সিনহা আবুল মনসুর : পর্ব: দশ
অয়নের ডায়েরি
শুক্রবার
৬ই জুলাই ১৯৮৪।
আজ ছিল আমার কেমোথেরাপির চতুর্থ সাইকেলের শেষ দিন। কেমোথেরাপি শেষ হলো দুপুর বারোটায়। মা ভীষণ ক্লান্ত ছিলেন। খালা এসে মাকে নিয়ে গেলেন খালার বাসায়। বলে গেলেন সন্ধের পরপরই ফিরে আসবেন। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল চারটা বিশে। সাড়ে চারটার দিকে দলবলসহ রাউন্ডে এলেন প্রফেসর হুদা।
রুমে ঢুকেই প্রফেসর হুদা বললেন, ‘ইয়াং ম্যান, কেমন আছ?’
আমি বললাম, ‘ভালো আছি, স্যার।’

এরপর হুদা স্যার বললেন, ‘অয়ন, তোমাকে আরো দুই সাইকেল কেমোথেরাপি দিতে হবে। মাস খানেকের মধ্যেই শুরু করব সেই সাইকেলগুলো। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল সকালে তোমাকে ডিসচার্জ করব। তোমার কোনো প্রশ্ন আছে, অয়ন?’
হুদা স্যারের দিকে তাকিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্যার, আমি কি বাঁচব, না মরে যাব?’
স্যারের দৃষ্টি ছিল আমার দিকে। প্রশ্নটা শুনে স্যার দৃষ্টি ফেরালেন জানালার দিকে। জানালায় সাদা পর্দা। পর্দার ওপাশে নিচে ব্যস্ত শহর। ওপরে নীল আকাশ!
ওই আকাশে ওড়াউড়ি করে চিল। চিলের ওপর ঘুরে বেড়ায় সাদা-কালো মেঘ।
কখনো এপাশ থেকে ওপাশে, কখনো বা ওপাশ থেকে এপাশে!
হুদা স্যার রুমে ঢোকার কিছুক্ষণ আগেও ওই দৃশ্য আমি দেখেছি জানালায় চোখ দিয়ে!
হুদা স্যার জানালা থেকে চোখ ফেরালেন আমার দিকে।
মৃদু স্বরে বললেন, ‘দেখো অয়ন, আমরা সবাই মরব, তুমি আমি আমরা। আমরা সবাই। দুদিন আগে অথবা দুদিন পরে, এই যা। মৃত্যু অবধারিত। অয়ন, আমাদের পবিত্র কিতাব কোরআন শরিফে বলা হয়েছে:
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিতে হইবে।
সুরা ইমরানের একশো পঁয়তালি¬শ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেহ মৃত্যুবরণ করিতে পারে না। মৃত্যুর জন্য একটা সময় নির্ধারিত রহিয়াছে’!
হুদা স্যার আরো বললেন, ‘কি জানো অয়ন, জীবনে চলার পথে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি, দুর্ঘটনার শিকার হয়। এরকম পরিস্থিতিতে হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে বেঁচে থাকার জন্য, নির্ধারিত কালপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই চিকিত্সার আশ্রয় নিতে হবে। তোমার চিকিত্সা চলছে। আমরা আশা ছাড়িনি। তুমিও আশা ছাড়বে না। হোপ ফর দ্য বেস্ট’!
হুদা স্যারের কথা শুনে আমি মনে মনে ভাবছিলাম:
মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে যখন বাঁচার মিছিল চলে, তখনো একটি সুফল শব্দকে প্রার্থনা করেন একজন কবি। নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত নাবিক ভাঙা জাহাজে পাল ওড়ায়।
নতুন দ্বীপের সন্ধানে।
কোষ থেকে কোষান্তরে যখন ছড়িয়ে পড়ে ক্যানসার। তখনো বাঁচার স্বপ্ন দেখেন একজন রোগী!
আমি তো সেই কবি, সেই নাবিক অথবা সেই রোগী। আমাকে তো আশা ছাড়লে হবে না!
হুদা স্যার বললেন, ‘অয়ন, কিছু বলছ?’
আমি বললাম, ‘না স্যার, কিছু না, আই উইল হোপ ফর দ্য বেস্ট’!
স্যার তার দলবল নিয়ে চলে গেলেন। কেবিন নম্বর এগারোশো তিনে চুপচাপ শুয়ে রইলাম আমি!
আমার পাশে আরো শুয়ে রইল আমার বুকভরা আশা!

