ব্যবধান
কষ্ট কত বর্ণের!
কত রকমের!
কারো কষ্ট ক্ষনস্থায়ী
কারো বা দীর্ঘমেয়াদী।
তোমার গভীরতায় ছুঁয়ে দিতে লাগে বিশালতা।
কেউ কেউ আবার কাঁদে অল্পতেই।
বৃষ্টির সাথে ভাব-ভালোবাসাটা
আগে ছিলো সুখের,
এখন কেনো সে নামলে
চোখেও অশ্রু ঝরে পড়ে!
পূর্নিমা কত প্রেম আনতো
দু’জন মিলে হেঁটে যেতো
দিগ দিগন্ত ভুলে।
আজ কেনো
জানালা দিয়ে গলিয়ে পড়া জ্যোত্স্না,
বালিশ ভেজার কান্নার সাক্ষী হয়ে থাকে।
অনুভবে শুধু তুমি
কথা যদি না হয় হবে
মনের কথা মনে রবে।
বলতে বড্ড ইচ্ছা করে
তুমি আছো আমার প্রাণে।
দেখা যদি না হয় হবে
মানস চোখে দেখে নেবে।
তুমি আছো মনের ঘরে
ভালোবাসি শুধুই তোমাকে।
দূরে আছি অনেক দূরে
মনে প্রাণে অনেক কাছে
একাকিত্বের মন খারাপে
আমায় পাবে তোমার মনে।
চাই না আমি কাছে পেতে
দূরত্ব শুধুই অবস্থানে।
মনের মানুষ তোমার মনে
চোখ বুজলেও দেখতে পাবে।
শৈশব
দুরন্ত ঐ শৈশব আমায়
পেছন থেকে ডাকে,
আনমনা মন চপল স্মৃতি
খুঁজতে শুধু থাকে!
একটানা সেই ছুটোছুটি
ক্লান্তি নাহি আসে,
দুরন্ত ঐ শৈশব তাই যে
সুখ স্মৃতিতে ভাসে!
ঝমঝমাঝম বৃষ্টি যখন
পড়তো টিনের চালে,
ময়ূরপঙ্খী মনটা আমার
নাচতো পেখম মেলে!
মাতাল করা বৃষ্টি বাঁশি
ডাকতো বাহির পানে,
এমন প্রেম কি যায় ফেরানো
মাদকতা সেই গানে!
বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে
নুপুর পায়ে চলা,
রিমঝিম এবং নিক্কণ সুরে
কি অপরূপ বলা!
অতীত স্মৃতি কি মায়াবী
হাজার কাজের মাঝে,
নাম ধরে যে ডাকে আমায়
হাত ধরে নেয় কাছে!
মেঘকন্যা
আমি যখন হারিয়ে যেতাম
মেঘ পাহাড়ের গায়ে,
তুমি তখন খুঁজতে আমায়,
নদীর বুকে পাল তোলা ঐ নায়ে।
খিলখিল করে হাসতাম আমি
যদি মেঘ গড়িয়ে পড়ত তখন,
উতল হাওয়ায় উছলে যেতো নদী।
তুমি বললে, পাহাড় গিয়ে ছুঁয়েছে আকাশ নাকি?
আমি বললাম তখন মৃদু হেসে, না, আকাশ এসেছে নেমে
এই ভাবনায় বিভোর তখন আমি হেসে করি খুনসুটি।
রঙধনু রঙ চুরি করে ময়ূরকন্ঠি হয়ে,
পেখম তুলে নাচলে তুমি —
নূপুর ছিলো তোমার এক পায়ে।
আমি বললাম মেঘ বালিকা,
আকাশেই কি তোমার বাড়ি?
বৃষ্টি এলে তোমার সাথে নাচব আমি,
নিও না যেন আড়ি।
হি হি হি — শুনে আমি হেসেই কুটি কুটি,
তুমি বললে বৃষ্টি এলে পাবে নাকো আমায়,
তখন যে আমার ছুটি।
মেঘকন্যা
আমি যখন হারিয়ে যেতাম
মেঘ পাহাড়ের গায়ে,
তুমি তখন খুঁজতে আমায়,
নদীর বুকে পাল তোলা ঐ নায়ে।
খিলখিল করে হাসতাম আমি
যদি মেঘ গড়িয়ে পড়ত তখন,
উতল হাওয়ায় উছলে যেতো নদী।
তুমি বললে, পাহাড় গিয়ে ছুঁয়েছে আকাশ নাকি?
