শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : মঙ ফুরেন-এর রাস্তার কলহ প্রিয় উগ্রচণ্ডী রমনীদের মতো কথা বার্তা এবং আচরণকে আমি ক্ষমার দৃষ্টিতেই দেখলাম! কিন্তু ফং আও ছিলেন উচ্চ আত্ম মর্যাদা সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের মানুষ! বাস্তবে হেরেম থেকে উঠে আসা একজন অন্তপুর বাসিনির কাছ থেকে এমন ভাবে অপমানিত হওয়াটাকে তিনি সহ্য করতে পারলেন না, মেনে নিতে পারলেন না সহজ ভাবে! কয়েক দিন তিনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখলেন, করো সাথে দেখা করলেন না। তারপর রাজধানীতে একটা খবর রটনা হলো যে, রাজ দরবারে দুই জন সম্রাটের শাসন আমলে নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনকারী প্রধানমন্ত্রী ফং আও পদত্যাগ করে নিজের গ্রামের বাড়ীতে চলে গেছেন!

চন্দ্র বছরের অষ্টম মাসে রাজ দরবার থেকে দূতরা বিভিন্ন সামন্ত রাজা ও সুবাদারদের দফতরে আসা যাওয়া করলো বহু বার, কিন্তু ফলাফল হলো শূন্য! দূত গণ সুবাদার ও রাজাদের কাছ থেকে যে বার্তাগুলো নিয়ে ফিরে আসলেন, সেই বার্তা গুলোর সারমর্ম মোটামুটি একই রকম! যেমন পূর্বাঞ্চলের সুবাদার তা চুন এবং দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার তা ছিং দাবী করলেন যে তারা নাকি অসুস্থ, তাই তারা রাজ দরবারে এসে সম্রাটের সাথে দেখা করতে পারবেন না! দক্ষিণ অঞ্চলের সুবাদার চাও ইয়ো জানালেন যে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারী কাজ আছে, যেখানে তাকে সশরীরে উপস্থিত থাকতেই হবে, তাই তিনি আসতে পারবেন না! অন্য দিকে উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সুবাদার তা তং-এর দপ্তর জানিয়েছে যে সুবাদার নাকি নিজেই সেনাদলের নেতৃত্ব দিয়ে দপ্তরের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি গেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে কর আদায়ের কাজে! আমি একটা ব্যপারে সতর্ক হয়ে উঠলাম, আমার নজরে আসছে যে, সুবাদারদের ফিরতি বার্তা গুলোর বক্তব্য প্রায় একই রকম, আর এটা মোটেও কোন কাকতালীয় বিষয় নয়! এটা হচ্ছে একটা বড় ধরনের বিপদ সংকেত! সামগ্রিক চিত্রটা দেখে মনে হচ্ছে সামন্ত রাজা আর সুবাদারদের একত্রিত করে সম্মিলিত ভাবে চাও ইয়াং-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যাওয়ার ইচ্ছাটা নিতান্তই ছেলেমি ভাবনা কিংবা শিশুসুলভ মামুলী চিন্তা বৈ অন্য কিছু নয়!

তলব বার্তা পেয়ে একমাত্র যে মানুষটি প্রাসাদে প্রবেশ করলেন ‘তিনি’ হচ্ছেন উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের নাম সর্বস্ব সুবাদার তা ইউ! বেশ কয়েক বছর যাবৎ তা ইউ রাজধানীতে অবস্থান করছে বিশেষ কোন কাজ ছাড়াই, করছে শুধু ঘুরা ফেরা! সে আছে আগের মতোই, মদ আর মেয়ে মানুষের আসক্তি থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি! আমি দেখতে পেলাম তা ইউ পুরোপুরি মাতাল অবস্থায় বেশ তাড়াহুড়া করেই বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদে প্রবেশ করলো। ওর মুখে তখন পর্যন্ত লেগে আছে একটা সন্দেহ জনক লাল দাগ! আমার অনুমান সম্ভবত সে সবে মাত্র পতিতাদের বিচরণ স্থান গীতি-দালান থেকে বেরিয়ে এসেছে!

