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেসসহ বিশ্বজুড়ে পরিবেশন করেছেন। আমার গ্রন্থে সেবা, ভালোবাসা বা বিশ্বমৈত্রী দিয়ে মানুষের মনের অন্ধকার ধ্বংস করে প্রতিটি মানব মনে মানবতার আলোই আলোকিত বিশ্ব গড়ে তুলবে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় :
“আজি এ প্রভাতে রবির কর /কেমন পশিল প্রাণের ’পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে / প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে / জাগিয়া উঠিল প্রাণ!
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,/ ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ / রুধিয়া রাখিতে নারি।”
বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর বৈশিষ্ট্য ও বিকাশকাল বিশ্লেষণ ও গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয় করে ড. আবুল বারকাত বলেছেন, ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল হুজি-বি’র আনুষ্ঠানিক গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদী জিহাদের প্রথম পর্ব বা ‘দাওয়া’ স্তরের শুরু। অতিক্রম করেছে দ্বিতীয় স্তর ‘ইদাদ’। এখন তাদের অবস্থান জিহাদের তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের মধ্যবর্তী কোনো পর্যায়ে অর্থাৎ ‘রিবাত’ ও ‘কিলাল’-এর মাঝে কোনো একপর্যায়ে। তবে সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণে আমি মনে করি, তাদের অবস্থান জিহাদি সর্বশেষ পর্যায় ‘কিলাল’-এর কাছাকাছি অর্থাৎ তারা ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এ পরিস্থিতি মারাত্মক ও মহাবিপর্যয়কর।
গবেষণার তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা আনুমানিক ২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এ মুনাফার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ ৬৬৫ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে (ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি ইত্যাদি); দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮.৮ শতাংশ ৪৬৪ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশন থেকে; বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুচরা, পাইকারি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ২৬৬ কোটি টাকা আসে ১০.৮ শতাংশ; ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০.৪ শতাংশ ২৫৬ কোটি টাকা; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসে ৯.২ শতাংশ ২২৬ কোটি টাকা; রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে আসে ৮.৫ শতাংশ ২০৯ কোটি টাকা, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে আসে ৭.৮ শতাংশ ১৯৩ কোটি টাকা, আর রিকশা, ভ্যান, তিন চাকার সিএনজি, কার, ট্রাক, বাস, লঞ্চ, স্টিমার, সমুদ্রগামী জাহাজ, উড়োজাহাজের মতো পরিবহন-যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭.৫ শতাংশ বা ১৮৫ কোটি টাকা। বিগত চল্লিশ বছরে (১৯৭৫-২০১৪) মৌলবাদের অর্থনীতি সৃষ্ট ক্রমপুঞ্জীভূত নিট মুনাফার মোট পরিমাণ হবে বর্তমান বাজার মূল্যে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা।
শাহরিয়ার কবির লিখেছেন, “সরকারি দল, বিরোধী দল সবাই আল্লামা আহমদ শফীকে হুজুর বলছে। সবাই জানেন, একাত্তরে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক শর অধিক জঙ্গি সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। হেফাজতের বেশির ভাগ নেতা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত। জঙ্গি মৌলবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। “এই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুন্দর বস্তু হচ্ছে Historical ancient বুদ্ধ মূর্তি, ইঁঃ ধর্মের মিথ্যা মতবাদ দিয়ে তারা ১৯৯২ সালে ধ্বংস করেছে বিশ্ব ঐতিহ্যর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন আফগানিস্থানের সে বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তি। দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে ৭৭০ শতাব্দী পর্যন্ত বামিয়ান বৌদ্ধ সংস্কৃতির তীর্থস্থান ছিল। পুনরায় ৮৭০ থেকে ৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আবার বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। যারা কলা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছে তাদেরকে মানবজাতি কখনও ক্ষমা করবে না। পৃথিবীতে এমন একটা জাতি আছে যারা যুগে যূগে ধর্মের দোহাই দিয়ে শান্ত বিশ্বকে যুদ্ধের মাধ্যমে অশান্ত করেছে। সুন্দর সভ্যতা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছে। ধ্বংস করেছে সপ্তম শতাব্দীর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় নালান্দাকে।
বৌদ্ধগণ রামুর বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে বেড়ানোটা বাংলাদেশে কতটা মারাতœক। একবার মন ভেঙে গেলে ভাঙা মন নিয়ে দিন কাটানোটা কতটা কষ্টকর তা শুধু যার মন ভেঙেছে সেই বুঝতে পারে। এই পৃথীবিতে যাদের একবার মন ভেঙে যায় তারা হয়তো আর ঠিকমতো নিজেকে গুছিয়ে তুলতে পারে না আগের মতোন করে। ইসলামি ধর্মান্ধন্ধগণের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেলো না। আসক্তি ভুলিয়েছে মনুষ্যত্ব, অন্ধকারে লেখা হচ্ছে নির্যাতনের গাথা!
