অনলাইন ডেস্ক : যারা বেশি মাত্রায় অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার (আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড/ ইউপিএফ) খায় তাদের আয়ুষ্কাল ১০ শতাংশেরও বেশি কমে যেতে পারে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর প্রায় তিন দশক ধরে গবেষকদের চালানো সমীক্ষায় আঁতকে উঠার মতো এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

মেরিল্যান্ডের বেথেসডায় ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষক এবং গবেষণার প্রধান লেখক এরিকা লফটফিল্ড বলেছেন, প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুরুষদের জন্য ঝুঁকি সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এবং নারীদের জন্য ১৪ শতাংশ। তাদের খাদ্যতালিকার ১২৪টি খাবার নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ৯০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাদের অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের শীর্ষ রয়েছে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত পানীয়।

লফটফিল্ড বলেন, ‘ডায়েট সফট ড্রিংকগুলো আল্ট্রাপ্রসেসড ফুডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগ করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়টি ছিল চিনিযুক্ত কোমল পানীয়। এসব পানীয়গুলো খাদ্যতালিকায় সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। পরিমার্জিত শস্যদানা যেমন আল্ট্রাপ্রসেসড ব্রেড এবং বেকড খাবারগুলো জনপ্রিয়তায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।’

ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলোর পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক কার্লোস মন্টিরো এক ইমেল বার্তায় সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, ‘বিস্তৃত এবং দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউপিএফ বা আল্ট্রাপ্রসেসড ফুড গ্রহণকারীরা বিশেষ করে হৃদরোগ এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে মারা যায়।’ মন্টেইরো আল্ট্রাপ্রসেসড ফুড শব্দটি প্রথমবারের মতো তৈরি করেন।

শিকাগোতে আমেরিকান সোসাইটি ফর নিউট্রিশনের বার্ষিক সভায় স্থানীয় সময় রোববার (৩০ জুন) উপস্থাপিত হয় প্রাথমিক গবেষণাটি। ৫০ থেকে ৭১ বছর বয়সী প্রায় পাঁচ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন নাগরিক ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ-এএআরপি ডায়েট অ্যান্ড হেলথ স্ট্যাডিতে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের থেকে ১৯৯৫ সালে সংগৃহীত খাদ্যতালিকাসহ এ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা পরবর্তী ২০ থেকে ৩০ বছরে মৃত্যুর হারের সঙ্গে খাদ্যতালিকা সংগ্রহকারীদের তথ্য বিশ্লেষণ করেন।

সারাবিশ্বে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের (আল্ট্রা-প্রসেসড ফুডস/ইউপিএফ’স) দৌরাত্ম্যের কারণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এসব খাবারে চরম পর্যায়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় এগুলোর মোড়কে তামাকপণ্যের মতো সতর্কবার্তা জুড়ে দেয়া উচিত। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পুষ্টি বিজ্ঞানী কার্লোস মন্টিরো প্রথমবারের মতো এ সতর্কতার দাবি তুলেছেন।

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক চলতি সপ্তাহে স্থূলতা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরেন। আল্ট্রা-প্রসেসড ফুডস শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি চরমপর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে প্রমাণাদি তুলে ধরেন তিনি। বিশ্ব সম্মেলনের আগে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাতকারে মন্টেইরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অতিমাত্রায় ক্ষতিকর ইউপিএফ’স জাতীয় খাবারের দৌরাত্ম্য এবং আধিপত্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একাধিক দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এসব খাবার। সেই সঙ্গে এই খাবারগুলো স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য খাদ্য-সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে দিচ্ছে।’