হায়, এ কেমন পরিহাস! রাজকীয় বার্তা পেয়ে সারা দিয়েছে শুধু মাত্র এক জন, যে কিনা মদ আর মেয়ে মানুষকে অনুসরণ করে সর্বক্ষণ! মনে হচ্ছে শুধুমাত্র ওর সাথেই আমার আলোচনায় বসতে হবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে! আমি গোপনে তিক্ত হাসি হাসলাম। আমি এক জন প্রাসাদ ভৃত্যকে ছোট পেয়ালায় করে তা ইউ-র জন্য মদের ঘোর কাটাবার ঔষধ আনতে বললাম। তা ইউ ঔষধ ভর্তি পেয়ালাটা মাটিতে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো।সে বার বার বলতে লাগলো যে, সে মোটেও মাতাল হয়নি! আজকের দিনটাতে তার মাথাটা নাকি সব চেয়ে বেশী পরিষ্ছ! আমি দেখলাম সে টলতে টলতে কেদারায় উপবিষ্ট হলো। অত্যন্ত অমার্জিত ভাবে বেশ জোরে একটা ঢেকুর তুললো সে, যা কিনা ছিলো মদের উৎকট গন্
“তুমি কিছু ক্ষণ বসে চলে যাও। ওরা আসে নাই, ওরা আসবেও না!”, মাংসল থল থলে মদের ক্রিয়ায় টক টকে লাল হয়ে ওঠা ওর ঐ মুখটার দিকে খুবই বিরক্তি আর অবজ্ঞা ভরে আমি তাকালাম।
“কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার অবকাশ এরই মধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেছে! আরও কয়েকটা মদের ঢেকুর তুলে তুমি চলে যেতে পারো। এখানে আর তোমার কোন কাজ অবশিষ্ট নেই!”

“জাঁহাপনা, আপনি কি স¤প্রতি বউ কথা কও দালান-এ আসা পি নু আর নামের মেয়েটার কথা শুনেছেন? সে হচ্ছে পারস্য দেশের মেয়ে! চেহারা অতুলনীয় সুন্দর! ভালো নাচতে পারে, তারের বীণা বাজাতে দক্ষ! মদও পান করতে পারে প্রচুর, যা মানুষকে করে রীতিমতো বিস্মিত! জাঁহাপনা, যদি একটু অবসর সময় কাটাতে চান, তবে আমি পারবো ঐ মেয়েটাকে প্রাসাদের ভিতরে নিয়ে আসতে।”

যেমনটা আশঙ্কা করে ছিলাম তা-ই হলো, দ্বিতীয় বারের মতো জোরে সশব্দে একটা বিশ্রী ঢেকুর তুললো তা ইউ! তারপর সে আস্তে আস্তে আমার খুব কাছ ঘেঁষে এসে বসলো। তীব্র মদের গন্ধ আবার আমার নাকে আসলো, যে গন্ধের সাথে মিশানো আছে সুগন্ধি প্রসাধনীর সুবাস! এরপর আমি শুনতে পেলাম এক ধরনের আন্তরিকতা ভরা কন্ঠস্বর! তা ইউ বললো, “জাঁহাপনা, আপনার ছয় প্রাসাদের হেরেমে তো বহু সুন্দরী মেয়ে আছে, কিন্তু কাউ কে-ই পি নু আর-এর সাথে তুলনা করা যাবে না। কোন মানুষই নাই যে কিনা ঐ মেয়ের অপরূপ রূপের সাথে আর কারো তুলনা করতে পারবে! জাঁহাপনা, আপনি কি একটু দেখবেন না! পারস্য থেকে আসা এই মেয়েটা কতটা সুন্দর, কতটা রূপবতী?”
“দেখি, দেখতে তো কোন ক্ষতি নাই! তা’ হলে আজ রাতে তুমি ওকে প্রাসাদের ভেতরে নিয়ে এসো!”

