গত ৮ই মার্চ রবিবার রেডহট তন্দুরির হল রুমে কানাডা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী পরিবারের বিপুল উপস্থিতিতে সংগঠনের সহ সভাপতি তফাজ্জল আলীর সভাপতিত্বে ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালামের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে দোয়া পাঠান্তরে ১৫ই আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন অন্টারিও আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান। পরবর্তীতে মূল পর্বে দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্সের সা¤প্রতিক দলের গঠনতন্ত্র ও নিয়ম-শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত আমন্ত্রণপত্রে ১লা মার্চ তিনি যে জরুরি সভা আহবান করেছিলেন তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘দলের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, কার্যক্রম বেগবান করা, নেতা-কর্মীদের পুনরায় উজ্জীবিত করা এবং মুজিব বর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি ঘোষণা সহ নেত্রীর নির্দেশনার ঘোষণা হবে। কিন্তু জরুরী সভা গত ১লা মার্চ কর্মী সভা ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা হিসাবে অনুষ্ঠিত হল। কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সে সভায় সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স নিজেকে সভাপতি ও ইতরাদ জুবেরী সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে কানাডা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা দেন। দলের দীর্ঘ দিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদেরকে বাদ দিয়ে নিজস্ব বলয়ের গুটি কয়েক চামচাদের নিয়ে এই কমিটি ঘোষণা সম্পূর্ণভাবে দলীয় গঠনতন্ত্র ও নিয়ম-শৃঙ্খলা বিরোধী।
দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনার কথা প্রচার করলেও তিনি কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। দলের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলে দল কার্যকর এ অবস্থায় দলের সভাপতি/ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নির্দেশ ব্যতিরেকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২২(ক) ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাধারণ সম্পাদক সভা আহবান করতে পারেন না। উপরন্তু একটি কার্যকর কমিটি থাকা অবস্থায় নতুন কমিটি ঘোষণা করেন কি ভাবে? কর্মী সভা ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন কমিটির কর্মী ও বিতর্কিতদেরকে নিয়ে কমিটি ঘোষণা গঠনতন্ত্রের ৩৩ (খ) ধারা মোতাবেক (কার্যনির্বাহী সংসদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম নিশ্চিত করা হয়নি।) অবৈধ।
সভার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে, সঞ্চালক বললেন প্রিন্স সাহেব নেত্রীর সাথে আলাপ করে এসেছেন এবং নেত্রীর নির্দেশনা সকলকে অবহিত করবেন। প্রিন্স সাহেবের ভাষ্যনুযায়ী তিনি চারবার গণভবনের পাশ নিয়েও নেত্রীর সাক্ষাত পাননি। দলীয় সভানেত্রীর সাক্ষাত লাভ ও নির্দেশনা নিয়ে উভয়ের এই বক্তব্যে ‘থলের বিড়াল বের হয়ে আসায়’ পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজ সংশোধন করে থলের বিড়ালকে হত্যা করতেও উনারা কার্পণ্য করেননি। প্রিন্স সাহেবের দাবী তিনি নাকি ই-মেইলে নেত্রীর নির্দেশনা পেয়ছেন। এই ব্যাপারে তিনি অন্যদেরকে বলেছেন ‘মুজিববর্ষ’ পালনের বিষয়ে নেত্রীর নির্দেশনা চেয়ে তিনি ই-মেইল করেছেন। সেই ই-মেইলের বিপরীতে নেত্রীর প্রেরিত ই-মেইল উত্তর তিনি অনেককে দেখিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে জানা যায়, তথাকথিত সেই ই-মেইলে নেত্রীর নির্দেশ ছিল নাকি ‘মুজিববর্ষ’ পালনের কর্মকাণ্ড take over করতে। আর তিনি স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে take over করলেন কানাডা আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ দিন থেকে তিনি পদ বাণিজ্য ও কমিটি বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে করে যাচ্ছেন। যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং বিনষ্ট হচ্ছে দলীয় ঐক্য। মুজিববর্ষ পালন প্রাক্কালে যাহা সত্যিই কাম্য নহে। তাই এই প্রতিবাদ সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে আজিজুর রহমান প্রিন্সের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। কানাডায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সহ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী পরিবারের সকলের সুদৃঢ় ঐক্যে, দলীয় গঠনতন্ত্রের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্তও গৃহীথ হয়।
বক্তব্য রাখেন কানাডা আওয়ামী লীগের শেখ জসিম উদ্দীন, এমরুল ইসলাম, মুর্শেদ আহমেদ মুক্তা, মোঃ মুকবল হোসেন মঞ্জু, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আমিন মিয়া, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. হুমায়ুন কবির, অন্টারিও আওয়ামী লীগের মোস্তফা কামাল, মোঃ তুতিউর রহমান, এস এম সালাম, মাসুদ আলী লিটন, ফায়জুল করিম, নওশের আলী, এডভোকেট রাধিকা রঞ্জন চৌধুরী, গোলাম সারওয়ার, জগলুল হক, আব্দুল এস বি হামিদ, মহিউদ্দীন বিন্দু, হাসমত আরা চৌধুরী ও শাকিল খান। উপস্হিত ছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের নজরুল আহমেদ, মোঃ জহিরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, নিতাই ঘোষ, ঝুটন তরফদার, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোঃ এ হামিদ, তাপস পাল ও সুকোমল রায়। অন্টারিও আওয়ামী লীগের দেলওয়ার হোসেন দুলাল, মনির হোসেন, ফারহানা শান্তা, কান্তি মাহমুদ, খালেদ শামিম, আবু হেনা কোরাইশী, দেওয়ান মোঃ আব্দুল হক, আতোয়ার রহমান ও তাজুল ইসলাম। ছাত্রলীগের ওবায়দুর রহমান, শাকিল আহমেদ, সাবেক ছ্ত্রা নেতা আশিষ নন্দী, সংগীত শিল্পী সুমি বর্মণ ও স্বপ্না দাস। পরিশেষে সকলে মিলে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।