শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : ওরা জানালার পাশে হেলান দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে দেখে আমার অনুশীলন। আঙ্গুল তুলে ইশারা করে আমাকে, আর ইয়েন লাঙ-কে, অনুশীলনের ভুল ভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করে। কেউ কেউ আবার করে ব্যাঙ্গাত্মক পরিহাস! ওদের কথা বার্তা, ইঙ্গিত ইশারা সব কিছুকে আমি শুনেও না শুনার, দেখেও না দেখার ভান করি। আমি জানি আমি আছি অনেক উঁচুতে, এদের চেয়ে অনেক উপরে থাকা টান টান করে টানা দড়ির উপর! আসলে ওরা তো হচ্ছে একেকটা চলমান মৃত দেহ, হাঁটতে পারা মাংস পিন্ড যারা কিনা বস্তু জগতের মোহনীয়তার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে আছে চিরকাল! আমি জানি শুধু মাত্র অনেক উঁচুতে দড়ির উপর দাঁড়িয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার সময়ই আমি নতুন করে অর্জন করি আত্মবিশ্বাস, আমি অবজ্ঞা করি ঐ ছোট লোক নির্বোধ সাধারণ মানুষগুলোকে! দড়ির উপর দাঁড়িনো অবস্থায়-ই আমি যেন পুরপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি আমার নতুন জগতকে! আমি জানি এই নারিকেলের ছোবড়ার দড়িটার উপর দাঁড়িয়ে আমি নানা আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নের মধ্য থেকে বেছে নিয়ে পুরণ করতে পারি আমার সারা জীবনের চূড়ান্ত আর শেষ স্বপ্নটাকে!
আমি লক্ষ্য করেছি যে, বহু উঁচুতে আমার ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষমতা অনেকটা অলৌকিক রকম অসাধারণ! সব কিছুই আমি অর্জন করেছি, শিখেছি কোন প্রশিক্ষকের তত্ত¡াবধান ছাড়াই! কোন এক মন কাড়া লালিমার আভায় রঙিন প্রভাতে একটু হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি অনুশীলন করলাম, স্বচ্ছন্দ নিরুদ্বেগে হাঁটলাম লম্বা ঝুলন্ত দড়ির উপর দিয়ে। পুরো জগতটাই যেন আমার পায়ের নীচে নিঃশব্দে ভেসে ভেসে প্রবাহিত হচ্ছে! বছরের নবম মাসের শরৎ কালের বৃষ্টি বিন্দু বিন্দু ফোঁটায় ফোঁটায় ভিজিয়ে দিচ্ছিলো আমার অবয়ব! পুরনো দিনের দুঃখ ভারাক্রান্ত ঘটনাগুলো জীর্ণ হয়ে যাওয়া ফুলের পুংকেশরচক্রের মতো নতুন করে জাগ্রত হতে লাগলো আমার হৃদয়ের অন্তস্থলে! অশ্রæ ভরা অবয়ব নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি ঝুলন্ত টানা দড়িটার মাঝ খানে! টান টান করে টানা ঝুলন্ত দড়ির উপর বিপরীত স্থিতিস্থাপক বলের কারণে কিংবা যে ভাবেই হোক আমি খানিকটা উপরে নীচে উঠানামা করে দুলছিলাম। আমার দেহ এবং আত্মা একই সাথে লাফিয়ে উঠছে আবার নামছে! নীচে পড়ে যাচ্ছে! কতই না মুক্ত স্বাধীন আর আনন্দে ভরা এ রকম একটা জীবন, এ রকম একটা শিল্প-কলায় দক্ষতা অর্জন! আসলে এমনই একটা সুপ্ত প্রতিভা শিল্প-কলার নৈপুণ্য নিয়ে আমি জম্মেছিলাম, জীবন প্রবাহের নানা বাস্তবতার কষাঘাতে যা কিনা বিস্মৃতির অতলেই হয়তো তলিয়ে ছিলো এত দিন! আমার মনে হচ্ছে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেন আমি পরিণত হয়েছি একটা পাখীতে, যে কিনা উড়াল দিতে পারে, করতে পারে উড্ডয়ন! আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে আমার ডানা দু’টো শব্দ করে খুলে গেছে, এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আমি যেন চাইলেই উড়ে যেতে পারবো আকাশের নীলিমায়!
