১৬ই ফেব্রুয়ারি, রোববার “কানাডা আমেরিকায় কমিনিউটি ভাবনা”- গ্রন্থের এক আনন্দঘন প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল বাংলাদেশ সেন্টার-টরন্টোতে। গ্রন্থটির লেখক ফয়জুল হক দুলা। এটি তার ২য় গ্রন্থ। ফয়জুল হক দুলা প্রায় দুই যুগেরও উপর বসবাস করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করে দেশে এবং প্রবাসের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তার এই তথ্যবহুল ও বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংকলনই ‘কানাডা-আমেরিকায় কমিউনিটি ভাবনা’। হলটি কাণায় কাণায় ভরে গিয়েছিল কম্যুনিটির বিভিন্ন কর্ণারের জ্ঞানী গুনিদের দ্বারা। লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, কবি, সাহিত্যিক, ল ইয়ার, কম্যুনিটি একটিভিষ্ট, বিজনেসম্যান, শিক্ষক, পলিটিশিয়ান, এমপি, ছাত্র-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের লোকের সমাগম ছিল লক্ষ করার মত।
প্রবীণ কমিউনিটি নেতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিসিএস এর প্রতিষ্ঠাতা ও Best Immigrant Award recipient জনাব মোশতাক আহমেদ। বিদুষী-সৈয়দা মার্জিয়া আফরোজ মৌয়ের আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী। কবি আসাদ চৌধুরী বইটির উচ্ছ¡সিত প্রসংসা করে বলেন-“আমি এই বইটি অনেক বার পড়েছি। আমার চিন্তার সাথে গ্রন্থটির হুবহু মিল পাই- সে জন্য আমি লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ, লেখক বইটিকে দুই খন্ডে করে নিলে আরো ভালো হত। বইটিকে ইংরেজি করে নিলে কবি নিজে তার প্রকাশনার দায়িত্ব নিবেন বলে প্রস্তাব রাখেন। তিনি লেখককে এই জেনারেশনের জন্য ইংরেজিতে লিখার ও আহবান করেন। “আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রফেসর ও লেখক ডক্টর তাজ হাসমি উপস্থিত নতুন জেনারেশনের বুঝার সুবিধার্থে ইংরেজিতে বক্তব্য দেন। তিনি বইটির বিভিন্ন দিক আলোচনা করে এটি একটি মাইল ফলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি নতুন জেনারেশনের জন্য ইংরেজিতে লিখার জন্য লেখককে আহ্বান করেন। নিজেদেরকে প্রবাসী না ভেবে কানাডিয়ান ভাবার জন্যও তিনি গুরুত্বারুপ করেন। নতুন প্রজন্মের এমপি ডলি বেগম লেখকের ভূঁয়সি প্রসংশা করেন এবং লিখার মাধ্যমে কম্যুনিটি কাজের মূল্যায়ন করে লেখককে “Legislative Assembly of Ontario”- Recognition letter প্রদান করেন। CIDA and NORAD এর পলিসি এনালিস্ট-আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন উইমেন ডেভ্লাপমেন্ট ডাইরেক্টর রিনা সেন গুপ্তা বলেন “বই সাধারণতঃ সবাই মা বাবা বা শিক্ষক ও অন্যান্যদেরকে উৎসর্গ করেন কিন্তু গ্রন্থটির লেখক উতসর্গ করলেন বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার মহান পুরুষ কাজী নজরুলকে আর বাংগালীর প্রবাস যাত্রার অগ্রপথিক জাহাজী নাবিকদেরকে – আমি তার বুদ্ধিমত্তায় আশ্চর্য্য ও অভিভুত” তিনি মঞ্চ দাঁড়িয়ে স্যালুট দিয়ে লেখককে সম্মান জানালেন। প্রথিতযশা সাংবাদিক সুমন রহমান বলেন “২৫ বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল এই বইটি কম্যুনিটির ইতিহাসের একটি আকর গ্রন্থ”। কম্যুনিটির সুপরিচিত সাংবাদিক-নতুন দেশ পত্রিকার সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, “প্রবাসে ঘটা বাংলাদেশি কমিউনিটির বিবর্তনের কোনো ইতিহাস লেখা হয় না, কিন্তু কমিউনিটির ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে লেখা বইও সময়ের সাক্ষী হিসেবে ইতিহাস হয়ে ওঠতে পারে। ফয়জুল হক দুলার “কানাডা আমেরিকায় কমিউনিটি ভাবনা ‘বইটি হয়ে ওঠেছে কম্যুনিটির অমূল্য এক দলিল।” গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত রচনার অংশ পাঠ করেন কবি ও আবৃত্তিকার হোসনে আরা জেমী। কবি জালাল কবিরের লিখিত শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করেন কবি সোহেল ইবনে ইসহাক। বক্তব্য রাখেন কবি দেলওয়ার এলাহী, কবি রেজা অনিরুদ্ধ, লেখক জামানা হাসিনা, প্রফেসর আতাউর রহমান, বাক্সুর সাবেক সহ সভাপতি ফয়জুল করিম, প্রফেসর ও সমাজ কর্মী মাহমুদা নাসরিন, বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন আহমদ, কমিউনিটি নেতা ও সংগঠক আখলাখ হোসেন এ প্রজন্মের অস্টম গ্রেড স্টুডেন্ট আনিকা আলম, সার্বিক সহযোগিতায় স্টুডেন্ট সারা উদ্দিন। অনুষ্ঠানে গ্রন্থটির বিভিন্ন প্রবন্ধ থেকে বাণী ও গুণীজনের শুভেচ্ছা সম্বলিত একটি স্লাইড শো প্রদর্শিত হয়।