শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তারপর অস্পষ্ট দ্ব্যর্থক স্বরে বললো, “পরিতাপের বিষয় হলো এমন শক্তিশালী দেহধারী বীরকেও সহ্য করতে হয়েছে খোজা করণের যন্ত্রণা!”

এই পর্যন্ত বলে ইয়েন লাঙ একে বারেই নির্বাক বাক্যহারা হয়ে গেলো! ওর চেহারায় ফুটে উঠলো একটা অদ্ভুত অস্বাভাবিক অভিব্যক্তির ছাপ! আমার অনুমান ওর মন খারাপ হয়ে গিয়েছে, সে হয়তো স্মরণ করছে তার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া খোজা করণের যন্ত্রণা দায়ক অভিজ্ঞতার স্মৃতি! আমি ওকে তাড়া দিয়ে বললাম, “চুপ করে থেকো না, বলে যাও, আমি শুনছি, শুনতে চাচ্ছি!”

“জাঁহাপনা, আপনি কি সত্যিই আরও শুনতে চান?”, ইয়েন লাঙ অতীত স্মৃতির ঘোর থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো! ওর দৃষ্টি গভীরভাবে অবলোকন করছে আমাকে,
“জাঁহাপনা, আপনার কি মনে হয় না, এই শাস্তিগুলো খুবই অমানবিক আর অতি নিষ্ঠুর?”
“কি নিষ্ঠুর, আর কোনটা অমানবিক?”, আমি উচ্চ স্বরে তিরস্কার করে ইয়েন লাঙ-কে বললাম, “গ্রামের একটা চাষা, দূর্বৃত্ত আর ডাকাত! এমন লোকের প্রতিও কি দেখাতে হবে নৈতিকতা আর শিষ্ঠাচার? তুমি বলে যাও, কারা রক্ষীরা চিন্তা ভাবনা করে আরও কি কি শাস্তি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে?”

“আরেক ধরনের পদ্ধতির নাম খড়ের বর্ষাতি দিয়ে শরীরের উপরের অংশ মোড়ানো! সবুজ সীসা গলিয়ে ফেলে, এর সাথে পশুর গলানো চর্বি মিশিয়ে লেপে দেয়া হয়েছিলো ওর পিঠে আর কাঁধে।”, ইয়েন লাঙ বললো, “আমি দেখেছি লি ই চ্রি-এর ত্বক এবং মাংস অল্প অল্প করে পুড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। রক্তের ফোঁটা আর চর্বির তেল এক সাথে জমাট বেঁধে ছড়িয়ে পরছে চার পাশে। দেখে মনে হচ্ছিলো লি ই চ্রি-র দেহটা সত্যি সত্যিই মোড়ানো হয়েছে খড়ের তৈরী একটা বর্ষাতি দিয়ে!

সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো পদ্ধতিটি ছিলো শাস্তির পঞ্চম পদ্ধতিটি। এই পদ্ধতির নামটাও বেশ শ্রুতি মধুর! সেলাই-এর কারুকাজ করা ঝুলানো গোলক হচ্ছে এর নাম! ওরা আগে থেকে কামারকে দিয়ে তৈরী করিয়েছিলো একটা বিশেষ ধরণের ছেদক ছুরি! ছুরিটার গায়ে উল্টা করে লাগানো হয়েছে চার পাঁচটা বড়শী। ছেদ করার সময় থাকে একই দিকে, খানিক ক্ষণ পরে টান দিয়ে বের করে আনার সময়, লি ই চ্রি-র ত্বক আর মাংস ঐ বড়শীগুলোতে গেঁথে গিয়ে আটকিয়ে যাচ্ছিলো। কারা রক্ষীরা গায়ের জোর দিয়ে টান দিয়েছিলো। মাংস পেশীগুলো ছিটকে বেরিয়ে আসছিলো। ওর জীবন কালের মধ্যেই তৈরী করা হয়েছে কতোগুলো উজ্জ্বল লাল রঙের পিণ্ডাকৃতির মাংস গোলক!

এই পঞ্চম রকম শাস্তি পদ্ধতি দেখেই আমি বিদায় নিয়েছি ওখান থেকে। আমি শুনেছি ওরা লি ই চ্রি-কে মোট এগারো ধরনের পদ্ধতির কঠিন শাস্তি দেয়া হয়েছিলো। যে শাস্তি গুলো আমি নিজের চোখে দেখি নাই, সেগুলোর মধ্যে ছিলো কাঁধে কোরে লাউ-এর খোল বহন, বড় মাছির উড্ডয়ন, জুতা কাটা!”, ইয়েন লাঙ বললো, “যেহেতু আমি নিজে দেখি নাই, তাই এগুলোর বর্ণনা আমি জাঁহাপনার সামনে তুলে ধরতে সাহস করছি না!”

“এগারো রকম শাস্তির সবগুলো না দেখেই তুমি কেনো পিছু হটে এসেছো ওখান থেকে?”
“সেলাই এর কারুকাজ করা ঝুলানো গোলক নামের শাস্তি পদ্ধতি প্রয়োগ করার সময় গোলাকৃতির এক দলা মাংসের পিন্ড কোন কারণ ছাড়াই উড়ে এসে আমার মুখের সাথে লেপটিয়ে গিয়েছিলো। আর এই গোলাম কঠিন শাস্তিগুলো অবলোকন করে আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলো। সত্যি কথা বলতে কি আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না! গোলাম তার নিজের পাপ সম্পর্কে অবগত আছে! পরের বার বড় শাস্তির সাক্ষাৎ পাওয়া গেলে, অবশ্যই পুরোটাই অবলোকন করে এই গোলাম জাঁহাপনার কাছে বিবরণ পেশ করবে!”

“ব্যাপারটা যে এতটা কৌতুহল-উদ্দীপক সেটা আগে জানলে আমিই যেতাম ঐ শাস্তি পদ্ধতিগুলো নিজের চোখে দেখতে।” আমার বলা এই কথাটা অবশ্য আধা সত্য আধা মিথ্যা! একটা ব্যাপারে আমার মন সচেতন, আর সেটা হলো লি ই চ্রি-এর শাস্তি পদ্ধতির বিষয়ে আমি প্রকাশ করছি অস্বাভাবিক কৌতুহল! এটা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির ঘোরে আমার কৈশর কালে দেখা পাপের শাস্তি পাওয়া হীম প্রাসাদের অবাধ্য প্রয়াত সম্রাটের পত্নী-উপপত্নীবৃন্দ, যাদের করা অপরাধের কিংবা পাপের ধরনও ছিলো এমনই! আবার অনেক বছর ধরেই হত্যা রক্ত ঝরা দৃশ্যের অবলোকন আমাকে আতঙ্কিত করে আসছে! আমার মনে হচ্ছে এ রকম প্রাকৃতিক প্রবৃত্তির সাথে আমার মন ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির একটা সম্পর্ক আছে! এর পর আমি চোখ বুজলাম, মনে মনে ভাবলাম বাকী ছয় ধরনের শাস্তি পদ্ধতি সম্পর্কে। আমি যেন ঘ্রাণ নিতে পারছি লি ই চ্রি-র রক্তের গন্ধের, যা কিনা ছড়িয়ে পরেছে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের বাতাসে। আমি অনুভব করতে পারছি, আমি যেন ডুবে যাচ্ছি ঘোরের মধ্যে! আসলে এমন ঘোরে পরতে পারে তো শুধু মেয়েরাই! আমি এমন অপদার্থ মেয়েলী ঘোর লাগা অনুভূতিকে ঘৃণা করি!

“লি ই চ্রি কি সত্যিই তার অপরাধ স্বীকার করেনি? সে সহ্য করেছে এগরো ধরনের কঠিন শাস্তির যন্ত্রণা, সত্যিই কি সে একটা কথাও বলেনি?:, আমি সব শেষে ইয়েন লাঙ-কে প্রশ্ন করলাম।
“সে বলেছে একটা বাক্য!”, ইয়েন লাঙ খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ, তারপর খুব হালকা স্বরে আমার কথার উত্তর দিলো, “সে বলেছে, এমন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আজ পর্যন্ত কোন মানুষ আরেক জন মানুষকে দেয় নাই, এমন কি কোন পশুকেও দেয় নাই! আর এ থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় দ্রুত ঘনিয়ে আসছে সিয়ে দেশের অন্তিম দিন!”
কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে লি ই চ্রি-র অভিশাপের বাক্য এবং বেশ কয়েক বছর আগে প্রয়াত সুন সিন পাগলার আওড়ানো বাণীর ছন্দ তো প্রায় একই, যা শুনে আমি ভয় পেয়েছি, আতঙ্কে আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠেছে!

