মুরশাদ সুবহানী : কানাডা’র সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা “বাংলা কাগজ”-এ বিশেষজ্ঞদের মতামত উদ্ধৃত করে সময়োপযোগী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে “কেনো বজ্রপাতে এতো মৃত্যু?” শিরোনামে এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরে এ থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক এই প্রতিবেদনটি পড়লে উপকৃত হবেন।
আমার প্রতিপাদ্য বিষয় বজ্রপাত ও অন্যান্য বিপদ-আপদে কি করতে হবে সেই বিষয়ে ধর্মে যা করতে বলা হয়েছে তা নিয়ে। পবিত্র কোরআন-হাদিসে বলা হয়েছে বজ্রপাতে আগুনে কেউ মৃত্যু বরণ করলে তিনি শহিদের মর্যাদা পাবেন। তবে সাবধানতা অবলম্বনের ব্যবস্থা থাকলে সেটি গ্রহণ করতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে আগুনে লাফ দিয়ে মৃত্যু বরণ করলে সেই ব্যক্তি এই মর্যাদা লাভ করবেন না। ইচ্ছকৃতভাবে বজ্রপাতের সময় খোলা স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যু বরণ করলে সেই ব্যক্তিও এই মর্যাদা লাভ করবেন না। উপরন্তু সেটি হবে আত্মহনন।
ঝড়-বজ্রবৃষ্টিতে ভীত না হয়ে এর মধ্যে কল্যাণকর যা কিছু রয়েছে তার জন্য প্রশংসা করুন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে। আর অনিষ্টের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য প্রার্থনা এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। বজ্রপাতে মানুষ মারা যায়। সাবধানতা অবলম্বন করলে এই মৃত্যু থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। বজ্রপাত না হলে এই পৃথিবীর মাটি উর্বর থাকতো না। ফসল উৎপাদনের উপাদান প্রাকৃতিকভাবে জমিনে পাওয়া যেত না। বৃষ্টি না হলে মাটি সিক্ত হয়ে চাষ যোগ্য হত না। বৈশাখের অত্যন্ত গরমে জীবন যখন ওষ্ঠাগত সেই সময় স্বস্তির ঠান্ডা পরশ পাওয়া যেত না। আমরা সবাই কমবেশী জানি, বাতাসে রয়েছে অক্সিজেন, নাট্রোজেন, হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য বায়বীয় পদার্থ।
বাতাসের মধ্যে থাকা নাইট্রোজেন বজ্রপাতের ফলে নাইট্রেটে পরিণত হয়ে মাটিতে পতিত হয়। নাইট্রেট মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। আল্লাহ’র রহমতের মধ্যে এটি একটি। এই নাইট্রেট টাকা দিয়ে কিনতে হয় না। নাইট্রেট মাটির উর্বরতা শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হয় খোলা জায়গায় থাকলে বিশেষ করে কৃষি মাঠে বৃষ্টি-বজ্রের সময় কাজ করার সময়। বজ্রপাতে মৃত্যু বরণকারী মানুষ শহিদের মর্যাদা লাভ করবেন। তাই বলে আমরা বলছি না, আপনি বজ্রপাতের সময় শহিদ হওয়ার জন্য খোলা স্থানে দাঁড়িয়ে থাকুন। নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন।
বজ্রপাতে ভীত হবেন না। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন যে কোন দুর্যোগের সময় সাবধান থাকতে বলেছেন। আল্লাহ’র রাসুল (সা) সাবধানতা অবলম্বন ও দোয়া পড়তে বলেছেন। শুধু বজ্রপাত-ঝড়-বৃষ্টির সময় নয়, চন্দ্র-গ্রহণ, সূর্য-গ্রহণ, ছুটে আসা উল্কার সময়, মহামারির সময় আল্লাহকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে। প্রার্থনা করুন নিজের জন্য, পিতা-মাতা, সন্তানের জন্য, প্রতিবেশী-বন্ধু-বান্ধবদের জন্য। ঝড়-বজ্রপাতের সময় এই দোয়া পড়া উত্তম : “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফীহা ওয়া খাইরা মা উওরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা-ফীহা, ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহ।”
‘‘হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং এর সাথে যা প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণের জন্য। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে থাকা অনিষ্ট থেকে এবং এর সাথে যা প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে।”
বিপদ-আপদে সাবধানতা অবলম্বন করতে কোনো ধর্ম নিষেধ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। ভিন্ন ধর্মালম্বীরা নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থণা করতে পারেন।
লেখক : সাহিত্যের সেবক, অ্যাডভোকেট, জজকোর্ট, পাবনা, বাংলাদেশ। ফ্লোরিডা, ইউএস প্রবাসী