শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : আর ঐ মানুষটাই হচ্ছে খুব সল্প সময়ের জন্য আসা, আমার হৃদয়ের উচ্চাকাঙ্খার প্রতীক হুই ছোট রানী! ওর বাকি জীবনটা যেন কাটতে যাচ্ছে সন্নাসীনিদের আশ্রমের ক্ষুদ্র জানালা আর কুলঙ্গিতে স্থাপন করা ছোট্ট প্রদীপের সামনে, যার কাজ শুধু আলো দেয়া, উত্তাপ নয়!
“ঠিক আছে, তোমার প্রস্তাবই মানলাম, তুমি কাজ শুরু করে দাও!”, সবশেষে এ কথাগুলো বললাম ইয়েন লাঙ-কে। এটা হচ্ছে ঈশ্বরের ইচ্ছা! হয়তো হুই ছোট রানীর প্রাসাদে আসাটাই ছিলো একটা ভুল! আবার এমনও হতে পারে, ওর জীবনটাকেই তৈরী করা হয়েছে এক জন সন্নাসীনি হওয়ার জন্য! আমার তো কোন উপায় নাই! আমি তো হচ্ছি সিয়ে দেশের ‘মহামান্য’ সম্রাট!
হায়! আমার আর কি করার আছে?
অল্প বয়সিনী প্রাসাদ দাসী, ওর নাম চ্রেন আর! এই মেয়েটির চেহারার সাথে হুই ছোট রানীর অবয়বের বেশ মিল আছে। এ ছাড়াও ওর দেহের আকার আকৃতিও হুই ছোট রানীর মতোই। বিকল্প দেহ হিসাবে এই মেয়েটিকে বেছে নেয়া হলো! যা কিছু করার ইয়েন লাঙ আগেই করে ফেলেছিলো। সে চ্রেন আর-কে খাইয়ে দিয়ে ছিলো মাদক জাতীয় নেশাকর দ্রব্য, একটু বেশি পরিমাণে! যা কিনা মেয়েটিকে আচ্ছন্ন করেছিলো গভীর নিদ্রায়। ওর ঘুম ভাঙ্গানো যেত না, সহজে জেগে উঠার সম্ভাবনা ছিলো না একেবারেই! একটা হলুদ কাপড়ের বস্তার মধ্যে ঘুমন্ত মেয়েটির দেহটা ঢুকিয়ে বস্তার মুখ সেলাই করে বন্ধ করার সময়ও শুনা যাচ্ছিলো মেয়েটির মৃদু নাক ডাকার শব্দ!
“হুই ছোট রানীমাকে ভাসিয়ে দিয়ে প্রাসাদ থেকে বিদায় দেয়া হচ্ছে!”, শাসন খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার গলায় উচ্চ স্বরে ঘোষণা করা দন্ড বিধায়কের কথাগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছিলো বার বার, চার দিক থেকে! ঊষার আবির্ভাবের সময় পানির স্রোতের সাথে ভেসে চলে যাওয়া হলুদ রঙের কাপড়ের বস্তাটার প্রতি খালের পাড়ে ভীর করা মানুষজনের শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাসাদ প্রাঙ্গণের সামনে অবতারণা করলো এক অসাধারণ ‘শোকাবহ’ দৃশ্যের!