প্রায় আধা মাস হয়ে গেলো, তুয়ান ওয়েন রাজধানীতে আছে, সে উঠেছে তার আপন ভাই শান্ত রাজ কুমার পদবী ধারী তুয়ান উ-এর সরকারী বাস ভবনে। সেখানেই তুয়ান ওয়েন থাকছে ও খাওয়া দাওয়া করছে! আমার নিয়োগ করা গুপ্তচর ওখানকার খোঁজখবর জানিয়ে আমাকে বলেছে, শান্ত রাজ কুমার-এর সরকারী বাসভবনের সদর দরজার ছাওনির নীচে মেহমানদের অভ্যর্থনা নির্দেশক লণ্ঠন বাতির সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত বিজয় অভিনন্দন বার্তা নিয়ে মন্ত্রী, আমির-অমাত্য, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের আনাগোনা থামেনি একদিনের জন্যও! গুপ্তচর অত্যন্ত সন্মানের সাথে যথাবিধি আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে আগত ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা সম্রাটের দরবারে দাখিল করলো, যেটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো নিরাপদ রাজ কুমার পদবী ধারী তুয়ান সুয়েন, জৌলুশ রাজ কুমার পদবী ধারী তুয়ান মিং, উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার তা ইউ, রাষ্ট্রাচার মন্ত্রী ওয়েন চি, জন প্রশাসন মন্ত্রীদ্বয় ইয়াও শান এবং যুয়ো পাই লিয়াং, যুদ্ধ বিষয়ক পরামর্শক পরিষদের সহসভাপতি লিউ থাও, সরকারী ইতিহাস সংরক্ষক ওয়েন ছি এবং চাং হোং সিয়েন ইত্যাদি, মোট দশ জন ব্যক্তি! এ ছাড়াও আরও ছয় জনের নাম আছে তালিকায় যারা আসার জন্য সচেষ্ট ছিলেন কিন্তু ঢুকার অনুমতি পান নাই। আমি যে বছর সিংহাসনে আরোহন করি সেই বছর এই ছয় জনকে রাজকীয় মহাবিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবি পরিষদের সদস্য করা হয়েছিলো।

“ওরা কি করতে চাচ্ছে?”, আমি নামের তালিকাটার দিকে ইঙ্গিত করে ইয়েন লাঙ-কে প্রশ্ন করলাম।
“জাঁহাপনা, ওরা কেউই খুব বেশি সন্দেহভাজন নয়! ওরা আসলে অভিনন্দন জানানোর নামে এসেছে একটু ভালো খাওয়া দাওয়া আর আমোদপ্রমোদ করার জন্য!”
“নেকড়ে বাঘের থাকে অসভ্য আকাঙ্ক্ষা! যাক্, সবকিছুই আমি সুস্পষ্ট আর স্বচ্ছ বিবেচনার মধ্যে রাখছি।”, আমি একটা শীতল হাসি হাসলাম! তুলিতে লাল রঙ ভিজিয়ে প্রত্যেকটা নামের উপরে একটা করে বৃত্তাকার দাগ এঁকে দিলাম। তারপর আমি ইয়েন লাঙ-কে আবার প্রশ্ন করলাম,
“তুমি দেখ, লাল দাগে আঁকা ছবিটা কিসের মতো লাগছে?”
কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে ইয়েন লাঙ বললো, “ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে ওখানে আছে এক ঝাঁক পঙ্গপাল!”
“মোটেও পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো লাগছে না, উল্টা করে ধরে দেখো, অনেকগুলো লোহার হাত কড়ার মতো মনে হচ্ছে!”, আমি বললাম, “এই লোকগুলো গোপনে ষড়যন্ত্র করছে, সুযোগ বুঝে সরকার পরিবর্তন করে রাজ ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা চালাবে, ঘৃণ্য আর আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে, তাদেরকে সারি বদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পরাতে হবে হাত কড়া।
আর তারা হয়তো অন্য চিন্তা করছে, ভাবছে আমার হাতে হাত কড়া পরাবে!”
“তা’হলে তো জাঁহাপনা আর কোন কথা নেই। আপনিই ওদের হাতে আগে হাত কড়া পরাবেন!”, বিশেষ কিছু না ভেবেই ইয়েন লাঙ কথাটা বলে ফেললো!

“বলা সহজ, করা কঠিন!”, আমি খানিকক্ষণ গভীরভাবে চিন্তা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “আমি হচ্ছি সিয়ে দেশের অপদার্থ রাজা, আমি কি কুকুরের পাদ ছাড়া আর কিছু? আমি হচ্ছি সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, সব চাইতে ক্ষমতাহীন, সবচেয়ে হতভাগা একজন সম্রাট! আমি ছোট বেলায় ধাত্রী মা, খোজা দাস আর প্রাসাদ দাসীদের হুকুমে চলেছি! পাঠশালায় অধ্যায়ণ কালে ছিলাম গুরু সন্ন্যাসী চুয়ে খোং-এর কঠিন অনুশাসনের মধ্যে! সম্রাট হওয়ার পরও প্রতিদিন আমাকে চলতে হয়েছে হুয়াং ফু ফুরেন আর মঙ ফুরেন-এর হুকুমে! স¤প্রতি দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে, সাধারণ মানুষের মনে জমেছে অসন্তোষ, যুদ্ধের কারণে ওরা হয়েছে গৃহহীন। সব কিছুতে ইতিমধ্যেই সময় ফুরিয়ে দেরী হয়ে গেছে! এটা আমার কাছে একেবারেই পরিষ্কার সুস্পষ্ট যে একটা তলোয়ার আমার গ্রীবা বরাবর ধেয়ে আসছে আমার গলাটা খন্ড করে ফেলার জন্য! আমি শুধু পারছি, এখানে বসে বসে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে! ইয়েন লাঙ, তুমি বলো, আমি কি একটা অপদার্থ সিয়ে সম্রাট নই?

