অনলাইন ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যেও প্রবাসীরা ব্যাপকহারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশে ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস শেষে দেশে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমকি ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। একক মাস হিসেবে যা দেশের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে চলতি বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। ঐ মাসে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এসেছিল। তার আগের মাস জুনে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে), যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৭ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এদিকে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা কাটাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৫ লাখ টাকা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। যা আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।

রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়াকে নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশের কাছে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আছে তা দিয়ে আট মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। গত তিন মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে তার এক-তৃতীয়াংশই এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। রেমিট্যান্স বাড়া বিষয়ে এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে হুন্ডি একেবারেই কমে গিয়েছে। ফলে বৈধ চ্যানেলে টাকা এসেছে। রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনাও অন্যতম একটি কারণ বলে জানান তিনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানির মতো রেমিট্যান্সেও পতন হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে সেটা ঘটেনি; যা অর্থনীরি জন্য ভালো ফল বয়ে এনেছে। তবে বাস্তবতা আরো কঠিন হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।