শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : সে তার হাতে থাকা কুকুর তাড়াবার লাঠিটা উঁচু করে ধরে তুয়ান ওয়েন-এর মুখ ঢাকার কালো কাপড়টা শাৎ করে সরিয়ে দিলো! অপ্রত্যাশিত এই ঘটনাটা ঘটলো চোখের নিমিষেই! তুয়ান ওয়েন হুঙ্কার দিয়ে উঠলো! পাশে চলতে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীটি ভাবছিলো যে, সে নিজের দু’হাত উঁচু করে শূন্যে লাফ দিয়ে উঠে তুয়ান ওয়েনের মুখ ঢাকার কালো রঙের কাপড়টা ধরবে! কিন্তু এরই মধ্যে অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে! তুয়ান ওয়েন-এর ফ্যাকাশে মুখ আর প্রসস্থ কপাল সূর্য কিরণে উঠেছে স্পষ্ট হয়ে! ভীড়ের মধ্যে থাকা অনেক মানুষেরই চোখে পড়লো, উল্কি আঁকার মতো করে ওর কপালের উপর লেখা পুরনো ধাঁচের দু’টি চীনা অক্ষর : ‘সিয়ে ওয়াং’, যার ভাবার্থ ‘সিয়ে দেশের সম্রাট’!

সব্জী বাজারের রাস্তায় তৎক্ষনাৎ দেখা দিলো এক অবর্ণনীয় বিশৃঙ্খলা। তুয়ান ওয়েন তার ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে ফেললো, এক হাত দিয়ে ঘোড়ার কপালে হাত বুলিয়ে দিলো। আরেক হাতে তলোয়ার উঁচু করে ধরে নাড়িয়ে সামনে থাকা পতঙ্গের ঝাঁকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকে পথ থেকে সরে যাওয়ার সংকেত দিলো। তার অবয়বে ফুটে উঠেছিলো হিংস্রতায় জড়ানো দুঃখ ভারাক্রান্ত অভিব্যক্তি! ক্রদ্ধ গর্জনের শব্দ, ভোঁতা অস্ত্রের ঝনঝনানি সৈন্যদের মাথায় থাকা শিরস্ত্রানে বাড়ি খাওয়ার মতোই শুনাচ্ছিলো! তুয়ান ওয়েন চড়েছিলো একটা ইউক্রেনীয় ঘোড়ার পিঠে। যেটা অত্যন্ত ক্ষিপ্র গতিতে পাগলের মতো ছুটলো। খানিকটা এগুবার পর ওর পথে পরেছিলো ইয়েন লাঙ এবং কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত সৈন্যরা, যারা ওর পথ রোধ করতে চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু এই সৈন্যদের বাধা কোন কাজে আসেনি, ওকে আটকানো যায়নি! ইয়েন লাঙ খুব লজ্জার সাথে আমাকে বলেছিলো যে, তুয়ান ওয়েন পা উঠিয়ে ওর ঘোড়ার পিঠে একটা লাথি মেরেছিলো, ঘোড়াটা ভয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিলো, আর তাতেই ইয়েন লাঙ ওর নিজের ঘোড়ার পিঠ থেকে মাটিতে পরে গিয়েছিলো। এই উদ্বেগজনক অবস্থায় সে মুঠ করে ধরতে পেরেছিলো ইউক্রেনীয় ঘোড়াটার শুধু একটা কেশর! আর এ ভাবেই হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে শহরের রাস্তার ভীড়ের মধ্যে তুয়ান ওয়েন মিশে গিয়েছিলো, চলে গিয়েছিলো দৃষ্টি সীমার বাইরে!

