মাহফুজুর রহমান মানিক: জাস্টিন পিয়েরে জেমস ট্রুডো নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স¤প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। তিনি কানাডার দ্বিতীয় কম বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা পিয়েরে ট্রুডোও কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ট্রুডো কানাডাবাসীর জন্য এক রৌদ্রোজ্জ্বল পথ উপহারের কথা বলেছেন। তিনি ভাষণে তার বিজয় সবার বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেন। গত চার বছরের শাসনামলে ট্রুডো শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা পালনসহ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন। জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক সম্পর্ক।
জাস্টিন ট্রুডো গত মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের হৃদয়ে স্থান করেই তিনি দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জয় লাভ করেছেন। তাই এ বিজয়কে ট্রুডো মানুষের বিজয় হিসেবেই মনে করেন। নির্বাচনের ফলাফলের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘এ বিজয় আপনাদের সবার। আপনারা যে সম্মান আমাকে দিয়েছেন এবং যে দায়িত্ব দিয়েছেন, গত চার বছর যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, আগামী দিনগুলোয় আরও ভালোভাবে আপনাদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাই। আরও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব, আপনাদের সবাইকে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ।’
ওয়েলকাম টু কানাডা
জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন বরাবরই অভিবাসীদের পক্ষে সোচ্চার। তিনি নিজ দেশে যেমন অভিবাসী মানুষদের আশ্রয় দিয়েছেন, তেমনি বিপদে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিবাসন নীতি নিয়ে যখন ট্রাম্প অব্যাহত সমালোচনা করেন, ট্রাম্প যখন সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার আদেশ দেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শরণার্থীদের পক্ষে কথা বলেছেন জাস্টিন ট্রুডো। শরণার্থীদের নিজ দেশে স্বাগত জানিয়ে টুইটারে লেখেন- ‘ধর্মবিশ্বাস যাই হোক না কেন; নির্যাতন, সন্ত্রাস ও যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা কানাডায় স্বাগতম। বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি।’ তিনি এ জন্য হ্যাশট্যাগ ‘ওয়েলকাম টু কানাডা’ চালু করেন।
সুন্দর বিশ্ব গড়ার প্রতিশ্রুতি
একটি সুন্দর বিশ্ব গড়তে জাস্টিন ট্রুডো বরাবরই ভূমিকা পালন করেন। ট্রুডো বিশ্বের অন্যতম সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সোচ্চার। কানাডার মন্ট্রিয়লে যখন জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন ‘অগ্নিকন্যা’ গ্রেটা থানবার্গ, এই বিক্ষোভে তার সঙ্গে যোগ দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ট্রুডো বলেন, তরুণরা দারুণ কাজ করেছে। কানাডাসহ সারাবিশ্বেই তাদের জলবায়ু নিয়ে অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি নির্বাচনের প্রাক্কালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, লিবারাল আবার সরকার গঠন করলে আগামী দশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দুই বিলিয়ন গাছ লাগানোর জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ট্রুডো পরিবার ও বাংলাদেশ
জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। তার বাবা পিয়েরে ট্রুডো কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ক্ষমতায় থাকা স্বাধীনচেতা এই রাজনীতিক ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে। এবারের নির্বাচনে জয়লাভের পর অভিনন্দন জানিয়ে ট্রুডোকে বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আপনার এই বিজয় বিশ্বনেতৃত্ব হিসেবে সত্যিকারের স্বীকৃতি।’ আমরা জানি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে আমাদের জনগণের সঙ্গে কানাডার জনসাধারণের উদারনৈতিক আদর্শ এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের মধ্য দিয় ঘনিষ্ঠতা অব্যাহত। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায়ও জাস্টিন ট্রুডো সক্রিয় এবং অবিচ্ছিন্ন সহায়তা করেন।