অনলাইন ডেস্ক : অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে অভিযানের সময় বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী এক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা এবং এক স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জেনিনের ওপর আগ্রাসন চালানোর সময় দখলদাররা (ইসরায়েলি বাহিনী) মাথা, বুক ও পেটে গুলি করলে মুস্তাফা আল-কাস্তউনি (৩২) নিহত হন।’
জেনিনে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মাহমুদ সাদি বলেন, অভিযানে একজন নারী চিকিৎসকসহ দুজন আহত হয়েছেন, যাদের বুকে ও কিডনিতে গুলি লেগেছে।
ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন জেনিনের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল-রুব।
অভিযানে ধ্বংস হওয়া একটি ভবনের মালিক জামিল হারদান জানান, স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টার দিকে ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ি থামল…তারপর আরেকটি রুপালি গাড়ি। সামরিক ইউনিফর্ম পরা আর্মি স্পেশাল ফোর্স ঝাঁপিয়ে পড়ল।
তিনি আরো বলেন, ‘তারা রাস্তা থেকে দুই যুবককে অপহরণ করেছে।’ এই প্রক্রিয়ায় তারা মুস্তাফাকে গুলি করে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা জেনিনে ঢুকেছে কাঙ্ক্ষিত ফিলিস্তিনিদের আটক করতে। কিন্তু একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
সামরিক বাহিনী বলেছে, কুম্বুয়া নামে এক ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ‘সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করে এবং পালানোর চেষ্টা করে। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, দুজনকে আটকের পর ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর গুলি চালানো হয় এবং একজন সেনা সামান্য আহত হয়েছেন। এ সময় বাহিনী ‘তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি গুলি চালিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং ভবনটি ধ্বংস করে’, যেখানে তারা অস্ত্র খুঁজে পেয়েছিল।
একজন এএফপি ফটোগ্রাফার উত্তর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি শহরের একটি সরু রাস্তায় ছিন্নভিন্ন কাঠ ও ধ্বংসস্তূপের স্তূপের চারপাশে অভিযানের পর ফিলিস্তিনিদের জড়ো হতে দেখেছেন।
এদিকে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী জেনিন ব্রিগেডস বলেছে, যখন সেনারা জেনিনে ‘অনুপ্রবেশ’ করেছিল, তখন যোদ্ধারা ‘বুলেট ও বিস্ফোরক যন্ত্র’ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হলে কাস্তউনি নিহত হন। কাস্তউনি আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের একজন যোদ্ধা ছিলেন বলেও জানিয়েছে তারা, যা ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পশ্চিম তীরে গত বছরের শুরু থেকে সহিংসতার বৃদ্ধি দেখা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ফিলিস্তিনিদের হামলা, বারবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান এবং ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা। ইসরায়েল ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর দখল করে আছে এবং তাদের বাহিনী নিয়মিতভাবে জেনিনের মতো এলাকায় অভিযান চালায়, যেগুলো নামমাত্র আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেনিন শহর ও এর শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি অভিযানে চলতি বছর এ পর্যন্ত বেসামরিক ও যোদ্ধাসহ অন্তত ৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
উভয় পক্ষের সরকারি সূত্র থেকে সংকলিত এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত সহিংসতায় এ বছর কমপক্ষে ২১৭ ফিলিস্তিনি ছাড়াও ২৮ ইসরায়েলি, একজন ইউক্রেনীয় এবং একজন ইতালীয় নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের দিক থেকে পরিসংখ্যানে ইহুদি রাষ্ট্রের আরব সংখ্যালঘুর তিন সদস্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সংযুক্ত পূর্ব জেরুজালেম বাদে পশ্চিম তীরে প্রায় তিন মিলিয়ন ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত বসতিতে প্রায় চার লাখ ৯০ হাজার ইসরায়েলি বসবাস করে।
সূত্র : এএফপি