আমি বললাম তখন মৃদু হেসে, না, আকাশ এসেছে নেমে
এই ভাবনায় বিভোর তখন আমি হেসে করি খুনসুটি।
রঙধনু রঙ চুরি করে ময়ূরকন্ঠি হয়ে,
পেখম তুলে নাচলে তুমি —
নূপুর ছিলো তোমার এক পায়ে।
আমি বললাম মেঘ বালিকা,
আকাশেই কি তোমার বাড়ি?
বৃষ্টি এলে তোমার সাথে নাচব আমি,
নিও না যেন আড়ি।
হি হি হি — শুনে আমি হেসেই কুটি কুটি,
তুমি বললে বৃষ্টি এলে পাবে নাকো আমায়,
তখন যে আমার ছুটি।
আমি অনেক কিছু শিখে গেছি
আমি যখন হারিয়ে যেতাম
মেঘ পাহাড়ের গায়ে,
তুমি তখন খুঁজতে আমায়,
নদীর বুকে পাল তোলা ঐ নায়ে।
খিলখিল করে হাসতাম আমি
যদি মেঘ গড়িয়ে পড়ত তখন,
উতল হাওয়ায় উছলে যেতো নদী।
তুমি বললে, পাহাড় গিয়ে ছুঁয়েছে আকাশ নাকি?
আমি বললাম তখন মৃদু হেসে, না, আকাশ এসেছে নেমে
এই ভাবনায় বিভোর তখন আমি হেসে করি খুনসুটি।
রঙধনু রঙ চুরি করে ময়ূরকন্ঠি হয়ে,
পেখম তুলে নাচলে তুমি —
নূপুর ছিলো তোমার এক পায়ে।
আমি বললাম মেঘ বালিকা,
আকাশেই কি তোমার বাড়ি?
বৃষ্টি এলে তোমার সাথে নাচব আমি,
নিও না যেন আড়ি।
হি হি হি — শুনে আমি হেসেই কুটি কুটি,
তুমি বললে বৃষ্টি এলে পাবে নাকো আমায়,
তখন যে আমার ছুটি।
শুধু চারটে দেয়াল মানেই নয়তো ঘর,
দেয়াল তুলে দিলেই তো পৃথিবী।
নিজের ঘরেও অনেক মানুষ পর।
কখন কিসের টানে মানুষ পায় যে খুঁজে বাঁচার মানে ঝাপসা চোখে দেখা এই ইট পাথরের আলোর শহরে।
আমি অনেক ভেঙ্গেচুরে নতুন করে শুরু করেছি
আবার প্রাণের আশায় ঘুরে মরেছি,
নতুন আলোর ভোরের সূর্য দেখতে শিখে গেছি,
নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখে গেছি।
আমি অনেক হেরে গিয়েও হারটা স্বীকার করিনি।
শুধু তোমায় হারাবো আমি স্বপ্নেও এটা ভাবিনি।
আমি অনেক স্রোতে বয়ে গিয়ে অনেক ঠকেছি,
তবুও প্রতিবাদ না করে চুপিসারে সব মেনে নিয়েছি।
আমি আগুনে পুড়ে জ্বলতে শিখেছি লেলিহান হয়ে।
বহুদূর পথ আমি একলা হাঁটতে শিখে গেছি।
এখন আমি সত্যি খুব সহজে
কষ্টে চেপে হাসিমুখে অনেক কিছুই দিতে শিখেছি।
শুধু তোমায় বিদায় দিতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি।
সত্যি আমি অনেক কিছু শিখে গেছি তোমার প্রস্থানে।
কানাডা
===========
বরেণ্য কবি আবুল খায়ের-এর কবিতাগুচ্ছ
ডাস্টবিনের ভাঙা দেয়াল
(ডাস্টবিনে ফেলে রাখা শিশুকে উত্সর্গ করে)
কার ঔরসে পয়দা শিশুর মুচকি হাসি শ্যাওলাতে
কোথায় থেকে ভেসে এসে ওঠলো যে কার তল্লাটে
