বনানী বাবলি : সবুজ : হ্যালো? সুপ্রভাত … ফোন দিয়ে পাওয়া যায় না তোমায় ছুটির দিনে …
অন্বেষা : শুভরাত্রি … ইশ… ঘরে বাইরে আমার হাজারটা কাজ… হলো কী তোমার আজ? ডাকাত এলো না কি ঘরে?
সবুজ : তোমার শুধু অজুহাত …
অন্বেষা : অজুহাত? ব্যস্ততা, বন্ধু ব্যস্ততা… ভাষার মাস গেলো … তুমি করলে কী গত মাসে?
সবুজ : ওয়াজ শুনলাম ইউটিউবে। এই ইউটিউব এখন ওদের দখলে …
অন্বেষা : এটা নুতন কোনো খবর নয় … বুদ্ধিজীবীরা ধর্ম নিয়ে কথা বলে না বলেই ধর্ম চলে গেছে এখন মৌলবাদী আর রাজনীতিবিদদের হাতে …

সবুজ : বাংলার মানুষ ইতিহাস ভুলে যায়। ২৫ শে জানুয়ারি (১৯৭৫) তারিখে বঙ্গবন্ধু সংসদে চতুর্থ সংশোধন বিল উত্থাপনের সময় বলেছিলেন, “সা¤প্রদায়িকতার বীজ বাংলার মাটিতে কোনোদিন আসতে পারবে না।”
অন্বেষা : হুমম …
সবুজ : তারপর তিনি ব্যাঙ্গ করে সংসদে সেই দিন বলেন, “বাংলাদেশকে ভালোবাসো না, বাংলার মাটিকে ভালোবাসবো না, বাংলা ভাষা কে ভালোবাসবো না, বাংলার কালচারকে ভালোবাসবো না, তা মানবো না। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম কিন্তু তাদের অনেকে এখন গোপনে বিদেশীদের কাছ থেকে পয়সা এনে বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। ….. আসুন দেশ গড়ি, আসুন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাই, আসুন আমরা দেশের মানুষের দুঃখ দূর করি। তা না করতে পারলে ইতিহাস আমাদের মুখে কলঙ্ক লেপন করবে।”
অন্বেষা : যথার্থ বলেছেন … দেখো কবেকার কথা…

সবুজ : এখন সেই যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যাগুলি আরো প্রকট আকারে সমাজে বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন ঘরের শত্রু কারা। মন প্রাণ দিয়ে চেয়েছিলেন দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাকারবারীদের উৎখাত করতে। মৌলবাদী, সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ আর সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবীরা শেষ করে দিলো দেশটাকে … সমাজে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য সরকারি আমলাদের লেজুড়বৃত্তি করে এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা … ধ্বংস কী, একটা ধস নেমে গেলো দেশে … শওকত ওসমান, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফার মতো নিরপেক্ষ সমালোচনা করার মতো মানুষ কোথায় বলো?
অন্বেষা : ঘর শত্রু বিভীষণ… শুধু কী তাই? এখন অফিস আদালতে শিক্ষিত লোকরাই উৎকোচ নিচ্ছে নির্ভয়ে … মনে আছে? ১৯৭২ সালে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার সংকল্পে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষকেরা করে না, বাংলার মজদুর করে না, করি আমরা শিক্ষিত সমাজ।”
সবুজ : দেশের কাঠামোগত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু মানুষের নৈতিকতার অধঃপতন হচ্ছে… এখন শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই করাপশন করছে … গত বছর আমি এক আত্মীয়কে দেখতে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সামনে থেকে দুইটা ডাব কিনে নিয়েছিলাম রোগীর জন্য। তুমি জানো সেই ডাবের পানি যখন গ্লাসে নেয়া হলো দেখলাম ময়লা নর্দমার পানি। কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার …

অন্বেষা : আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এসব দেখে এবং খেয়ে… তুমি দেশের বাইরে থাকো তাই তোমার কাছে এগুলি অস্বাভাবিক লাগছে…
সবুজ : তারপর সেই দিন খবরে দেখলাম ফিরোজ ভূঁইয়া নামে এক বাবার লাশ দাফনের ব্যবস্থা হয় নাই এবং তখন দুই ভাই সম্পত্তির ভাগ নিয়ে বাকযুদ্ধে ব্যস্ত ছিলো। পরে প্রতিবেশীরা সেই লাশ দাফন করে। মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ শেষ হয়ে গেছে … এই দেশের পরিণতি কী?
অন্বেষা : দেখো… এতো উদাহরণ দিও না … কী আর হবে … আমি শুধু বাট্রান্ড রাসেলের একটা উক্তি বলতে পারি …. “সাইক্লোন ও দুর্ভিক্ষকবলিত আর্তমানবতাকে সযতœ সহযোগিতায় অনায়াসে রক্ষা করা যায় কিন্তু মূল্যবোধের অবক্ষয়ে জাতিকে রক্ষা করা দুরূহ ও দুর্বিষহ ব্যাপার।”

