শাহনুর চৌধুরী : কানাডায় করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত একমাসে এই মহামারির নতুন ঢেউয়ে প্রায় ৪৫ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের অর্ধেকই আলবার্টার অধিবাসী। গত সপ্তাহের ফেডারেল নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের জন্য এখন প্রধান কাজ হচ্ছে করোনা মহামারির এই নতুন ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করা। গত এপ্রিল পর্যন্ত কানাডায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছিল নিম্নমুখী। অর্থাৎ তখন প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমে আসছিল। এতে পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসায় স্বাস্থ্যবিধিও শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু মধ্য জুলাই থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়। বর্তমানে কানাডায় প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ২০০ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হারও আগের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত বুধবার প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী এক মাসেরও কম সময়ে কানাডায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৯৬৫ জন। গত বছর এই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে গত এক বছরে কানাডায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজারেরও বেশি যাদের মধ্যে মারা গিয়েছে ৬৪৯ জন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারেরও কম আর মারা গিয়েছিল ১৭৬ জন।
২০২০ সালের মার্চে কানাডায় করোনার ১ম ঢেউয়ের আঘাতের সময় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল কুইবেকে। আর এবার ৪র্থ ঢেউয়ে আলবার্টায় আক্রান্তের হার বেশি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এই সংখ্যা এক মাস আগের সংখ্যার চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি। চলতি সপ্তাহে আলবার্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। মহামারি শুরুর পর সেখানে এক সপ্তাহে এত রোগী আগে কখনো হাসপাতাল ভর্তি হয়নি। গত একমাসে সেখানে ৩৩ হাজারেরও বেশি লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আলবার্টার পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকার সেনা ও রেডক্রস সদস্যদের মোতায়েনের কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেল পাবলিক সেইফটি মন্ত্রী বিল বেøয়ার। গত বৃহস্পতিবার তিনি একথা জানান। এদিকে সাচকাচুয়ানেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। গত সপ্তাহে সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মহামারী শুরুর পর থেকে এতদিন সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ৩২০ জন শনাক্তের রেকর্ড ছিল।
বর্তমানে সাসকাচুয়ানে করোনা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৭১৫ জন। নতুন আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড ও নিউ ব্রাঞ্চউইক অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবে আলবার্টা, কুইবেক ও সাসকাচুয়ানেই বর্তমানে আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। কানাডায় নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৩০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৫০ জনের অবস্থা জটিল আকার ধারণ করায় তাদেরকে আই সি ইউতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ১২ জানুয়ারি কানাডায় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯০৫ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, যাদের ১ হাজার ৪৬৯ জন ছিলেন আই সি ইউতে। চলতি সপ্তাহে আলবার্টায় আই সি ইউতে রোগী ভর্তির সংখ্যা ১৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাদেশিক স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এই হার বাড়তে থাকলে আই সি ইউ সংকট দেখা দিতে পারে।
হেলথ কানাডার হিসাব মতে বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন করোনায় মারা যাচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই আন-ভ্যাকসিনেটেড। করোনায় মৃত্যু সর্বোচ্চ হার ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। সে সময় প্রতিদিন গড়ে ১৭৫ জন মারা গিয়েছেন। হেলথ কানাডা জানিয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে টিকা নেয়া রোগীর চাইতে টিকা না নেয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০% বেশি। এছাড়া আক্রান্তদের বেশিরভাগই তরুণ, যাদের বয়স ১৭ থেকে ৪০ এর মধ্যে। সূত্র : রেডিও কানাডা