কাজী সোহাগ : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরো একটি মাইলফলক স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানের জন্য দক্ষিণ সুদানের বুকে এখন রয়েছে ‘বাংলাদেশ রোড’। যার দৈর্ঘ্য ২৫৬ কিলোমিটার। আর এ কৃতিত্ব এনে দিয়েছে মিশনে কাজ করা বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট-১৯। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট-১৯ দক্ষিণ সুদানের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও স্থানীয় জনসাধারণের সাহায্যার্থে ‘হাই তিরিরি’ নামক গ্রাম ও ‘মুুন্দ্রি-মারিদি’ মূল সড়কের মাঝে ১টি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে। সড়কটি নির্মাণের ফলে ‘হাই তিরিরি’ নামক গ্রামটির সঙ্গে মুন্দ্রি শহরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এ সড়কটি নির্মাণের ফলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, শিশুদের স্কুলে যাতায়াত, বয়োজ্যেষ্ঠ ও স্থানীয় জনগণের চলাচল এবং বাণিজ্যিকভাবে গ্রামবাসী উপকৃত হয়েছে। স্থানীয় জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সড়ক নির্মাণের ফলে ব্যানইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন)/১৯ এর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রশাসন নবনির্মিত সড়কটি ‘বাংলাদেশ রোড’ নামে নামকরণ করে এবং জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়।
দক্ষিণ সুদানের বহুল প্রচারিত ‘রেডিও মিরায়া’ এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘জুবা মনিটর’ এ ‘বাংলাদেশ রোড’ সংক্রান্ত খবর প্রচারিত হয়। এটি দক্ষিণ সুদানে মিশন এলাকায় কর্মরত সদস্যবৃন্দসহ সমগ্র দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন)/১৯ তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। সড়কটি অনলাইন ডিজিটাল ম্যাপ ও আনমিস অফিসিয়াল ম্যাপেও হালনাগাদ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১১ সালের ৯ই জুলাই পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন দক্ষিণ সুদানের। জন্মের পর থেকেই অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটি। অশান্ত দক্ষিণ সুদানে শান্তি ফেরাতে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা ও ইউএনমিস (ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদান) প্রদত্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট-১৯। মৌলিক অধিকারবঞ্চিত দুর্গম অঞ্চলের মানুষদের প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সেবা। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট-১৯ দেশটির প্রধান মহাসড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অংশ হিসেবে ‘মুন্দ্রি-মারিদি-ইয়াম্বিয়’ (২৫৬ কি. মি.) রাস্তা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের শান্তিরক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের নিকট হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। এ লক্ষ্যে মুন্দ্রি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মহাসড়কটির সংস্কার ও মেরামত কাজ চলাকালীন সময়ে এক্সিকিউটিভ উাইরেক্টর, মুন্দ্রি কাউন্টি মি. তাবান জ্যাকসন ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং স্থানীয় কিছু গ্রামভিত্তিক অনুন্নত এলাকার সঙ্গে ‘মুন্দ্রি-মারিদি’ মূল সড়কের সংযোগ সড়ক নির্মাণের অনুরোধ জানান।