শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : (পূর্ব প্রকাশের পর)
তাই আমি সুকৌশলে এড়িয়ে গেলাম, কথা দিতে পারলাম না হুই রানীকে। আসলে প্রত্যাখান করলাম ওর মিনতি করা অনুরোধ!
হুই ছোট রানী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, ওর কান্না যে আর থামছে না! ওর ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাওয়া মনকে আমি শান্তনা দিতে পারছিলাম না! আমি হাত দিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম। কিন্তু ওর অশ্রুপাত যে বন্ধ হচ্ছে না, ঝর্ণা ধারার মতো ক্রমাগত ঝরে পরছে! ক্ষণিক পরে আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে পরলাম। ঝাড়া দিয়ে ঠেলে ওর দুঃখ ভারাক্রান্ত দেহটাকে সরিয়ে দিলাম!
উঠে পরলাম, রঙিন পর্দা ঘেরা ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালাম!
“আমার পক্ষে রাজকীয় পালঙ্ক স্থানান্তরিত করা কোনভাবেই সম্ভব নয়, আর শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে, তোমার স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করলে সিয়ে রাজ প্রাসাদের বীর গাঁথা ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হতে পারে, আর তাই সেটা আরও অসম্ভব! যদি তোমার আর কোন আবদার থাকে তবে সেগুলো উত্থাপন করার জন্য আমি তোমাকে অনুমতি দিচ্ছি!”
পাঁচ রঙের রঙ্গিন পর্দায় ঘেরা ঘরের ভেতর থেকে আসা ফুঁপানো কান্নার আওয়াজ হঠাৎ করেই থেমে গেলো! এরপর ভেতর থেকে শুনা গেলো দাঁত কিড়মিড় করা আশা ভঙ্গ হওয়ার কণ্ঠস্বর!
“দাসী আর কি আবদার করতে পারে, ভেতরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বাতাসের উদগীরণ করা ছাড়া! জাঁহাপনা, আপনি নিজ হাতে লান ছোট রানী, হান ছোট রানী এবং চিন ছোট রানী-কে শাস্তি দেন। যদি এই দাসীর প্রতি জাঁহাপনার হৃদয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা সঞ্চিত থাকে, তবে জাঁহাপনার কাছে আবদার করছি, জাঁহাপনা যেন নিজ হাতে ফং বড় রানী-কে শাস্তি দেন, বেতের বাড়ি মারেন এক’শ ঘা, বেতের বাড়ি দু’শ ঘা, বেত মেরে যদি ওদের মেরে ফেলেন তা’ হলেই আমার মনটা খুশীতে ভরে উঠবে!”
আমি পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গেছি! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, দাঁত কিড়মিড় করার মতো শব্দ হুই ছোট রানীর মুখ থেকে বের হতে পারে! আমি আবারও পিঠ টান দিয়ে ফিরে গেলাম ঐ ঘরের ভিতরে। দেখতে পেলাম হুই ছোট রানীর অভিমান আর দুঃখ ভারাক্রান্ত অবয়ব। সেই সাথে আরও নজরে আসলো উজ্জ্বলতায় ভরা ওর অক্ষি যুগল! এই মুহূর্তে মেয়ে মানুষদের অতীত কার্যকলাপের ব্যাপারে আমার নিজের সরল আর সহজ বিশ্লেষণ এবং বিচার বুদ্ধির উপর আমি নিজেই আর আস্থা রাখতে পারছি না! পাঁচ রঙে রাঙ্গানো রঙ্গিন পর্দায় ঘেরা ঘরের মধ্যে থাকা ঐ মেয়েটাই কি হচ্ছে সহজ সরল আর কোমল ব্যক্তিত্বধারী হুই ছোট রানী? বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এখন! জানি না কোন কারণে এমনটা হয়েছে, হয়তোবা এক বছর ধরে পিছনের প্রাসাদে বসবাসই হুই ছোট রানীর জীবনকে বদলে দিয়েছে একেবারে। আবার এমনও তো হতে পারে কি, আমার কাছ থেকে পাওয়া অতিরিক্ত আদরই হুই ছোট রানীর হৃদয়ে সঞ্চিত থাকা সুকুমার বৃত্তিগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে? আমি রঙ্গিন পর্দার বাইরে এসে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ, তারপর একটা কথাও না বলে পক্ষী ক‚জন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম।
দেশ আমার জন্য বিপদ সংকুল, রাজ প্রাসাদকে আমার কাছে মনে হচ্ছে নিরাপত্তাহীন স্থান! তবে বাস্তবতায় আমার জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে মেয়ে মানুষের মন!