৯ /১১ সন্ত্রাসের দু’দশক পূর্তির আর চার দিন বাকি। তার আগে শুরু হচ্ছে মূল চক্রী খালিদ শেখ মহম্মদের বিচার। গত ১৫ বছর ধরে কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারগারে বন্দি পাক বংশোদ্ভূত জঙ্গি খালিদের বিচার শুরুর কথা মঙ্গলবার জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ার এবং পেন্টাগনে বিমানহানার পিছনে নিজের ভূমিকার কথা অবশ্য আগেই স্বীকার করেছিলেন খালিদ। ২০০৬ সালে আমেরিকার একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলবন্দি খালিদ জানিয়েছিলেন, তিনি ৯/১১ হামলার অন্যতম চক্রী। আমেরিকায় মুসলিমদের প্রতি নানা ‘অন্যায় আচরণ’ তাঁকে প্রতিশোধ নিতে প্ররোচিত করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নাইন ইলেভেন হামলার পরেই শুরু হয় আফগানিস্তানে যুদ্ধ যাতে সময় লেগেছে ১৯ বছর, ১০ মাস, তিন সপ্তাহ এবং দুই দিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসাব মতে এই যুদ্ধে মারা গেছে কমপক্ষে ২৩২৫ জন আমেরিকান সৈন্য। ঠিক কতজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে তা কেউ জানে না।
নাইন ইলেভেনের হামলার ঠিক নয়দিন পরই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবিøউ বুশ ঘোষণা করলেন, “প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক অঞ্চলকে এখন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারা হয় আমাদের সঙ্গে আছেন, অথবা আপনারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আছেন।’ এরপর ‘সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হলো। এই ঘোষণার পর প্রথমে আফগানিস্তান এবং তারপর ইরাকে আক্রমণ চালানো হলো। ইরাকে এই সংঘাতে প্রায় ৪৫০০ আমেরিকান সেনা সদস্য এবং লক্ষ লক্ষ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর উত্থান ঘটলো। হাজার হাজার সৈনিক এবং তার চেয়ে আরও বহু গুণ বেসামরিক মানুষ নিহত হলো।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা এ দেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়েছে, তার নজির ইতিহাসে খুব বেশি নেই। “ক্ষমতার দম্ভ, খ্যাতির দম্ভ, বিত্তের দম্ভ এসব কিছুই নিমিষেই যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। বড় কোনো শক্তির কাছে নয়। অতি ক্ষুদ্র এক আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের কাছে। পুরো দুনিয়াটাকে অচলাবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস। তাই আমাদের সব রকমের দম্ভকে যেন আমরা সবসময় নিয়ন্ত্রণের মাঝেই রাখি। ভাইরাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কত স্বার্থপর আমরা! যে দেশ-ধর্ম-বর্ণ আর গোত্রেরই হোক।
যত জঙ্গি গ্রুপ ও সমর্থনকারী সংস্থা : বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাÐ-সংশ্লিষ্ট অথবা জঙ্গিবাদ সমর্থনকারী ইসলামী সংস্থাগুলো হলো- (সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ও কালো তালিকাভুক্তসহ) আফগান পরিষদ, আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস যুব সংঘ (এএইচজেএস), আহলে হাদিস তবলিগা ইসলাম, আহসাব বাহিনী (আত্মঘাতী সুইসাইড গ্রুপ), আল হারামাইয়েন (এনজিও), আল হারাত আল ইসলামিয়া, আল ইসলাম মারর্টারস ব্রিগেড, আল ইসলামী সংঘতি পরিষদ, আল জাজিরা, আল জিহাদ বাংলাদেশ, আল খিদমত, আল কুরত আল ইসলামী মারর্টারস, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল মুজাহিদ, আল কায়দা, আল সাঈদ মুজাহিদ বাহিনী, আল তানজীব আল উম্মাহ, আল্লার দল (সরকারিভাবে কালো তালিকাভুক্ত), আল্লার দল ব্রিগেড (আত্মঘাতী দল), আল ইয়াম্মা পরিষদ, আমানাতুল ফারকান আল খাইরিয়া, আমিরাত-ই-দিন, আমরা ঢাকাবাসী, আনজুমানে তালামজিয়া ইসলামিয়া, আনসার-আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ মুসলামিন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) (২০০৫ সালে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত), আরাকান আর্মি (্এ এ), আরাকান লিবারেশন ফ্রন্ট (এএলপি), আরাকান লিবারেশন পার্টি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, আরাকান