শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : প্রত্যেকেরই চেহারার অভিব্যক্তি আলাদা। সবাই আগ্রহ ভরে আমার দিকে তাকালো! আমি কোন কথা না বলেই উপরের তলায় চলে গেলাম। পিছন থেকে মঙ ফুরেন চেঁচিয়ে ডাকলেন আমাকে, বললেন, “দোতলায় যেও না, সাবধান! আছে খারাপ হাওয়া! দুর্ভাগ্য বয়ে আনা বাতাস!”, এ কথা বলেই মঙ ফুরেন নির্দেশ দিলেন এক জন প্রাসাদ দাসীকে, ঐ মৃত শেয়ালটা নিয়ে আসার জন্য! তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে মনে হলো, তিনি খুবই দুঃখে ভারাক্রান্ত, “সম্রাট, তুমি নিজের চোখে দেখো, দেখেই বুঝবে, তোমার হুই ছোট রানী, কত বড় মাপের অশুভ মায়াবিনী নারী!”
ভয়ে কম্পিত হস্তে প্রাসাদ দাসীটি মুখ বাঁধা একটা কাপড়ের পুটলির রশি পেঁচানো মুখটা খুললো! যেমনটা আশঙ্কা করছিলাম, চোখের সামনে দৃশ্য মান হলো একটা খুবই ছোট রক্তে ভেজা সাদা রঙের শিয়ালের ছানা! মৃত শেয়াল ছানাটার চামড়া এবং পশম থেকে বেরিয়ে আসছিলো একটা উৎকট অসহ্য দুর্গন্ধ! আমি যেন এর প্রতিক্রিয়াতেই কয়েক কদম পিছিয়ে আসলাম! একটা শীতল ঘামের ধারা বইতে শুরু করলো আমার সারা দেহে। দুর্গন্ধটা নাকে যাওয়ার পর নীচে সামনের বসার ঘরে অবস্থানরত রানীরা সবাই তীক্ষ্ণ স্বরে এক যোগে চিৎকার করে উঠলো, আর সবাই নিজেদের জামার হাতার কাপড় দিয়ে নাক ঢাকলো।
“কি ভাবে প্রমাণ করবে যে, এই মরা শেয়াল ছানাটা হুই ছোট রানীর গর্ভ থেকেই এসেছে?”, আমি ক্রোধ দমন করে খানিকটা শান্ত হয়ে মঙ ফুরেন-কে প্রশ্নটা করলাম।
“নৈশ প্রহরার দায়িত্বে থাকা তিনজন প্রাসাদ দাসী, আরও আছেন রাজ বৈদ্য সুন থিং মেই; ওরা সবাই সাক্ষী, ওরা পাশেই ছিলো।”, মঙ ফুরেন আরও বললেন,
“সম্রাটের যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে এখনই ঐ তিনজন প্রাসাদ দাসী আর রাজ বৈদ্যকে তলব করে তদন্ত করা যেতে পারে!”