পক্ষী ক‚জন ঘর থেকে বেরিয়ে শ্বেত পাথরে বাঁধানো রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই আমার মন ভালো হতে শুরু করলো! আমার পিছু পিছু আসছিল একজন প্রাসাদ ভৃত্য, ওকে লক্ষ্য করে আমি বলে উঠলাম, “এমন কি হুই ছোট রানীও করা শুরু করেছে অসহ্য আবদার! আর বেশি দেরি নাই, ধেয়ে আসছে সিয়ে রাজ্যের বিপর্যয় কাল!”
আমি যেন খানিকটা অনিচ্ছাকৃতভাবেই প্রয়াত প্রাসাদ ভৃত্য সুন সিন-এর আওড়ানো ভবিষ্যৎ বাণীর পুনরাবৃত্তি করলাম! আমার বলা কথার ভাবার্থ পিছনে পিছনে আসা প্রাসাদ ভৃত্যটি একে বারেই বুঝতে পারলো না। আর আমি নিজেই তো যেন আমার নিজের আওড়ানো কথা শুনে চমকে উঠলাম!
আমি হুই ছোট রানীর হৃদয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করি নাই, যার অর্থ অন্যান্য রানীদের বেত্রাঘাত করার সিদ্ধান্ত নেই নাই! কিন্তু হিংসার বশে কেউ কেউ হুই ছোট রানীর গর্ভে থাকা বংশধারার ধারক ভ্রূণটির ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কাকে আমি পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছি না! যে ঘটনা প্রয়াসই শোনা যায়, প্রাসাদের ইতিহাস আর ফাঁস হওয়া গোপন সরকারি নথিপত্র থেকেও জানা যায়, আর যা কিনা প্রত্যেক দেশেই ঘটতে পারে এবং ঘটে থাকে, সেটা হচ্ছে, কোন কিছুর বিনিময়ে ভ্রূণ নষ্ট করে গায়েব করার ঘটনা! অতীত দিনে এমন ঘটনা বহু বার ঘটেছে!
আমি সব চাইতে সময় উপযোগী যে কাজটা করতে পারি তা হলো, হুই ছোট রানীর অন্তঃসত্ত¡া হওয়ার ব্যাপারটা গোপন রাখা, আর রাজ বৈদ্য, পক্ষী ক‚জন ঘর প্রাসাদের খোজা দাস ও প্রাসাদ দাসীদেরকে কড়া নির্দেশ দেয়া, ওরা যেন এই ব্যাপারটার গোপনীয়তা কঠোরভাবে বজায় রাখে!
বাস্তব অবস্থা প্রমাণ করেছে যে, গোপনীয়তা বজায় রাখার আমার প্রচেষ্টাসমুহ পুরোপুরি পর্যবসিত হয়েছে ব্যর্থতায়!
কয়েক দিন পরের কথা, স্বল্প বিশ্রামের নিমিত্তে আমি গিয়েছিলাম হান ছোট রানীর আবাস প্রফুল্ল সুরভি দলানে, নিবিড় ঘনিষ্ঠ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর পরই আমার কানের কাছে মুখটা এনে হান ছোট রানী বললো, “শুনেছি হুই ছোট রানী অন্তঃসত্ত¡া হয়েছে, খবরটা কি সত্য?”
