শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : কিন্তু ওর শাস্তি আমি প্রত্যক্ষ করতে চাচ্ছি না, কারণ ওর প্রতি আমি হতে চাচ্ছি নির্দয়, ওর কষ্ট দেখে তো আমার মন নরম হয়েও যেতে পারে! তাই আমি রাগে গজগজ করতে করতে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের ভিতরে ঢুকে গেলাম। গৃহের দরজা আর জানালাগুলোতে আছে ঝুলানো পর্দা, পর্দার ওপাশ থেকে আসছে দোররা মারার আওয়াজ। চাবুকের প্রতি আঘাতে ফেটে যাচ্ছে গায়ের চামড়া, আমি যেন শুনতে পাচ্ছি ইয়েন লাঙের ত্বকে চিড় ধরার শব্দ!

আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না, ইয়েন লাঙের অতি বিনীত হওয়ার কারণ! অথবা এমনও কি হতে পারে, ওর কামার পিতার রক্তের ধারা থেকে ওর মধ্যে এসেছে এই গুণ? বংশধারা থেকে প্রোথিত সব সময় নিজেকে হীন ভাবার এই প্রবণতা কি ইয়েন লাঙের ব্যক্তিত্বের মধ্যে স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে? চামড়া ফেটে যাওয়ার সুস্পষ্ট শব্দ অনবরত আসছে। সেই সাথে আরও আসছে গোঙানির এবং ইয়েন লাঙের মেয়েলী গলার কান্নার আওয়াজ। ইয়েন লাঙ বললো, “গোলামের চামড়া আর মাংসের উপর পাওয়া ব্যথা তো ছোট ব্যাপার, সেই তুলনায় দেশের স্থিরতা খুব বড় একটা বিষয়!”

ইয়েন লাঙ আরও বললো, “জাঁহাপনা এবং চতুর্থ রাজ কুমারের মধ্যে যাতে শত্রæতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য যদি এই গোলামের মৃত্যুও হয় তবুও গোলামের কোন আফসোস থাকবে না!”
এ কথা শুনে আমার হৃদয় আলোড়িত হলো। হঠাৎ করেই আমার খুব ভয় লাগা শুরু করলো। শীর্ণকায় দেহের ছোট মানুষ ইয়েন লাঙ দোররার আঘাতে মরে যাবে না তো? আমি ছুটে গিয়ে দণ্ড বিধায়ককে চাবুক মারা বন্ধ করার আদেশ দিলাম। ইয়েন লাঙ শাস্তি চৌকি থেকে গড়িয়ে মাটিতে পরেই দুই হাতে ভর দিয়ে একটু উঠে মাথা নুইয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কুর্নিশ করলো। যদিও ওর গোলাকার মুখে পীচ ফলের মতো লাল রঙ এখনও মিলিয়ে যায় নাই। দু’টো গাল বেয়ে অশ্রু ধারা টপ টপ করে পরছে।
এখনও ব্যথা আছে?
ব্যথা নাই!
মিথ্যা কথা, এক’শ ঘা দোররার বাড়ি খেয়ে কেমন করে ব্যথা হচ্ছে না?
জাঁহাপনার কাছ থেকে আসা অনুগ্রহ এই গোলামের ব্যথাকে ভুলিয়ে দিয়েছে।

ইয়েন লাঙ করছে ভণ্ডামি, আমি ওর ভণিতা দেখে মজা পাচ্ছি। কখনও কখনো ইয়েন লাঙের অতি বিনয় আমাকে খুবই বিরক্ত করে। তবে বেশীর ভাগ সময়ই ইয়েন লাঙের বিনয় আমাকে করে মুগ্ধ, আমি উপভোগ করি ওর বিনয়ী আচরণ, মনে মনে প্রশংসা করি ওকে!

