“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়”…, হ্যাঁ, সত্যিই ভুলা যায় না। তাই তো সেই হারানো দিনের পুরানো সব স্মৃতি রোমন্থনে জড়ো হয়েছিল কানাডায় বসবাসরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডা ইনক কর্তৃক আয়োজিত ফ্যামিলি নাইট ২০১৯ অনুষ্ঠানে। বিগত ১৩ই অক্টোবর ২০১৯ টরন্টোস্থ কেনেডি কনভেনশন সেন্টারের বিশাল হল রুমে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সংগঠনের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই ধরণের অনুষ্ঠান। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমান কার্যকরী কমিটি এ বত্সরে সিটি ক্লিনিং, কানাডা ডে উদযাপন এবং শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযেগিতাসহ বেশ কিছু নতুন নতুন ইভেন্ট আয়োজন করে। ফ্যামিলি নাইট এদের মধ্যে অত্যন্ত সফল চমকপ্রদ একটা অনুষ্ঠান। বিকেল থেকেই দূরদূরান্ত থেকে সবাই জড়ো হতে থাকে অনুষ্ঠানস্থলে। সন্ধ্যার আগেই হলরুম কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। হাসি-গল্প-কুশলাদি বিনিময়- সব মিলিয়ে হলরুম হয়ে উঠে টরন্টোর বুকে আরেক চাকসু ক্যাফেটেরিয়া।
শুরুতেই সংগঠনের দূরদর্শী সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য আগত সমাবেশকে শরতের স্নিগ্ধ শুভ্র শুভেচ্ছা এবং যথাসময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে সংগঠনের অত্যন্ত একনিষ্ঠ কর্মী বিশিষ্ট সংগঠক বর্তমান সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার উপস্থিত সবাইকে অনুষ্ঠানে আসার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন এবং উপস্থাপকদের অনুষ্ঠান আরম্ভ করার অনুরোধ জানান। শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। এর পরপরই একে একে এক্সিকিউটিভ কমিটি এবং আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের মঞ্চে ডাকা হয়। এদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন চুয়াকের (cuaac) উপদেষ্টা কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকবৃন্দ। এদের মধ্যে ডঃ কাজী সদরুল হক, ডঃ শাহাদত্ হোসেন, ডঃ সুজিত দত্ত, ডঃ সাইফুল্লাহ চৌধুরী, ডঃ কাঞ্চন পুরোহিত, প্রফেসর সাব্বির চৌধুরী, প্রফেসর মনিরুল ইসলাম, ডঃ মনির উদ্দিন উল্লেখযোগ্য। রসায়ন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ডঃ মনির উদ্দিন এসেছেন সুদুর বাংলাদেশ থেকে, যা বর্তমান এবং প্রাক্তনের সম্মিলনের আরেক ভিন্ন অনুভূতি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং শিক্ষক ডঃ ইব্রাহিম খান এসেছেন সুদূর আলবার্টা থেকে শুধুই হৃদয়ের টানে!
সন্ধ্যা ৭টা, সবার টেবিলে এপিটাইজার দেয়া হয়েছে। আর এদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের শিল্পী শিখা রউফ মঞ্চে। “ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদেরই বসুন্ধরা”- এই মধুর দেশাত্ববোধক গান দিয়ে শুরু করেন শিল্পীর পরিবেশনা। পিন পতন নীরবতা। মুহূর্তের মধ্যে সবাই যেন নস্টালজিয়ায় ডুব দেন। প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী শিল্পীর পরিবেশনা সবার মন কেড়ে নেয়. শিল্পীকে গীটারে সঙ্গত এবং গান পরিবেশন করেন তারই সন্তান এই প্রজম্মের শিল্পী আজিম অপূর্ব। তবলায় সঙ্গত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সজীব।
রাত ৯টা। মঞ্চে ডাকা হয় সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার, সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টচার্য্য, অর্থ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বজিত্ পালকে। এই সময়ে সংগঠনের বহু দিনের প্রত্যাশা এলামনাইয়ের জন্যে একটা ওয়েবসাইট আর শুভ উদ্ভোধন করেন অর্থ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। ওয়েবসাইটটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে, পরিপূর্ণতা পেতে হয়ত আরো কিছদিন লাগতে পারে। ওয়েবসাইট www.cuaac.ca। এ পর্যায়ে উপস্থিত সমাবেশের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রতিভাবান একনিষ্ঠ কর্মী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টচার্য্য। তিনি উপস্থিতিকে সংগঠনের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা ও এ পর্যন্ত কি কি করা হয়েছে তা অবহিত করেন এবং সবাইকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্যে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সভাপতি বাহাউদ্দিন উপস্থিত সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানান এবং এই অনুষ্ঠানের সফলতার পেছনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সময় দিয়েছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রাইম স্পনসর রিয়ালটোর মনির ইসলাম, রাফ্যালের স্পন্সর মনজুর চৌধুরীকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মাসুম ভাইকে আর্থিক সহযোগিতার জন্যে কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দেন প্রফেসর সাব্বির চৌধুরীকে যিনি আন্তরিকতার টানে ঐ দিনেই বাংলাদেশ থেকে এসে সরাসরি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরিশেষে তিনি সবাইকে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব উপভোগ করার জন্য এবং ডিনারের অংশ নেয়ার অনুরোধ জানান।
রাত ৯টা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। মঞ্চে এসেছেন সা রে গা মা পা খ্যাত শিল্পী ঐন্দ্রিলা দাস। পাশাপাশি টেবিলে রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়। শিল্পীর অসাধারণ পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে। অনেককে গানের তালে তালে নাচতে দেখা যায়।
রাত ১০টা ডেজার্ট পরিবেশন করা হয়। রাত ১১.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সেই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডা ইনক এর খাতায় আরও একটা পরিচ্ছন্ন, মনোমুগদ্ধকর এবং জমকালো অনুষ্ঠান উপহারের মাইল ফলক সংযোজিত হল। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী সুধান রায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী বনানী মুন্সী। তাদের পরিচ্ছন্ন এবং সাবলীল উপস্থাপনা ছিল নজর কারার মত। পুরো অনুষ্ঠানের কারিগরী সহায়তায় ছিলেন সংগঠনের অত্যন্ত পরিশ্রমী কর্মী বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বজিত্ পাল।