তা ইউ খুব দ্রুততার সাথে হেসে উঠলো। আমি জানি প্রাসাদের ভিতরে অনুষ্ঠিত হওয়া মদ আর মেয়ে মানুষের সাথে সম্পর্কিত যে কোন জলসার প্রতি তা ইউ-র আছে আনন্দ ভরা প্রবল আগ্রহ! এটা হচ্ছে তার একটা ভিন্ন রকম শখ, খোশ খেয়াল!
কিন্তু, অবাক করা ব্যপার হচ্ছে আমার নিজের আচরণ! আমার মন অস্বাভাবিক রকম খারাপ থাকা সত্বেও, কেমন করে যে, তা ইউ-র তৈরী করা যৌনতা মাখা মায়াবী ফাঁদের বৃত্তের দেয়াল ভেদ করে, আমি তো স্বেচ্ছায়ই ওটার ভিতরে ঢুকার ইচ্ছা প্রকাশ করছি! চিনতে পারছি না আমি, আমাকেই!
যা-ই হোক, এখকার মতো কিছু সময়ের জন্য হলেও তুয়ান ওয়েন আর চাও ইয়াং বিষয়ক দুঃশ্চিন্তাকে এক পাশে সরিয়ে রাখা যাক!

সেই আদি কাল থেকে এ কাল পর্যন্ত, কত শত রাজা-মহারাজা-সম্রাটগণ আগ্নেয়গিরির উপরে বসে সুন্দরী ললনাদের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজেরাই নিজেদেরকে দিয়েছেন সান্ত¡না, ভুলে থাকতে চেয়েছেন বাস্তবতাকে! আমার মনে হচ্ছে এ কাজে, আমিই তো এক মাত্র দৃষ্টান্ত নই! তা হলে তো এটাকে আমার করা কোন ভুল বলা ঠিক হবে না!
ঐ দিন সন্ধ্যার পরে, তা ইউ গোপনে গোপনে পি নু আর নামের মেয়েটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহ প্রাসাদের পার্শ্ব দালানের সমাবেশ কক্ষে নিয়ে হাজির হলো। আমি, সুগঠিত স্তন আর শ্বেত পাথরের স্ফটিকের মতো উজ্জ্বল প্রায় স্বচ্ছ দেহের অধিকারী সুন্দর রূপে রূপসী পি নু আর-এর শরীরের গন্ধ শুঁকে দেখলাম। ওর শরীর থেকে আসছে যেন মৃত্যুর ঘ্রাণ, আসন্ন মৃত্যুর নিঃশ্বাস! পি নু আর-এর হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত পরা আছে শিকলের মতো বেশ কয়েকটা স্বর্ণের বালা! নাচের সময় বালা গুলো একটার সাথে আরেকটা বাড়ি খেয়ে তুলছে শ্রæতি মধুর শব্দ সুর! পারস্য দেশের মেয়েটি উত্তাল ঢেউ এর মতো ওর পেট আর কোমর দুলিয়ে দেখালো ওদের দেশের এক ঐতিহ্যবাহী নাচ! সে নাচতে নাচতে বড় জল চৌকিটার উপর থেকে নীচে লাফিয়ে নামলো, ছুটে এসে আসলো তা ইউ-র পাশে, তারপর ওখান থেকে ছুটে আসলো আমার বুকে, আমার কোলে, জড়িয়ে ধরলো আমাকে! নীলাভ কালো রঙের চোখে এক মুহূর্তের জন্যও সে ফেলে না পলক, সেই কাম জাগানিয়া দৃষ্টি যে কাউকেই প্রলুব্ধ করতে পারে, ওর হাত দু’টোর গতিময় সঞ্চারণ, কঠোর অনুশীলনের অর্জন নৃত্য মুদ্রার সুনিপুণ প্রদর্শন পুরুষ মানুষের হৃদয়ে তুলতে পারে প্রবল ঝড়, বাড়িয়ে দিতে পারে হৃদ পিন্ডের স্পন্দন! আমি হতবিহ্বল হয়ে পরেছি! আমার মনে হচ্ছে মিষ্টি চেহারা আর অপরূপ সুন্দর রূপের দেহধারী একজন মৃত্যু ফেরেশতা এসেছে নরম তুলতুলে শরীরের স্পর্শ দিয়ে আমার দেহটাতে হাত বুলিয়ে দিতে! মাথা থেকে বুক পর্যন্ত আর শরীরের নীচের অংশে, মনে হচ্ছে বয়ে যাচ্ছে একটা বরফ শীতল পানির ধারা! আমি শুনতে পাচ্ছি একটা গভীর দুঃখে ভারাক্রান্ত খুব নীচু স্বরের একটা কন্ঠস্বর, সেটা যেন ভেসে আসছে আকাশের গভীর থেকে, সিয়ে সম্রাট নিমজ্জিত হয়েছে ভোগ বিলাস আর কামের উন্মাদনায়! খুব দ্রুত ধেয়ে আসছে বিপর্যয়, সিয়ে দেশের শেষ দিন!