আমার কাছে মনে হলো, এমন কাজ করা হবে দৃষ্টিকটু আর অদ্ভুত! আমি জানি না এ বিব্রতকর পরিস্থিতিকে কি ভাবে সামাল দেয়া যায়! আমি চোখের কোণা দিয়ে, আবছা আলোতে দেখতে পাচ্ছি আমার অপছন্দের মানুষ, ফং বড় রানী-কে; সে বসে আছে অন্যান্য রানীদের সাথে, সে পরিধান করেছে জমকালো জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক। সে বাঁশের তৈরী ভাত খাওয়ার কাঠি দিয়ে সামনের বাসনের উপর রাখা একটা চেরী ফল তুলে নিলো, ওটাকে খানিক ক্ষণ ধরে রেখে রাজকীয় শিষ্ঠাচার মান্য করে ফলটা পুরে দিলো মুখে! একটা প্রশ্নবিদ্ধ সন্দেহজনক ইঙ্গিতের ছায়া আমি সুস্পষ্ট দেখতে পেলাম ওর অবয়বের ভঙ্গিতে।
“হতভাগ্য হুই ছোট রানী!” আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। আমি কারো সাথে কথা না বলেই উপরের তলার দিকে গেলাম, কর্ণপাত করলাম না মঙ ফুরেন-এর প্রতিবন্ধকতা! উপরের তলায় উঠেই নজরে আসলো বারান্দায় দড়ি টেনে টানানো হয়েছে হলুদ রঙের বড় এক টুকরা কাপড়! এটা প্রাসাদের ভেতর সংরক্ষিত এলাকার নির্দেশক। একটা কাগজের ফিতাও টানানো আছে, যার উপর লেখা আছে ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’, সেখানে রাজ প্রাসাদের সীলমোহরও অঙ্কিত আছে! আমি সতর্কতার নির্দেশক কাগজের ফিতাটাকে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললাম। আমার পিছনে পিছনে উঠে আসছিলো অন্যান্য রানীরা, আমি ওদেরকে বের করে দিলাম! তারপর হন্তদন্ত হয়েই প্রবেশ করলাম হুই ছোট রানীর শয়ন কক্ষে!
ভারী পর্দা ঝুলানো ছিলো ওর শয়ন কক্ষের দরজায়, আমি তা টান দিয়ে সরালাম, চোখের পলক ফেলার পর পরই হঠাৎ করে আমার মনে হলো, আমি তো হুই ছোট রানীকে অনেক দিন দেখি নাই! আমার অতি পরিচিত রাস্না ফুলের চমৎকার সুবাস অনুভব করলাম আমি। আমার মনে হলো হুই ছোট রানীর চোখের মনি দু’টো পরিণত হয়েছে ধাবমান উল্কা পিন্ডে, যারা উদ্বিগ্নতা আর দুঃখের ভারে চরম ভাবে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে! যারা ছুটে চলে যেতে চাচ্ছে পক্ষী ক‚জন ঘর-এর উপরের আকাশে। অনেক দিন আগে হুই ছোট রানী যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলো, এখন তা সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে!
কারুকাজ খোচিত রাজকীয় বিছানায় শুয়ে লম্বা দমে শ্বাস নিচ্ছে হুই ছোট রানী, ওর শ্বাস যন্ত্র হয়ে গেছে বেশ দুর্বল। ও যেন চলে গেছে প্রায় অচেতন অবস্থায়। কিন্তু যখনই আমি দেখলাম ওর একটা হাত ধীরে ধীরে উঠে আসছে, ওটা যেন শূন্যে উঠে কাউকে ধরে স্পর্শ করতে চাইছে, সব শেষে ওর হাতটা টেনে ধরতে সক্ষম হলো আমার কোমর বন্ধটা। আমি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে নত হলাম। দেখতে পেলাম এক সময়ের বিলাসী সুন্দর অবয়বের ফিন চৌ থেকে আসা মেয়েটা যেন ইতিমধ্যেই পরিণত হয়েছে একটা জীর্ণ শুকিয়ে যাওয়া পচন ধরা বৃক্ষে! শেষ বিকেলের আলোক রশ্মি এসে পরছে ওর মুখ মন্ডলে, আর ওর চেহারা থেকে যেন বিকিরিত হচ্ছে একটা বরফ শীতল সাদা আলো। আমি খুব আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিলাম ওর একমাত্র অমলিন হওয়া ঘন কালো ভ্রæ জোড়ার উপর। আমার এই স্পর্শ ওর জন্য হয়েছে একটা যাদুকরী প্রাণশক্তি! আমি দেখতে পেলাম, অনুভব করতে পারলাম, আমার হাতের নীচে ওর বুঁজে থাকা চোখের পাতাগুলো ধীরে ধীরে খুলছে। মুক্তার মতো কয়েক ফোঁটা অশ্রু আমার আঙ্গুলের গিড়া স্পর্শ করছে।
“আমি বোধ হয় মারাই যাচ্ছি?, ওরা সবাই এক জোট হয়েছে, আমার বিরুদ্ধে আনছে একটা মিথ্যা অভিযোগ। ওরা বলছে, আমি প্রসব করেছি একটা সাদা শিয়াল। হুই ছোট রানীর হাতটা জোরে চেপে ধরলো আমার রাজকীয় কোমর বন্ধে ঝুলানো একটা কারুকাজ খোচিত পাথর, যা কি না নির্দেশ করে আমি হচ্ছি এ দেশের সম্রাট! তার হাতের এই অস্বাভাবিক জোর আমাকে রীতিমতো বিস্মিত করছে। ওর শূন্যতা আর অবিশ্বাসে ভরা দু’টি চোখ পূর্ণ হয়ে আছে মিনতি ভরা আবেগে, চেয়ে আছে আমার চোখের দিকে, চাচ্ছে আমার অনুগ্রহ! “জাঁহাপনা, আমাদের মাঝে সেই অতীত দিনগুলোতে থাকা গাঢ় প্রেমের বন্ধনের কথা স্মরণ করে বলছি, আমাকে সাহায্য করুন! আমি বহু আগে থেকেই জানতাম, ওরা আমাকে ছেড়ে দেবে না! কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারি নাই ওদের হাতের কাজ হবে এতোটা অশুভ আর ঘৃণ্য! হায় ঈশ্বর! হঠাৎ করেই ওরা বলে বসলো, আমি না কি প্রসব করেছি একটা শিয়াল, একটা সাদা শিয়াল ছানা!”
“ওরা এমনই বলছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না! আমি রাজ বৈদ্য এবং প্রাসাদ দাসীদের ডেকে এনে জেড়া করবো। এর শেষটা কোথায় তা দেখতে হবে!”
“জাঁহাপনা! আপনি এই ঝামেলার মধ্যে যাবেন না! সুন পদবী ধারী রাজ বৈদ্য এবং ঐ প্রাসাদ দাসীগুলোকে অনেক আগেই ফং বড় রানী ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলেছে! ওদের মধ্যে সবাই খুবই নীচু প্রকৃতির মানুষ, ক্ষমতাবানদের ক্রীতদাস তুল্য চাটুকার।” হুই ছোট রানী হঠাৎ করেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “ওরা এ ব্যাপারটাকে নিয়ে অনেক আগে থেকেই চিন্তা ভাবনা করে চলছিলো। ওদেরকে ঠেকিয়ে রাখা আমার জন্য ছিলো অত্যন্ত দুরূহ কাজ। আমি যতোই সতর্ক থাকি না কেনো, কোন কিছুই কাজে আসে নাই! শেষ ফলাফল হলো, তাদের তৈরী করা ফাঁদে পতিত হয়েছি
আমি!”
“ঐ রাতে গর্ভপাত হওয়া ভ্রূণটা কি তুমি দেখেছো?”