বিছানায় শুয়ে মনে মনে ভাবছিলাম, এই যে আমি বিছানায় শুয়ে আছি, ঠিক এই মুহূর্তেই এই পৃথিবীতে হাজার হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে, আবার হাজার হাজার শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। হাজার হাজার মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার হাজার হাজার মানুষ নিরাময় লাভ করছে। বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করছেন আবার নতুন নতুন ওষুধও আবিষ্কার করছেন। কিন্তু তার পরও অজেয় থেকে যাচ্ছে কতশত রোগ!
এই যে জন্ম, এই যে মৃত্যু, মানুষের সুখ, মানুষের দুঃখ, রোগ-শোক, আবিষ্কার-অনাবিষ্কার এগুলো কি শুধু মানুষেরই কাজ?
নাকি এর পেছনে অন্য কারো ছায়া আছে?
অন্য কারো কারিগরি আছে?
অন্য কারো ইশারা আছে?
আমার ভাবনার সাথে সায় দিয়ে কে যেন বলে উঠল, ‘ঠিক, ঠিক, ঠিক।’
শব্দের উত্স খুঁজে দেখি রুমের দেয়ালে থমকে দাঁড়িয়ে আছে একটা টিকটিকি। আমার সাথে ওর চোখাচোখি হলো, কিন্তু কোনো কথা হলো না। টিকটিকির সাথে তো আর মানুষের কথা হয় না!
আচ্ছা, টিকটিকি কি মানুষের কথা বুঝতে পারে?
এই সব উথালপাতাল ভাবনার মাঝেই আমার দরজায় টোকা পড়ল।
আমি শুয়ে শুয়েই বললাম, ‘কে ওখানে?’
ওপাশ থেকে বলল, ‘ভেতরে আসব?’
আমি বললাম, ‘আসুন’!
সন্তর্পণে দরজা দিয়ে যিনি ঘরে ঢুকলেন, তাকে আমি প্রত্যাশা করিনি। খুবই অবাক হলাম। সাথে সাথে খুব খুশিও হলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি ওনাকে চিনি না। তবে আমি ও অপু ওনার লেখার ভীষণ ভক্ত!
উনি হচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ।
হ্যাঁ, লেখক হুমায়ূন আহমেদ।
আমি হন্তদন্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠলাম আর মুখে বললাম, ‘স্যার, আপনি, এখানে?’
উনি বললেন, ‘অয়ন, তোমাকে দেখতে এলাম। তোমার সাথে আলাপ করতে এলাম’!
আমি বললাম, ‘স্যার, আপনি তো আমাকে চেনেন না। জানেনও না।’
তিনি বললেন, ‘তাতে কী? অপুর কাছে তোমার অনেক গল্প শুনেছি। গল্প শুনে শুনে তোমাকে চেনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সত্যিটা কী জানো অয়ন, এই ভুবনে আমরা খুব কম মানুষকেই চিনি বা জানি। বেশির ভাগ মানুষই অজানা, অচেনা থেকে যায়। তবে আমরা চেনার ভান করি। জানার ভান করি। এই ভান আমরা করি, আমাদের করতে হয়, কারণে বা অকারণে। মানুষ হিসেবে জন্ম নেবার এ এক দুঃসহ যন্ত্রণা। দুঃসহ সীমাবদ্ধতা’!

কথাগুলো বলতে বলতে উনি আমার বিছানার সামনেই একটা চেয়ার নিয়ে বসলেন। আমি বসলাম বিছানায়, ওনার মুখোমুখি হয়ে।
উনি আমাকে বললেন, ‘অয়ন, তুমি কেমন আছ?’
আমি বললাম, ‘সত্যি কথা বলতে বিকেলে মনটা খুব খারাপ ছিল। এখন আপনাকে দেখে, আপনার সাথে কথা বলে মনটা ভালো লাগছে। আপনি কেমন আছেন, স্যার?’
হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, কেমন আছেন? আমি বলি বেঁচে আছি। বেঁচে থাকা কোনোক্রমে টিকে থাকা না। আনন্দময় অবস্থায় থাকা! যেকোনো অবস্থায় যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি আনন্দে থাকতে পারি। এই দিকে হিমু চরিত্রের সঙ্গে আমার কিছুটা মিল আছে।
অয়ন, আমি চাই তুমিও আনন্দে থাকবে! তোমার বন্ধু অপুও তাই চায়! অপু তোমাকে অনেক, অনেক ভালোবাসে। অপুর ধারণা, তুমি একজন শুদ্ধ মানুষ!
ব্যক্তিগতভাবে আমি, আমার চারপাশের মানুষজন খুব মন দিয়ে দেখি। আমার ভেতরে একধরনের গোপন অনুসন্ধান চলতে থাকে। যদি কোনো শুদ্ধ মানুষের দেখা পাই। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তো আমি শুদ্ধতম মানুষ খুঁজে বের করতে পারব না। আমাকে খুঁজতে হবে আমার পরিচিতজনদের মধ্যে’!