হুই ছোট রানী প্রাসাদ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে, আমি ওর সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর পাই নাই। কখনও কখনও শাসন খালের উপরে থাকা পাথরের সেতুটি অতিক্রম করার সময়, আমি অবচেতন মনেই সেতুর নীচের দিকে তাকাই। কিন্তু প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলে, সে একজন মানুষের জন্য থেমে থাকে না! লম্বা ঝাউ গাছের নীচে সুগন্ধি ঘাসের প্রাণবন্ত বৃদ্ধি চোখে পড়ছে! সেতুর নীচে শুধু নেই সেই সাদা পোশাক পরা মেয়েটা, যে পাখীদের উড্ডয়ন অনুকরণ করে দ্রæত ছুটে যেত, করতো নাচের মুদ্রার ভঙ্গি! আমি ভাবছি ফিন চৌ-র মেয়েটির কথা যে কিনা আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে ধর্মীয় জীবন ধারার মধ্যে! আমার মনে পড়ছে একদা, সে ছিলো আমার! তার সাথে ছিলো আমার গভীর প্রেম, যা ছিলো আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ! আজ সে আমার পাশে নাই, স্বাভাবিক ভাবেই হতাশার অন্ধকার আমাকে ঢেকে ফেলেছে, আমি হয়ে পরেছি মনমরা!

অন্দর মহলে রানী-ছোট রানীদের মধ্যে মতবিরোধ, ঝগড়া ঝাটি লেগেই আছে, থামছে না! এই অজ্ঞ-মূর্খ মেয়ে মানুষ গুলো সিয়ে রাজ প্রাসাদের নিরাপত্তা হীন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর আসন্ন বিপদজনক পরিস্থিতির আবির্ভাব সম্পর্কে খুব সামান্যই অবগত, এ সব কিছুই যেন ওদের কাছে অস্পষ্ট ধোঁয়াশা! তাদের পছন্দের বিষয় হচ্ছে রূপ চর্চা, জামা-কাপড়-গয়নাগাটি, কে জন্ম দিচ্ছে, কে গর্ভবতী হতে পেরেছে ——- এমন সব সত্য-অসত্য শোনা কথা আর গুজব নিয়ে করা বিষাক্ত খোশগল্প! এ ছাড়াও রয়েছে হাস্যকর আর অবাস্তব কিছু কাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চেষ্টা করা! এক বার আমার নজরে এসেছিলো, লান ছোট রানী ওর পুরো অবয়বে মেখে লেপন করেছিলো অ¤ø রস, যার নাম সিরকা! সে রোদ পোহাচ্ছিলো বাগান বিলাস দালান-এর সামনে বসে। অ¤øরসের স্পর্শ পাওয়ার কারণে ওর চোখ দু’টো জ্বালা করছিলো, চোখ থেকে অবিরাম পানি ঝরছিলো। অক্ষি যুগল ফুলে উঠে লাল হয়েছিলো বেশ কয়েক দিন! পরে আমি প্রাসাদ দাসীদের কাছ থেকে শুনেছি, মূলত গোপনীয়তা রক্ষা করে তৈরী করা কিছু জনপ্রিয় লোকজ প্রসাধনী সামগ্রীর ভুল প্রয়োগের শিকার হয়েছিলো লান ছোট রানী। ফলশ্রæতিতে তাকে বরণ করতে হয়েছিলো যন্ত্রণার দুর্ভোগ! যে প্রাসাদ দাসীটিকে দিয়ে লান ছোট রানী ওর গালে মুখে সিরকার অ¤øরস মাখানোর কাজ করাচ্ছিলো, প্রচন্ড রাগের বশে ঐ প্রাসাদ দাসীটির গালেই সে মেরে ছিলো তিনটা চড়!