একই সাথে এটা ছিলো বসন্ত কালের বিদায়কালীন সময়ের একটা নতুন দিনের ঊষার আবির্ভাব! হুই ছোট রানী প্রাসাদ তত্ত¡াবধায়কের ছদ্মবেশ ধারণ করে চড়ে বসেছিলো ঘোড়ার গাড়িতে, যেটা আলোর ঐক্যতান তোরণ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো প্রাসাদ থেকে। ঐ গাড়িটা যাচ্ছিলো বাজার করার নিমিত্তে প্রাসাদের বাইরে। প্রাসাদের গন্ডীর সীমানা ছাড়িয়ে ওটা যাচ্ছিলো সাধারণ মানুষের ভুবনে! হুই ছোট রানীর সাথে ছিলো ইয়েন লাঙ ঐ গাড়িতেই! ইয়েন লাঙ-এর মুখে শুনেছি যে গোটা পথটাই হুই ছোট রানী ছিলো একেবারেই নিশ্চুপ! ইয়েন লাঙ বলেছে, নানা প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সে হুই ছোট রানীর মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য নানা কথা বলেছে! কিন্তু ওর মনে হয়েছে কোন কথাই যেন হুই ছোট রানীর কানে প্রবেশ করছে না একটুও! ভ্রমণ পথের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো পথটাতেই হুই ছোট রানীর চোখ দু’টো গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়েছিলো উপরের দিকে আকাশের পানে!
হুই ছোট রানীকে স্বর্ণ ও রূপার কিছু অলঙ্কার উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম। সেগুলোর পুরোটাই ইয়েন লাঙ সাথে করে প্রাসাদে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে! ইয়েন লাঙ বলেছে, হুই ছোট রানী এগুলো গ্রহণ করতে রাজি হয় নাই। সে ইয়েন লাঙের উদ্দেশ্যে বলেছে, “আমি আশ্রমে যাচ্ছি সন্নাসীনি হতে। এসব জিনিসের কি দরকার আছে ওখানে? এখন আর কোন কিছুরই দরকার নাই!”
“ঠিকই তো বলেছে, সত্যিই তো এ সব জিনিসের ওর আর এখন কোন দরকার নেই!”, আমি বার বার ভাবলাম, ইয়েন লাঙ-কে আবার প্রশ্ন করলাম, “সত্যিই কি সে সাথে করে কোন কিছুই নিয়ে যায়নি?”
“সোনালী বিন্দুর দাগ দেয়া একটা প্রসাধনীর বাক্স তিনি সাথে নিয়ে গেছেন। যা ভর্তি আছে এক গাদা কাগজে। আর কাগজগুলোর উপর লেখা আছে কবিতা। আমার অনুমান এই কবিতাগুলো অনেক দিন আগে জাঁহাপনা নিজে লিখেছিলেন ওনাকে উদ্দেশ্য করে। এই কবিতার কাগজগুলো তিনি সব সময়ই সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো ছাড়া আর কিছুই তিনি সাথে নিয়ে যান নাই!”
কবিতা লেখা কাগজ? আমার হঠাৎ করেই মনে পড়ছে কড়ি কাঠবিহীন দালানে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় সেই দিনগুলোতে বুনো হাঁসের পালকের কলম কালিতে ডুবিয়ে হুই ছোট রানীর প্রতি আমি আমার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতাম। বেরিয়ে আসতো দীর্ঘঃশ্বাস, চেহারায় আসতো পরিবর্তন নিতান্তই অনিচ্ছায়! নিয়তির নির্মম পরিহাসের স্বীকার এই মেয়েটির প্রতি আমার ছিলো প্রগাঢ় স্নেহ, যা কি না ওর ঐ বন্দী জীবনের দিনগুলোতে আমাকে খুব কষ্ট দিতো।
