হাসান আমিন : তীব্র দাবানলের কবলে পড়েছে কানাডা। দাবানলের কারণে ব্যাপক বায়ু দূষণের কবলে পড়েছে দেশটির কয়েকটি প্রদেশ। এমনকি কানাডার দাবানলের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও। নিউইয়র্কসহ দেশটির পূর্ব উপক‚ল রেকর্ড পরিমাণ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গত ৭ জুন, বুধবার বায়ুদূষণ নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দাবানলের কারণে হাজার হাজার কানাডীয় নাগরিক বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। টানা তৃতীয় দিনের জন্য টরন্টোর বাতাসে উচ্চ মাত্রার দূষণের জন্য একটি বিশেষ আবহাওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এ দিকে কুইবেকের অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দেশ ও বিদেশ থেকে সহযোগিতা আসতে শুরু করায় নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করছেন। প্রদেশটির বন দমকল সংস্থা বলেছে, বৃহস্পতিবার নিউ ব্রন্সউইক থেকে ৫৪ জন দমকলকর্মী আসছেন, আরও ১১৯ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং ১০৯ জন ফ্রান্স থেকে এসেছেন। নোভা স্কটিয়াও চারটি ওয়াটার বোমারু বিমান পাঠিয়েছে।
কুইবেক প্রদেশে দেড় শতাধিক স্থানে এখনও আগুন জ্বলছে। পাশাপাশি দাবানলের ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে টরেন্টো, অন্টারিও ও কুইবেকের বিভিন্ন এলাকা।
এরই মধ্যে দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া চলে গেছে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও। এমনকি দাবানলের এই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক সিটি এবং কানেকটিকাটেও। সেখানকার বাতাসকে অস্বাস্থ্যকর বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ পশ্চিমের শিকাগো ও দক্ষিণের আটলান্টা পর্যন্ত ১০ কোটির বেশি মানুষ বায়ু দূষণ নিয়ে জারি করার সতর্কতার আওতায় পড়েছে।
গত বুধবার নিউইয়র্কে রেকর্ড পরিমাণ ঘন হলুদাভ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মেয়র এরিক অ্যাডামস নগরবাসীকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধোঁয়ার কারণে বিমান ওঠা–নামায় দেরি হচ্ছে। আগে থেকে নির্ধারণ করা বিভিন্ন খেলার ম্যাচ ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়।
গত শতকের ৬০ এর দশকের পর নগরবাসী সবচেয়ে দূষিত বায়ুর মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার আসউইন ভাসান। আর নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘জরুরি অবস্থা’ অভিহিত করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি গরম, শুষ্ক আবহাওয়া ও দাবানলের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কানাডায় ভয়াবহ এ দাবানলের কারণে ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়ি ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। প্রায় ৩৮ লাখ একর জমি দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুইবেক প্রদেশের বাসিন্দা রয়েছেন ১১ হাজার। স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবারের মধ্যে আরও চার হাজার মানুষের বাড়িঘর ছাড়ার কথা।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, কানাডা এর আগে এত ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটে জানিয়েছেন, কানাডায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে তার দেশের ফায়ার সার্ভিসের ছয় শতাধিক কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
শুধু এ বছরই ১৮০০ এর বেশি দাবানলে পুড়েছে কানাডার বনাঞ্চল। দেশটির ‘ন্যাশনাল ওয়াইল্ডল্যান্ড ফায়ার সিচুয়েশন’-এর রিপোর্ট বলছে, বছরের প্রথম ৫ মাসেই পুড়ে ছাই হয়েছে ৯৪ লাখ একর বন। বর্তমানে দেশটিতে শত শত দাবানল চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ৪৩২টিকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ বলে চিহ্নিত করেছে কানাডা।
এক্সিওসের রিপোর্টে বলা হয়, ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে কানাডার দাবানল পরিস্থিতি। এরমধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা কুইবেক প্রদেশের। সেখানে মোট ১৩৭টি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বৃটিশ কলাম্বিয়ায় ৮৩টি, আলবার্টায় ৬৪টি, ওন্টারিওতে ৩১টি এবং নর্দার্ন টেরিটোরিজে ২১টি দাবানল চলমান রয়েছে। সূত্র ঃ সিবিসি নিউজ ও এএফপি