আরও বেশী হাস্য রসাত্মক ব্যপার ছিলো এমন, ছোট রানীদের মধ্যে ছড়িয়ে পরা সেই গোপনীয়তা পূর্ণ প্রসাধনী তৈরীর নিয়ম এবং উপকরণ গুলোর নাম, যা লেখা ছিলো একটা কাগজে। শোনা যায়, ঐ কাগজে ছিলো ভ্রূণ-র জন্য উপকারী সহজে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষিক্ত করণ এবং গর্ভ ধারণের উপায় সম্বলিত কিছু তথ্য এবং কিছু কার্যকরী ঔষধ পত্রের বিবরণ!

আমি যখন বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদে মন্ত্রী পরিষদ আর উচ্চ পদস্থ আমলাদের নানা রকম কথার ছল চাতুরীতে ভরা বক্তব্য শুনে শুনে বিরক্ত হচ্ছিলাম, ঐ সময় আমার রানী গণ ব্যস্ত ছিলো ছোট ছোট মাটির চুলায় নানা রকম ভেষজ ঔষধ সিদ্ধ করার কাজে!
সেই দিন গুলিতে আমি যখনই যেই রানীর ঘরেই গিয়েছি, সেই ঘরে, সেই দলানেই আমার নাকে এসেছে অদ্ভুত এক ধরনের ঔষধের কটু আঁশটে গন্ধ!
পরে আমি হান ছোট রানী-র ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম যে, গোপনীয় সেই রূপচর্চার ও গর্ভধারণ সহায়ক ঔষধ তৈরীর পদ্ধতি ও উপকরণের নাম সম্বলিত কাগজটা হান ছোট রানীর হাত থেকেই গিয়েছে অন্যান্যদের কাছে!

হান ছোট রানী যেন গভীর ভাবে ডুবে আছে, ওর নিজ হাতে তৈরী করা প্রহসন নাটকের ঘোরের মধ্যে! চেহারায় একটা আত্ম তৃপ্তিতে ভরা শয়তানি অভিব্যক্তি নিয়ে সে বললো, “ওরা তো আমাকে হিংসা করে, তাই না? ওরা সবাই তো পাগল হয়ে আছে ভবিষ্যৎ-এর সম্রাট, সিংহাসনের উত্তরাধিকারীকে গর্ভে ধারণ করার জন্য, তাই না? আমি একটা আমার ইচ্ছা মতো মনগড়া ভেষজ ঔষধের ব্যবস্হাপত্র তৈরী করেছি। যা-ই হোক না কেনো, এ গুলো খেয়ে কেউ তো মরছে না! ওদের তীব্র আকাঙ্ক্ষার পরিতুষ্টিতে আমি কিছুটা হলেও তো সহায়তা করেছি ওদের! আমার পেটের দিকে সারাক্ষণ ওদের লালায়িত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার ব্যপারটা তো অন্তত এড়ানো গেছে!” (চলবে)