সাধারণত কোন আবেগপূর্ণ কথা উঠার পর আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি! এবার অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ করেই আমি উচ্চ স্বরে কেঁদে উঠলাম! অনেক দিন ধরেই মনের আবেগ-অভিমানগুলো পুঞ্জীভূত হচ্ছিলো বেড়িয়ে আসার জন্য! ইয়েন লাঙ চোখ বড় বড় করে বোকার মতো চেয়ে রইলো। সে প্রথমেই যে কাজটি করা দরকার বলে মনে করছিলো, সেটা হলো কক্ষের খোলা দরজাটা বন্ধ করে দেয়া। হয়তো ওর মনের মধ্যে একটা বদ্ধ ধারণা গেঁথে ছিলো যে, সম্রাটের কান্নার শব্দ হচ্ছে প্রাসাদের জন্য অমঙ্গল বার্তা, সম্রাটের মৃত্যুর নির্দেশক!

দরজার বাইরে থাকা প্রাসাদ দাসী আর খোজা দাসরা তখনও শুনতে পাচ্ছিলো আমার কান্নার শব্দ! কোন এক জন সুযোগ বুঝে এই অস্বাভাবিক ঘটনাটার সংবাদ পৌঁছে দিয়েছিলো মুক্তার ছায়া প্রাসাদে মঙ ফুরেন-এর কাছে। মঙ ফুরেন তাড়াহুড়া করে চলে আসলেন! তাঁর অজ্ঞাত সারে তাঁকে অনুসরণ করে পিছু পিছু আসলো বেশি কথা বলা ছোট রানীটি! আমি লক্ষ্য করলাম তারা এই দিন একই রকম প্রসাধনী মেখেছেন! প্রত্যেকের চেহারার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে একটা বেগুনি স্ফটিকের মতো আভা! ঠোঁটে মাখা আছে বিষাক্ত পারদ থেকে তৈরী হালকা কিংবা গাঢ় লাল রঙের ঠোঁট রঞ্জনী! এসব দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি যেন দেখছি পানির মধ্যে থাকা এক টুকরা রক্ত পাথর!
“তোমরা তো মনে হয় ঝাঁক বেঁধে এসেছো! কি জন্য এসেছো?”, যেন কিছুই হয়নি, এমন একটা ভাব নিয়ে কথা বললাম আমি!
“সম্রাট, তুমি এতক্ষণ কি করছিলে?”, মঙ ফুরেন খানিকটা রাগত স্বরে পাল্টা প্রশ্ন করলেন।
“কিছুই তো করছিলাম না! তোমারা আজকে কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেছো?”, আমি মুখ ঘুরিয়ে পাশে দাঁড়ানো চিন ছোট রানী-কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে বললাম, “কি বরুই ফুলের প্রসাধনী বুঝি? নাকি, মনোহর কালো প্রসাধনী? আমার কাছে তো দেখে মনে হচ্ছে মুরগীর রক্তের রঙ! এরপর থেকে একে মুরগীর রক্ত প্রসাধনী বলে ডাকলে কেমন হবে?”

“মুরগীর রক্ত প্রসাধনী? এই নামটা তো বেশ মজার!”, চিন ছোট রানী হাতে তালি দিয়ে হেসে উঠলো! হঠাৎ করেই ওর নজরে আসলো যে, মঙ ফুরেন ওর দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়েছেন! তাই সে সাথে সাথেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে চুপ মেরে গেলো।
মঙ ফুরেন এক জন প্রাসাদ দাসীকে একটা কাঁসার আয়না নিয়ে আসার হুকুম দিলেন। তিনি বললেন, “ওটা নিয়ে এসে সম্রাটের ওখানে রাখো। সম্রাট তো হচ্ছে স্বর্গের পুত্র, সম্রাটকে ‘স্বর্গ পুত্র’-এর অবয়ব দেখতে দাও!”
প্রাসাদ দাসী আমার সামনে কাঁসার আয়নাটা এনে দাঁড় করাবার সময়, মঙ ফুরেন একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অপ্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর অক্ষি যুগল রক্তিম হয়ে উঠলো। (চলবে)