সবুজ : কী বলবো বলো … তাছাড়া দেখো… পাকিস্তানের ভুত যে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে আছে … পাকিস্তানের যুদ্ধ অপরাধের জন্য আজ পর্যন্ত ক্ষমা চায় নাই বাংলাদেশের কাছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেলো এবং আমরাও দেশবাসি আছি নির্বিকার …
অন্বেষা : কী বলো এসব? কিসের ক্ষমা? আমরা ভাই ভাই… আমাদের আগে এবং পরে আর কয়টা প্রজন্ম মরে যাওয়ার শুধু অপেক্ষা … এর পর নুতন জেনারেশন মুক্তিযুদ্ধ কি জানবে? আমাদের দেশ এখন উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত … এইসব শোনার লোক কোথায় বলো …
সবুজ : মনটা দুঃখে ভরে যায়…
অন্বেষা : যাই হোক এই দেশ নিয়ে এতো ভেবো না … বাদ দাও এসব কথা… দিনপঞ্জির নিয়মে ৭ই মার্চ আসবে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ই মার্চ পালন করা হবে, ২৬ শে মার্চ আসবে … কিন্তু… ভেবে কিছুই করা যাবে না … কিছু ভালো মানুষ এখনো দেশে আছে বলেই ভারসাম্যতা এখনো টিকে আছে।

সবুজ : দেখো গণসচেনতা তো বাড়ানো দরকার… সেই পঞ্চাশ বছর আগের বঙ্গবন্ধুর সুন্দর আদর্শ নীতি এখনো পর্যন্ত প্রযোজ্য… কিন্তু আমরা তাঁর আদর্শের ধারে কাছেও নেই … চিন্তাশীল ভাবনা, বিবেক, বাকস্বাধীনতা হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে… দেশ নিয়ে ভাবলে বড় হতাশ লাগে ….
অন্বেষা : এবার অন্য কথা বলো … নুতন কিছু বলো তোমার ডাইরির পাতা থেকে…
লীল মন খুঁজে নিতেনকে প্রভাবিত কবাহ্যিকভাবে
ভাবিয়ে তুলতে সুন্দর তাকে জানতে চাও, তাইতো প্রকৃতির রুপ।
সবুজ : তাহলে আমার এক বন্ধুর লেখা শুনো …. “একটি সৃজনশীল মন খুঁজে নিতে চায় অন্য এক সুন্দর মনকে। এটাই মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। নিজের মনের ভাবকে অন্য একটি মনকে প্রভাবিত করার শক্তি রাখে। নিজের ভাবনায় অন্যকে ভাবিয়ে তুলতে সুন্দর মনের কোন জুড়ি নেই। মানুষ বাহ্যিকভাবে। অন্য মানুষের মধ্যেও সুন্দর কিছু দেখে বলেই তাে সে তাকে জানতে চায়। সুন্দর সেইই, যে সৃজনশীল অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করে। হৃদয় দিয়ে প্রকৃতিকে সুন্দর ভাবছি, তাইতো প্রকৃতি সুন্দর। ফুলকে সুন্দর ভাবছি, তাইতো ফুল সুন্দর। নিশ্চুপ নিকষ কালো অন্ধকারের ও শান্ত নীরব রূপ আছে, তাইতো রাত্রিও সুন্দর। সুন্দরের অনেক রূপ। প্রত্যেক রূপই আপন সৌন্দর্যে মহান।”

অন্বেষা – গভীর তত্ত¡ কথা, উপলব্ধি এবং অনুধাবন … মেয়ে বন্ধু না কী ছেলে বন্ধু?
সবুজ : তােমাদের মেয়েদের নিয়ে ওই এক সমস্যা … বন্ধু মানে বন্ধু … ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু কী?
অন্বেষা – আর তোমার বড় মেয়েলি স্বভাব … বললেই তো পারো … এতো সিক্রেসি কেনো? আজকের মতো রাখছি তাহলে … ভালো থেকো… বাই
সবুজ : হা হা হা…এইবার তোমার ব্রেইনে সেভ হলে গেলো এই প্রশ্নটা … মেয়ে? না ছেলে? সুন্দর থেকো… ভালো থেকো … বাই।