“দেখ! দেখ, তোমারা দেখতে থাকো আমাকে!”, আমি আনন্দে উচ্ছ¡সিত হয়ে নীচে দাঁড়ানো মানুষের ভীড়ের উদ্দেশ্যে উচ্চ স্বরে বললাম, “তোমরা ভালো করে দেখ আমাকে! দেখো আমাকে, দেখ আমি কে? আমি শুধু মাত্র পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনকারী কোন রাজ পুত্র নই, আমি সিয়ে দেশের সম্রাটও নই, আমি হচ্ছি সারা পৃথিবীর মধ্যে সেরা দড়াবাজ শিল্পী দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে চলতে পারা মানুষ! আমি হচ্ছি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে পারা কৌশলীদের রাজা!”
“দড়াবাজীর রাজা —– দড়াবাজীগরদের রাজা —— দড়াবাজদের রাজা!”, সরাইখানার লোকেরা একটা উচ্ছ¡াসের অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আমার আনন্দ উচ্ছ¡াস, প্রবল উদ্যম আর অনুশীলনের প্রতি আগ্রহের ব্যাপারটা ঐ লোকগুলো হয়তো পুরপুরি উপলব্ধি করতে পারছে না! আমি শুনতে পেলাম একজন মানুষ তীক্ষ্ণ আর অবমাননাকর কন্ঠ স্বরে বললো, “ও’ কে দেখতে যেও না! ও’ হচ্ছে বদ্ধ উম্মাদনায় উন্মত্ত একটা নির্বোধ বিস্ময়কর দানব!” আমি জানি, এমন সংকীর্ণমনা, সুশিক্ষা বিহীন লোকজন আমার কোন কিছুই বুঝবে না। আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে উচ্চ স্বরে ইয়েন লাঙ কে ডাকলাম, আমি বললাম, ‘ইয়েন লাঙ, তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো? তুমি কি দেখতে পাচ্ছো যে, আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে?”, কথাগুলো আমি চিত্কার করে বলছিলাম মানুষকে শুনাবার জন্য, ইয়েন লাঙ তো আসলে দাঁড়িয়েছিলো টক বড়ুই গাছটার ঠিক নীচেই! গাছের গুড়ি গড়িয়ে নেয়ার খেলায় ব্যবহৃত কাঠের ছোট তক্তাটা হাতে নিয়ে সে উপরের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছিলো! “জাঁহাপনা, আমি দেখেছি! আমি এক টানা আপনার অনুশীলন দেখেছি!”, ইয়েন লাঙ-এর চেহারাটা উপর থেকে দেখে, ওর প্রতি সহানুভূতির সঞ্চার হলো আমার মনে। যা নাড়া দিলো আমার হৃদয়কে!
সরাইখানার মালিকের কন্যার নাম ইউ সুয়ো, ঐ বছর ওর বয়স সবে মাত্র আট বছর পূর্ণ হয়েছে। মাথার চুল আঁচড়িয়ে গোল গোল দু’টি বেণী করে খোঁপার মতো বানিয়ে রেখেছে মাথায়। সে পরেছে লাল রঙের একটা জামা। সে যখন উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে চলে তখন ওকে দেখে মনে হয় যেন একটা সুন্দর হালকা পাতলা অহংকারী শেয়াল ছানা হেলে দুলে চলছে! যখন একাকী সে দরজায় হেলান দিয়ে বসে, তখন মনে হয়, সে যেন সরোবরের মাঝে থাকা একটা পদ্ম ফুলের কুঁড়ি, যা কিনা এখনই বিস্ফোরিত হয়ে ফুটবে!
