অনলাইন ডেস্ক : করোনার সাথে বেড়ে চলা ডেঙ্গুর তাণ্ডবে এখন দিশেহারা রাজধানীর মানুষ। গত কয়েক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে গতকাল শনিবার তা রেকর্ড ভেঙেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ৮১ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন ভয়াবহ যে রাজধানীর সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালের কোথাও রোগীর ঠাঁই নেই। হাসপাতালের ওয়ার্ড কেবিন এমনকি সরকারি হাসপাতালের বারান্দাও এখন রোগীতে বোঝাই। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করতে এসে সিট না পেয়ে নতুন রোগীর স্বজনদের উৎকণ্ঠা আহাজারি চোখের পড়ার মতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে আমরা ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছি। চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্যমতে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮০ জনই ঢাকার। চলতি বছরের মধ্যে একদিনে এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ বছর আর কোনো মাসে এত রোগী পাওয়া যায়নি। শুধু জুলাই মাসেই এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৭৬৭ জন। এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই ঢাকার।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩৩৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ৩৩১ জন, বাকি পাঁচজন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৮০১ জন। এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২৭১ জনের, যা বছরে মোট শনাক্তের ৬৯ শতাংশ। গত বছরের জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২০ জনের। সে হিসাবে গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এবারের জুন মাসে রোগী বেড়েছে সাড়ে ১৩ গুণ। ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন।
২০১৯ সালেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। সে বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারায়। যদিও সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বারান্দা থেকে শুরু করে সর্বত্রই রোগী। কোথাও সিট খালি নেই। একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে প্রতিদিন যতো রোগী আসেন তার বেশির ভাগই করোনা ও ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসেন। অপর দিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান তাদেরও একই অবস্থা। ডেঙ্গু আর করোনা রোগীর চাপে হাসপাতালের কোথাও সিট কিংবা কেবিন খালি নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আযাদ জানান, তাদের কাছে এখন প্রতিদিন যত রোগী আসেন তার প্রায় ৯০ ভাগই করোনা এবং ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে সব বয়সের মানুষ রয়েছেন। একই কথা জানালেন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: তাহমিনা। তিনি জানান, প্রতিদিন যত শিশু আসে তার বেশির ভাগেরই ডেঙ্গু উপসর্গ।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট চিকিৎসক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ বলছেন, ‘চলমান অবস্থায় মনে হচ্ছে আমরা ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছি। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের সক্ষমতা আছে। তাই যদি সিটি করপোরেশন আরেকটু মনোযোগী হয় এবং নগরবাসীও সচেতন হন তবে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তিনি বলেন, প্রতি বছর এমন সময়ে যেহেতু ডেঙ্গু দেখা দেয় তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত সচেতন থাকা। এ সময়ের আগেই তার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া। তবেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।’