সম্রাট হিসেবে আমার রাজকীয় কর্ম জীবনের প্রারম্ভিক দিনগুলোতে জাগতিক ব্যাপার স্যাপার আর কাজ কর্মগুলো ছিলো জটিলতায় ভরা। পণ্ডিত আর বুদ্ধিজীবিরা লিপিবদ্ধ করে রাখেন সব ঘটনা, প্রাসাদের দেয়ালের ভেতরে বাইরে ভেসে বেড়ানো মেঘমালা, মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া অকস্মাৎ পরিবর্তন সব কিছুই হয় লিপিবদ্ধ! রাজ প্রাসাদের অনেক উপাখ্যান ছড়িয়ে পড়ে রটনা আকারে দেশের আনাচে কানাচে! তবে আমার কাছে শুধু সিংহাসনে বসার প্রথম বছরের শীত কালটার স্মৃতির গভীরতা সবচেয়ে বেশি! ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সব চাইতে স্মরণীয়!

প্রথম বছরের শীত কালে আমার বয়স ছিলো চৌদ্দ বছর। কোন এক দিন, দিনটা ছিলো দক্ষিণায়নের তৃতীয় দিন, যে সময়টায় শীতের তীব্রতা থাকে সবচেয়ে বেশি, আর সেই দিনটায় হয়েছিলো প্রবল তুষার পাত! তুষার ছোড়াছুড়ির খেলা খেলতে, আমি এক দল অল্প বয়সী প্রাসাদ তত্ত্বাবধায়কদের নিয়ে প্রাসাদের বাগানে গিয়েছিলাম। আমার পিতা প্রয়াত সম্রাটের শাসন আমলে বাগানের এক পাশে স্থাপন করা অমরত্বের ঔষধ তৈরী করার নিমিত্তে নির্মাণ করা চুল্লীটি এমনি এমনি পরে আছে, ওটা যেন কাটাচ্ছে অলস সময়! চারিদিকে পড়ছে তুষার, বিশেষত চুল্লীটার পাশে জমা তুষারের স্তুপ হয়েছে পুরু আর গভীর! হঠাৎ করেই পায়ের নীচে নরম কোন কিছুর উপর পাড়া দিলাম আমি। উপরে জমে থাকা তুষার সরিয়ে দেখলাম অপ্রত্যাশিত একটা বস্তু! বস্তুটা একটা লাশ! তুষার ঝড়ে জমে যাওয়া এক বৃদ্ধ! প্রাসাদ ভৃত্যের মৃত দেহ!

জমে যাওয়া লাশটা হচ্ছে আমার অতি পরিচিত পাগলাটে মানুষ সুন সিন এর। আমি জানি না গত রাতে ভারী তুষার পাতের সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই জীর্ণ শীর্ণ অমরত্বের ঔষধ তৈরীর চুল্লীর সামনে সে কেনো এসেছিলো! এমন হতে পারে সুন সিন পুরোপুরি পাগল হয়ে গিয়েছিল, ওর পাগলামি বোধ হয় আর ওষুধ খেয়ে নিরাময় করার পর্যায়ে ছিলো না। আবার এমনও হতে পারে এই তুষার ঝড়ের রাতে প্রয়াত সম্রাটের অমরত্বের ঔষধের চুল্লীটাকে সুন সিন আবার উজ্জীবিত করে তুলেছিল, ধরিয়ে ছিলো আগুন!

সুন সিনের হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরা আছে এক টুকরা জ্বালানী কাঠ, যেটার মাথায় আগুনে পোড়ার কোন চিহ্ন নাই। পরু তুষারের আবরণের মধ্যে ঢাকা পরা তার মুখ অবয়বটার মধ্যে ফুটে উঠেছে একটা শিশুর সরলতা মাখা আনন্দ বিভোর অভিব্যক্তি! মুখটা অবশ্য ভিজে গেছে। মুখটা হা করা, ভেতরটা কালো অন্ধকার, ঠোঁট দু’টো অবশ্য গাঢ় লাল? আমার মনে হয় আমি যেন শুনতে পেলাম সুন সিনের বুড়ো মানুষের মতো ভাঙ্গা গলার আওয়াজ, সে বলছে, “সুন সিন মরে গেছে, সিয়ে রাজ্যের বিপর্যয়ও ঘনিয়ে আসছে!”

