অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারি রুখতে চীনের কঠোর ‘জিরো কোভিড’ পলিসি নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। আর সেই কঠোর নীতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিক্ষোভে নামেন চীনের হাজারও মানুষ। এক এক করে টানা পঞ্চম দিনে সেই বিক্ষোভ পৌঁছানোর পর বিক্ষোভকারীদের কঠোর হস্তে দমন শুরু করে চীনা কর্তৃপক্ষ।
আর এবার চীনের শাসকগোষ্ঠীর এই দমন-পীড়ন নিয়ে মুখ খুলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, চীনের জনগণকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া উচিত। বুধবার (৩০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রত্যেককে প্রতিবাদ ও নিজেদের মত প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এমনকি চীনের জিরো-কোভিড নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কানাডিয়ানরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও মঙ্গলবার জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, চীনের রাজধানী বেইজিংসহ সাংহাই ও উহানের মত বেশ কিছু শহরে হওয়া ওই বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। এসব বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়ে স্লোগানও দেওয়া হয়। যা চীনে অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
বলা হচ্ছে, এক দশক আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে এবারই প্রথম এতো বড় বিক্ষোভের ঢেউ উঠল চীনে। অবশ্য করোনা মহামারিতে তিন বছর ধরে কঠোর এই কোভিড প্রতিরোধ নীতি নিয়ে অসন্তোষ প্রায় সময়ই চীনা শহরগুলোতে ফুটে উঠতে দেখা গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কানাডার রাজধানী অটোয়ায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সাংবাদিকদের বলেন, ‘কানাডিয়ানরা (চীনের বিক্ষোভ পরিস্থিতি) খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। চীনে প্রত্যেককে নিজেদের মত প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া উচিত। নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রকৃতপক্ষে প্রতিবাদ জানাতে দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন জানে যে আমরা মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াবো। আমরা নিশ্চিত করছি- আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো যারা নিজেদের মত প্রকাশ করছে।’
রয়টার্স বলছে, চীনের পুলিশ মঙ্গলবার বেইজিং এবং সাংহাইতে বিক্ষোভ প্রতিরোধে আরও বেশি বলপ্রয়োগ করেছে। এই বিক্ষোভ মূলত চীনের লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে ব্যাহত করেছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং শি জিনপিংকে পদত্যাগ করার জন্য দুর্বলভাবে হলেও বিরল আহ্বান জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আইনের কাঠামোর মধ্যেই কেবল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার কানাডার টরন্টোতে চীনা কনস্যুলেটের বাইরে একটি বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন সেখানে প্রায় ৪০ জন লোক ব্যানার, পতাকা এবং একটি লাউডস্পিকার নিয়ে জড়ো হন। এসময় সেখানে তারা নানামুখী স্লোগান দেন। যার মধ্যে রয়েছে: ‘মুক্ত তিব্বত! মুক্ত চীন! মুক্ত হংকং!’ এবং ‘শি জিনপিং! পদত্যাগ করুন!’
এছাড়া টরন্টোর ওই বিক্ষোভের সময় বেশ কিছু লোক সাদা কাগজের শীটও তুলে ধরেন। এটি মূলত চীনের সাম্প্রতিক ওই বিক্ষোভে নাগরিক অবাধ্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার কানাডার টরন্টোতে চীনা কনস্যুলেটের বাইরে বিক্ষোভ আয়োজনে সাহায্য করেন হিউ ইউ নামে এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কয়ার বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন এবং এখন কানাডায় থাকেন। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে তিনি কানাডিয়ান নাগরিক এবং সরকারকে চীনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানান।
চীনের বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে রয়টার্সের একজন সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ আছেন যারা নীরবে মরতে চান না। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই না। কিন্তু আমার কোনও উপায় নেই।’
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চীনা একজন ছাত্র এদিন ‘ডাউন উইথ শি জিনপিং’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন। তিনি বলেন, তিনি বরাবরই চীনের নেতা এবং সরকারকে সমর্থন করতেন তবে এখন মনে হচ্ছে (চীনে) মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আশা ছিল চীন ধীরে ধীরে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’