চি চাং-এর তত্ত্বাবধানে কয়েকজন তীরন্দাজ প্রাসাদের কোণায় অবস্থিত পর্যবেক্ষণ মিনারের শীর্ষ দেশে বিষ মাখা তীর নিয়ে পুরো দুপুর বেলাটা প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষায় ছিলো। সবশেষে ওরা দেখতে পেলো ইয়েন লাঙ-কে, যে কাজ না সেরেই ফিরে আসার পথে ছিলো। একটা গোপন সঙ্কেতের ভিত্তিতে ওরা তীর ছুড়তে গিয়েও বিরত থাকলো, গুটিয়ে ফেললো ধনুকগুলো। আমি একটা রহস্যময় পূর্বাভাষ পাচ্ছিলাম, যা পূর্ব পরিকল্পনার বাস্তবয়ন স্বরূপ, আসন্ন একটা বড় দুর্ঘটনাকে থামিয়ে দিতে পেরেছিলো। আমি যেন বহু দূর থেকেই শুনতে পেয়েছিলাম ইয়েন লাঙ-এর ঘোড়ার পিঠ থেকে পরে যাওয়ার শব্দ, ওর দুর্বল আর হতাশা ভরা কন্ঠস্বর! আমার হৃদয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্পন্দন সঞ্চারি তারগুলোর জোরালো টান ক্ষণিকের জন্য খানিকটা আলগা হয়ে পরছিলো! তাই আমি তীরন্দাজ দলের প্রধানকে ঠিক সময়ে সতর্ক করতে পেরেছিলাম।

“উপরওয়ালা তার মৃত্যুকে রহিত করেছেন। এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা!”, আমি চি চাং-কে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললাম, “মনে করো, আমি ওর মরণ চেয়েছি, আর ঈশ্বর চেয়েছেন যে, সে বেঁচে থাকুক, তা হলে আর কি করার আছে, ওকে চলে যেতে দেয়া ছাড়া!”

“জাঁহাপনা, শহরের প্রতিটা নগর তোরণে সৈন্য পাঠিয়ে তল্লাশী চালালে কেমন হয়? আমার অনুমান তুয়ান ওয়েন শহরের ভিতরেই আছে! যেহেতু ঘাস কেটে সাপকে করা হয়েছে আতঙ্কিত, তাই এখন সম্রাটের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার অপরাধে তো তুয়ান ওয়েন-কে আটক করাতে আর কোন বাধা নাই!”, চি চাং-ওর নিজের অভিমত জানালো।

“কিন্তু তুয়ান ওয়েন-এর বীরত্বের গাঁথা ইতিমধ্যেই সিয়ে দেশের প্রতি কোণায় আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পরেছে। মানুষেরা এরই মধ্যেই তাদের সিয়ে সম্রাটকে সন্দেহ করা শুরু করেছে, তারা নির্ণয় করতে শিখেছে ভালো এবং মন্দের মাঝে থাকা তফাত, তারা ধরতে পারে কোনটা সত্য আর কোনটা ভুল! আর আমি কখনও-ই চিন্তা করি নাই যে কালো রঙ দেখিয়ে বলবো ওটা সাদা অথবা হরিণের দিকে আঙ্গুল তুলে বলবো ওটা হচ্ছে ঘোড়া! আমার সংবেদনশীল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাকে বলছে, তোমাকে অবশ্যই এই মহা শক্তিশালী ক্ষমতা ধর বীরকে হত্যা করতে হবে! এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এর বাইরে কোন কথা নাই!”, আমি চাচ্ছি না চি চাং-কে এর চেয়ে বেশি কোন ব্যাখা দিতে!

“দেখা যাক ঈশ্বর কি করেন!”, আমি সমবেত হওয়া গোপন ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বললাম, “যদি তুয়ান ওয়েন সত্যি সত্যিই হয় সিয়ে দেশের সম্রাট তা হলে অদৃশ্য জগত থেকে আসা একটা অতি প্রকৃতিক স্বর্গীয় শক্তি ওকে সহায়তা করবে। যদি তুয়ান ওয়েন-কে হত্যা করা না যায় তবে তাকে যেতে দাও! মনে করে নাও, মদ্য পান করার পর ঐ হুকুমটা ছিলো আমার করা একটা মশকরা ছাড়া অন্য কিছু নয়!”