হুই ছোট রানী যে দিন প্রাসাদ ছেড়ে চলে গিয়েছিলো, সে দিন বিষন্নতায় আমার মনটা ভরে গিয়েছিলো। পথের দু’পাশে ফুটেছিলো অজস্র ফুল, সেই পায়ে চলার পথ দিয়ে পায়চারী করছিলাম আনমনে! প্রষ্ফুটিত পুষ্প মনকে আনন্দিত করতে পারে। হাঁটার সময় অনুভব করছিলাম মৃদু মন্দ বাতাস যা বয়ে আনছিলো সুগন্ধি ঘাসের সৌরভ, অনেক স্মৃতি জাগানিয়া আবেগ আন্দোলিত করছিলো হৃদয়টাকে! আমি হাঁটতে হাঁটতে আবৃত্তি করছিলাম “মনে পড়ে যায় তার অপরূপ রূপ” নামের কবিতাটা, পুরো পদ্যটি! মনে পড়ে যেন ক্ষণ কালের স্থায়িত্বে স্থায়ী হওয়া আমার এবং হুই ছোট রানীর মধ্যকার প্রগাঢ় প্রেমে ভরা দাম্পত্য জীবনের ভালো লাগা আর ভালোবাসার মধুর মুহূর্তগুলো! লক্ষ্যবিহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমি উপস্থিত হলাম শাসন খাল-এর পাড়ে। খালের পাড় বরাবর তৈরী করা বেড়ার গায়ে হেলান দিয়ে তাকালাম পশ্চিম দিকে। প্রাসাদের অঙ্গনে লাগানো ঘন সবুজ গাছের সারি আছে এখানে। নাশপাতি এবং পীচ ফল গাছের কাণ্ডের মাথায় মাত্র অল্প কয়েক দিন হলো ফুল ফোটা শেষ হয়েছে। পাশের জমির শতদল আর ঔষধি গুণের শাও ইয়াও ফুলগুলো আগের মতোই গাঢ় লাল আর বেগুনি রঙের সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে চার পাশে।
জায়গা আছে! বাগান আছে! কিন্তু নেই সেই কাছে থাকা মানুষটা! এই শাসন খালের পাড়েই কোন একদিন পাখীর মতো উড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করে ছুটাছুটি করতে দেখেছি সেই মেয়েটাকে! এখন সে চলে গেছে আমার কাছ থেকে দূরে, বহু দূরে! আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি, অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন ধূম্র আর ভাসমান মেঘ হয়ে চলে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে দিয়ে। অপ্রত্যাশিতভাবে রেখে যাচ্ছে কিছু ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া শব্দ আর বাক্য যা তৈরী করছে দুঃখে ভারাক্রান্ত শোকের গাথা।
আমি দেখতে পাচ্ছি দোল খাওয়ার দোলনাটার পাটাতনের উপর কারা যেন এসে বসেছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম ওরা হচ্ছে ফং বড় রানী এবং লান ছোট রানী। কয়েক জন প্রাসাদ দাসী এসে দাঁড়িয়েছে উইলো গাছের নীচে। ওরা এসেছে রানীদের সেবা দেয়ার জন্য। আমি হেঁটে ওদেরকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় বেশ দ্রæততার সাথে কয়েকটা দোলানীর দোল খেলো দোলনায়। তারপর দোলনা থেকে নেমে আসলো। পাশে এসে দাঁড়ানো প্রাসাদ দাসীকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করে বললো, “তোমরা সবাই ঘরে ফিরে যাও। আমি আর লান ছোট রানী জাঁহাপনাকে সঙ্গ দিয়ে খানিক ক্ষণ হাঁটবো, ঘুরে বেড়াবো আমরা!”
“আমাকে সঙ্গ দেয়ার দরকার নাই।”, একটা নিরুত্তাপ শীতল গলায় আমি কথাগুলো বললাম, “তোমরা দোল খাও! আমি হাঁটতে হাঁটতে তোমাদের দোল খাওয়া দেখি।
দেখি তোমারা দোল খেয়ে কতটুকু উপরে উঠতে পারো!”
“জাঁহাপনার ভ্রæগুলো কুঞ্চিত হয়ে আছে! মনে হচ্ছে হুই ছোট রানীর কথা মনে করে হৃদয়টা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে!
জাঁহাপনা কি জানেন না, হুই ছোট রানী যে আদৌ মরে নাই!
প্রাসাদ থেকে যাকে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে সে হচ্ছে কম বয়সের একটা প্রাসাদ দাসী, ওর নাম যেন কি! চ্রেন আর, নয় কি?” ফং বড় রানী দোলনার পাশে এসে দাঁড়ালো। নিজের হাতের কব্জিতে পরে থাকা স্বর্ণের বালাটা দিয়ে দোলনার ঝুলন্ত শিকলে বাড়ি দিয়ে মৃদু আঘাত করলো। ওর ঠোঁটের কোণায় ভেসে উঠলো একটা ছোট্ট ধূর্ত স্মিত হাসির রেখা!
