অনলাইন ডেস্কম : করোনা পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আয় ও ব্যয় দুটোই কমেছে। বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের আয়ের প্রধান উত্স হচ্ছে নেতাকর্মীদের দেওয়া নিয়মিত চাঁদা এবং সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেওয়া ডোনেশন। আবার বাম ঘরানার কোনও কোনও দল সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গণচাঁদাও তুলে থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে মানুষের উপার্জন কমে গেছে। দেখা দিয়েছে বেকারত্ব। ফলে এ খাত থেকে দলগুলোর আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো বন্ধ থাকায় নির্বাচন কেন্দ্রিক দলগুলোর মনোনয়ন ফরম বিক্রিও বন্ধ রয়েছে। তবে অর্থনৈতিভাবে সমৃদ্ধ দলগুলো ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা এবং নিজস্ব সম্পদের জোরে করোনা পরিস্থিতিতেও সচল রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, দলের কাউন্সিল, বিভিন্ন দিবসভিত্তিক আলোচনা সভা, রাজনৈতিক কর্মসূচি—মিটিং, মিছিল ও জনসভায় ব্যয়ভার বহন করা হয় দলীয় ফান্ড থেকে। কিন্তু করোনার কারণে এসব স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ফলে এ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যয়ও কমে গেছে।
দফতরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের দলের আয়ের মূল উত্স হচ্ছে নেতাকর্মীদের চাঁদা। এখন করোনার কারণে সেটাতে ভাটা পড়েছে। অর্থাৎ আয় কিছুটা কমেছে। এছাড়া নির্বাচন এলে কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়নপত্র বিক্রির অর্থও দলের ফান্ডে জমা হয়। কিন্তু করোনার কারণে আগামী ১৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। ফলে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হচ্ছে না।’
বিএনপির আয়ের পাশাপাশি খরচও কমেছে বলে উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘কারণ, দলের কার্যক্রম তো নেই। অর্থাৎ পার্টির যে বিভিন্ন কর্মসূচি, যেমন—আলোচনা সভা, মিটিং, সমাবেশ সেগুলো তো এখন হচ্ছে না। ফলে পার্টির ব্যয়ও কম হচ্ছে। আর অফিসের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় পার্টির ফান্ড থেকে।’
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমাদের দলের একমাত্র উত্স নেতাকর্মীদের মাসিক চাঁদা। আমরা কোনও অনুদান পাই না। কিন্তু করোনার কারণে মাসিক চাঁদাও আদায় হয়নি। কারণ, এ সময়ে তাদের (নেতাকর্মীদের) আয়ও নেই।’
সিপিবির অর্থের উত্স তিনটি বলে উল্লেখ করে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘একটি হচ্ছে— দলের সামর্থ্যবান নেতাকর্মীরা প্রতিমাসে তাদের আয়ের একটা অংশ দলের ফান্ডে জমা দেন। কিন্তু করোনার কারণে নেতাকর্মীদের আয় কমে যাওয়ায় তারা অর্থ দিতে পারছেন না। দ্বিতীয় হচ্ছে—আমাদের নির্ধারিত কিছু সমর্থক আছেন, তারা নিয়মিত অর্থ দেন। তারাও এখন সেটা দিতে পারছেন না। তৃতীয়ত, আমাদের অর্থের বড় উৎস হচ্ছে গণচাঁদা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের কাছে গিয়ে সেটা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দলের সম্পত্তি (দোকানপাট) থেকে ভাড়া এলেও সেখানেও করোনার প্রভাব পড়েছে।’
‘করোনার কারণে দলের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় খরচও কমেছে’ উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, ‘তবে পার্টি অফিসের রক্ষণাবেক্ষণে অনেক বেশি খরচ বেড়ে গেছে। যদিও সেটা পার্টির অন্যান্য খরচ কিছুটা কমিয়ে চালানো হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির সহ-দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান বলেন, ‘করোনায় দলের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে আছে। নেতাকর্মীদের নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে না। কারণ, করোনার কারণে দলের কেউ অফিসে আসেন না। আবার যারা চাঁদ দেবেন তারাও অফিসে আসেন না। তাই এই মুহূর্তে দলের কোনও আয় নেই। আর পার্টি অফিসে এখন স্টাফদের বেতন ছাড়া কোনও খরচও নেই।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কোনও দল স্বীকার না করলেও আমাদের দলের আয়ের একমাত্র উত্স হচ্ছে শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেওয়া অর্থ। বর্তমানে করোনায় সেটা বন্ধ আছে। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাসিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার যে চাঁদা, সেটা মোটামুটি আদায় হচ্ছে। জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যে ৫-১০ টাকা চাঁদা, সেটা কেউ দিচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্টির আয় যেমন কমেছে, তেমনি বর্তমান পরিস্থিতিতে খরচ নেই। কারণ, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম তো স্থগিত রয়েছে।’
আয় কমলেও বেড়েছে অনুদান
রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, করোনায় দলের স্বাভাবিক আয় কমলেও প্রচুর পরিমাণে অনুদান পাওয়া যাচ্ছে। করোনায় ‘ত্রাণ তহবিলে’ ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠন অনুদান দিয়েছে। এসব অর্থ দিয়ে অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও ব্যক্তিপর্যায়ে এবং হাসপাতালগুলোতে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
ইসলামি আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘করোনায় দলের সামর্থ্যবান শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রচুর অনুদান দিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে এর পরিমাণ কত সেটা হিসাবে করা হয়নি। সারা দেশে ত্রাণ সহায়তা এবং বিভিন্ন হাসপাতালে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।’
করোনায় জাসদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনুদান দিয়েছেন উল্লেখ করে দলটির দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘তারা ভালো পরিমাণে অর্থ সহায়তা করেছেন। যারা নিজেরা ত্রাণ বিতরণ করেননি, সেসব শুভাকাঙ্ক্ষী দলের ত্রাণ বিতরণে অর্থ দিয়েছেন। সেটা শুধু কেন্দ্র নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দলের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনুদান দিয়েছেন।’
সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘করোনায় ত্রাণ কার্যক্রমে শুভাকাঙ্ক্ষী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছ থেকে অনুদান পাওয়া গেছে। মূল দলের পাশাপাশি আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর কাছে সেই অনুদান এসেছে। সে কারণে এর সঠিক হিসাব এখনই বলা যাবে না।’