অনলাইন ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারিতে যখন সব কিছুতে স্থবিরতা ঠিক তখন পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রবাসীদের পাসপোর্ট সরবরাহ সচল রাখার প্রয়াসে।
মেজর জেনারেল আইয়ূব আলী সম্প্রতি পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। যোগ দেয়ার পর থেকেই তিনি তড়িৎ গতিতে জনগণের হাতে পাসপোর্ট পৌছে দেয়ার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
করোনাকালে প্রায় দুই লাখ ১৪ হাজার পাসপোর্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হস্তান্তর করেন। দুই বছর আটকে থাকা স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট দ্রুত তিনি প্রিন্টে পাঠান।
পাসপোর্ট সরবরাহের গতি সচল রাখতে গিয়ে শুধুমাত্র প্রিন্ট সেকশনে ৩৪ জন করোনা পজিটিভ হন এবং সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে পাসপোর্ট সেবা দিতে গিয়ে আরও ১৬ জন আক্রান্ত হন। সর্বমোট ৫০ জন সদস্য আক্রান্ত হন এ ভয়ানক ভাইরাসে।
কিন্তু তারপরও থেমে নেই অধিদফতরের তড়িৎ গতিতে পাসপোর্ট সরবরাহের কাজ। ৪ সদস্যের গঠিত টিম প্রতিনিয়ত খবর রাখছেন পাসপোর্ট অধিদফতরের আক্রান্ত ৫০ জনের।
ডিজি বলেন, ‘দেয়ার পূর্বেই আমরা পাসপোর্ট সরবরাহের চেষ্টা করছি, করোনাকালীন আমরা প্রবাসীদের পাসপোর্ট সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি। ৫০ জন কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই করোনা পজিটিভ হয়েছেন জনগণের সেবা সুনিশ্চিতে করতে গিয়ে। আমি প্রত্যেকের সুস্থতা কামনা করছি। প্রবাসীদের পাসপোর্ট সঠিক সময়ে যেন হাতে যায় সেজন্য দূতাবাস এবং প্রবাসীরা আমাদের সহযোগিতা করবে সেই প্রত্যাশা’।
প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক বলেন, প্রিন্ট সেক্টরের ৩৪ জন করোনা পজিটিভ হওয়ায় কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি কিন্তু বর্তমানে দ্রুত জনগণ তাদের পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন। করোনার ভয়াবহ সময়ের মাঝে আমরা দৈনিক অফিস করেছি জীবন ঝুঁকি নিয়ে শুধুমাত্র মানুষ যেন ভোগান্তির স্বীকার না হন সেজন্যই।
অনেকের অভিযোগ টাকা ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া যায় না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি অবসানের লক্ষ্যে বদলি করেছি অনেক অফিসারকে। প্রবাসীদের পাসপোর্টের জন্য যদি কেউ টাকা দাবি করে সেক্ষেত্রে দালালের পরিচয় এবং বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদফতরের কোনো অফিসার জড়িত; এটা প্রমাণ দিলে আমরা তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
দীর্ঘদিন আটকে থাকা স্পেন প্রবাসী বলেন, আমরা প্রবাসেও প্রবাসী, বাংলাদেশেও প্রবাসী। আমাদের মূল্যায়ন কোথাও নেই তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়ার ফলসূতিতে প্রবাসীরা সরকারের প্রতি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। বিমানবন্দরে ল্যাগেজ চুরি রোধ, ইমিগ্রেশনে হয়রানি বন্ধ এবং প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন কিস্তিতে ব্যাংক লোন এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের সুযোগ রাখায় প্রবাসীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে ব্যাপক উৎসাহী।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের আগুনে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা অর্থ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কিছু দুষ্টু চরিত্রের মানুষের কারণে সরকারের সব অর্জন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রায় ২ বছর ধরে পাসপোর্টের জন্য ঘুরছি। দূতাবাস আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আমার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দেয়ার জন্য। পরবর্তীতে স্পেনে যে কোনো মন্ত্রী আসলেই আমি সুপারিশ করতাম, তারাও আশ্বাস দিতেন সমাধানের।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত বছর যখন মাদ্রিদে আসেন তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হোটেল কক্ষে প্রবেশ করি এবং তার কাছে বিষয়টি খুলে বলি তখন তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীবান্ধব সরকার, তিনি প্রবাসীদের ভালোবাসেন, প্রবাসীদের সবসময় খোঁজ খবর রাখেন। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। সকলে পাসপোর্ট পাবেন, এটা আপনাদের অধিকার।
‘মন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন পাসপোর্টের ডিজির সঙ্গে কথা বলেন এবং আমার বাড়িতে পুলিশ ভেরিফিকেশন যায়। পুলিশ ভেরিফাইড হওয়ার পরও পাসপোর্ট যখন আসলো না তখন কিছুটা চিন্তায় পড়ে যাই। পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আবার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠাই এবং তার সঙ্গে কথা বলি।’
‘সর্বশেষ একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত পাসপোর্ট জটিলতায় ভুগছে স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নিউজটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আসলে পরদিনই তিনি পাসপোর্ট অধিদফতরে চিঠি দেন এবং ৩ দিন পরই আমার পাসপোর্ট প্রিন্টে চলে আসে।’