অনলাইন ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রম্নত উন্নতি হচ্ছে। তবে রাজধানীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বাড়ছে পানি। এতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা । দেশে বন্যা পরিস্থিতির দ্রম্নত উন্নতি হচ্ছে। গত ৪ আগস্ট বন্যায় আক্রান্ত জেলা ছিল ১৮টি। তিন দিনের ব্যবধানে ছয়টি জেলা বন্যামুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ১২টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত। তিনদিন আগেও ১৭টি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১২টিতে। এছাড়া ২৭টি স্টেশনে তিন দিন আগে পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও এখন হচ্ছে ১৬টি স্টেশনে। শুক্রবার ও গত মঙ্গলবারের (৪ আগস্ট) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ঢাকার আশপাশের নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তারা আরও বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মনু নদী ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের চক্রিবক্রি বদ্ধ জলমহলের বাঁধ ভেঙ্গে ৩টি গ্রাম পস্নাবিত। ধানের বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করে পস্নাবিত এলাকা রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। উপজেলার দ্বীপ বেষ্টিত ৪নং দেলুটি ইউনিয়ন গত ঘূর্ণিঝড় আম্পানে শিবসা নদীর গেওয়াবুনিয়া ও কালীনগরের ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা পস্নাবিত হয়। যার ক্ষয়ক্ষতির রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বুধবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে চক্রিবক্রি বদ্ধ জলমহলের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙে গেওয়াবুনিয়া, পারমধুখালী ও চক্রিবক্রির বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। যাতে আমন ধানের বীজতলা, মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেত পস্নাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, খুলনার জনৈক আনাম চক্রিবক্রির ৩৭ একর জলমহলটিতে মাছ চাষ করে আসছে। অথচ খালের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি বাঁধ মেরামত না করায় বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে জোয়ারের পানির চাপে উত্তরপাশের বাঁধ ভেঙে ৩টি গ্রাম পস্নাবিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, জলমহলটির ইজারা বাতিল করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার রিপোর্ট প্রদানের জন্য কানুনগোকে পাঠানো হয়েছে। টেকসই বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় লাগাতার কমতে শুরু করেছে যমুনা-পদ্মা নদীর পানি। নদী ভাঙন, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে দিশেহারা ভুক্তভোগীরা। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে নগরবাড়ির মথুরা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বন্দি হয়ে রয়েছে পদ্মা ও যমুনা পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি সহায় সম্বল। নদী ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করছে পাউবো। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে দিন দিন বন্যা পরিস্তিতির অবনতি হচ্ছে। প্রায় সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তিন শতাধিক পরিবার উঁচ্ু ব্রিজ,কালভাট, রাস্তা ও আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে। জানা গেছে, বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কাশিয়ানী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে পড়ছে। উপজেলার সিংগা, হাতিয়াড়া, পুইসুর, নিজামকান্দি, মাহমুদপুর, পারুলিয়া, মহেশপুর, সাজাইল ইউনিয়নের মানুষ বেশি ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছে। তিন শতাধিক পরিবারের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রেসহ বিভিন্ন উঁচু রাস্তা ও উঁচু ব্রিজ ও কালভার্টের উপরে বসবাস করছে। তাদের গৃহপালিত পশু তাদের সঙ্গেই বসবাস করছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে এসব অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ পড়ছে চরম বিপাকে। পারুলিয়া ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের গৃহপালিত হাঁস মুরগি গরু ছাগল নিয়ে রাস্তার উঁচু ব্রিজের উপরে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার পারুলিয়া, পুইসুর, হাতিয়াড়া, সিংগা, মাহমুদপুর ইউনিয়নসহ নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ পাকা রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপাকে পড়ছে পথ যাত্রীরা। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে নিম্নাঞ্চলের সঙ্গে উপজেলা ও জেলার যোগাযোগ বিছিন্ন হতে পারে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিরান হোসেন বন্যা পরিস্থিতির কথা নিশ্চিত করে জানান, ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় এবং তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে ও উঁচু রাস্তা ও ব্রিজের উপরে বসবাস করছে। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ জানান, আউশ ৮১২ হেক্টর, আমন ১২৪০ হেক্টর ও সবজি ৫০০ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রথিন্দ্রনাথ রায় জানান, আমি যোগদান করার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।