বইটার আরও আছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনুচ্ছেদ, যার অনুবাদ আমি এখনও শেষ করতে পারিনি।
চীনা ভাষা চর্চা করা আমার একটা যড়ননু, বাংলায় বললে হয় সখের খেয়াল!
আমার বন্ধুরা যারা ঋধপবনড়ড়শ এ, বইটার প্রথম অনুচ্ছেদের বাংলায় অনুবাদ পড়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, জানতে চাচ্ছি, কেমন লাগছে উপন্যাসের ঘটনাটা!
আমার বন্ধুদের অভিমত, আমার জন্য খুবই দরকারী!

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১.
হুই সিয়েন নামের আমার ছোট রানীটি এসেছিল ফিন চৌ এর একটা বিত্তশালী ব্যবসায়ী পরিবার থেকে। মেয়েটি অতুলনীয় সুন্দরী আর সেই সাথে প্রখর বুদ্ধিমতী। আমার চোখে এই মেয়েটি ছিলো শান্ত শিষ্ট একটা আদরের ভেড়ার ছানার মতো! আমার নারী মহলে সে ছিলো যেন একটা গর্বিত ময়ূর, যে বরাবরই থাকতো নিঃসঙ্গ একাকী! আমার তরুণ বয়সের দিনগুলিতে হুই ছোট রানীর অপূর্ব সুন্দর নির্মল বিশুদ্ধ টোল পরা গালের হাসি ভরা মুখ, আর রাস্না ফুলের সুবাস ভরা ত্বক ও শরীরটার ছবি আমার স্মৃতির মণিকোঠায় সব চেয়ে গভীর ভাবে গেঁথে আছে। সেই সাথে মনের উপর সবচেয়ে চাপ যুক্ত বিষয়ও ছিলো হুই ছোট রানী-কে কেন্দ্র করে, যা ছিলো কিছু মানুষের বিদ্বেষ আর উস্কানিমূলক আচরণ! আর যা কিনা প্রাসাদের ভিতরে বইয়ে দিয়ে ছিলো অশান্তির ঘূর্ণিঝড়!

আমার মনে আছে, কোন এক বসন্ত কালের ভোর বেলা শাসন খালের পাড়ে আমি প্রথম বারের মতো দেখেছিলাম হুই ছোট রানীকে। ঐ সময় মেয়েটির সবে মাত্র প্রাসাদের ভিতরে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, ছোট্ট একজন প্রাসাদ কর্মী হিসাবে। আমি ঘোড়ার চড়ে সেতু পেরিয়ে আসছিলাম। তীরে বসা এক ঝাঁক চড়ুই পাখী ঘোড়ার খুড়ের আওয়াজে ভয় পেয়ে উড়াল দিয়ে চলে গেলো। ঘোড়ার খুড়ের আওয়াজ একই সাথে ভয় পাইয়ে দিয়েছে শাসন খালের পাড় বরাবর ছুটে চলা একটা মেয়েকেও!

ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে আমি এতক্ষণ দেখতে পাচ্ছিলাম, ঐ মেয়েটা উড্ডয়নের ভঙ্গি করছিলো পাখীদের অনুকরণ কোরে। পাখীর ঝাঁক যখন উড়ে যায়, সে তখন নিজের জামার বড় হাতা জোড়া ঝাপটিয়ে দৌড়ে সামনের দিকে যায়, পাখীর ঝাঁক যখন নেমে এসে বসে তখন সে থামে। হাতের আঙ্গুলের ডগা ঠোঁটে ছুঁয়ে শীষ দিয়ে শী শী শব্দ করে। পাখীর ঝাঁক সাঁই করে বিশাল উইলো গাছের ছোট ছোট ডাল পালার ভিতর দিয়ে দৃষ্টি সীমার বাইরে মিলিয়ে যাওয়ার খানিকক্ষণ পরে ওর নজরে আসে আমার ঘোড়াটা! আমি দেখতে পেলাম সে উদ্বিগ্ন হয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বড় গাছটার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে ওর হাত দু’টো মরণপণে জাপটিয়ে ধরেছে গাছের কাণ্ডটাকে। সে তার অবয়বটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। সে লুকানোর চেষ্টা করছে আমার দৃষ্টি সীমা থাকে। কিন্তু ওর গোলাপি রঙের হাতের কব্জি আর কব্জিতে থাকা সবুজ রঙের পান্না পাথর খোচিত বালাটা যেন একটু পরিহাসের হাসি হেসে সরাসরি আসছে আমার নজরে!

“তুমি বেরিয়ে আসো।”, আমি ঘোড়ায় চোড়ে বড় গাছটার কাছে এগিয়ে এলাম। দু’টো ছোট হাত গাছের কাণ্ডটাকে বেষ্টন করে আছে। আমি ঘোড়ার চাবুক দিয়ে ঐ হাত দু’টোর উপর বাড়ি দিলাম ক’য়েক ঘা! গাছের পিছন থেকে সাথে সাথে শুনা গেলো একটা তীক্ষ্ণ চিৎকারের শব্দ। পিছনের মানুষটা তখনও আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে না। আমি আরেক বার আঘাত করলাম। গাছের পিছন থেকে আবারও একটা চিৎকারের শব্দ আসলো। আমি আমার হাসি চেপে রাখতে পারছিলাম না। আমি বললাম, “তুমি যদি এখনও বেরিয়ে না আসো, তবে আমি কিন্তু ঘোড়ার চাবুক দিয়েই তোমাকে বের করে আনবো!”

গাছের পিছন থেকে বেরিয়ে দৃশ্যমান হলো একটা মেয়ের অকৃত্রিম অপূর্ব সুন্দর মুখমণ্ডল। আতঙ্কে কম্পমান ওর উজ্জ্বল চোখ দু’টো, আর ঝকঝকে সাদা দাঁতের উপর থেকে আসছিলো আলোর ঝিলিক, যা কিনা যে কোন মানুষের হৃদয়কে করতে পারে আন্দোলিত! আমার চোখের দৃষ্টিটা হারিয়ে যাচ্ছিলো গভীর এক গোলক ধাঁধার মধ্যে!
“জাঁহাপনা, আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনার এই দাসী অবগত ছিলো না, যে জাঁহাপনা এখানে তশরিফ রাখবেন।”, মেয়েটা মাটিতে নুয়ে পরে কুর্নিশ করলো। মাথা নোয়ানো অবস্থায়ও সে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছিলো আমার দিকে।

“তুমি কি আমাকে চেনো? আমি তো তোমাকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। তুমি কি হুয়াং ফু ফুরেনের প্রাসাদে কাজ করো?”
“এই দাসী তো মাত্র কয়েক দিন হলো রাজ প্রাসাদে এসেছে, দাসীর নাম এখনও প্রাসাদের খাতায় লিপিবদ্ধ হয় নাই।”
মেয়েটার হাসি এবার দৃশ্যমান হলো। সে ধীরে ধীরে শিরদাঁড়া সোজা করে মাথা তুলে দাঁড়ালো। সে দাঁড়িয়েছে আমার মুখোমুখি। তার মুখের অভিব্যক্তিতে আছে খানিকটা দুষ্টুমি মাখা দৃঢ়তার ছাপ! সে বললো, “আমি কখনও ই রাজ দরবারে যাই নাই, সম্রাটকে নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয় নাই। কিন্তু জাঁহাপনা, আপনার মোহনীয় দৃঢ়তা যুক্ত বদন মণ্ডল দেখা মাত্র আমি অনুমান করতে পেরেছি, নিশ্চয়ই আপনিই হচ্ছেন সিয়ে দেশের মহামান্য সম্রাট!”