আমি টান টান করে বাঁধা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার সময়, যখন দুলতে থাকি, তখন সব সময়ই শুনতে পাই ইউ সুয়ো-র তীক্ষ্ণ চিত্কার। ছোট মেয়েটি পাথরের বেদীতে হেলান দিয়ে সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আমার প্রতিটা পদক্ষেপ। ওর মুখের হাসিটা বেশ সংযত আর লাজুক! মেয়েটির উচ্চ স্বরের তীক্ষ্ণ গলার আওয়াজ পরিষ্কার আর সুর যুক্ত, তাই বেশ শ্রæতি মধুর, যা কিনা শ্রোতার জিহ্বাকে ওর প্রশংসায় করতে পারে পঞ্চমুখ, করতে পারে উদ্দীপ্ত! সরাইখানার মালিকের স্ত্রী এক জন হাড্ডিসার উগ্র মেজাজের মহিলা। শুনা যায়, তিনি হচ্ছেন ইউ সুয়ো নামের ছোট মেয়েটির সত মা। প্রতিবারই ইউ সুয়ো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে চিত্কার করে, যা সরাইখানার বাইরে থেকেও শুনা যায়। ইউ সুয়ো-র গলার আওয়াজ শুনেই সরাইখানার মালিকের স্ত্রী অর্থাত মেয়েটির সত মা, রান্নাঘর কিংবা পায়খানা, যেখানেই থাকেন না কেনো, সাথে সাথেই ছুটে আসেন। এক হাত দিয়ে ছোট মেয়েটির চুলের বেণী পেঁচানো খোঁপা টেনে ধরেন, অন্য হাত দিয়ে হাতে থাকা হাত পাখাটা উঁচুতে তুলে মেয়েটির মুখে বাড়ি মারেন! “আমি বিরক্তিতে মরে যাচ্ছি, আর তুমি কিনা আনন্দে আত্মহারা হয়ে চেঁচিয়ে উঠছো ভূতের মতো!”, মালিকের স্ত্রী মেয়েটির চুল ধরে ঠেলতে ঠেলতে ওকে নিয়ে যান বাড়ীর ভিতরে, পায়খানা ঘরের দিকে! “তুমি হচ্ছো একটা অলস পোকা, বেহুদাই পালছি তোমাকে। কোন কাজ করতে বললেই তো পালাও!”, মালিকের স্ত্রী বললেন, “কেনো তুমি এখানে ভূতের মতো চেঁচিয়ে বাড়ী মাত করছো? যদি তোমার ছোট লোকদের রঙ তামশার এই ধরনের খেলা ভালো লাগে, তবে এক কাজ করো, নিজেকেই দড়াবাজী দলের কাছে বিক্রি করে দাও না!”
আমি জানি না, ঐ রাতের বিশৃঙ্খলার ঝড় কি ভাবে আবির্ভূত হয়েছিলো। পুরো শরৎ কালটাতেই আমি সকাল-সকাল শুয়ে পড়তাম, ঘুম থেকে উঠতামও খুব ভোরে, দিনের আলো থাকার সময়কে সদ্ব্যবহার করে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জনের জন্য কঠোর অনুশীলনে মগ্ন থাকতাম। ঐ দিন সন্ধ্যার পরে যত শীঘ্র সম্ভব আমি মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ইয়েন লাঙ যে ইউ সুয়ো নামের ছোট মেয়েটাকে ভুলিয়ে ওর নিজের বিছানায় নিয়ে এসেছে, তা আমি একেবারেই জানতাম না, ঘূনাক্ষরেও টের পাই নাই! এমনও তো হতে পারে ইউ সুয়ো নিজেই ছুটে এসে ছিলো ইয়েন লাঙ-এর ঘুমানোর চৌকির উপর! আনুমানিক ভোর পাঁচ ঘটিকার সময়, আমি হঠাৎ করেই জেগে উঠলাম, নীচু গলায় কর্কশ গালিগালাজের আওয়াজ শুনে! আমি দেখতে পেলাম সামনে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন মানুষ, সরাইখানার মালিক সস্ত্রীক। স্ত্রী লোকটি স্বচ্ছ ধারা জেলার আঞ্চলিক ভাষায় অশুভ-অলক্ষণে কি সব কথাবার্তা বলেই যাচ্ছে! পুরুষ মানুষটির হাতে ধরা আছে একটা তেলের প্রদীপ। সে প্রদীপটা নিয়ে চৌকির কোণা বরাবর এলো। ফ্যাকাশে হলুদ প্রদীপের আলোয় অবশেষে আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম ইয়েন লাঙ ইউ সুয়ো নামের ছোট মেয়েটাকে জড়িয়ে কোলের মধ্যে রেখেছে, চৌকির কোণায় ছোট মেয়েটি ওর কোলের মধ্যে কুন্ডলী পাকিয়ে যেন গুটিয়ে রেখেছে নিজেকে। ইয়েন লাঙ-এর চোখ আধা খোলা, আধা বুজানো। ওর চেহারায় ফুটে উঠেছে দুঃখ ভারাক্রান্ত ও বিভ্রান্তির একটা মিশ্র অভিব্যক্তি! ওর কোলের মধ্যে ঐ ছোট মেয়েটি রয়েছে, তখনও গভীর নিদ্রায় মগ্ন!
“আসলে তুমি কে বলো তো?”, সরাইখানার মালিক তেলে জ্বালানো প্রদীপটা ইয়েন লাঙ-এর মুখের কাছাকাছি নিয়ে আসলো, ভেতরে ভেতরে সে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়েছিলো, যদিও সে তার পুঞ্জীভূত রাগকে চিত্কার করে প্রকাশ করছিলো না! “সরাইখানায় আসা যাওয়া করা সওদাগররা পতিতাদের পর্ণকুটিরে যায় বেশ্যা মেয়ে লোকদের সাথে দেখা করার জন্য! তোমার কতো বড় সাহস ! তুমি কি ভাবে অশ্লীল জঘন্য কাজের জন্য বেছে নিয়েছো ইউ সুয়ো-কে? সে হচ্ছে আমার কন্যা, যার কিনা সবে মাত্র আট বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে! আসলে তোমারা কারা? নোংরা ছোটলোক হারামজাদারা! কোত্থেকে এসেছো তোমরা?”
“কোন অশ্লীল কাজ করার উদ্দেশ্যে আমি ওকে স্পর্শ করি নাই।” ইয়েন লাঙ মাথা নীচু করে গভীর ঘুমে মগ্ন ছোট মেয়েটার দিকে তাকালো। সে বললো, “আমি কোন হারামজাদা ছোট লোক নই! আমি শুধু ওকে পছন্দ করি, খুব পছন্দ করি। সে এখন ঘুমাচ্ছে, গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। চেঁচিয়ে কথা বলে ওকে ভয় পাইয়ে দিবেন না!”
“তুমি আবার ধমকানো কথাকে ভয় পাও না কি?
হাঁ! তাই তো মনে হচ্ছে, তুমি ধমক খাওয়াকে ভয় পাও!”,
সরাইখানার মালিক হঠাৎ করেই একটা শীতল হাসি হাসলো শব্দ করে! প্রদীপের শিখা থেকে আসা আলো যাতে সরাসরি বাচ্চা মেয়েটির চোখে এসে না পড়ে, সে জন্য ইয়েন লাঙ একটা হাত গুটিয়ে হাতের তালু দিয়ে সরাসরি আসা আলোক রশ্মিকে আটকাচ্ছিলো। সরাইখানার মালিক টান দিয়ে ইয়েন লাঙ-এর গুটিয়ে থাকা হাতটা সোজা করে খুব কাছ থেকে ইয়েন লাঙ-এর দিকে তাকালো। এরপর আমি শুনতে পেলাম, সরাই মালিক অন্য একটা কথার প্রসঙ্গে ঢুকলো। “এই লজ্জাস্কর কাজটা করার চিন্তা তো তুমি নিজে নিজেই করেছো, তাই না?”, সে বললো, “এখন এ ব্যাপারটার সমাধান কি ব্যক্তিগত পর্যায়ে করতে চাও, না কি আমরা আদালতে যাবো?”