“তুমি কার কাছ থেকে শুনেছো?”, আমি চরমভাবে বিস্মিত হয়ে বললাম!
“মং ফুরেন বলেছেন আমাকে এবং চিন ছোট রানীকে।”, খুব পরিতৃপ্তি ভরা কন্ঠে কথাগুলো বললো হান ছোট রানী!
আগের কথার সূত্র ধরে আমি বললাম, “মং ফুরেন কার কাছ থেকে শুনেছেন এই খবরটা?”
“মং ফুরেনকে কি আবার কারও কাছ থেকে শুনার দরকার আছে? জাঁহাপনা, উনি নিজেই তো এই সংবাদটার সূত্র!
ঐ দিন শতদল ফুল বাগানে, ফুল উৎসব দিবসে উনি হুই ছোট রানীর দিকে এক নজর তাকিয়েই ধরতে পেরেছিলেন যে ইতিমধ্যেই মেয়েটি গর্ভবতী হয়েছে!”, হান ছোট রানী মুখটা লুকিয়ে আমার চেহারার অভিব্যক্তি দেখার চেষ্টা করে, শব্দ করে কৃত্রিম হাসি হাসার চেষ্টা করলো, তারপর বললো, “জাঁহাপনা বোধ হয় একটু ঘাবড়িয়ে গিয়েছেন, তাই না? যদিও হুই ছোট রানী হচ্ছে একটা বাঁদী থেকে হওয়া বেগম, কিন্তু ব্যাপারটা তো রাজ প্রাসাদের জন্য একটা সুখবর!”
আমার কাঁধে উপর দিয়ে হাত রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসা হান ছোট রানীকে আমি ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম, তাকালাম দূরে সবুজ ঝাউ গাছের ছায়ায় ঢাকা লাল টালির ছাদ বিশিষ্ট পক্ষী ক‚জন ঘর নামের দালানটার দিকে, দেখতে চাইলাম গহীন অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকা সেই অসুস্থ মেয়েটাকে! আমি দেয়ালের গায়ে বাড়ি দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি পক্ষী ক‚জন ঘরের উপর থেকে নির্গত হচ্ছে একটা চোখ ধাঁধানো অশুভ লাল আলো!
“তোমরা হুই ছোট রানীর ব্যাপারে কি করতে চাও?”
“জাঁহাপনা, আপনি এই দাসীর প্রতি চরম অবিচার করছেন,
আমার আর হুই ছোট রানীর পথ সম্পূর্ণ আলাদা, আমার ওর বিষয়ে নাক গলাবার কোন প্রয়োজন নাই! আমি ওর ব্যাপারে কি করবো, আপনার কি মনে হয়?”, হান ছোট রানী অত্যন্ত ধূর্ত আর সুচতুরভাবে আমার করা প্রশ্নটাকে এড়িয়ে গেলো।
লাল রঙের রেশমী কাপড়ের জামার বিশাল হাতা আবছায়া গৃহ বরাবর দুলিয়ে দুলিয়ে সে বললো, “এই দাসীর এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাধ্য নেই, এই প্রশ্নটা জাঁহাপনার উচিত আমাদের সম্রাজ্ঞী বড় রানী বরাবর পেশ করা, জাঁহাপনার এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি!”
আমার মনে হচ্ছে, যেহেতু হান ছোট রানী এবং চিন ছোট রানী, এরা দু’জন সহোদরা ভগ্নি, সে কারণে পক্ষী ক‚জন ঘর-এর ঐ বিশেষ তথ্যটা আর গোপন নেই!
তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই ব্যাপারটা বড় রানী ফং শ্রে ইতি মধ্যেই জেনে গেছে! তাই যেমনটা আশঙ্কা করছিলাম, ঠিক তা-ই হলো। দ্বিতীয় দিন ফং শ্রে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে আসলো আমাকে অভিনন্দন জানাতে, হুই ছোট রানীর অন্তঃসত্ত¡া হওয়ার কারণে! ওর জোর করে সৃষ্টি করা কৃত্রিম হাসি মুখ, আর ক্ষুব্ধ তীর্যক কথার ধরন আমার হৃদয়কে গভীরভাবে ভারাক্রান্ত করলো। ওর সাথে কোন কথা বলার মানসিকতা আমার একে বারেই ছিলো না। শুধু খুব শীতল কন্ঠে আমি একটা কথাই বললাম, তোমার হৃদয় যখন ক্ষত বিক্ষত হয়েই গেছে, তা হলে তোমার আবাস ভবন আবছায়া গৃহে গিয়েই কান্নায় বুক ভাসিয়ে দিচ্ছ না কেন? ফং শ্রে খুব অল্প ক্ষণের জন্য স্তম্ভিত হয়ে তাকালো আমার অবয়বের দিকে, এরপর ঠোঁটের কোণায় তৈরী করলো একটা অস্পষ্ট দ্ব্যর্থবোধক হাসির রেখা এবং বললো, “জাঁহানপানা, আমাকে খাটো করে দেখবেন না! আমি হচ্ছি একটা দেশের পূর্ণাঙ্গ রানী, বড় রানী! আমি কি জন্য কোন ছোট রানীর সাথে ক্ষমতা আর শক্তি দেখাবার প্রতিযোগিতায় নামবো? তিন প্রাসাদ আর ছয় দালানের মধ্যে শুধুমাত্র হুই ছোট রানীই সর্ব প্রথম গর্ভ ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে, দেখে তো মনে হচ্ছে সত্যিই হুই ছোট রানীর সৌভাগ্য অগভীর নয়। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ভগ্নি হিসাবে আমি এই চমৎকার কনিষ্ঠা ভগ্নিটিকে উত্তম সেবা যত্ন করবো, এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি!
গর্ভকালীন সময়ে হুই ছোট রানী খুব ভয় পায়, মূলত ওর অতীতের ভীতিকর অভিজ্ঞতাগুলোর কারণে। প্রাসাদ দসীদের নিয়ে আসা খাবার দাবারের প্রত্যেকটা বাটির প্রতি কড়া নজর রেখেছে সে। সে আশঙ্কা করছে, রাজ প্রাসাদের রান্না ঘরের কর্মী এবং অন্যান্য রানীরা এক জোট হয়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে। ভূট্টার রুটি কিংবা মিষ্টান্নের ভেতর বিষ মিশিয়ে দিতে পারে। প্রত্যেকটা খাবারের বাটি থেকে, খানিকটা খাবার প্রথমে একজন প্রাসাদ দাসীকে বাধ্যতামূলকভাবে খাইয়ে দেয়া হয়, তারপর খাবারটা বিষ মুক্ত এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই কাঠি দিয়ে সেই খাবার মুখে তুলে নেয় গর্ভবতী হুই ছোট রানী!
হুই ছোট রানীর অপূর্ব সুন্দর মুখ মণ্ডলটার উজ্জ্বল আভা গর্ভকালীন সময়ে দিন দিন যেন ধুয়ে মুছে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে, ওর চমৎকার ডাগর চোখের ভ্রæ জোড়ার মাঝে ফুটে উঠেছে মনে ভেতর চেপে রাখা অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ, যা নষ্ট করছিলো ওর চেহারার অপরূপ মোহনীয়তা। আমি প্রতি বারই যখন পক্ষী ক‚জন ঘরে যাই, ওর সাথে দেখা হয়, কথাবার্তা বলি, ওকে দেখে আমার মনে হয় ও যেন পরিণত হয়েছে একটা শীর্ণকায় কাগজের পুতুলে, যা কিনা বাতাসের ঝাপটায় দুলছে এ দিক ও দিক। ভাসছে বাতাসে। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি! আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, হতভাগ্য হুই ছোট রানী উড়ে চলে যাচ্ছে বাতাসের সাথে, বাতাসের ঝাপটায়! পক্ষী ক‚জন ঘর বারাবর সব দিক থেকে ছুটে আসা ঝঞ্ঝা বাতাসকে আমি যেন পারছি না ঠেকাতে কোনভাবেই!
