অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী এ সপ্তাহে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল প্রতিশ্রুতি ও অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে অপারেশন সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারের সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পরিবহনে বাংলাদেশ বিমানকে তালিকাভুক্ত করায় তাকে ধন্যবাদ জানান। জেনারেল অতুল খারে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ বিমান সফলতার সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পরিবহনে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়নসহ মানবাধিকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বশীল ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি। আলোচনায় বিভিন্ন জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের জনবল আরও বৃদ্ধি, আহত এবং নিহত শান্তিরক্ষীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ত্বরান্বিতকরণ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনিষ্পন্ন রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধ, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগের ব্যবস্থা করা, অধিক হারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিস্থাপনসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ইউনিট পাঠানো সংক্রান্ত বিষয়াদি প্রাধান্য পায়। এছাড়া বৈঠকে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর শান্তিরক্ষা অভিযান কার্যক্রম সংক্রান্ত বিবিধ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
আইএসপিআর আরও জানায়, মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাগত জ্ঞান, নিয়মানুবর্তিতা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্য পিয়েরে ল্যাক্রুয়া। তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান ও প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। ল্যাক্রুয়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণের প্রশংসা এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়েও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। জেনারেল আজিজ ইউনাইটেড ন্যাশনস পিসকিপিং ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেমের আওতায় মাত্র ৬০ দিন সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪টি কন্টিনজেন্টসহ সর্বমোট ১৫টি কন্টিনজেন্ট মোতায়েন হতে সক্ষম বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিজিয়ন ও সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন জেনারেল আজিজ। এছাড়া শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ও জাতিসংঘ সদর দফতরের শান্তিরক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশি অফিসারদের পদায়নের জন্যও তিনি অনুরোধ জানান। একই দিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লয়টের সঙ্গেও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেনাপ্রধান দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেন। লে. জেনারেল লয়টে বাংলাদেশি সেনা সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রদর্শিত দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জেনারেল আজিজ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে পৌঁছালে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং শান্তিরক্ষাসহ তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সেনাপ্রধানকে অবহিত করেন। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ সার্বিকভাবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান জেনারেল আজিজ।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান গত ২৯ জানুয়ারি সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