“না! প্রাসাদ দাসী বলেছে যে, সে নাকি মোমবাতি খুঁজে পাচ্ছে না। চার দিকে ছিলো আলকাতরার মতো কালো অন্ধকার। আমি বিছানায় শুয়ে হাত বুলিয়ে অনুভব করলাম, ওখানে আছে এক দলা রক্ত। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম অনেক লম্বা সময় ধরে! জ্ঞান ফিরে আসার পর আমি দেখলাম, মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে। রাজ বৈদ সুনও এসে পরেছেন। তিনি বললেন যে, আমার নাকি গর্ভপাত হয়েছে, গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছে একটা ভ্রূণ যেটা দেখতে নাকি শেয়ালের মতো! আমি জানি, তিনি মিথ্যা কথা বলছেন, আমি জানি ফং বড় রানী এবং তার সহযোগীরা এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রের জাল পেতেছেন।”, কাঁদতে কাঁদতে ইতিমধ্যেই হুই ছোট রানী যেন পরিণত হয়েছে একটা অশ্রু মানবে! সে অনেক কষ্ট করে হামাগুড়ি দিয়ে পালঙ্ক থেকে মাটিতে নেমে আসলো, ষষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। সে বললো, “ভাগ্যের নির্মমতা থেকে এই দাসীর তো পালাবার পথ নেই! যে অবিচারের কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে সেটা ধূয়ে মুছে পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। জাঁহাপনার কাছে শুধু একটাই আর্জি, আপনি সূক্ষ্ণভাবে গোটা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখেন, আমাকে বেঁচে থাকার একটা পথ নির্দেশনা দেন।”
হুই ছোট রানী, ওর নীচু করে রাখা অশ্রু সিক্ত অবয়ব উঁচু করে মাথা তুলে তাকালো উপরের দিকে, আমার চোখের দিকে।
ওর রক্তশূণ্য ঠোঁট দু’টো হয়ে গেছে একটা মাছের মুখের মতো। খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে, উঠছে আর নামছে। সে তার নাক সামনে এনে স্পর্শ করলো আমার রাজকীয় আলখেল্লা। একটা শোঁশোঁ শব্দের শোকাবহ বেদনা ধ্বনি ভেসে এলো, ওর গলা থেকে।
সে কান্না থামালো। ওর চোখের মনি দু’টো থেকে হঠাৎ করেই যেন বেরিয়ে আসলো একটা দ্যূতি, যা আত্মাকে নাড়া দিতে পারে! সে সবশেষে বললো, “জাঁহাপনা, মহামান্য সিয়ে দেশের সম্রাট! আপনি আমাকে বলুন, আমি কি বেঁচে থাকবো, না মরে যাবো? আমাকে কি সত্যিই মরে যেতে হবে? যদি আমাকে মরতেই হয়, তবে জাঁহাপনা, আপনি এখনই সাদা রেশমের কাপড় আনার হুকুম দেন, আর সেটার ফাঁস দিয়ে আমার মৃত্যু নিশ্চিত করুন!”
শীর্ণকায়, দুর্বল আর বরফ শীতল হুই ছোট রানীর শরীরটাকে আমি জড়িয়ে ধরলাম। প্রাণহীন হীম শীতল পানির মতো আমার মনটা দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে! বসন্তের আগমনের শুরু থেকেই ফিন চৌ-এর প্রাণবন্ত ঈশ্বর প্রদত্ত স্বর্গীয় রূপে রূপবতী এই মেয়েটির সাথে আমার দূরত্ব যেন দিন দিন বেড়েই চলছে! এখন আমি যেন দেখতে পাচ্ছি একটা বিষাক্ত হাত এরই মধ্যে ওকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে সমাধি ক্ষেত্রের দিকে! আমি জানি না কেনো, কোনো উপায় নাই হতভাগ্য হুই ছোট রানীকে টেনে ধরে রক্ষা করার! সে যখন আমার কাছে কাতর দুঃখ ভারাক্রান্ত গলায় সাহায্য প্রার্থনা করে, আমি জানি না, কোন জিনিসটা এসে বেধে ফেলে আমার হাত দু’টো, আমি কোন কিছু করতে পারি না! আমি অশ্রু সংবরণ করে শান্তনা দেই হুই ছোট রানীকে, কিন্তু সম্রাট হিসেবে ওকে রক্ষা করার কোন আশ্বাস আমি দিতে পারি না!
