অনলাইন ডেস্ক : হামা শহরের কাছে ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সিরিয়ায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখোশধারী সশস্ত্র কয়েক ব্যক্তি খ্রিষ্টান অধ্যুষিত সুকাইলাবিয়াহর প্রধান মোড়ে রাখা ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দিচ্ছে।

বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) জানিয়েছে, যারা আগুন দিয়েছে, তারা বিদেশি যোদ্ধা এবং তাদের আটক করা হয়েছে। যে গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটির জায়গায় নতুন আরেকটি গাছ দেওয়া হবে বলে জানায় তারা। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর হাজার হাজার মানুষ সিরিয়ার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দাবি করেন তারা।

বিবিসি জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কের বাব তোমাতে বিক্ষোভকারীরা সিরিয়ার পতাকা ও ক্রস নিয়ে রাস্তায় নামেন। ওই সময় তারা স্লোগান দেন, এই ক্রসের জন্য আমরা প্রাণ দেব।

জর্জ নামের এক ব্যক্তি এএফপিকে বলেন,‌ যদি আমরা আমাদের খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাস নিয়ে দেশে বাস না করতে পারি– আগে যেমনটা করতাম, তাহলে আমরা আর সিরীয় সমাজের অংশ নই। সিরিয়ায় বিভিন্ন বিশ্বাস ও ধর্মের মানুষ বাস করেন। যার মধ্যে আছে কুর্দি, আর্মেনীয়, আসেরীয়, খ্রিষ্টান, দ্রুজ, আলউইতে শিয়া মুসলিম এবং আরব সুন্নি মুসলিম।

চলতি মাসের শুরুতে এইচটিএস সিরিয়ার ক্ষমতা নেওয়ার পর দলটির নেতা আহমেদ আল-সারা জানান, নতুন দেশ সব মানুষের হবে। যেখানে সব ধর্মের মানুষ থাকবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো হামলা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এখন পর্যন্ত এমন কিছু দেখা না গেলেও বড়দিনের আগের দিন ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দেওয়ার পর দেশটিতে উত্তেজনা তৈরি হয়।

২০১১ সালে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু তাদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এর পর দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধের সময় কয়েক লাখ মানুষকে হত্যা করে সরকারি বাহিনী। যারা ওই সময় নিহত হয়েছিলেন, তাদের অনেকের মরদেহও পাননি স্বজনরা। তারা এখন দাবি জানাচ্ছেন, তাদের নিখোঁজ স্বজনকে খুঁজে বের করার জন্য যেন গণকবরগুলোতে সন্ধান চালানো হয়। তারা মূলত এসব হত্যার সত্য জানতে চান। সঙ্গে চান বিচার।

দীর্ঘ ১৩ বছরের ওই গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে পার্শ্ববর্তী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন অন্তত ৩০ লাখ সিরীয়। ৮ আগস্ট বাশার সরকারের পতনের পর গত ১৫ দিনে অন্তত ২৫ হাজার সিরীয় নিজ দেশে ফিরেছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, সামনে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে আরও অনেকে তাদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যাবে। সিরিয়ার এসব শরণার্থী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ও তাঁর সরকারের জন্য অন্যতম একটি বড় ইস্যু। তাই তারা চান দ্রুত যেন এসব মানুষ নিজ দেশে ফিরে যান। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সিরিয়ার নতুন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা।

বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-সারা জানিয়েছেন, সিরিয়ায় যত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আছে, তাদের নেতাদের সঙ্গে তিনি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, সশস্ত্র সব গোষ্ঠী বিলুপ্ত হবে এবং তাদের যোদ্ধারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসবে। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশটির অনেক মানুষ সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন।

এদিকে সিরিয়ায় দেইর ইজ্জোরে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় আইএসআইএসের দুই সদস্যকে হত্যা ও একজনতে আহত করার দাবি করেছে দেশটি। তারা বলেছে, গত শুক্রবার এ হামলা চালানো হয়।