অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ ব্যবসা, চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর নানা দেশে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের যাতায়াত বন্ধ রেখেছে। তারপরও অনেকে বিশেষ ফ্লাইটে নানা দেশে যাতায়াত করছেন। যেসব দেশে বাংলাদেশিরা সচরাচর বেশি যাতায়াত করেন, সেসব দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন কী অবস্থা রয়েছে তা জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

ভারত
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে মানুষের যাতায়াত এখন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভারতে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ রয়েছে। তবে চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে কিছু দেশের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যোগাযোগ শুরু হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

ধারণা করা হচ্ছে, যাতায়াত একেবারে উন্মুক্ত করা না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে পারে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারি কোনও ঘোষণা আসেনি।
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর সরকার দেশের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার কাজ শুরু করেছে। তবে যারা স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যেতে চান, তাদের ক্ষেত্রে এখনও বাধা রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্বল্প সময়ের জন্য যারা সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করতে চান এবং যারা জরুরি ব্যবসা কিংবা দাফতরিক কাজে সিঙ্গাপুর যেতে চান, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থাটিকে বলা হয় গ্রিন/ফাস্ট লেন অ্যারেঞ্জমেন্ট। এর আওতায় একটি নিরাপদ ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। এটি ছাড়া সিঙ্গাপুরে ঢোকা যাবে না।

এছাড়া সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য সেখানে যাওয়া যাবে।

যেসব বিদেশি নাগরিক স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করবেন, তাদের জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।

যারা স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুরে যাবেন, তাদের জন্য সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সফরকারীকে টেস্টের খরচ বহন করতে হবে।

থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডে যারা ব্যবসার কাজে যাবেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া যারা চিকিৎসার জন্য যাবেন, তাদের ক্ষেত্রেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে থাইল্যান্ড। এর পাশাপাশি দক্ষ কর্মী, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিচ্ছে দেশটি।

তবে যারা থাইল্যান্ড যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদ থাকতে হবে এবং পাশাপাশি তাদের থাইল্যান্ডে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এ শর্ত মেনে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এরই মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছে।

বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর পর্যটনের জন্য থাইল্যান্ড যায়। তবে দেশটি আপাতত পর্যটন ভিসা দিচ্ছে না।

ইউরোপ
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিদেশিদের আগমনের জন্য তাদের বিমান চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ এ তালিকায় নেই। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে, ব্রাজিল ও রাশিয়াও এ তালিকায় নেই। কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:

১. যেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম, অর্থাৎ যেসব দেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৬ জনের কম সংক্রমিত হয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন;

২. যেসব দেশে সংক্রমণের হার নিচের দিকে;

৩. যেসব দেশে সামাজিক দূরত্বের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়া
শুধু পর্যটনের জন্য বিদেশ থেকে এখন মালয়েশিয়া যাওয়া বন্ধ আছে।

বর্তমানে স্পাউস, বিজনেস ও প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া যাবে। তবে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশে মালয়েশিয়ার দূতাবাসের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

মালয়েশিয়া ঢোকার আগে বিমানবন্দরে যাত্রীদের অবশ্যই ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদ দেখাতে হবে। যদি সেটি না থাকে, তাহলে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে হবে। সে জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।

যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা থেকে লন্ডন যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মুক্ত সনদের প্রয়োজন নেই। তবে একটি হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হবে।

এছাড়া লন্ডনে পৌঁছানোর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারাই এখন যেতে পারছেন।

অতি প্রয়োজনীয় না হলে মহামারীর এ সময়ে নতুন করে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এখনও কোনও বিধিনিষেধ নেই।

ঢাকা থেকে যেসব এয়ারলাইনস ফ্লাইট চালু করেছে, তাদের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যাবে।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় নতুন কোনও ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। যাদের পুরোনো ভিসা আছে, শুধু তারাই ভ্রমণ করতে পারবেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা