শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : শুধুমাত্র চোখের মনি দু’টো পুরুষ মানুষের মতো, যা থেকে বিকিরণ ঘটছে তীব্র উন্মাদনার আলো! আমি জানি এমন নজর থাকতে পারে শুধুমাত্র খুনীর কিংবা প্রকাশ্য দুশমনের।
“চরিত্রহীন, কামুক, লম্পট আর জড় বুদ্ধির এই সম্রাটকে খুন করে ফেলবো! এটা দরকার, খুব দরকার, উজ্জ্বল পৃথিবী, শক্তিশালী দেশ আর জনগণের শান্তি আর নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন, খুবই প্রয়োজন!”, ফং চ্রু নামের এই তরুণ বয়সের ছেলেটিকে টেনে হেঁচড়ে বাগানের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় সে এই কথাগুলো আওড়ালো গানের সুর দিয়ে! সে গাইছিলো অস্বাভাবিক উচ্চ কণ্ঠে, দুঃখের সুর দিয়ে!
একটা অমূলক আতঙ্ক, পরবর্তী পর পর বেশ কয়েকটা দিনে বয়ে নিয়ে আসলো অসুস্থতা! সারা শরীরে আমি অনুভব করলাম অবসন্নতা! খাওয়া দাওয়ায় আসলো অরুচি! রাজ বৈদ্য আসলেন রোগ নির্ণয় করতে, শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের বাইরে তাঁর পথরোধ করা হলো! আমি জানি আতঙ্ক আমাকে পেয়ে বসেছে! ঐ রাজ বৈদ্যের দেয়া অসঙ্গতি, অসামঞ্জস্য আর অপ্রাসঙ্গিকতার দোষে দুষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা পত্রের কোন প্রয়োজন আমার নাই। তবে একটা বিষয় ভেবে আমি কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না, একটা দুর্বল, শীর্ণকায়, বাতাসের বাড়িতে পরে যেতে পারে এমন একটা অভিনয় শিল্পী কিসের ভরসায়, কেনো আমার উপর চড়াও হলো, আমাকে খুন করতে আসলো!
তিন দিন পর ফং চ্রু নামের তরুণ বয়সের ছেলেটিকে রাজধানী শহরের বাইরে দন্ড কার্যকর করার ময়দানে নিয়ে যাওয়া হলো। অগণিত মানুষ ভীড় করেছিলো, দেখতে এসেছিলো মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ঘটনা! তারা সবাই প্রত্যক্ষ করেছে, তরুণ যুবক ফং চ্রু-এর অবয়বে তখনও লেগেছিল লেপন করা প্রসাধনীর অবশিষ্টাংশ! নাট্য মঞ্চের অভিনয়কালীন পোশাক বদলানোর পর্যাপ্ত সময় তাকে দেয়া হয় নাই! নাশপতি বাগানের নাট্য মঞ্চে নাটক দেখে অভ্যস্ত মানুষেরা কিছুতেই মিলাতে পারছিলো না দন্ড ময়দানে ফং চ্রু নামের অল্প বয়সী ছেলেটার উপস্থিতি, তাও আবার মৃত্যুদন্ডের নিমিত্তে! তাদের সকলেরই একটাই অনুমান, এই ঘটনার পিছনে গভীরভাবে প্রোথিত আছে এক ধরনের কালো পর্দায় আড়াল করা পিছনের পটভূমি!
তরুণ অভিনয় শিল্পী ফু চ্রু কাদের প্ররোচনায় খুন করতে সচেষ্ট হয়েছিলো, তা নিয়ে আমারও কতোগুলো অনুমান আছে। একবার আমি সন্দেহ করছি পর্দার অন্তরালে বসে কল কাঠি নাড়া ব্যক্তি তুয়ান ওয়েন এবং ওর সহোদর তুয়ান উ-কে। সন্দেহ করেছিলাম নিরাপদ রাজ কুমার পদবীধারী তুয়ান সুয়েন আর সুদর্শন রাজকুমার পদবীর তুয়ান মিং-কে! সন্দেহ হয়, ফং চ্রু নামের তরুণটি কি বেআইনী ঘোষিত ফসল পূজার সমাবেশের কোন একজন পরিচয় গোপনকারী সদস্য! এমনও কি হতে পারে দুই প্রতিবেশী ফং কুয়ো দেশ এবং মং কুয়ো দেশের দুই সরকার এই হত্যা প্রচেষ্টার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত? দন্ড বিধায়ক মন্ত্রণালয় ফং চ্রু-কে আদালতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল ব্যাপারটা উদঘাটন করতে চেয়েছিলো। তবে মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের সেই চেষ্টা কোন ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম হয়নি! ফং চ্রু নামের তরুণটি আদালতে দাঁড়িয়ে শুধু উষ্ণ অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে, ওর ঠোঁট নড়েছে, দেখে মনে হচ্ছিলো সে গাইছে গান, কিন্তু আসলে শোনা যায় নাই ওর মুখ থেকে আসা কোন অর্থ বোধক ছন্দময় গান! মনে হচ্ছিলো সে কিছু বলতে চায়, কিন্তু বলতে পারেনি! সে হারিয়ে ফেলেছে তার শ্রুতিমধুর কণ্ঠ স্বর! দন্ড বিধায়করা অবশেষে আবিষ্কার করেছিলেন কারা যেন ওর জিহ্বাটা কেটে ফেলেছে! কখন কর্তিত হয়েছে ওর জিহ্বা, সেটা অজানা! সে নিজে থেকেই এমনটা করেছে, না কি অন্য কেউ এসে করে গেছে এই কাজ, সেটা তদন্ত করে বের করাটা হবে একটা প্রায় অসম্ভব আর দুঃসাধ্য কাজ! দন্ড মন্ত্রণালয়ের তিন দিন ধরে জেরা করার চেষ্টা ছিলো শুধু শুধু সময়ের অপচয়! সব শেষে ফং চ্রু নামের তরুণটির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো, জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হলো ওর মৃতদেহ, এই মামলার সমাপ্তিও ঘোষিত হলো এ ভাবেই।
অভিনেতা কর্তৃক হত্যা প্রচেষ্টা মামলার নথিপত্র সংরক্ষিত হলো মহাফেজখানায়, সিয়ে দেশের ইতিহাসে এটা লিপিবদ্ধ হলো বিখ্যাত ‘অমিমাংসিত প্রাসাদ মামলা’ নামে! অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে সবগুলো নথিতেই তরুণ অভিনয় শিল্পী ফং চ্রু-র গানের প্রশংসা সূচক কথা লিপিবদ্ধ করা আছে, আর আমাকে দেখানো হয়েছে হত্যা প্রচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু হিসাবে। সিয়ে দেশের এই রাজ বংশের ষষ্ঠ সম্রাট, ইতিহাস লেখকদের চোখে এবং তাঁদের লেখায় হয়ে পড়েছেন প্রায় গুরুত্বহীন!
চন্দ্র বছরের পঞ্চম মাসে ডালিম ফুল ফুটার সময়, আমার দাদী খুব অসুস্থ হয়ে একে বারে শয্যাশায়ী হয়ে পরলেন। ওনাকে দেখে মনে হয়, গুলজার কক্ষ নামের দালানের একটা প্রায় তেল নিঃশেষ হয়ে আসা মিট মিট করে জ্বলতে থাকা প্রদীপ, যা কি না নিভে যেতে পারে যে কোন সময়! দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী থাকার কারণে তাঁর দেহের নানা জায়গায় পচন ধরেছে, ঘন সুগন্ধি আতরও সেই পচা গন্ধ ঢাকতে পারছে না! রাজ বৈদ্য ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে দেখা করে আমাকে গোপনে জানালেন, দাদী মা হয় তো আগামী গ্রীষ্ম কাল আসা পর্যন্ত টিকবেন না!
হুয়াং ফু ফুরেন তাঁর মৃত্যু শয্যায় আমাকে ডেকে পাঠালেন গুলজার কক্ষে তাঁর বলা কিছু কথা শুনবার জন্য। তিনি শুনাতে চান তাঁর প্রাসাদ জীবনের রোমন্থিত বহু স্মৃতি! তাঁর স্মরণে আসা স্মৃতিগুলো এক ঘেয়ে আর বিরক্তিকর! তাঁর কণ্ঠস্বর অস্পষ্ট আর দুর্বল, কিন্তু এই স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তাঁর চেহারায় ফিরে এসেছে প্রাণ চাঞ্চল্যের জোয়ার, অবয়ব হয়ে উঠেছে রক্তিম! “আমার যখন পনেরো বছর বয়স তখন প্রাসাদ তোরণ দিয়ে ঘটেছিলো আমার প্রাসাদে প্রবেশ! গত কয়েক দশকের মধ্যে মাত্র দু’বার আমি আলো ঐক্যতান তোরণ দিয়ে প্রাসাদের বাইরে গিয়েছি। আর এই বহিঃগমন করেছি কেবলমাত্র সিয়ে সম্রাটদের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে! আমি জানি তৃতীয় বারের মতো আমি প্রাসাদের বাইরে যাবো, আমার গন্তব্য হবে তাম্র কাঠি পাহাড়-এর পাদদেশের রাজ সমাধি ক্ষেত্রের ভিতরে। এবার আসবে আমার পালা!”, হুয়াং ফু ফুরেন বললেন, “তুমি কি জানো, আমার তারুণ্যের কালে আমি কোন অপরূপ সুন্দরী ছিলাম না! কিন্তু আমি প্রতিদিন চন্দ্র মল্লিকা ফুলের বাটার সাথে লোমশ হরিণের শিং-এর চূর্ণ পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে স্নান করতাম, ধুয়ে ফেলতাম সারাটা শরীর, বিশেষত ব্যক্তিগত অঙ্গগুলো! আর এই গোপনীয় রসায়নের প্রয়োগের মধ্য দিয়েই আমি হয়ে উঠেছিলাম মোহনীয়, আমার রূপের খাঁচায় আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছিলাম সিয়ে সম্রাটের হৃদয়টাকে!”, হুয়াং ফু ফুরেন বলে চললেন, “কখনও কখনও আমি ভেবে ছিলাম দেশের রাজ বংশের পদবী বদলে দেবো, নিয়ে আসবো ‘হুয়াং ফু’ পদবীকে! কখনও কখনও আমার মনে হয়েছে তোমাদের মতো সব রাজপুত্র আর রাজ পৌত্রদের সবগুলোকে রাজ সমাধি ক্ষেত্রের ভেতরে পাঠিয়ে দিতে! কিন্তু পরক্ষণেই তোমাদের প্রতি আমার হৃদয় ভরে উঠেছে স্নেহ মমতা আর ভালোবাসায়! সেই বিষাক্ত চিন্তার বাস্তবায়নে আমি হাত দিতে পারি নাই!” হুয়াং ফু ফুরেন কথা বলেই চলেছেন, তাঁর জীর্ণ শুকিয়ে যাওয়া ত্বকের কুঁচকানো ভাঁজগুলো যেন কিল বিল করছে শেয়ালের চামড়ায় তৈরী কম্বলে ঢাকা সারা দেহটাতে! আমি শুনতে পেলাম, তিনি একটা পাদ দিলেন, তারপর তিনি হাত তুলে নেড়ে নেড়ে রাগত স্বরে বলে উঠলেন, “ভাগ্ এখান থেকে, আমি জানি তোরা সবাই আশায় আশায় আছিস, আমি যাতে একটু হলেও তাড়াতাড়ি মরি!”