গুপ্ত ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী চার জন, প্রাসাদের কোণায় অবস্থিত পর্যবেক্ষণ মিনারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, ওরা হয়ে গিয়েছিলো নির্বাক! ওদের চেহারার অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিলো ওরা সবাই ভুগছে খানিকটা অনিশ্চয়তার দ্বিধা দ্ব›েদ্ব, আর একই সাথে ওরা কিছুটা লজ্জিত হয়েছে! এটা খুবই স্পষ্ট যে ওরা আমার এই অর্ধেক কাজ শেষ করেই পিছু হটে যাওয়া এবং সিদ্ধান্তে দৃঢ়তার তীব্র অভাব, এই দুই কারণে আমার উপর খুবই অসন্তুষ্ট! বিকেল বেলা বাতাসের ঝাপটায় প্রাসাদের কোণা দলান-এর ঘন্টার ভিতরের দেয়ালে হালকা কাঁপনের টিং টিং শব্দের মৃদু প্রতিধ্বনি শোনা গেলো। কোণা দালানে থাকা সকলেই কান পেতে শুনলো ঘন্টা ঘড়ী থেকে আসা এই অদ্ভুত শব্দ! অসহ্য নিরবতা ভেঙ্গে কারোই কথা বলার সাহস হচ্ছে না। কিন্তু এখানকার প্রতিটা মানুষই মনে মনে আশঙ্কা করছে, অত্যাসন্ন লুকিয়ে থাকা ঝঞ্ঝা বাতাসের, যা ধেয়ে আসছে সিয়ে রাজ প্রাসাদের দিকে, যা খুব শীঘ্রই তৈরী করবে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ, যা কিনা আঘাত করতে পারে, এমন কি আমাকেও! এই গ্রীষ্ম অপরাহ্নের সূর্য কিরণ খুবই প্রখর! আমি দেখতে পাচ্ছি কোণা দালান-এর নীচে থাকা চোখ ধাঁধানো লাল রঙের উজ্জ্বল টালিগুলো আর সবুজ গাছের বেষ্টনীর মাঝে আছে একটা সাদা আলোর রেখা, যা কিনা আসন্ন সর্বব্যাপী দুর্যোগের নির্দেশক বৈ অন্য কিছু নয়!

কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা রক্ষী সৈন্যরা দুই দিন দুই রাত ধরে পদ চিহ্নের তালাশ করলো। কিন্তু খুঁজে পেলো না তুয়ান ওয়েনের কোন পায়ের দাগ! তৃতীয় দিন ওরা আবার গেলো শান্ত রাজ কুমার পদবীধারী তুয়ান উ-র সরকারি বাস ভবনের ভিতরে। সবশেষে ওখানকার পিছনের বাগানে ওরা খুঁজে পেলো একটা পরিত্যক্ত কুয়া, যার ভিতরে আছে একটা গুপ্ত সুরঙ্গ পথের মুখ! দু’জন সৈন্য জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়ে ঢুকলো ঐ সুরঙ্গের ভিতরে! মাটি কেটে তৈরী করা এই সুরঙ্গের দেয়াল হাতরিয়ে ওরা চলছিলো বহু ক্ষণ। ওরা যখন সুরঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন ওদেরকে সরাতে হয়েছে বহু বছরের পুরনো একটা ঘাসের স্তুপ! ওরা দেখতে পেলো যে ওরা নিজেরা দাঁড়িয়ে আছে উত্তর নগর তোরণের বাইরের ওক বনের মাঝ খানে! একটা ছিঁড়ে যাওয়া জামার হাতা আটকিয়ে ছিলো সুরঙ্গ মুখের একটা গাছের ডালের সাথে। কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত সৈন্যরা দেখতে পেয়েছিলো ঐ ছিঁড়ে যাওয়া জামার হাতার উপর রক্ত দিয়ে লেখা একটা বাক্য : তুয়ান ওয়েন-এর রাজধানীতে ফিরে আসার দিনটাই হবে, তুয়ান পাই-এর বিপর্যয়ের কাল!
ওরা সেই সাদা জামার ছেঁড়া হাতাটা শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে নিয়ে এসে আমাকে দিয়েছিলো, যা ছিলো তুয়ান ওয়েনের অপরাধের একমাত্র আলামত! আমি দেখতে পেলাম রক্ত দিয়ে লেখা সেই শক্তিশালী অক্ষরগুলো যেন আমার হৃদয়ের গভীরে বিঁধলো কাঁটার মতো! একটা লোহার তৈরী কেঁচি দিয়ে আমি এই সাদা কাপড়ের জামার হাতাটা কুচিকুচি করে কেটে ফেললাম! আমার মাথায় আসলো একটা প্রতিশোধ চিন্তা যেটার বাস্তবায়ন পদ্ধতি বেশ জবরদস্ত! কিন্তু কাজটা খুব নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ! তুয়ান উ-কে প্রাসাদে আসার জন্য খবর পাঠালাম। আমি উচ্চ স্বরে প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়কে ডাকলাম। আমি বললাম, “এই কুচি কুচি করে কাটা কাপড়ের টুকরাগুলো আমি ওকে দিয়ে গলাধঃকরণ করাবো, ঢুকাবার ব্যবস্থা করবো ওর পাকস্থলীতে!”