পিপুলস আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), ইউনাইটেড স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব আরকান মুভমেন্ট, ইবতেদাদুল-আল মুসলিমা, ইকতেদুল তালাহ-আল মুসলেমিন, ইকতেদুল তুলাহ-আল-মুসলেমিন (আইটিএম), ইন্টারন্যাশনাল খাতমে নব্যুয়ত মুভমেন্ট, ইসলাহুল মুসলেমিন, ইসলামী বিপ্লবী পরিষদ, ইসলামী জিহাদ গ্রæপ, ইসলামী লিবারেশন টাইগার অব বাংলাদেশ (আইএলটিবি), ইসলামী প্রচার মিডিয়া, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ইসলামী সমাজ (সরকারিভাবে কালো তালিকাভুক্ত), ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (সারকারিভাবে কালো তালিকাভুক্ত), ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, ইয়ং মুসলিম, এবতেদাতুল আল মুসলামিন, এহসাব বাহিনী, ওয়ারেট ইসলামিক ফ্রন্ট, ওয়ার্ড ইসলামিক ফ্রন্ট ফর জিহাদ, ওলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যানাত (সরকারিভাবে কালো তালিকাভুক্ত), কালেমায়ে-জামাত, কালেমা-ই-দাওয়াত (অধ্যাপক আবদুল মজিদ এ দলের প্রধান), কতল বাহিনী (আত্মঘাতী গ্রæপ), খাতেমী নব্যুয়াত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশ (কেএনএপিবি), খাতেমী নব্যুয়াত কমিটি বাংলাদেশ, খিদমত-ই-ইসলাম, খিলাফত মজলিশ, খিতল-ফি-সাবিলিল্লাহ, খিলাফত-ই- হুক্মত, ছাত্র জামায়েত, জাদিদ-আল-কায়েদ, জাগ্রত মুসলিম বাংলা, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) (২০০৫ সালে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত), জামাত-এশ-সাদাত, জামায়াত-উল-ইসলাম মুজাহিদ, জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) (২০০৫ সালে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত), জামাত-ই-মুদারাসিন বাংলাদেশ, জামাত-ই-তুলবা!
জামাত-ই-ইয়াহিয়া, জামাত-উল-ফালিয়া, জামাতুল ইসলাম মুজাহিদ, জামাতে আহলে হাদিস, জামেয়া মোহাম্মদিয়া আরাবিয়া, জামিয়াতি ইসলামী সলিডারিটি ফ্রন্ট, জামিয়াতুল ইয়াহিয়া উত তুরাজ, জঙ্গি হিকমত, জয়শে-মুস্তাফা, জয়শে-মোহাম্মদ, জামাতুল-আল-শাদাত, ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আরাকান, ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরকান (এনইউপিএ), নিজামায়ে ইসলামী পার্টি, ফার ইস্ট ইসলামী, তা আমির-উল-দীন বাংলাদেশ (সরকারিভাবে কালো তালিকাভুক্ত), তাহফিজ হারমাইন, তামির উদ্দিন বাংলাদেশ, তানজিম বাংলাদেশ, তানজিন-ই-খাতেমি নব্যুয়ত, তাওহিদী জনতা, তাওহিদ ট্রাস্ট (সরকারিভাবে কালো তালিকাভুক্ত), দাওয়াত-ই-ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলাম রক্ষা কমিটি, বাংলাদেশ জামায়াত-উল-তালাবা-ই-আরাবিয়া, বাংলাদেশ সন্ত্রাস বিরোধী দল, বিশ্ব ইসলামী ফ্রন্ট, মজলিশ ই তাফিজা খাতেমি নব্যুয়ত, মুজাহিদ অব বাংলাদেশ, মুজাহিদী তোয়াবা, মুসলিম লিবারেশন ফ্রন্ট অব বার্মা, মুসলিম মিল্লাত শরিয়াহ কাউন্সিল, মুসলিম মুজাহিদীন বাংলাদেশ (্এমএমবি), মুসলিম রক্ষা মুজহাদিল, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্ডেস ফোর্স, রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, রিভাইভাল অব ইসলামী হেরিটেজ (এনজিও), লিবারেশন মিয়ানমার ফোর্স, লুজমা মককা আল খায়েরা, শাহাদাত-ই-আল হিকমা (২০০৩ সালে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত), শাহাদাত-ই-নব্যুয়াত, শহীদ নাসিরুল্লাহ খান আরাফাত বিগ্রেড (আত্মঘাতী গ্রæপ), সত্যবাদ, সাহাবা সৈনিক, হরকত-ই-ইসলাম আল জিহাদ, হরকাত-উল জিহাদ-আল-ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) (২০০৫ সালে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত), হায়েতুল ইগাসা, হেফাজতে খাতেমী নব্যুয়ত, হিজব-উত-তাহিরির (২০০৯ সালে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত), হিজবা আবু ওমর, হিজবুল মাহাদী, হিজবুল্লাহ আদেলী বাংলাদেশ, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, হিজবুত-তাওহিদ ও হিকমত-উল-জিহাদ!
লেখক : সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!