“তুমি তো সবই জানো দেখছি! কিন্তু আফসোস, তোমার জানা তথ্যের বিষয়গুলো সবই ভ্রান্ত আর বিরক্তিকর!”
“আসলে হুই ছোট রানী মৃত্যুর ফাঁদে পরুক, এটা আমরা কেউই চাই নাই! সে তো আসলে শিয়ালের আত্মাধারী মায়াবিনী! তাই স্বাভাবিকভাবেই সে ফিরে গেছে পাহাড় আর বন জঙ্গলের মধ্যে! কেবল ওকে ঝাঁটিয়ে বিদায় করার কারণেই প্রাসাদ থেকে সমূলে উৎপাটিত হয়েছে শয়তানের প্রভাব আর অশুভ বাতাস! আমরাও স্বস্তি পেয়েছি!”, ফং বড় রানী মুখ ঘুরিয়ে তীর্যক দৃষ্টিতে লান ছোট রানীর দিকে তাকালো এবং চোখ টিপ দিয়ে বললো, “লান ছোট রানী, তুমি কি বলো?”
“বড় রানী যা বললেন, তার পুরোটাই অক্ষরে অক্ষরে সত্য।”, লান ছোট রানী সায় দিয়ে জানালো ওর অভিমত।
“তুমি এমন কেনো? চাটুকারিতা আর মোসাহেবিতে ব্যস্ত সারাক্ষণ!:, আমার রাগের ঝাল আমি ঝাড়লাম লান ছোট রানীর উপর। উচ্চ স্বরে ধমক দিয়ে লান ছোট রানীকে বললাম, “তুমি একটা বোকা মেয়ে। আছে তো শুধু রূপসী খুবসুরত চেহারাটাই, ভেতরটাতো শুধু খড়কুটা আর শুকনা ধানের বিচালিতে আছে ঠাঁসা। সত্য কোনটা? সাদাটা না কালোটা? তোমার মতো নির্বোধের কাছে তা কি সারা জীবনেও স্পষ্ট হবে?”
ঐ মহিলা দু’টিকে খানিকটা হতবিহ্বল করে ওদেরকে দোলনার পাশেই দাঁড় করিয়ে রেখে, আমি জামার আস্তিন গুটাতে গুটাতে চলে গেলাম ওখান থেকে, যা ছিলো আমার ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ! বেশ কয়েক কদম এগিয়ে উইলো গাছের আড়ালে চলে আসার পর, আমি দাঁড়ালাম। পিছন ফিরে উইলো গাছের ডালপালা সরিয়ে আমি তাকালাম ঐ দুই নারীর দিকে, ওরা কি করছে দেখার জন্য। খুব নীচু স্বরে দুই মহিলা পরস্পরের সাথে কথা বলছে। কি কথা বলছে ওরা? ঘন ঘন মুখ ঢাকছে, হাসছে ফিক ফিক করে পরিহাসের হাসি! তারপর দেখলাম ওরা পালা করে দোলনায় বসছে, প্রথমে এক জন, কিছুক্ষণ পরে আরেক জন। একজন ঠেলছে, আরেক জন দোল খাচ্ছে অনেক উঁচুতে উঠে, পালা করে দোলনার দোল খাওয়া খেলায় মেতে উঠেছে ওরা দু’জন! ওদের পরনের ঘাগড়া বাতাসের ঝাপটায় ফেঁপে উঠছে! ওদের পোশাকের উপর কারুকাজের নিমিত্তে দুলের মতো ঝুলন্ত মুক্তাগুলো পরস্পরের সাথে বাড়ি খেয়ে যেন টুং টাং আওয়াজ তুলছে! দেখেতো মনে হচ্ছে ওরা খুবই আনন্দিত! প্রমদে ঢেলে দিয়েছে মন-প্রাণ! আমার মনে হচ্ছে দোল খেয়ে ওরা যতোই উপরে উঠছে, ওদের ছায়াগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে যাচ্ছে ততটাই পাতলা আর ভঙ্গুর! আমার মনে হচ্ছে ওরাও যেন সেই কাগজের তৈরী পুতুল, হয়তো এমন একদিন আসবে, দমকা বাতাসের তীব্র ঝাপটা দলা পাকিয়ে ওদেরকেও নিয়ে যাবে বহু দূরের অজানা গন্তব্যে!
