অনলাইন ডেস্ক : কনরানা দুর্যোগকালীন ক্রেতাসাধারণের কাছে নগদ আর্থিক সুবিধা পৌঁছানোর বিকল্প নেই। অর্থনীতিকে চালু রাখতে হলে ক্রেতা-ভোক্তার হাতে টাকা থাকতে হবে। নইলে হোটেল রেস্তোরাঁ, কারখানা কোনোটাই চালু রাখা যাবে না। মার্কিন অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, নীতিনির্ধারকরা দ্রুত উদ্যোগী না হলে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সাধারণত, কর্মসংস্থান হলে ক্রেতা আয় করে এবং সঞ্চয় করে। আবার বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানও হবে না। বর্তমান সময় বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়। বরং চাকরি হারিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকেই আজ কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। আর সে কাজটিই করছে উন্নত দেশগুলো। বাংলাদেশের তো দেশগুলোরও সেটি অনুকরণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে হলেও সাধারণের হাতে নগদ অর্থ সরবরাহ করতে না পারলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। বেড়ে যাবে দারিদ্র্যের হার।

করোনার শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জনগণের কাছে নগদ অর্থ পৌঁছে দিয়েছে। এখনো করোনার প্রকোপ থামছে না। বরং বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় মার্কিন জনগণকে দারিদ্র্যের হাত থেকে রক্ষা করতে মাথাপিছু আরো ১ হাজার ২০০ ডলার (১ লাখ ২ হাজার টাকা) দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বের নামকরা সোয়া শর বেশি মার্কিন অর্থনীতিবিদ কংগ্রেসের কাছে লিখিত এক চিঠিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নগদ অর্থ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। নীতিনির্ধারকরা যদি দ্রুত উদ্যোগী না হয় সেক্ষেত্রে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, অর্থনীতিবিদদের এই তালিকায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জেসন ফোরম্যান, ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সাবেক অর্থনীতিবিদ ক্লাউডিয়া স্যাম, ফেড বোর্ড সভার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যালেন ব্লাইন্ডার রয়েছেন। এদিকে, নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা বিষয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়ই একমত। কিন্তু কাকে কতটা দেওয়া হবে সে বিষয়ে তারা একমত হতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে ১২৭ জন অর্থনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য এক খোলা চিঠিতে দ্বিতীয় দফায় সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা নগদ প্রদানসহ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে নীতিনির্ধারকদের হাতে থাকা সব উপায় ব্যবহারের আহ্বান জানাই। এর মাধ্যমে দ্রুত এবং কার্যকর উপায়ে পরিবারগুলো অর্থনীতির আগের ধারায় ফিরে আসতে পারবে। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশটির নিম্ন আয়ের মানুষ, নারী এবং কালো শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নগদ সহায়তা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এদিকে রিপাবলিকানরা ৫০০ বিলিয়ন ডলারের (৪২ লাখ ৫০ হাজার কোটি) প্রণোদনার পরিকল্পনা করলেও ডেমোক্র্যাটরা দুই দফায় এটা নাকচ করে দেয়। তারা চাইছেন মালটি ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা। যার মধ্যে জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলারের নগদ চেক প্রদান, ৬০০ ডলারের বেকার ভাতা রয়েছে। এদিকে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ১৭ নভেম্বর কংগ্রেসে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনার বিষয়ে একমত হলেও সিনেটে এটি আটকে যায়।

প্রসঙ্গত, জুনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের (১৮৭ লাখ কোটি টাকা) প্রণোদনা ঘোষণা করে। যার মধ্যে ১৬ কোটি মানুষকে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। ব্যক্তিপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার (১ লাখ ২ হাজার টাকা), দুই জনের পরিবারে ২ হাজার ৪০০ ডলার (২ লাখ ৪ হাজার টাকা) এবং ১৬ বছরের নিচে শিশুদের ৫০০ ডলার (৪২ হাজার ৫০০ টাকা) করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশীয় অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় ঠিক রাখতে মানুষের আয় বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। প্রয়োজনে তার আবেদনের ভিত্তিতে নগদ সহায়তা দিতে হবে। এটা মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমেও হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন উদ্যোগের সুফল পাওয়া গেছে। যারা চাকরি হারিয়েছেন বা উপার্জনের পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার আবেদনের ভিত্তিতে যদি নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করা যায় সেক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হবেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রণোদনার উদ্যোগ নিতে হবে।