বেগ-আবেগের প্রণয়লীলা উদয়-অস্ত কার ইশারাতে
ওঠলো যে সুর বেসুরে আজ বাজল যে কার বেহালাতে
জাত বেজাতের দ্বন্দ ভুলে মিষ্টি মধুর ছন্দ তুলে
গা ভাসিয়ে দিলে তুমি বৃষ্টিভেজা কালরাতে।
আবেগের সাথে বিবেকের কভু হয় না কোনো সন্ধি
মানবতার শিকল পায়ে ইজ্জত ক্যান আজ বন্দি।
সন্তান আজ কার কোলে হায়, কার নয়নে নয়ন
বিচারপ্রার্থীর যাপিত জীবন হুমকিতে ক্যান চয়ন।
ডাস্টবিনের ওই খুপড়ি ঘরে খিলখিলিয়ে কে হাসে
হাসি মুখে ফাঁসিতে ঝুলাও একটুখানি ভালোবেসে।
বাবা-মায়ের আদর নেই, জীবনটাও হুমকিতে
দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ করে পারবে না আর দম নিতে
বিশ্ববিবেক দাফন করে হীরা পান্না চুন্নিতে।
আকাশ বাতাস ভারী ক্যান মরণ বীণ কে বাজায়
কার পাপের তাপে-অভিশাপে কে শাস্তি পায়।
কর্মযজ্ঞে ধর্ম ফেলে মর্ম মূলে অন্ধজনে আলো পায়
অর্থ-অনর্থ ব্যয় ভুলে হিসেবের খাতা রাখ তুলে
অন্যের বাসর সাজিয়ে যায়, তাতেই সে মজা পায়।
কেউ যায় শখে বসে কেউ আবার উল্লাসে
কেউ খেয়ে মজা পায়, কারো জিবে জল আসে
কারো জীবন যায় যায়, কেহ দেখে হেসে বেড়ায়
কেউ মজে উচ্ছ¡াসে, কেউ চোখের জলে ভাসে।
মানবতার সেবার নামে ওঠে তুফান দিন শেষে
ঘুনে ধরা সমাজ যে আজ পঁচন ধরা নির্যাসে।
কান্নায় দেখ পান্না ঝরে খোদার আরস কাঁপল যে
বাপ-দাদার ভিটে-মাটি কোথায় ফেলে আসল যে।
দোহায় লাগে জীবনটাকে মোড়কে দাও বেঁধে
কার এতো হিম্মত যে আজ আমার জন্য কাঁদে–
জীবন আমার হুমকিতে আজ ভালোবাসার ফাঁদে।
বাবা-মায়ের আদর-কদর কে দিবে চুম কপালে
ধিক্কার জানাই ভিক্ষার ঝুলি, ভালোবাসা রুমালে
শান্তি চাই ভ্রান্তি ভুলে ডাস্টবিনের ওই দেওয়ালে
কারো জীবন যাচ্ছে চলে কারো আবার হেয়ালে।
আমরা আগামীর কণ্ঠস্বর
রাজার সন্তান হবেন রাজা, মহারাজা
নাদুস নুদুস চেহারাটাও তাজা, বেশ তাজা
গরিব হবে আরো গরিব আরো সেবা দাস
প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গলায় ঝুলবে ফাঁস
কঙ্কালসার শরীর আর চলে না আর চলে না
আমরা এমন করে নিরব থাকতে পারি না, পারি না।
শিক্ষিতরা ঢুকবে ঘরে গুমরে কাঁদবে নিরবে
মূর্খরা নেতার নেতা পাতি নেতা থাকবে সরবে
দাসীর ছেলে মনিব হয়ে করবে যে শাসন
মান্য জনের ইজ্জতহানীর থাকবে আয়োজন
তেলবাজের দৌরাত্ম্য দেখে সহ্য হবে না
আমরা এমন করে নিরব থাকতে পারি না, পারি না।
অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে ছড়াবে যে সৌরভ