“কি নাম তোমার?”
“এখন আর কোন নাম নেই আমার!
আকাঙ্খা, জাঁহাপনা যদি অনুগ্রহ করে এই দাসীর জন্য একটা নাম পছন্দ করে দিতেন!”
আমি চড়ে ছিলাম ইউ থু নামের একটা ঘোড়ার পিঠে, লাফ দিয়ে আমি ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে আসলাম। মেয়েটাকে ধরে পুরোপুরি দাঁড় করিয়ে দিলাম। আমি আগে কখনও এমন নিষ্পাপ অপূর্ব সুন্দর মুখের প্রাসাদ দাসী দেখি নাই! আরও দেখি নাই, আর কোন মেয়ে, যার সাহস আছে আমার সাথে এতটা চিত্তের দৃঢ়তা নিয়ে কথা বলার। আমি টান দিয়ে ওর একটা হাত ধরলাম। ওর ঐ হাতটা সরু আর মসৃণ। ওর হাতের মধ্যে এখনও মুঠ করে ধরে রাখা আছে একটা বুনো আপেল ফুলের পাপড়ি।

“তুমি আসো আমার সাথে, আমরা এক সাথে ঘোড়ার পিঠে চড়ে খানিকটা বেড়াই!”, আমি মেয়েটাকে ঠেলা দিয়ে ঘোড়ার পিঠে বসালাম। শুরুতেই শুনতে পেলাম একটা ভয় নির্দেশক তীক্ষ্ণ আওয়াজ, তারপরই শুনলাম রুপার ঘন্টা ধ্বনির মতো সুমধুর আনন্দের হাসির শব্দ! “আমি তো ঘোড়ায় চড়তে পারি না! ঘোড়ায় চড়া কি খুব মজার?”
হুই সিয়েনের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতের সেই আনন্দ ভরা শিহরণের কারণ ব্যাখা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়! তবে শুধু মাত্র মনে আছে ঐ দিনের ভোর বেলায়, ঐ এক সাথে ঘোড়ায় চড়ার ঘটনাটার পর থেকে মেয়ে মানুষের প্রতি আমার বহু দিনের অপছন্দের দৃষ্টি ভঙ্গিটা বদলে গিয়েছিলো!

মেয়েটির পোশাক আর কালো চুল থেকে ভেসে আসা অপূর্ব সতেজতায় ভরা সুবাস অনেকটাই ছিলো সদ্য প্রষ্ফুটিত রাস্না ফুলের সৌরভের সাথে তুলনা করার মতো।
ইউ থু নামের ঘোড়াটা শাসন খালের পাড় বরাবর ধীরে ধীরে ছুটে চলে এসেছিলো সিয়ে রাজ প্রাসাদের ছাদের বর্ধিত অংশের নীচে। খুব সকালে কাজে আসা বাগান মালীদের মধ্যে যারা গাছের ডাল পালা ছাঁটার কাজে ব্যস্ত ছিলো, তারা সবাই হাতের কাজ থামিয়ে দিয়েছিলো। ওরা দূর থেকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলো ইউক্রেনীয় ঘোড়াটাকে, আর ঐ ঘোড়ার পিঠে একই সাথে আরোহণকারী দু’জন মানুষকে! আসলে বিস্ময়ে অভিভূত শুধু বাগানের মলীরাই হয়নি, অবাক হয়েছিলাম আমিও! অথবা অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পাওয়া হুই সিয়েন নামের মেয়েটিও!
এই বিশেষ ভোর বেলাটার স্মৃতি এই মানুষগুলোর পক্ষে ভুলে যাওয়া অবশ্যই কঠিন! (চলবে)