এক দিন গোপনে খোজা দাসদের সর্দার ইয়েন লাঙ-কে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে ডেকে পাঠালাম। ওর কাছ থেকে উপদেশ চাইলাম কি ভাবে হুই ছোট রানীর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা নেয়া যায়। ইয়েন লাঙ পূর্বাহ্নেই যেন এ বিষয়টা নিয়ে খানিকটা চিন্তা ভাবনা আর পরিকল্পনা করে রেখে ছিলো। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে, হুই ছোট রানীর প্রতি আমার হৃদয়ের প্রগাঢ় ভালোবাসা এখনও অটুট আছে কি না! আমি তাকে হাঁ সূচক উত্তর দিলাম খানিকটা দৃঢ়তার সাথে! সে আমাকে আবার প্রশ্ন করলো যে, আসলে আমি কি চাই, হুই ছোট রানী বেঁচে থাকুক, না কি ওর মৃত্যু হোক! আমি বললাম, “আমি অবশ্যই চাই সে বেঁচে থাকুক!”, “তাহলে তো ঠিকই আছে”, খোজা দলের দল নেতা ইয়েন লাঙ মৃদু হেসে আরও বললো, “আমি হুই ছোট রানীকে প্রাসাদের বাইরে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছি। ওনাকে পাঠাবার বন্দোবস্ত করবো এমন একটা জায়গায়, যেখানে তিনি তাঁর বাকি জীবনটা কাটাতে পারবেন, কোন মানুষ জানবে না, এমন কি ভূতেরাও জানতে পারবে না! সম্রাটের আম্মাজান, দাদীজান প্রমুখ মুরুব্বিরা এবং অন্যান্য রানীরা জানবেন যে, জাঁহাপনার হুকুমে হুই ছোট রানীর মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয়েছে! ওনার মৃত দেহটা ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে, পানির স্রোতের সাথে ভেসে চলে গেছে প্রাসাদের বাইরে!”
“তুমি কোথায় ওকে লুকিয়ে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছো?”, আমি ইয়েন লাঙ-কে প্রশ্ন করলাম।
“লিয়েন চৌ শহরের বাইরের একটা সন্নাসীনিদের আশ্রমে। আমার ফুফু আম্মা ওখানেই থাকেন। ওটা পার্বত্য এলাকা, পাহাড়গুলো ওখানে অনেক উঁচু, আছে গহিন বন, ঐ আশ্রমের আসে পাশে কোন জনবসতি নাই। কেউ-ই জানবে না ছোট রানী আছেন কোথায়!”
“হুই ছোট রানীকে কি মাথার চুল কামিয়ে ফেলে হয়ে যেতে হবে সন্ন্যাসীনি? তুমি কি সিয়ে দেশের একজন মহামান্য রানীকে নারী সন্ন্যাসী হয়ে যেতে বলছো? এর চেয়ে উত্তম কোন পন্থা কি নাই?”
“হুই ছোট রানীর অতীত এবং বর্তমান অবস্থা কোন ভাবেই তুলনিয় নয়! যদি চুরি করে হলেও প্রাণটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় তবে যে পথটা খোলা আছে, সেটা হলো প্রাসাদ ত্যাগ করা। আর যদি প্রাসাদ ছেড়ে যাওয়া হয় তবে, পারিবারিক জীবনকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, করা যাবে না আবার বিয়ে-শাদি করে নতুন ঘর সংসার! শুধুমাত্র সামনে একটা পথই খোলা আছে, মাথা কামিয়ে সন্নাসীনির জীবন গ্রহণ করার! জাঁহাপনা, আপনি একবার, দু’বার তিনবার, বহু বার ভেবে দেখেন! তারপর সিদ্ধান্ত দেন।”
আমি শুনতে পেলাম, প্রাসাদের সামনের উদ্যানের লম্বা উঁচু ঝাউ গাছটা থেকে কয়েকটা ঝিঁঝি পোকা হঠাৎ করেই ডেকে উঠলো। আমি যেন ঘোরের মধ্যে পরে যাচ্ছি, চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছি একটা শীর্ণকায় কিন্তু অপূর্ব সুন্দর কাগজের তৈরী মানুষ বাতাসের ঢেউয়ে ভেসে চলে যাচ্ছে! (চলবে)