নিয়ম নীতির মাথা খেয়ে করবে যে গৌরব
সুন্দরবনের সৌন্দর্যহানীর চলে যদি উত্সব
হাজারো ধর্ষিতার জীবন নিয়ে ধর্ষকের মহোত্সব
বাঁধা দিয়ে সাদা গায়ে কাদা কেউ লাগাবে না
আমরা এমন করে নিরব থাকতে পারি না, পারি না।
কুমিরের ভয়ে খাল না কেটে নদীর বুকে খরা
কয়টা নতুন নদী হলো আর কয়টা গেলো মরা
বন্ধ্যা নারীর সন্তান হবে সন্তান নিয়ে উচ্ছ¡াস
সন্তান আধিক্যে কতো পিতার গলায় হাসফাঁস
যৌবনহারা বৃদ্ধার কাছে কেউ তো আর থাকে না
আমরা এমন করে নিরব থাকতে পারি না, পারি না।
আমরা না হয় অমানুষ এক যতোই থাকুক হুঁশ
তোমরাতো ভাই আসল মানুষ যতোই থাকো বেহুঁশ
তৃপ্তি মিটাও ঘাপটি মেরে গরিব মারার কলে
শোষণ করো শাসক হয়ে ছলে বলে কৌশলে
ঘুণেধরা সমাজ মেরামতে হাত না দিলে হবে না
আমরা এমন করে নিরব থাকতে পারি না, পারি না।
গুরুত্বহীন জীবন
পুষ্প রেণু নিজেকে করে উজাড়
সুবাস ছড়ায়, মানব কল্যাণে
পতঙ্গের জীবনচারিত আবর্তে।
গুণীজনের সনে গুণীজনের সখা
মূর্খরা থাকে মূর্খদের তল্লাটে
মান অভিমানের নেই দেখা।
কষ্ট হলেও থেকো একা, শুধু একা,
আসবে হয়তো কোনো এক সময়
বৃথা জীবন নয়, নয় কপাল ফাঁকা
পেতেও পারো তাঁর দেখা।
গুরুত্বহীন সকল আমলা সুশীল
অসম বঞ্চনার চাঁদরে
মানবতার অর্বাচীন মায়া কান্নার ফাঁদে
আজো মানবতা কাঁদে।
দীর্ঘশাস নয়, জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিবো
জীবন ছিলো যে কতো মূল্যহীন
বৃথা এজীবন নিজেকে করেছি নিজে দাফন
আমার দোষ দিয়ে লাভ কী বলো
জগতে কেউতো নয় কারো আপন?
ভুল করে ভুল বুঝে যায় চলে,
ফিরে না আর কোনো দিন
কষ্ট রাখি চেপে পথ চলি মেপে
আর হাসি দিবানিশি অমলিন।
বুকের মাঝে শব্দ বাজে ছিন ছিন
শোনবার একটু ধৈর্য তোমার হবে না,
হবে না কোনো দিন। হবে কি কোনো দিন।
আমার দেশ
এক যে আছে এমন দেশ
রূপের নেইতো শেষ
লতায় পাতায় সবুজে ঘেরা
শ্যামল সেই আবেশ।
রাতের বেলায় জোনাক জ¦লে
দিনে সুর্যের আলো
রাখাল ছেলের বাঁশির সুরে
মনটা করে ভালো।
তৃষ্ণা মেটায় ডাবের পানি
বৃষ্টিতে যায় খরা
অসীম মজা দিনের বেলায়
দল বেঁধে মাছ ধরা।
গায়ের ঘাম ঝরায় কৃষক
ফসল ফলায় মাঠে
দেশ করে সমৃদ্ধি ভাই
সোনালি আঁশ পাটে।
শীতের শোভা কুয়াশা যে
বরষার শোভা বৃষ্টি
বাগানের শোভা গাছগাছালি
জুড়ায় সবার দৃষ্টি।
পুকুর ডোবায় শালুক ফোটে
সুর্য ডুবে নদীর তীরে
সাঁঝের বেলা পাখিরা সব
ফিরে যায় আপন নীড়ে।