অনলাইন ডেস্ক : ভারত ও চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে বারবার ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার।
এমনকি প্রয়োজনে সামরিকভাবেও সাহায্য করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, সীমান্ত নিয়ে চীনের যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ট্রাম্প ভারতের পক্ষে থাকবেন- এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। চীন ও ভারতের কয়েক দশকের পুরনো দ্বন্দ্ব ট্রাম্পের জানাশোনা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
বলেছেন, সীমান্ত নিয়ে দুই পক্ষের ঐতিহাসিক সংঘর্ষ নিয়ে ট্রাম্পের সঠিক ধারণা আছে বলেও মনে হয় না তার।
লাদাখ সীমান্তে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের নজিরবিহীন উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ট্রাম্পের সাবেক এই উপদেষ্টা। খবর দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান উপত্যকায় দুই মাস ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত মাসের মাঝামাঝি (১৫ জুন) উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘাতের পরপরই (২০ জুন) এর মীমাংসার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। এ কথা তিনি নিজেই জানান।
এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনেও কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলছি, চীনের সঙ্গে কথা বলছি। বড় সমস্যা রয়েছে ওদের মধ্যে।’
চীনকে রুখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক মিশন শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। প্রয়োজনে এশিয়ায় পাঠানোর ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে হোয়াইট হাউস।
চীনকে সামনে রেখে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই দহরম-মহরম সম্পর্কের মধ্যেই শুক্রবার এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বোল্টন বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের পক্ষ নিয়ে ট্রাম্প কতদিন চীনের বিরোধিতা করবেন আমি জানি না। মনে হয় না, উনি নিজেও তা জানেন।
উনি শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থেই চীনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানেন। নভেম্বর মাসে ভোট শেষে যদি ক্ষমতায় আসেন, উনি চীনের সঙ্গে ফের বড় বাণিজ্যিক চুক্তি করবেন। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা আরও বাড়লে উনি যে ভারতের সঙ্গেই থাকবেন তা জোর দিয়ে বলা যায় না।’
বোল্টন আরও বলেন, ট্রাম্প ভারত ও চীনের সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে কিছুই জানেন না। যদি কেউ তাকে এ ব্যাপারে বলেও থাকে, তাহলেও সেটা ট্রাম্পের মাথায় থাকার কথা না। তিনি আরও বলেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই মুহূর্তে ট্রাম্প নির্বাচনী লড়াইটা বেশ কঠিন করে ফেলেছেন।
সেটা আরও কঠিন হোক, এমন কোনো কিছুই তিনি অন্তত আগামী চার মাসে চাইবেন না। তাই এই মুহূর্তে চীনের বিরোধিতা করে ভারতের পক্ষে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’
এদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকে সেনা সরানোর শর্তে প্রাথমিক সমঝোতা হয়। উভয়পক্ষই দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত সেনা সরিয়ে নিয়েছে বলে আগে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল।
তবে স্যাটেলাইটে তোলা ছবির বরাত দিয়ে ভিন্ন দাবি করেছে এনডিটিভি। তাদের দাবি, এখনও সীমান্তের প্যাংগং লেক থেকে পুরোপুরি সেনা সরায়নি চীন। সীমান্তের বিতর্কিত ফিঙ্গার-৪ ১০ জুলাইয়ের স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা যায়, চীনা নির্মাণ, তাঁবু ও শেড এখনও ওই এলাকায় রয়ে গেছে।
চীনা সেনারা পুরোপুরি দুই কিলোমিটার পেছনে সরে গেছে এমন দাবি করা যাবে না বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার জানিয়েছে এনডিটিভি। বলা হচ্ছে, চীনা হোভারক্রাফ্ট প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকায় পড়ে রয়েছে। এমনকি ১০টি বড় মাপের নৌকাও ফিঙ্গার-৪ এলাকার পূর্ব প্রান্তে ধরা পড়েছে ১০ জুলাইয়ে ধারণকৃত স্যাটেলাইট চিত্রে।
লাদাখ সীমান্তে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সতর্ক অবস্থানে আছে ভারত ও চীনের সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সামরিক ও কূটনৈতিক কর্মকর্তাপর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে দু’দেশ।
সমঝোতা হয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর দুই কিলোমিটার পিছু হটবে দুই দেশের বাহিনী। সীমান্তের কয়েকটি বিতর্কিত জায়গায় সেই সমঝোতা সম্পন্ন করেছে দু’দেশের সামরিক বাহিনী।
গত সোমবার (৬ জুলাই) থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছিল চীন। তবে প্যাংগং হ্রদ এলাকায় ফিঙ্গার-৪ এবং অন্য কয়েকটি এলাকার ঘাঁটি ছাড়তে নারাজ ছিল পিএলএ। এরই মধ্যে শুক্রবার (১০ জুলাই) ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত ইস্যুতে আবারও বৈঠক হয়।
সাম্প্রতিক আলোচনার পর নয়াদিল্লির তরফে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রনেতাদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত মেনে চলা হবে’ এবং ‘সমস্যা তৈরি করে মতপার্থক্য রাখা হবে না’। এছাড়াও বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘দ্রুততার সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ডিসএগেজমেন্ট প্রক্রিয়া শেষ করতে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষই’।
১০ জুলাইয়ের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে এনডিটিভি জানিয়েছে, পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে চীনা সেনাদের পিছু হটার প্রমাণ মিলেছে। সেনা সরেছে প্যাংগং এলাকা থেকেও। তবে চীনা হোভারক্রাফ্ট প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকায় পড়ে রয়েছে। এমনকি দশটি বড় মাপের নৌকাও ফিঙ্গার-৪ এলাকার পূর্ব প্রান্তে ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে।
এছাড়াও স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, কিছু জায়গায় নির্মাণগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং জায়গাটি পরিষ্কার। এই এলাকাটি পেট্রল পয়েন্ট ১৪ নম্বরে, যেখানে ১৫ জুন লাঠি, রড, পাথর নিয়ে সংঘর্ষ হয় ভারত ও চীনা সেনার। ওই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান নিহত হন।
ভারতীয় বাহিনীর দাবি, চীনের পক্ষেও অন্তত ৪৫ জন হতাহত হয়। সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানিয়েছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সব এলাকা থেকে চীনের সরে যাওয়া নিয়ে আশাবাদী দিল্লি। ওই সময়ের মধ্যে দু’দেশের সেনাপর্যায়ে আরও উচ্চ স্তরের বৈঠক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।