‘স্যার, আপনি কি এখন পর্যন্ত কোনো শুদ্ধ মানুষ খুঁজে পেয়েছেন’?
‘হ্যাঁ, দুজনকে পেয়েছি। একজন বাস্তবে, আরেকজন কল্পনায়। প্রথম জনের নাম আনিস, পুরো নাম আনিস সাবেত। এক সময় পদার্থবিদ্যার তুখোড় ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সিনিয়র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের শেষের দিকে ওর সাথে আমার পরিচয়। পরে সখ্য আর হৃদ্যতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করে আনিস ভাই চলে গেলেন কানাডায়, পিএইচডি করতে। তারও কিছুদিন পর উনি চলে গেলেন এই ভুবনের বাইরে, অন্য ভুবনে! আনিস ভাইয়ের ক্যানসার হয়েছিল। অয়ন, তুমি হয়তো লক্ষ করেছ, আমার অনেক গল্প আর উপন্যাসের নায়কের নাম আনিস। এই আনিস আমাদের আনিস ভাই। গভীর মায়া, মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে আমি যখনই একটি মধ্যবিত্ত আইকন তৈরি করতে চেয়েছি, তখনই আমার মনে হয়েছে আনিস ভাইয়ের কথা!
দ্বিতীয় শুদ্ধ মানুষটা আমার কল্পনা দিয়ে তৈরি। ওর নাম শুভ্র। শুভ্রকে নিয়ে আমি বেশ কয়েকটা বই লিখেছি। রাজপুত্রের মতো ওর অবয়ব। বড়ই কোমল ওর স্বভাব। ঠিক তোমার মতো! কিন্তু এই শুভ্ররও একটা বড় অসুখ আছে। ওর চোখের নার্ভগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। একসময় হয়তো ওর জগত্টা পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যাবে। তীব্র অন্ধকার!
মাঝে মাঝে আমার কি মনে হয় জানো অয়ন, মনে হয়, তীব্র অন্ধকারের মধ্যেই হয়তো আলোর বাস’!
আমি বললাম, ‘স্যার, জোছনা তো আপনার খুব প্রিয়, আমারও খুব প্রিয়। জোছনা নিয়ে কিছু বলুন’!
উনি বললেন, ‘অয়ন, প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই। গৃহত্যাগী হবার মতো জোছনা উঠেছে কি? আমি সিদ্ধার্থের মতো গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখামাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর!
ওই প্রান্তর ধরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব! পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে। চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠে ডাকবে আয়, আয়, আয়!
কিন্তু কি জানো অয়ন, আমার আকাশে, গৃহত্যাগী হবার মতো ওই জোছনা কখনোই ওঠে না। প্রান্তরে বিবিধ কণ্ঠের ওই অশরীরী ডাকও আমি শুনি না। আসলে সবাই সব ডাক পায় না। ডাক পেলেও সবাই সেই ডাক শোনে না। শুনতে পারে না। সবাইকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। সবাই তো আর সিদ্ধার্থ না’!
আমি বললাম, ‘ক্ষমতা কে দেয়নি?’

উনি বললেন, ‘একজন আছেন। সময়, মহাকাশ, মহাকাল আর এই অনন্ত নক্ষত্রবীথি নিয়ে যিনি এক মহান খেলায় মত্ত! আমরা হয়তো সেই মহান খেলার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র’!
আমি বললাম, ‘তার মানে আপনি নিয়তিতে বিশ্বাস করেন’?
উনি ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আর মৃদু স্বরে বললেন, ‘দেখো অয়ন, বিজ্ঞানের ছাত্র বলেই হয়তো বিজ্ঞানের প্রতি আমার আস্থা এবং ভরসা সীমাহীন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। তার যাত্রা ‘Abstract’ এক দিকে।

