অনলাইন ডেস্ক : কানাডায় নিযুক্ত চীনা এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে কানাডিয়ান সরকার। বহিষ্কৃত ওই চীনা কূটনীতিকের নাম ঝাও ওয়েই। টরন্টো-ভিত্তিক এই কূটনীতিক কানাডার এক এমপিকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কানাডীয় ওই পার্লামেন্ট সদস্য চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডিয়ান সরকার টরন্টো-ভিত্তিক একজন চীনা কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে যিনি দেশটির একজন পার্লামেন্ট সদস্যকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার পর আইনপ্রণেতা মাইকেল চং এবং হংকংয়ে তার আত্মীয়দের টার্গেট করার অভিযোগ উঠেছে চীনের বিরুদ্ধে।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সোমবার এক বিবৃতিতে চীনা কূটনীতিক ঝাও ওয়েইকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেন। অবশ্য অটোয়াতে অবস্থিত চীনের দূতাবাস এই বহিষ্কারের নিন্দা জানিয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত বিবৃতিতে জোলি বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কার বলেছি: আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করব না। কানাডায় কূটনীতিকদের সতর্ক করা হয়েছে যে, তারা যদি এই ধরনের আচরণে লিপ্ত হয় তবে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
অবশ্য চীনা সরকার কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। গত সপ্তাহে এশীয় পরাশক্তি এই দেশটি বলেছে, ‘এটি (কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ) করার কোনো আগ্রহ তাদের নেই’।
এদিকে সোমবার অটোয়াতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তার ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ওই বিবৃতিতে বহিষ্কারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে দাবি করা হয়েছে, বেইজিং কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দূতাবাস চীন সরকারের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়েছে, ‘চীন দৃঢ়তার সাথে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। যদি কানাডিয়ান সরকার বেপরোয়া আচরণ করে, চীন অবশ্যই দৃঢ়তার সাথে এবং প্রবলভাবে লড়াই করবে।’
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, এই মাসের শুরুর দিকে গ্লোব এবং মেইল পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়- চীন তার সীমানার মধ্যে বাস করা কানাডিয়ান একজন আইনপ্রণেতার কোনও আত্মীয় সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল। আর এরপরই পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপের মুখে পড়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।
এছাড়া কানাডিয়ান গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। গ্লোব অ্যান্ড মেইল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনপ্রণেতা মাইকেল চংয়ের ‘চীন-বিরোধী অবস্থান’ রোধ করার প্রয়াসে হংকংয়ে চং-এর আত্মীয়দের সম্পর্কে চীন বিস্তারিত জানতে চেয়েছে বলে কানাডার গুপ্তচর সংস্থা বিশ্বাস করে।
কানাডীয় এই রাজনীতিবিদ ২০২১ সালে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। ওই প্রস্তাবে উইঘুরদের প্রতি চীনের আচরণকে গণহত্যা বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। অবশ্য চীন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ওই প্রস্তাব পেশের কিছুক্ষণ পরই চংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বেইজিং।
আর এরপর কানাডার গুপ্তচর সংস্থাকে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকির বিষয়ে অবিলম্বে তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।