অনলাইন ডেস্ক : কাজ হারানো অনেক মানুষই ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরছেন। তাই রাজধানীর অলিগলিতে এখন বাসায় বাসায় ঝুলছে ‘টু-লেট’। ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না অনেক বাড়ির মালিক। অন্যদিকে নিম্ন–মধ্য আয়ের লোকজন খুঁজছেন ছোট ফ্ল্যাট। কয়েক হাজার টাকা বাঁচাতে অনেকেই এই পথে হাঁটছেন। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রাজধানীতে ছোট ফ্ল্যাটের যে চাহিদা বেড়েছে তা জানিয়েছে অনলাইনে বাড়ি ও বাণিজ্যিক জায়গা ভাড়া এবং ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রির সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিপ্রপার্টি ডট কম। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা, তালিকাভুক্ত প্রপার্টি ও অনুসন্ধানের সংখ্যার ভিত্তিতে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের শেষদিকে লকডাউন জারি করা হয়। সেসময় বাড়ি ভাড়ার চাহিদা কমতে থাকে। লকডাউনের কারণে এপ্রিলে স্থবিরতা ছিল। মে মাস থেকেই চাহিদা বাড়তে থাকে। জুনেও তা অব্যাহত ছিল। বর্তমানে ভাড়া বাড়ি খোঁজা ও বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের হার চলতি বছরের শুরুর দিকের চেয়েও বেশি। তবে খরচ বাঁচাতে অধিকাংশ মানুষই সাশ্রয়ী ভাড়ার ছোট ফ্ল্যাট খুঁজছেন।
বিপ্রপার্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুযারি-মার্চ) বাড়ি ভাড়া নেওয়া ও প্রপার্টি তালিকাভুক্তির হার গত বছরের শেষ তিন মাসের চেয়ে বেশি ছিল। মার্চের শুরুর দিকে বেশিরভাগ মানুষই ১ হাজার থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের মধ্যে ২ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজছিলেন। যেসব বাড়ির ভাড়া ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে সেগুলোই বেশি খোঁজ করা হয় বলে জানায় বিপ্রপার্টি।
চলতি বছর রাজধানীর শ্যামপুর, খিলক্ষেত, মানিকনগর, কাফরুল, দক্ষিণ খান, আগারগাঁও, হাজারীবাগে তুলনামূলক কম ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে এলাকাগুলোতে বাড়ি ভাড়ার চাহিদা বাড়ছে। তবে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক এবং মোহাম্মদপুর পছন্দের শীর্ষে। এই তিন এলাকা চলতি বছর ভাড়া বাড়ির মোট চাহিদার প্রায় ৩৫ শতাংশ পূরণ করছে।
ঢাকার বাড্ডার একটি কারখানায় প্রশাসনিক পদে কাজ করতেন এ কে আজাদ। কুড়িলে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন। গত মাসে হঠাৎ করে তাঁর চাকরি চলে যায়। আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই নতুন করে চাকরি পাওয়ার আশা কম। তাই পরিবার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। তাতে বাসা ভাড়ার খরচ অন্তত বাঁচবে।
অবশ্য এমন নতুন বাস্তবতা যে আসন্ন তা গত দুই মাস ধরে আঁচ করা যাচ্ছিল। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেনী–পেশার ২ হাজার ৩৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্র্যাক গত মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ৬২ ভাগই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। করোনার কারণে ১০টি জেলার মানুষের আয় কমে গেছে। ঢাকার মানুষের আয় কমেছে ৬০ ভাগ।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠনে কাজ করেন শামীম আখন্দ। রামপুরায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। করোনার কারণে গত তিন মাস ধরে বেতন কম পাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, ১৫ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিতাম। তবে বর্তমানে যে বেতন পাচ্ছি তাতে সংসার চালানো মুশকিল। তাই ৮-১০ হাজার টাকার মধ্যে ছোট বাসা ভাড়া নিব। মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও এ ছাড়া আর উপায় নেই।