আহসান রাজীব বুলবুল : বাঙালি জাতিসত্তার প্রকৃত পরিচয় ও বাঙালিয়ানাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ধরে রাখতে এবং আবহমান বাংলার কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সেতুবন্ধ তৈরি করতে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করলো কানাডার ক্যালগেরির প্রবাসী বাঙালিরা।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শনিবার সন্ধ্যায় ক্যালগেরির ফলকনরিজ কমিউনিটি সেন্টারে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করা হয় ‘নজরুল সংগীত সন্ধ্যা’। এর মধ্যদিয়ে স্মরণ করা হয় সাম্য, বিদ্রোহ ও ভালোবাসার বাংলাদেশের জাতীয় কবিকে।

প্রবাসীদের এই আনন্দঘন মুহূর্তকে স্মরণীয় করতে নজরুল সন্ধ্যায় যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত ‘বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা’র সাধারণ সম্পাদক এবং ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়াতনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সংগীতশিল্পী খাইরুল আনাম শাকিল।

বরফাচ্ছন্ন কানাডায় বছরের এই সময়টাতে প্রকৃতি ভিন্ন অবয়বে নতুন চেহারায় জেগে উঠলেও প্রকৃতিতে বিরাজ করে চাঞ্চল্য আর অস্থিরতার আমেজ। চারদিকে গাছগাছালিতে নতুন রূপ। এমনি এক পরিবেশে শিল্পী শাকিল নজরুলকে ধরলেন কণ্ঠে, ক্যালগেরির ফলকনরিজ কমিউনিটি সেন্টার নেচে উঠলো তার কণ্ঠে। সুর ও বাণীর মালা দিয়ে বাঁধলেন শ্রোতা ও দর্শকদের।

বহু সম্প্রদায়ের দেশ কানাডায় দিনটি গতানুগতিক মনে হলেও প্রবাসী বাঙালিদের কাছে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। আবেগ-অনুভূতি-উচ্ছ্বাসে ভরা মাধুর্যমণ্ডিত এক সন্ধ্যা, যেন নিজেকে নজরুলের ভালোবাসায় সমর্পিত ও উদ্ভাসিত করা।

কর্মময় একঘেঁয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙালিরা সুর ও বাণীর মালায় একে অপরকে ছুঁয়েছিলেন। প্রবাসের মাটিতে ‘আবার ভালোবাসার সাধ জাগে’, ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনু গো আঁখি খোলো’, ‘আসলো যখন ফুলের ফাগুন গুলবাগে ফুল চায় বিদায়’- এসব গানের সুরে খুঁজে ফিরে সেই দিনগুলিকে।

najrul-canadaসংগীতপ্রেমী নারী-পুরুষের পদচারণায় হৃদয়-মন ভরে উঠেছিল অন্যরকম এক ভালোবাসার মিলনমেলায়। ‘নজরুল সন্ধ্যা’ প্রবাসীদের মাঝে মাতৃভূমি ও বাঙালির সংস্কৃতি চর্চার ধারাকে আরো সমৃদ্ধ করবে- এমন আশা আয়োজকদের।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ইকবাল রহমান বলেন, ২৪ মে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে ক্যালগেরিতে ভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমরা নজরুলকে তুলে ধরেছি, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং প্রবাসীদের মাঝে নজরুলের চেতনাকে জাগ্রত করবে।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক খয়ের খোন্দকার রবেল বলেন, খুব ভালো লাগছে প্রবাসে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এ রকম একটা আয়োজন করতে পেরে। প্রিয় শিল্পী খাইরুল আনাম শাকিলের সুর ও বাণীর মালায় আমরা মুগ্ধ। প্রবাসে ভিন্ন এ আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির বলয় আরো সুদীর্ঘ করবে, এমনটাই আমার বিশ্বাস।

সংগীতশিল্পী সোহাগ হাসান বলেন, প্রবাসে এ ধরনের আয়োজনে আমরা সত্যিই অভিভূত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অনবদ্য সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দাস শুভ্র বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সৃষ্টির মধ্যদিয়ে শুধু প্রবাসে নয়, সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে জাগ্রত থাকবেন। তার জন্মদিনে আমাদের অভিনন্দন ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী খাইরুল আনাম শাকিল জানালেন, প্রবাসে নজরুল সঙ্গীত সন্ধ্যার এই আয়োজনে প্রবাসীদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখে আমি অভিভূত। ক্যালগেরির প্রবাসী বাঙালিদের দেশপ্রেম ও সংস্কৃতির প্রতি যে ভালোবাসা তা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। আশা করি ভবিষ্যতেও এই চর্চা অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে নজরুলের রচনা, সৃষ্টি ভালো অনুবাদের মাধ্যমে তুলে দিতে হবে।