তুয়ান উ-কে ঠেলে ধাক্কা দিয়ে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের ভিতরে ঢুকাবার সময় ওর আচরণ ছিলো আগের মতোই ঔদ্ধত্য পূর্ণ আর অস্থির! সে শ্বেত পাথরের সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে একটা যুদ্ধংদেহী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমার প্রতি সম্মানসূচক নত হয়ে কুর্নিশ করতে অস্বীকৃতি জানালো। নিরাপত্তারক্ষীরা ওকে চেপে ধরে জোর করে হাঁটু গেড়ে বসাতে চাইলো। কিন্তু জুডো কলা কৌশলে দক্ষ শক্তিশালী তুয়ান উ খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো নিরাপত্তা রক্ষী তিন জনের সবাই-কেই! সে চিৎকার করে বললো, “খুন করতে চাইলে খুন করো, কিন্তু কুর্নিশের কোন স্থান নেই!”

“কি ভাবে ওকে নত করা যায়?” কিছুক্ষণ নিরব থেকে আমি পাশে থাকা ইয়েন লাঙ-কে জিজ্ঞেস করলাম।
“শুধু একটা পদ্ধতিই আছে, আর সেটা হলো লোহার মুগুর দিয়ে ওর হাঁটুর হাড়ে বাড়ি দেয়া।”, খুব নীচু স্বরে ইয়েন লাঙ প্রশ্নের জবাব দিলো।
“তা হলে একটা লোহার মুগুরই নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। ওকে তুয়ান ওয়েন-এর পক্ষ হয়ে প্রাপ্য শাস্তি পেতেই হবে!”

তুয়ান উ-র হাঁটুর হাড়ের উপর লোহার মুগুর দিয়ে বাড়ি দেয়ার সাথে সাথে, শুনা গেলো একটা রক্ত পানি করা তীক্ষ্ণ চিৎকার! আমি দেখতে পেলাম তুয়ান উ ব্যথায় কাতর হয়ে শ্বেত পাথরের সিঁড়ির প্রসস্থ ধাপের উপর পরে গেলো। দু’জন প্রহরী দৌড়ে এলো, ওদের মধ্যে একজন তুয়ান উ-র বাহু দু’টো ধরে ওকে টেনে উঠালো, আরেকজন প্রহরী ওর কোমর বরাবর ধরে ওর দেহের উপরের অংশকে চেপে ধরে নুইয়ে দিলো! আর এভাবেই এক অদ্ভুত কায়দায় তুয়ান উ আমার সামনে নত হয়ে আমাকে কুর্নিশ করার ভঙ্গি করতে বাধ্য হলো!
“এখন ঐ কুচি কুচি করে কাটা জামার হাতার কাপড়ের টুকরাগুলো ওকে খেতে হবে, পাঠাতে হবে ওর পাকস্থলীতে! এটা হচ্ছে ওর প্রতি তুয়ান ওয়েন-এর রেখে যাওয়া প্রীতি ভোজ!”, কথাগুলো বলে আমি অট্ট হাসি হাসলাম! সিংহাসন থেকে নেমে গিয়ে তুয়ান উ-র সামনে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললাম, “তুমি যখন খাবে তখন এগুলো তোমার কাছে সুগন্ধি মনে হবে, ঠিক কি না?”