সত্যি বলতে কি, আমার পক্ষে আর ধৈর্য্য রাখা সম্ভব হচ্ছে না, এই বৃদ্ধার বিরক্তিকর বয়ান শুনতে, আর যা কিনা শারিরীক দুর্বলতার কারণে তাঁর বলতে বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে! তাঁর এই দুর্বল আর ক্রোধ যুক্ত রুষ্ট স্বরে বলা কথা শুনার সময়, আমি নীরবে মনে মনে পড়ি, গুনতে থাকি এক, দুই, তিন, এভাবে করে টানা পড়া চলে সাতান্ন পর্যন্ত! আশা করি আমি এভাবে পড়তে থাকবো, আর তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তে দেখতে পাবো বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে বেগুনি রঙ ধারণ করা ওনার ঠোঁট দু’টোর নড়াচড়া বন্ধ হয়েছে! কিন্তু না, তাঁর ঠোঁট আগের মতোই নড়তে থাকে, থামে না উঠানামা করে উপরে নীচে! তাঁর স্মৃতি রোমন্থন কিংবা একটা কথার বার বার বয়ান থামে না, চলতে থাকে অবিশ্রান্ত, অবিরাম! আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি, তাঁর এই হাস্যকর অসংলগ্ন ভীমরতি ধরা অনর্গল কথা বলা চলতেই থাকবে, শেষ হয়ে থামবে তখনই যখন তাঁকে শোয়ানো হবে শবাধারের মধ্যে!
চন্দ্র বছরের পঞ্চম মাসের শেষের দিকে, বৃদ্ধার জীবন প্রদীপ পর্যায় ক্রমে ম্লান হয়ে আসছিলো, গুলজার কক্ষের তত্ত্বাবধায়ক আর সেবিকা দাসীরা শুনতে পাচ্ছিলো, ঘুমের ঘোরে তিনি আওরাচ্ছেন তুয়ান ওয়েন-এর নাম! আমার অনুমান নান ফা এলাকার যুদ্ধের বিজয়ের খবর শুনার জন্য তিনি অপেক্ষায় আছেন, আর সেটা শুনেই তিনি রওয়ানা দিবেন পরপারে!
তুয়ান ওয়েন যে জীবিত অবস্থায় লি ই চ্রি-কে পাকড়াও করতে পেরেছে, সেই খবরটা রাজ প্রাসাদে এসে পৌঁছালো কোন এক দিন ভোর বেলায়! বার্তা বাহক বার্তাটির সাথে বয়ে এনেছে লি ই চ্রি-র লাল ফিতা বাঁধা শিরস্ত্রান এবং খানিকটা কাটা চুল। বার্তা বাহকটি এসেছে দ্রæতগামী ঘোড়ায় চড়ে। সুখবর যেন ঠিক সময় মতো এসে পৌঁছিয়েছে! হুয়াং ফু ফুরেন-কে খবরটা দেয়া হলো, তাঁর চেহারায় ফুটে উঠলো জ্যোতি, অনেকটা যেন নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপের চাঙ্গা হয়ে ওঠা উজ্জ্বল শিখার মতো! ঐ দিন ময়ূরের মুখের আদলে নকশার কারুকাজ খোচিত মূল্যবান নান মু কাঠের তৈরী বিশাল শবাধারটি বহন করে নিয়ে এসে রাখা হলো গুলজার কক্ষ প্রাসাদের বাইরে। গুলজার কক্ষের ভিতরে মানুষের ভীড়, সবাই দাঁড়িয়ে আছে শোকের মৌনতা নিয়ে। খাঁচায় বদ্ধ পাখীগুলোও যেন মৌন হয়ে গেছে! যেন একটা অশুভ চাদরে ঢাকা উৎসবের আমেজ ফুটে উঠেছে পারিপার্শ্বিকতার মাঝে!