“আমি ওর সাথে খারাপ কিছু করি নাই, আমি সত্যিই কোন রকম অশ্লীল কাজ করি নাই বাচ্চাটার সাথে।” ইয়েন লাঙ খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত উচ্চারণে বললো, “আমি শুধু মাত্র ওকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি!”
“এ সব প্রতারণা মূলক মিথ্যা কথা আদালতে গিয়ে বলো। তুমি কি চাও, আমি এখনই সরাইখানার অভ্যাগতদের ডাকবো, তারা এসে দেখে যাক না, তোমার করা নোংরা অশ্লীল খেলা, কি বলো?”, কথা বলতে বলতেই সরাইখানার মালিক হিংস্রতাপূর্ণ ক্ষিপ্র তত্পরতায় বাচ্চাটার গায়ে থাকা পাতলা চাদরটা এক টানে সরিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো মাটিতে, তারপর আরেক হেচকা টানে বাচ্চা মেয়েটার গায়ের জামা ছিঁড়ে ফেললো! প্রদীপের আলোয় উন্মোচিত হলো ইউ সুয়ো-র শীর্ণ নগ্ন দেহের উপরের অংশ! মেয়েটা ঘুম থেকে জেগে উঠলো আতঙ্ক নিয়ে! এরপরই ভয়ে মেয়েটি চিত্কার করে উঠলো, বললো, “আমি তোমাদেরকে চাই না। আমি চাই আমার ইয়েন লাঙ চাচাকে!”
আমি দেখতে পেলাম, বাচ্চাটাকে কোলে নেয়া ইয়েন লাঙ-এর প্রসারিত হাত দু’টো যেন থমকে দাঁড়িয়েছে শূন্য স্থানে! শেষ পর্যন্ত খুবই মনঃক্ষুণ্ন চিত্তে হাত দু’টো নামিয়ে আনলো সে। ইয়েন লাঙ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে শুরু করলো, ওর চোখ দু’টো যেন আমার কাছে সাহায্য চাইছে, মিনতি করছে। আমার মনে হচ্ছে, এমনও তো হতে পারে ইয়েন লাঙ সত্যিই কোন কলঙ্কজনক নিন্দনীয় কাজ করেছে! যেহেতু, অনেক দিন আগে একবার, খোজা দাস আর প্রাসাদ দাসীদের সম্পর্কে চটকদার উপাখ্যান আমার কানে এসেছিলো। তাই কোন কিছুই অতি আশ্চর্যজনক নয়!
“তোমরা কতো টাকা চাও?”, অতি চতুরতার অভিব্যক্তিতে পূর্ণ অবয়বের অধিকারী সেই ধুরন্ধর সরাইখানার মালিককে উদ্দেশ্য করে আমি প্রশ্নটা করলাম!
“মনে করো, তোমরা যদি স্বচ্ছ ধারা এলাকার পতিতাদের পর্ণকুটিরে গিয়ে ষোল বছর বয়সের কোন সুন্দরী কুমারী মেয়ের সতীত্ব নষ্ট করতে, তবে তোমাদেরকে খরচ করতে হতো দশ তোলা রূপা।”, সরাই মালিকের কর্কশ কণ্ঠস্বর বদলে গিয়ে হয়ে গেলো নরম আর লাম্পট্যের শয়তানি মাখা! সে পাশে দাঁড়ানো তার স্ত্রীর কানে কানে কথা বললো অনেক ক্ষণ, যে মেয়ে লোকটি কিনা এতক্ষণ একটানা না থেমেই বক বক করে শুধু অভিশাপই দিয়ে যাচ্ছিলো। সবশেষে ইয়েন লাঙ-কে জিম্মি করার ঘটনার অবসান হলো একটা দরদাম নির্ধারণ করার মাধ্যমে। (চলবে)