অনলাইন ডেস্ক : দিন কয়েক আগেই ইউক্রেনকে সামরিক ও নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাস হয়েছে। এরপর বিলটি চলে গেছে ডেমোক্র্যাটিক-সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটে।
এমন অবস্থায় রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলা করা পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে নতুন সামরিক সহায়তা বেশ দ্রুত পাঠাতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জো বাইডেন ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বলেছেন- তিনি ইউক্রেনে নতুন সামরিক সাহায্য পাঠাতে ‘দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন’। মার্কিন আইন প্রণেতারা ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস করার পর তিনি এই কথা জানান।
কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর স্থানীয় সময় গত শনিবার মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বিলটি অনুমোদন করে।
গত শনিবার পাস হওয়া ইউক্রেনের জন্য বিলটিতে দেশটিকে ৬০.৮৪ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন অস্ত্র, মজুত এবং অন্যান্য সুবিধা পুনরায় পূরণ করতে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হবে।
ভোটাভুটিতে বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১টি। বিপক্ষে ১১২ ভোট পড়ে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই বিল পাস হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
এদিকে পাস হওয়া বিল বাস্তবায়নে এখন মার্কিন সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। শিগগিরই তা সিনেটে তোলা হবে। অবশ্য মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সেখানে তাদেরকে এই বিল পাস করা নিয়ে খুব বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে না।
মার্কিন সিনেট মঙ্গলবার বিকেলে প্রাথমিক ভোটের মাধ্যমে নিম্নকক্ষ হাউসের পাসকৃত বিলটি বিবেচনা করা শুরু করবে। পরের সপ্তাহে বিলটি সিনেটে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে। আর এরপরই প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিলে সই করবেন। এর ফলে তা আইনে পরিণত হবে।
বিবিসি বলছে, সিনেটররা যদি মঙ্গলবার প্রত্যাশা অনুযায়ী বিলটি অনুমোদন করেন তাহলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিয়েভে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ ‘উল্লেখযোগ্য’ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাশিয়ার হামলায় খারকিভের একটি টিভি টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পর এই আশ্বাস দেওয়া হয়।
ফুটেজে দেখা গেছে, সোমবার বিকেলে রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের কয়েক সেকেন্ডে লাল এবং সাদা টাওয়ারটি ভেঙে পড়ছে। পূর্ব ইউক্রেনীয় এই শহরটি রাশিয়ান সীমান্ত থেকে মাত্র ১৯ মাইল (৩০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ সিনিয়েহুবভ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, কর্মীরা সেই সময় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। তবে এই হামলার ফলে এই অঞ্চলে টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যাহত হয়েছে বলে সিনিয়েহুবভ জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রুশ বাহিনীর নিরলস বিমান হামলায় খারকিভকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। হামলার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লেখেন, ‘রাশিয়ার স্পষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে শহরটিকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা।’
তিনি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তিনি এই হামলার বিষয়ে অবহিত করেছেন।
এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনকলের একটি রিডআউটে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে সহায়তা করার বিষয়ে তার প্রশাসনের স্থায়ী প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কারণ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই দেশটি তার স্বাধীনতা রক্ষায় লড়ছে।’
হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, বাইডেন ইউক্রেনকে ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, রাশিয়ার আক্রমণের পরে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো তৈরি করতে এবং ইউক্রেন ইউরো-আটলান্টিক একীকরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সংস্কারে সহায়তা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।