হুই ছোট রানী আমাকে জানিয়েছে যে, ফং বড় রানী প্রতিদিন ওর জন্য খাবার পাঠান! আর যেই খাবার উনি পাঠান তার সবটুকুই সে পাঠিয়ে দেয় চিতা বিড়ালটার সামনে। ফং বড় রানীও ওর নিত্য দিনে করা এই কাজটা সম্পর্কে অবগত, তা সত্বেও বড় রানী লোক মারফত নানা ধরনের সুস্বাদু আর সুগন্ধি এবং সুদৃশ্য খাবার পাঠিয়েই যাচ্ছেন প্রতিটা দিনই! রোদ বৃষ্টি তুষার, কোন দিনই বাদ যাচ্ছে না!
“আমি জানি না সৌহর্দ্যের মোড়কে বিশ্বাসঘাতকতা করে ফল ও অন্যান্য খাবারের মধ্যে সে কি ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছে!”, এই কথাগুলো বলার সময় হুই ছোট রানীর চোখ দুটো লাল হয়ে উঠলো, হুই ছোট রানী আরও বললো, “ও জানে যে আমি ওর পাঠানো খাবার খাই না, তবুও সে প্রতিদিনই কেনো খাবার পাঠায়? বাটির পর বাটি ভর্তি নানা পদের খাবার! এটাও কি সম্ভব, সে আশা করছে, এগুলো করে সে আমার মন জয় করতে পারবে?”
আমি দেখতে পাই ঐ চিতা বিড়ালটা বাগানের বেড়া ঘেঁষে শুয়ে থাকে, আরাম করে হাই তোলে প্রতিদিন ঐ খাবার খেয়ে বিড়ালটার মধ্যে কোন রকম বিষ ক্রিয়ার একটু চিহ্নও দেখা যায় না। মেয়ে মানুষদের চিন্তা-ভাবনা সর্বদাই সাংঘাতিক অদ্ভুত, খুবই জটিল! সব সময়ই নির্যাতিত হওয়ার ভয়, এই বিভ্রম থেকে আমি কিছুতেই হুই ছোট রানীকে বের করে আনতে পারছিলাম না, একই ভাবে আমি অক্ষম ফং শ্রে-র ছল চাতুরী ধরতে, কি খেলা সে খেলতে চাইছে এখানে, সেটা আমি বুঝতে পারছি না একে বারেই!
সব মিলিয়ে আমি যেন হয়ে উঠেছি নানান প্রসাধনী মেখে রূপচর্চাকারী কতগুলো, কিছু সংখ্যক নারীর তৈরী করা ঘূর্ণিবর্তের চক্রের মধ্যে পতিত এক সম্রাট! আমি যেন তাড়ার মধ্যে আছি, পায়চারী করছি তিন প্রাসাদ আর ছয় দালানের মধ্যে! সম্রাটের রাজ মুকুট আর সোনালী জরির কারুকাজ করা নাগরা জুতার উপর ছিটানো পানির মধ্যে সামান্যই থাকে সুগন্ধি গোলাপ জল, সেই সাথে থাকতে পারে দুর্গন্ধ যুক্ত কাদা মেশানো ময়লা পানি, সবই অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার!
। ৩।
এ বছর বসন্ত কালে সিয়ে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের গ্রামগুলোর ফসলের মাঠে দেখা দিয়েছে বির্পযয়, ঘটেছে পঙ্গপালের ব্যাপক আক্রমণ! (চলবে)