কোয়ান্টাম থিয়োরি, স্ট্রিং থিয়োরি- সবকিছু আমার মতো সাধারণ মানুষের বোধের বাইরে চলে যাচ্ছে! বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা চলে যাচ্ছে ফিলোসফির দিকে। সুফিরা যেমন বলেন সবই মায়া। বিজ্ঞানও বলা শুরু করেছে, সবই মায়া!
কিন্তু এই মায়া বা মহামায়ার উত্স কোথায়?
এই যে আমাদের এই চেনা-জানা জগত, এই জগতের সমান্তরালে কি আরো কোনো জগত আছে?
কোয়ান্টাম থিয়োরি কিন্তু ‘প্যারালাল ইউনিভার্স’কে সমর্থন করে। তার মানে দাঁড়াল কী? তুমি অয়ন, এই জগতে আছ। একই সাথে একই সময়ে তুমি হয়তো আরো একাধিক জগতে আছ!
আমি বলি, ‘কোথায় আছে ওই প্যারালাল ইউনিভার্স? আমাদের খুব কাছেই’? একেবারে নাগালের মধ্যেই, নাকি পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ আলোক যুগ দূরের কোনো গ্যালাক্সিতে?
চোয়াল শক্ত হলো তার, জানালা দিয়ে তাকালেন আকাশের দিকে আর বিড বিড করে বললেন, ‘কোয়ান্টাম বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, প্যারালাল ইউনিভার্সের অস্তিত্ব আমাদের চেনা-জানা Three ডাইমেনশনাল বা তিন মাত্রার এই জগতের বাইরে! প্যারালাল ইউনিভার্সের সংখ্যা এক নয়, একাধিক! কেউ কেউ এটাও দাবি করছেন যে, এরকম একাধিক প্যারালাল ইউনিভার্সের সংঘর্ষের ফলেই! বিগ ব্যাং’ বা ‘মহাবিস্ফোরণ’ ঘটেছিল। আর দুই প্যারালাল ইউনিভার্সের ঘর্ষণের ফলেই নতুন আরেকটি ইউনিভার্স, অর্থাত পৃথিবীর উত্পত্তি!

কোয়ান্টাম মেকানিকস ‘বহুজগত’-এর ধারণা সমর্থন করে!
অয়ন, অনেক জটিল জটিল কথা বলে ফেললাম। জগত-সংসার, প্যারালাল ইউনিভার্স-ওগুলো ওগুলোর জায়গায় থাক, তোমার চিকিত্সা কেমন চলছে’?
আমি বললাম, ‘চিকিত্সা ভালো চলছে, স্যার। প্রফেসর হুদা বলেছেন, আরো দুই সাইকেল কেমোথেরাপি নিতে হবে। তবে সত্যিটা হচ্ছে, এত কিছুর পরও আমাকে হয়তো চলে যেতে হবে, খুব সহসাই’!
স্যার বললেন, ‘জানো অয়ন, মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। মরে গেলাম, ফুরিয়ে গেল। তবে এটা আমার কাছে খুব পেইনফুল। একটা মানুষ এত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে, সত্তর বা আশি বছর বাঁচে। এরপর শেষ। আর একটা কচ্ছপ সাড়ে তিনশত বছর বাঁচে। হোয়াই? কচ্ছপের মতো একটি প্রাণীর এত বছর বাঁচার প্রয়োজন কী?’
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে স্যার থামলেন। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন জানালার দিকে!
জানালার বাইরে খোলা আকাশ। ওই আকাশে উড়ে বেড়ায় চিল। আকাশে উড়ে উড়ে ওরা পুকুর কাটে!
স্যারের কথার উত্তরে আমিও কিছু বলতে চাইলাম। কিন্তু তার আগেই আমার ঘুম ভেঙে গেল! বাইরে মিছিল হচ্ছে, মিছিলের শব্দেই আমার ঘুম ভেঙেছে!
শেষ বিকেলের হালকা রোদ পর্দার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়েছে আমার রুমে। ওই হালকা আলোয় আমি চোখ বোলালাম পুরো রুমে।
কোথাও কেউ নেই!
আমার বিছানার ঠিক সামনের চেয়ারটা, যেখানটায় বসে ছিলেন আমার প্রিয় লেখক।
ওখানেও কেউ নেই!
বুঝলাম, এ আমারই বিক্ষিপ্ত মনের কল্পনা!
অথবা স্বপ্ন!
অথবা উইসফুল থিংকিং! (চলবে)