অনলাইন ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এই প্রথম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতম, বীভৎস, বর্বর গণহত্যা ও জেনোসাইড নিয়ে আলোচনা হতে যাচ্ছে। আগামী ৩ আক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩টায় জেনেভাস্থ ইউনাইটেড নেশান্স হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের হেড কোয়ার্টারে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এই আলোচনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাঙালিরা ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছে এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম এই অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা ও জেনোসাইডের ভিডিও ফুটেজ, ফটোগ্রাফ, ছবি, দলিল পত্র এবং তথ্য উপাত্ত।

উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রæপ-ইঅঝটএ, ‘আমরা একাত্তর’ এবং ‘প্রজন্ম ৭১’-এর যৌথ আহবানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ জেনেভার হেড কোয়ার্টারে আগামী ৩রা অক্টোবর বিকাল ৩টায় ৫১তম অধিবেশনে ৩ নং আলোচ্যসূচী নির্ধারণ করেছে।

এ উপলক্ষে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পৃথিবীব্যাপী ‘জেনোসাইড স্বীকৃতি আদায় সপ্তাহ’ উদযাপন করা হবে। জেনেভা ও নিউইউর্কের জাতিসংঘ ভবন ছাড়াও লন্ডন, টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ফ্লোরিডা, সিডনী সহ পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সমাবেশ ও মানব বন্ধন তৈরি করা হবে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যে সব কর্মসূচী নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,
– ৩ অক্টোবর বিকাল ৩টায় জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনের ঢঢঠ কক্ষে আলোচনা।
– ২ অক্টোবর বিকাল ৪টায় নিউইয়র্ক জাতিসংঘ ভবনে সমাবেশ ও মানব বন্ধন
– ২ অক্টোবর বিকাল ৪টায় লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্মূখে সমাবেশ ও মানব বন্ধন।
– ২ অক্টোবর বিকাল ৪টায় সিডনীতে সমাবেশ ও মানব বন্ধন।
– ২ অক্টোবর বিকাল ৪টায় কানাডার মন্ট্রিয়লে সমাবেশ ও মানব বন্ধন
– ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩রা অক্টোবর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে সমাবেশ ও মানব বন্ধন।

১৯৭১ সালে সংঘটিত এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের দাবীতে কানাডার টরন্টো শহরে বাঙালি পাড়া খ্যাত ৩০০০ ড্যানফোর্থ এলাকায় সন্ধ্যায় সমাবেশ ও মানববন্ধন এর আয়োজন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর, রবিবার, ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হল এ নেদারল্যাণ্ডসের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রপ (বাসুগ), ‘আমরা একাত্তর’ ও ‘প্রজন্ম ৭১’ নামে তিনটি সংগঠন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

মন্ত্রী জানান, জাতিসংঘে গণহত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের জন্য যে সময় বরাদ্দ আছে, সে সময়ে বিষয়টি বিশ্ববাসীকে অবহিত করা হবে। এতে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত হবে। ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সব দূতাবাসে বিষয়টি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে ‘আমরা একাত্তর’ এর প্রধান সমন্বয়কারী হিলাল ফয়েজী বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। পৃথিবীতে এতো স্বল্প সময়ে এতো মানুষ হত্যার রেকর্ড নেই। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে ও সারাদেশে ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়েছে। দুই লাখ মা বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫১ বছরে পদার্পন করলেও মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত নৃশংস গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আজো মেলেনি। সেই স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংগঠন আমরা একাত্তর, প্রজন্ম ৭১ ও নেদারল্যান্ডসের প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন বাজুগ কাজ করে যাচ্ছে। এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবির লড়াইয়ে নেমেছি।

তিনি জানান, এ বছর জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের (UNHCR) ৫১তম অধিবেশনে ৩ নম্বর এজেন্ডায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘঠিত গণহত্যার ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘বাসুগ’, ‘আমরা একাত্তর’ ও ‘প্রজন্ম ৭১’ এর সম্মিলিত আবেদনে এই এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করানো হয়েছে। ‘বাসুগ’ এর উদ্যোগে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ আগামী ৩ অক্টোবরে এক ঘণ্টার জন্য জেনেভার একটি হল বরাদ্দ করেছে।

‘প্রজন্ম একাত্তর’ এর সভাপতি ও শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর বলেন, গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন। এখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আছে, সেজন্য অন্যান্য দেশের গণহত্যার স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু আমাদের সুযোগ রয়েছে, যেহেতু জাতিসংঘ ভবনে এটি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, চলমান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে একটি মোমেন্টাম তৈরি হচ্ছে। আমরা যদি এটি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি ৯ ডিসেম্বরের আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে যেন বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘প্রজন্ম একাত্তর’ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ রেজা নূর, ‘আমরা একাত্তর’ এর সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক জিএস মাহবুব জামান শওকত, সংগঠনের প্রধান পরিচালক ও সংগঠক আব্দুর রশিদ।