তুয়ান উ খুব কষ্ট করে মুখ তুলে আমার দিকে চাইলো। ওর চোখে প্রকাশ পাওয়া ঔদ্ধত্যপূর্ণ চাহুনি ইতিমধ্যেই পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হয়েছে হতাশা ব্যঞ্জক দৃষ্টিতে! দেখে মনে হচ্ছে ওর চোখ দু’টো দিয়ে বেরিয়ে আসবে রক্তের ফোঁটা! আমি শুনতে পেলাম, এক রকম ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের ঘোরে কথা বলার মতো করে আওয়াজে সে বলছে, “তুমি সিয়ে রাজ নও! সিয়ে দেশের প্রকৃত সম্রাট হচ্ছে তুয়ান ওয়েন। তুয়ান ওয়েন-এর রাজধানীতে ফিরে আসার দিনটাই হবে তোমার পতনের ক্ষণ!”

ঠিক! এ ব্যাপারে আমাদেরও আছে দৃঢ় বিশ্বাস! আমি মনে মনে বললাম, আর আমার মুখের হাসির অভিব্যক্তিকে গুটিয়ে নিলাম। মাটি উপর পরে থাকা এক টুকরা ত্যানা তুলে নিলাম, তারপর এক হাত দিয়ে ঐ ন্যাকড়ার মতো কাপড়ের টুকরাটা তুয়ান উ-র চিবুকের নীচে চেপে ধরলাম, অন্য হাতটা দিয়ে ঐ কাপড়ের খন্ডটা ঠেসে দিলাম ওর মুখের মধ্যে! আমি বললাম, “কিন্তু আমি তো এখনও সিয়ে দেশের রাজা! আমার যা ইচ্ছা হয় তা-ই আমি করবো! তোমার বলা কথাগুলো আমি শুনতে চাচ্ছি না, তাই তুমিও কোন কথা বলতে পারবে না!”
পুরো এক প্রহর ধরে চললো তুয়ান উ-র উপর প্রতিশোধের পালা। আমিও বেশ ক্লান্ত হয়ে পরলাম। তুয়ান উ-র বাহু দু’টো টান দিয়ে রাখা প্রহরীরা যখন ওকে ছেড়ে দিলো, তখন ওর নিজে থেকে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি আর অবশিষ্ট নাই। আমি দেখতে পেলাম তুয়ান উ মাটিতে খানিকটা হামাগুড়ি দিলো। ওর লম্বা শীর্ণকায় পা দু’টো যেন ভাঙ্গা কাঠের টুকরার মতো শক্ত অনমনীয় হয়ে গেছে। সে শব্দ করে বমি করতে করতে হামাগুড়ি দিয়ে আমার পায়ের কাছে আসলো। টেনে ধরলো আমার পায়জামার একটা কোণা। আমি দেখতে পেলাম, ওর চেহারায় হঠাৎ করেই ফুটে উঠেছে এক ধরনের অকৃত্রিম হাস্যজ্জ্বল অভিব্যক্তি!
“তুমি কি দেখেছো, তুয়ান ওয়েনের কপালে উল্কির মতো আঁকা অক্ষরগুলো?”
“আমি দেখি নাই, কিন্তু রাস্তার সাধারণ মানুষেরা সবাই দেখেছে। তুয়ান ওয়েন ষড়যন্ত্র করেছে সিংহাসন দখল করতে, এ ব্যাপারটা বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রেরই বুঝতে পারার কথা!” (চলবে) – লেখক- কানাডা