খুরশীদ শাম্মী
অক্টোবর ২১, ২০১৯ সোমবার কানাডার ফেডারেল নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারণা চলছে প্রবল বেগে। কিন্তু বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে কোনো মিছিল যেতে দেখি না। এমন কি শুনি না “আমার ভাই, তোমার ভাই, ক খ ভাই; ক খ ভাই।” কিংবা “ক খ ভাইয়ের মার্কা কী? গরু ছাড়া আবার কি!” কিংবা “গরু মার্কায় ভোট দিন। ক খ ভাইকে সেবা করার সুযোগ দিন।” ইত্যাদি ইত্যাদি স্লোগান।
হ্যাঁ, এখানে নির্বাচনী প্রচারণায় রাস্তায় মিছিল, স্লোগান হয় না; দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারও থাকে না। দলগুলোকে সনাক্ত করণে কোনো মার্কা থাকে না। তবে দলগুলোর জন্য নির্ধারিত রঙ আছে। যেমন লাল রঙ লিবারেল পার্টির, নীল রং কনজারভেটিভ পার্টির, কমলা রং এনডিপি পর্টির, ইত্যাদি এবং দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারের পরিবর্তে বাড়ির সামনের সবুজ লনে লন সাইনবোর্ড গেঁথে রাখা হয়। নির্বাচনী অফিসগুলোতে থাকে দলনেতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের যাতায়াত। ব্যক্তিগতভাবে তারা নিজ নিজ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করেন। তারপরও গণসমাবেশগুলো থাকে তাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়াও, টেলিফোনে তাদের প্রচারণা চলে অহরহ। টেলিভিশন ও রেডিওতেও তাদের বিজ্ঞাপন থাকে।
কানাডা আমাদের অনেকেরই নতুন আর একটা দেশ। ভাষার দিক দিয়েও আমরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে। সুতরাং মনে হতে পারে, আমার মতো একজন নাগরিকের ভোট কানাডার রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আপাতদৃষ্টিতে এমন মনে হলেও, বাস্তবিকপক্ষে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভোট দেয়া। কেননা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীগণ মূলত নাগরিকদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করে থাকেন। সুতরাং নাগরিক হিসেবে আমাদেরই নির্ধারণ করতে হবে আমাদের প্রতিনিধি, সেজন্য ভোট দেয়ার বিকল্প কিছু হতে পারে না।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে? কখন? কীভাবে ভোট দেবো?
হ্যাঁ। অক্টোবর ২১, ২০১৯ নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও ভোটারদের সুবিধার্থে ২১ অক্টোবরের পূর্বে অগ্রিম ভোট দেয়ার জন্য দিন নির্ধারিত হয়েছে অক্টোবরের ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখ। ১৮ বছরের অধিক প্রত্যেক কানাডিয়ান নাগরিকের ভোটার ইনফরমেশন কার্ডে ভোটের তারিখ, সময়সীমা ও স্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, যেন ভোট দিতে কারো কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়।
এরপর প্রশ্ন আসে, ভোটার কার্ড কোথায় পাবো?
সাধারণত, বাড়ির ঠিকানায় ইলেকশন কানাডা নাম, ঠিকানাসহ ভোটার ইনফরমেশন কার্ড পাঠিয়ে দেয়। ঠিকানা পরিবর্তন হলে কারো কারো নতুন ঠিকানায় কার্ড না এসে পুরানা ঠিকানায় চলে যায়। সেসব ক্ষেত্রে, অনলাইনে ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে হয়, কিংবা সহজ উপায় হচ্ছে কাছাকাছি যেকোনো দলের নির্বাচনী অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
সর্বশেষে প্রশ্ন আসে, কা’কে ভোট দেবো? কে অধিকাংশ জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সবার নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংসদে উত্তোলন করবেন এবং প্রয়োজনে লড়াই করবেন?
সঠিক নেতা নির্বাচন করতে অবশ্যই সকল দলের মূল উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও দলনেতাদের প্রতিশ্রæতি জানা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে, দলনেতাদের নির্বাচনী প্রচারণা ও বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত বিতর্কগুলো দেখা গুরুত্বপূর্ণ। অক্টোবর ৭, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭টায় ঈঞঠ সহ টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল বিভিন্ন দলের দলনেতাদের বিতর্ক সরাসরি প্রচার করবে। ৭ তারিখের বিতর্ক আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ায় কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও দলগুলোর অতীতের রাষ্ট্র শাসনকাল, শাসনের অভিজ্ঞতা, কীর্তিকলাপ, দলনেতাদের যোগ্যতা ও গ্রহনযোগ্যতা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। তবে, হ্যাঁ, আমরা যেন আবেগের বশবর্তী না হই, বরং যোগ্য প্রার্থী ও দলকে ভোট দেই। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা নিজেদের জন্মভূমি রেখে নতুন দেশে বসত গড়েছি, এটাও এখন আমাদের দেশ। আমাদের সন্তানরা যেন তাদের ভবিষ্যত্ গড়তে পারে এখানে। তাদের যেন নিরপত্তার নিশ্চয়তায় আমাদের মতো দেশ ছাড়তে না হয়, বর্ণ বিদ্বেষের শিকার যেন তারা না হতে হয়। আসুন নির্বাচনে অংশ নেই। কানাডার জন্য যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেই। খুরশীদ শাম্মী