দিনের শুরু থেকেই বৃদ্ধার শয্যা পার্শ্বে উপস্থিত ছিলেন মং ফুরেন, ফং বড় রানী, তুয়ান সুয়েন, তুয়ান মিং এবং তুয়ান উ। তাদের সাথে আমিও ছিলাম। কিন্তু হুয়াং ফু ফুরেন তাদেরকে একজন একজন করে সরে যেতে বললেন বিছানার পাশ থেকে! সব শেষে রইলাম শুধু আমি, একা! বসে রইলাম বৃদ্ধার সামনা সামনি, শুনতে পেলাম তাঁর দুর্বল শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ। এক ধরনের অদ্ভুত দুঃখ ভারাক্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে তিনি লম্বা সময় ধরে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন! আমার মনে আছে ঐ সময় তাঁর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো, হয়তো আর কিছুক্ষণ পরেই কি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তা তিনি আন্দাজ করতে পারছিলেন! “তুমি কি সিয়ে দেশের সম্রাট?”, হুয়াং ফু ফুরেনের একটা হাত বেশ স্বচ্ছন্দে উপরে উঠে আসলো।
আলতোভাবে আমার কপাল আর মুখমন্ডলে তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন! তাঁর হাতের স্পর্শ আমার মধ্যে সঞ্চার করলো হাঁড় কাঁপানো ঠন্ডা হাওয়ার ছোঁয়া লাগা অনুভূতি যা কিনা আমার পুরো শরীরের রক্ত প্রবাহকে জমাট বাঁধিয়ে ফেলবে বলেই মনে হচ্ছিলো! এর পর তিনি হাতটা নামিয়ে নিলেন, তাঁর কোমরের কাছ থেকে তিনি টেনে বের করলেন একটা সুগন্ধি দ্রব্য রাখার থলে! গত আট বছর ধরে আমি লক্ষ্য করছি, সুগন্ধি রাখার এই থলেটা তিনি সব সময়ই তাঁর সাথে সাথে রাখেন। তিনি মৃদু হেসে বললেন, এখন এটা তোমার কাছে বুঝিয়ে দেয়ার সময় হয়েছে, আমাকে অবশ্যই বুঝিয়ে দিতে হবে এটা, তোমার কাছে! তুমি এই সুগন্ধি রাখার থলেটার মুখটা কেটে ফেলো, দেখ ভিতরে কি জিনিস ভরে রাখা আছে!
ঐ রহস্য জনক সুগন্ধি দ্রব্য রাখার থলেটার মুখ আমি কেটে ফেললাম। লক্ষ্য করলাম ওটার ভেতরে কোন সুগন্ধি দ্রব্য ভরে রাখা হয় নাই। শুধু আছে অনেকগুলো ভাঁজে ভাঁজ করা একটা পাতলা কাগজ। এভাবেই আমি দেখতে পেলাম প্রয়াত সম্রাটের উত্তরাধিকার নামার আরেকটা সংস্করণ! সাদা কাগজের উপর কালো অক্ষরে লেখা প্রয়াত প্রাক্তন সম্রাটের রাজকীয় ফরমান : জেষ্ঠ্য রাজ কুমার তুয়ান ওয়েন হচ্ছে যুব রাজ, রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী!
“তুমি সত্যিকারের সিয়ে দেশের সম্রাট নও! আমি তোমাকে সিয়ে দেশের সম্রাট বানিয়েছি।”, বৃদ্ধা বললেন!
প্রয়াত সম্রাটের উত্তরাধিকার নামা আমি দু’হাত দিয়ে তুলে ধরে পড়লাম, আর বাক্য হারা হতবাক হয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছিলো আমার দেহটা পরিণত হয়েছে এক টুকরা পাথরে, যাকে নিক্ষেপ করা হয়েছে একটা গভীর ক‚য়ার ভেতরে!
“আমি তুয়ান ওয়েন-কে পছন্দ করি না! একই ভাবে তোমাকেও আমি পছন্দ করি না! তোমাদের মতো পুরুষ মানুষদের সাথে এটা ছিলো আমার একটা কৌতুক ভরা পরিহাস!
আমি তৈরী করেছি একজন মিথ্যা সিয়ে সম্রাট!
এর একটাই কারণ ছিলো, পরবর্তী কালে আমি যাতে সম্রাটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ভালো মতো! “বৃদ্ধার শীর্ণ অবয়বে ফুটে উঠলো একটা উজ্জ্বল হাসির রেখা। সব শেষে তিনি বললেন, “গত আট বছর সিয়ে দেশটা চলছে আমার কথায়, আমার হুকুমে। আমার এই সাতান্ন বছরের জীবন কালের লাভ ক্ষতির হিসাব নিয়ে বসলে দেখা যাবে, আমি আসলে কিছুই পাই নাই, আবার কিছুই হারাই নাই!” (চলবে)