দক্ষিণ অঞ্চলের যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে আসা সংবাদ মানুষকে ব্যথিত এবং আনন্দিত দু’টোই করছে! তুয়ান ওয়েন-এর সেনা দল ইতি মধ্যেই ফসল পূজার সমাবেশ স্থল লাল কাদা খাল-এর পূর্ব তীর থেকে আশি লি দূরবর্তী পার্বত্য উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে! ফসল পূজার সমাবেশে আসা মানুষদের জন্য খাদ্য সরবরাহের পথটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অশ্বারোহী বাহিনীর একটা অংশ একটা পার্বত্য গ্রামকে দূর্ভেদ্য দূর্গে পরিণত করেছে। অশ্বারোহী বাহিনীর বাকি অংশ কলমদানি পাহাড় অতিক্রম করে উপত্যকা এবং মন্দির নামের এই দুই জেলা-এর বনাঞ্চলের মধ্যে ঢুকে পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছে!
তুয়ান ওয়েন আটক করেছে লি ই চ্রি-এর স্ত্রী ছাই শ্রে এবং ওদের এক জোড়া পুত্র ও কন্যাকে! সে একটা আগুনের প্রজ্জ্বলিত কুন্ডলীর বৃত্ত তৈরী করে, ওটার মাঝ খানে ওদেরকে বেঁধে রেখেছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঢোল পিটিয়ে, আত্মসমর্পণ করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে লি ই চ্রি পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসবে ওদেরকে রক্ষা করার জন্য। সবাই প্রত্যাশা করেছিলো আত্মসমর্পণের এই রকম আহবান কার্যকরী ফলাফল বয়ে আনবে। কিন্তু হঠাৎ করেই এক ঝাঁক তীর এসে বিঁধলো লি ই চ্রি-এর স্ত্রী ছাই শ্রে এবং শিশু দু’টির শরীরে। আগুন বৃত্তের ভেতরে থাকা অবস্থায়ই ওদের মৃত্যু হলো তাৎক্ষণিকভাবেই! এমন দৃশ্য দেখে ওখানে উপস্থিত সিপাহীরা সবাই তাজ্জব বনে গেলো। তীরগুলো যে দিক থেকে এসেছে সে দিকে সবাই তাকালো। চোখে পড়লো শোক নির্দেশক পোশাক পরিহিত একজন মানুষ একটা সাদা রঙের ঘোড়ার পিঠে চোড়ে, এক হাতে ধনুক আরেক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ঘন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আবার বনের ভিতরের দিকেই দ্রæত ছুটে চলে যাচ্ছে!
ওরা আমাকে বলেছে ঐ মানুষটাই ছিলো ফসল পূজার সমাবেশের আয়োজকদের নেতা লি ই চ্রি!
রানীদের পাগলের মতো করা তীক্ষ্ণ চিৎকারের মধ্যেই, কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা রক্ষীরা ছুটে এসে ফং চ্রু নামের তরুণটিকে জাপটে ধরে আটক করলো। আমি নরী রূপ ধারী ঐ অভিনয় শিল্পীটির দিকে ভালো করে তাকালাম, ওর মুখ ঢাকা পরে আছে পুরু প্রসাধনীর আস্তরণের মধ্যে, যা দেখে সে যে ছেলে আর মেয়ে নয়, তা কোনভাবে ধরার উপায় নেই, ঠোঁট দু’টো শরৎ কালের ম্যাপেল পাতার মতো লাল, আর মেয়েদের মতোই মোহনীয়! (চলবে)